'ছোকরা' পুরানের রোমাঞ্চে জল ঢাললেন 'বুড়ো' ম্যাথিউস
শ্রীলঙ্কা ৩৩৮/৬, ৫০ ওভার
ওয়েস্ট ইন্ডিজ ৩১৫/৯, ৫০ ওভার
শ্রীলঙ্কা ২৩ রানে জয়ী
ডারহামের রিভারসাইডের ম্যাচটা এ বিশ্বকাপের প্রথম ডেড-রবার, যে ম্যাচের ওপর পরবর্তী রাউন্ডের কোনও সমীকরণ নির্ভর করছে না। তবে ডেড-রবার বলে থেমে গেলে আদতে অমর্যাদা করা হয় এ ম্যাচকে। যে ম্যাচ ছিল দুই তরুণের আগমনী বার্তা-- ২১ বছর বয়সী আভিশকা ফার্নান্ডোর সেঞ্চুরির জবাব দিলেন ২৩ বছরের নিকোলাস পুরান। ওয়েস্ট ইন্ডিজকে প্রায় পার করিয়েছিলেন পুরান, যা হতে পারত বিশ্বকাপের রেকর্ড রানতাড়া। তবে হাজির হলেন আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে প্রায় ১১ বছরের অভিজ্ঞতা নিয়ে অ্যাঞ্জেলো ম্যাথিউস, ২০১৭ সালের ডিসেম্বরের পর আবার বোলিং করতে এলেন তিনি। তার প্রথম বলেই এজড হয়ে ফিরলেন পুরান, আরেকবার ওয়েস্ট ইন্ডিজের গল্পটা হয়ে গেল এতো কাছে তবু এতো দূরের। আর শ্রীলঙ্কা পেল আরেকটি জয়। যারা বিশ্বকাপে প্রাণ ফিরিয়েছিল, তারাই দিল আরেকটি রোমাঞ্চ উপহার।
রেকর্ড রানতাড়ার লক্ষ্যে ওয়েস্ট ইন্ডিজের শুরুটা হয়েছিল বাজেই। ২২ রানের মাঝেই লাসিথ মালিঙ্গার তোপে ফিরেছিলেন সুনীল আমব্রিস ও শেই হোপ, প্রথমজন হয়েছিলেন কট-বিহাইন্ড, পরেরজন স্টাম্পে ডেকে এনেছিলেন বল। কাসুন রাজিথাকে ছয় মারার পরের বলেই এরপর ক্যাচ তুলেছেন ক্রিস গেইল, ‘ইউনিভার্স বস’ আজ বেরুতে পারেননি ঠিক খোলস ছেড়ে। শিমরন হেটমায়ারের রান-আউট তাদের দুর্দশা বাড়িয়েছিল আরও। পুরানকে না দেখেই ছুটতে শুরু করেছিলেন হেটমায়ার, ধনঞ্জয়া ডি সিলভার ডিরেক্ট থ্রো-তে শেষ হয়েছে তার। পুরান দিনে ছিলেন আরেকটি রান-আউটের অংশ, ওয়েস্ট ইন্ডিজকে যেটি ভুগিয়েছে আরও। শ্রীলঙ্কা তখন ম্যাচের নিয়ন্ত্রণে, ওয়েস্ট ইন্ডিজের খেলা দেখতে আসা রিয়ান্নার জন্য বিনোদন যেন শেষ সেখানেই।
অন্যরকম কিছু ভাবলেন পুরানই। পুরানের সঙ্গে হোল্ডারের জুটি ছিল ৬১ রানের, জেফরি ভ্যানডেরসির বলে ক্যাচ দিয়েছিলেন ওয়েস্ট ইন্ডিজ অধিনায়ক। ব্রাথওয়েটের সঙ্গে পুরানের ৪৪ রানের জুটিটা ভেঙেছে পুরানের শটেই, বোলারস ব্যাকড্রাইভে আঙুল ছোঁয়াতে পেরেছিলেন ইসুরু উদানা, যেটি পরে ভেঙেছে স্টাম্প। এরপর ফ্যাবিয়েন অ্যালানের সঙ্গে পুরানের জুটি অনেক বড় স্বপ্ন দেখিয়েছিল উইন্ডিজকে।
