পাঁচের 'খরা' কাটিয়ে 'সেঞ্চুরির' কাছে মোস্তাফিজ
এই ভারতের সঙ্গে তার অনেক স্মৃতি। চার বছর আগে এই ভারতের বিপক্ষে হয়েছিল ওয়ানডে অভিষেক, প্রথম ম্যাচেই ৫ উইকেট নিয়ে ফেলে দিয়েছিলেন তোলপাড়। পরের ম্যাচে আবারও ৬ উইকেট, প্রথম দুই ম্যাচে সবচেয়ে বেশি উইকেট রেকর্ড হয়েছিল। বাংলাদেশের স্মরণীয় সিরিজ জয়ের সেবার নায়ক ছিলেন মোস্তাফিজ। এরপর সে বছর জিম্বাবুয়ের সঙ্গে আরেকটি ৫ উইকেট, মোস্তাফিজ-রহস্যটা তখন দুর্বোধ্য সব আন্তর্জাতিক দলের কাছে। এরপর পেরিয়ে গেল অনেকটা সময়, আগের মতো মোস্তাফিজের সেই জাদু আর দেখা যাচ্ছিল না ঠিক। ৫ উইকেটও অধরা হয়ে ছিল। বিশ্বকাপে প্রথমবারের মতো প্রতিপক্ষ পেলেন ভারতকে, প্রায় সাড়ে তিন বছর পর আবারও পেলেন ৫ উইকেট। সেই সঙ্গে ১০০ উইকেটের নেওয়ার একদম কাছাকাছিও চলে গেলেন।
৫ উইকেটের গল্পটাই আগে করা যাক। শুরুতে মনে হচ্ছিল আজও দুর্ভাগ্যটা সঙ্গী হবে তার, ৯ রানের মাথায় যখন রোহিত শর্মার সহজ ক্যাচটা ফেলে দিলেন তামিম ইকবাল। রোহিত এরপর সেই ক্যাচ মিসের মাশুল বুঝিয়ে দিচ্ছিলেন ভালোমতোই, ভারতও এগিয়ে যাচ্ছিউল বড় কিছুর দিকে। সৌম্য দিলেন প্রথম ব্রেকথ্রু, এরপর রুবেল ফেরালেন রাহুলকে। মঞ্চটা তখন মোস্তাফিজের জন্য প্রস্তুত।
৩৯তম ওভারে এলো স্বপ্নের সেই ওভার। প্রথম বলে রান হলো না, পরের বলে পুল করতে গিয়ে ক্যাচ দিলেন কোহলি। সবচেয়ে প্রার্থিত উইকেটটা পেল বাংলাদেশ। পরের বলটা ডট, এর পরের বলে নিজের ট্রেডমার্ক ডেলিভারিতে পান্ডিয়াকে ক্যাচ দিতে বাধ্য করলেন স্লিপে। বাংলাদেশ পেল বড় একটা লাইফলাইন। ০, উইকেট, ০, উইকেট, ০,০- মোস্তাফিজের ডাবল উইকেট মেডেন ছিল এমন। ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে করা হেটমেয়ার ও রাসেলকে তুলে নেওয়ার ওভারটি যেন মনে করিয়ে দিলেন।
শেষ দিকে তার ওপরেই নির্ভর করবে বাংলাদেশ, তা জানাই ছিল। তার প্রতিদানও দিলেন। ৪৮তম ওভারে আবারও কোহলির মতো শর্ট বলে ক্যাচ দিতে বাধ্য করলেন কার্তিককে। তিনটি পেলেন মোস্তাফিজ। আর শেষ ওভারের জন্য জমিয়ে রেখেছিলেন বাকিটা।
প্রথম দুই ওভারে কোনো রান হলো না, পরের বলটা আবারও শর্ট। এবার শিকার ধোনি, ক্যাচ দিলেন মিড অনে। ছয় নম্বর বলে ওয়াইড হলো, তবে ভুবনেশ্বর কুমার হলেন রান আউট। ভাগ্য ভালো স্ট্রাইকে শামি এসেছিলেন, মারতে গিয়ে হয়ে গেলেন বোল্ড। মোস্তাফিজ পেলেন হাই ফাইভ, ক্যারিয়ারে মাত্র চতুর্থবারের মতো। আর ভারতের বিপক্ষে তৃতীয়বার।
ওয়ানডে ক্যারিয়ারেই দেখতে দেখতে হয়ে গেল ৯৮ উইকেট। পাকিস্তানের বিপক্ষে আর ২ উইকেট পেলেই হয়ে যাবে ১০০টি। সবচেয়ে কম ম্যাচে ১০০ উইকেটের নেওয়ার রেকর্ডটা রশিদ খানের, ৪৪ ম্যাচে নিয়ে সবার ধরাছোঁয়ার বাইরেই। স্টার্ক পেয়েছেন ৫২ ম্যাচে, সাকলাইন ৫৩। আর মোস্তাফিজ পরের ম্যাচে দুই উইকেট নিলে হবে ৫৪ ম্যাচে, যেখানে তার সঙ্গী শেন বন্ড। আর বাংলাদেশের হয়ে সেই রেকর্ড আবদুর রাজ্জাকের, পেয়েছেন ৬৯ ম্যাচে। মোস্তাফিজ সেই রেকর্ড ভেঙে দিচ্ছেন নিশ্চিতভাবেই।