জয়ে শেষ ওয়েস্ট ইন্ডিজের, জয়ে শেষ গেইলের
৪২তম ম্যাচ, হেডিংলি
ওয়েস্ট ইন্ডিজ ৩১১/৬, ৫০ ওভার
আফগানিস্তান ২৮৮, ৫০ ওভার
ওয়েস্ট ইন্ডিজ ২৩ রানে জয়ী
ফাবিয়েন অ্যালেন যেন সমুদ্র থেকে হঠাৎ লাফিয়ে ওঠা ডলফিন। সাইদ শিরজাদের ক্যাচটা কাভার থেকে পেছন দিকে ছুটে লাফ দিয়ে নিলেন সেভাবেই। হেডিংলিতে আফগানিস্তান ইনিংসের শেষ বল সেটা, থমাসের বলে পড়লো শেষ উইকেটও। আফগানিস্তান ম্যাচ থেকে ছিটকে গেছে আরও আগেই। আরও একবার প্রতিপক্ষকে চেপে ধরেও আটকে রাখতে পারেনি তারা। ফলে ক্রিস গেইলকে জয় দিয়েই বিশ্বকাপ থেকে বিদায় জানালো ওয়েস্ট ইন্ডিজ। আর আরেক ওয়েস্ট ইন্ডিয়ান ফিল সিমন্সের এমন কিছু জুটলো না, আফগানিস্তান চেষ্টা করেও কাছাকাছি গিয়ে থমকে যাওয়ায় তাদের কোচকে শেষ করতে হলো হার দিয়েই। বাছাইপর্ব পেরিয়ে আসা দুই দলের বিশ্বকাপের মুখোমুখি লড়াইয়ে শেষ হাসি তাই ওয়েস্ট ইন্ডিজেরই।
এ ম্যাচে হার দিয়ে পয়েন্টের কলামে শূন্যই থাকলো আফগানিস্তানের। তবে তাদের মতো উঠতি ক্রিকেট-জাতির কাছে এ বিশ্বকাপ ছিল দারুণ শিক্ষণীয় এক প্লাটফর্ম, শ্রীলঙ্কা-ভারত-পাকিস্তানের পর ওয়েস্ট ইন্ডিজের সঙ্গেও দারুণ লড়াই করলো তারা। ওয়েস্ট ইন্ডিজের ক্ষেত্রে এ জয়টা অবশ্য শুধু ‘শেষটা ভাল, সবটা নয়’ হয়েই থাকবে, টুর্নামেন্টে চমক জাগানোর প্রত্যাশা থাকলেও শেষ পর্যন্ত তেমন কিছু করতে পারেনি তারা। আফগানিস্তানের আগে তাদের আরেকটি জয় ছিল পাকিস্তানের বিপক্ষে।
বিশ্বকাপকে বিদায় বললেন গেইল
হেডিংলির ডেড-রবারের দুই দলের ক্ষেত্রেই যেন ভবিষ্যক দিচ্ছে ঝিলিক। দারুণ কিছু তরুণ ক্রিকেটারের পারফরম্যান্স বলছে, পরের বিশ্বকাপেই হয়তো এই দুই দলের অবস্থান থাকবে আলাদা কোনও জায়গায় (অবশ্য দশ দলের বিশ্বকাপ বলে নিশ্চয়তা নেই, আদৌ খেলা হবে কিনা তাদের)। শেই হোপ বা নিকোলাস পুরানের পর ইকরাম আলিখিল, রহমত শাহরা দেখিয়েছেন- তারা থাকতেই এসেছেন ক্রিকেটের বড় মঞ্চে।
একদিকে যেমন আগমনী বার্তা ছিল, অন্যদিকে ছিল বিদায়ের সুরও। নিজের শেষ বিশ্বকাপ ম্যাচে ক্রিস গেইল ব্যাটিংয়ে তেমন কিছু করতে পারলেন না, দাওলাত জাদরানের বলে ক্যাচ তুলে বিশ্বকাপে ব্যাটিংকে বিদায় বললেন। তবে গেইল মানে তো শুধু ব্যাটিং নয়, গেইল মানে বিনোদন। আফগানিস্তানের সর্বোচ্চ স্কোরার ইকরাম আলিখিলকে এলবিডব্লিউ করলেন পরে, রহমত শাহর ক্যাচ নিয়ে কার্লোস ব্রাথওয়েটের সঙ্গে করলেন পুশ-আপ উদযাপন। ২০০৩ সাল থেকে দেখে আসা গেইলকে নিশ্চয়ই মিস করবেন ক্রিকেট-সমর্থকরা, এর সর্বোচ্চ মঞ্চে।