৫৮ বলে দুজন মিলে তুলেছেন ৮৩ রান, অ্যালেন ক্যারিয়ারের প্রথম ফিফটি করেছিলেন মাত্র ৩০ বলে। অ্যালেনকে এরপর আত্মত্যাগ করতে হয়েছে, তিনি সাড়া না দিলেও ছুটে গিয়েছিলেন পুরান। মূলত তার চাপাচাপিতেই শেষ মুহুর্তে ছুটে গিয়ে রান-আউট হয়েছেন অ্যালেন। পরের বলে সিঙ্গেল নিয়ে প্রথম সেঞ্চুরি পূর্ণ করেছেন পুরান, এরপর ওয়েস্ট ইন্ডিজের প্রয়োজনীয়তা নামিয়ে এনেছিলেন ১৮ বলে ৩১ রানে।
৪৮ তম ওভার করতে এলেন ম্যাথিউস, যিনি শেষ বোলিং করেছিলেন প্রায় দেড় বছরেরও বেশি সময় আগে। প্রথম বলটা করলেন অফস্টাম্পের বাইরে, অ্যাঙ্গেল করে। সেটিই তাড়া করতে গিয়ে এজড হলেন পুরান। ১০৩ বলে ১১১ রান পুরানের, ১১টি চারের সঙ্গে ছিল ৪টি ছয়। ম্যাথিউসের অভিজ্ঞতার কাছে হার মানলো শেষ পর্যন্ত টগবগে রক্ত। শেষ ওভারও করতে এলেন তিনি, তবে এর মাঝে ১ রানে ১ উইকেট নিয়ে মালিঙ্গা তার জন্য রেখেছিলেন ২৭ রান। দুই বুড়োতে মিলে শ্রীলঙ্কার রোমাঞ্চকর জয়টা সম্পন্ন করলেন কী দারুণভাবে!
এর আগে শ্রীলঙ্কার ইনিংসে ছিল এক তরুণের গল্প। নিজের প্রথম ম্যাচেই নিজের উপস্থিতি জানান দিয়েছিলেন আভিশকা ফার্নান্ডো, দারুণ সব স্ট্রোকপ্লেতে। অবশ্য তিনি ঠিক ‘নতুন’ নন, ২০১৬ সালেই অভিষেক হয়েছিল তার। এ বিশ্বকাপকে তার দ্বিতীয় জন্ম বলা যেতে পারে তাই।
দিমুথ করুনারত্নে ও কুসাল পেরেরা দারুণ শুরু এনে দিয়েছিলেন শ্রীলঙ্কাকে, ওপেনিং জুটিতেই দুজন তুলেছিলেন ৯৩ রান, ৯২ বলে। করুনারত্নেকে ফিরিয়ে ব্রেকথ্রু দিয়েছিলেন হোল্ডার, আর দ্রুতই রান-আউটের শিকার ৫১ বলে ৬৪ রান করা পেরেরা।
বাকি গল্প ফার্নান্ডোর। কুসাল মেন্ডিসের সঙ্গে ৮৫, অ্যাঞ্জেলো ম্যাথিউসের সঙ্গে ৫৮, লাহিরু থিরিমান্নার সঙ্গে ৬৭ রানের জুটিতে শ্রীলঙ্কা পেয়ে গেছে বড় স্কোর। ৪৮তম ওভারে গিয়ে কটরেলের স্লোয়ারে ক্যাচ তোলার আগে ১০৩ বলে ১০৪ রান করেছেন ফার্নান্ডো, ৯ চার ও ২ ছয়ে। থিরিমান্নার ৩৩ বলে ৪৫ রানের ক্যামিওতে ভর করে শ্রীলঙ্কা গিয়েছিল ৩৩৮ পর্যন্ত।
ওয়েস্ট ইন্ডিজের সামনে তাই রেকর্ড ভাঙার বিকল্প ছিল না। পুরান প্রায় সে পর্যন্ত তো নিয়েই গিয়েছিলেন তাদের। বাগড়া বাধালেন ওই ম্যাথিউসই।