আফগানিস্তানকে দারুণ জয়ের স্বপ্ন দেখাচ্ছিলেন আলিখিল ও রহমত শাহই। এর আগে ছয় ইনিংস মিলিয়ে ৫৪ রান করেছিলেন আলিখিল, মোহাম্মদ শাহজাদের বিতর্কিতভাবে বিশ্বকাপ শেষ হয়ে যাওয়ার পর যিনি এসেছিলেন দলে। গুলবাদিন নাইব এদিনও ব্যাটিংয়ে ব্যর্থ হয়েছেন, তবে রহমতের সঙ্গে আলিখিলের ১৩৩ রানের জুটি অনেকদূর এগিয়ে নিয়েছিল আফগানিস্তানকে।
আফগানিস্তানকে স্বপ্ন দেখিয়েছিলেন আলিখিল
১০ চারে ৬২ রান করা রহমত ফেরার পর নাজিবুল্লাহ জাদরানের সঙ্গে আলিখিলের জুটি ছিল ৫১ রানে। আলিখিল সেঞ্চুরি থেকে ১৪ রান দূরে থেমেছেন, এর আগে বিশ্বকাপে তামিম ইকবাল ও মোহাম্মদ আশরাফুলের পর হয়েছেন তৃতীয় সর্বকনিষ্ঠ ফিফটি করা ব্যাটসম্যান। এরপর জাদরানের রান-আউটেই মূলত ম্যাচ থেকে ছিটকে গেছে আফগানিস্তান। আসগর আফগানের ৩২ বলে ৪০ রানের ক্যামিও যথেষ্ট হয়নি তাদের। কেমার রোচ ও কার্লোস ব্রাথওয়েট মিলে নিয়েছেন ৭ উইকেট, রোচকে টুর্নামেন্টে আরেকটু আগে থেকে না খেলানোর আক্ষেপটা এদিন আরেকটু বাড়িয়েছেন তিনি।
ওয়েস্ট ইন্ডিজের ব্যাটিংয়ে অবশ্য তেমন কোনও আক্ষেপ নেই। শেই হোপের ৯২ বলে ৭৭ রানের ইনিংসকে কেন্দ্র করে তারা তৈরি করেছিল প্লাটফর্ম, যাতে ভর করে এরপর জেসন হোল্ডার ও ব্রাথওয়েটের ঝড়ে ৩০০ পেরিয়ে গিয়েছিল তারা।
শুরুতে গেইলের ফেরার ধাক্কাটা সামাল দিয়েছিলেন এভিন লুইস ও হোপ। ফিফটির পরপর তিনি ফিরেছেন রশিদ খানের বলে, ডিপে মোহাম্মদ নবির দারুণ এক ক্যাচে। টুর্নামেন্টটা খুব একটা সুবিধার যায়নি রশিদের, এদিন ১০ ওভারে ৫২ রানে ওই ১ উইকেট নিয়ে পেয়েছেন একটু স্বস্তি।
রশিদ ছাড়া আর দুই স্পিনার নবি ও মুজিব উর রহমানও দিয়েছেন ছয়ের নিচে করে রান, তবে ওয়েস্ট ইন্ডিজ চড়াও হয়েছিল আফগান পেসারদের ওপর। মুজিব শেষ ২ ওভারে অবশ্য গুণেছেন ২৪ রান। ২ উইকেট নিলেও ৭৩ রান দিয়েছেন জাদরান, শিরজাদ দিয়েছেন ৭ করে রান, আর নাইব ৩ ওভারে ১৮ দিয়ে আর আসেননি বোলিং করতে।
৭৭ রান করে হোপ ফেরার আগে ওয়েস্ট ইন্ডিজ গিয়ার বদলে ফেলেছে শিমরন হেটমায়ারের ৩১ বলে ৩৯ রানের ইনিংসে। এরপর একে একে ঝড় তুলেছেন পুরান-হোল্ডার-ব্রাথওয়েট। শেষ ওভারের প্রথম বলে গিয়ে রান-আউট হওয়ার আগে পুরান খেলেছেন আরেকটি দারুণ ইনিংস, ৪৩ বলে করেছেন ৫৮। পরের বলেই ফিরেছেন হোল্ডারও, ৩৪ বলে ৪৫ রানে। তবে সেই ওভারের বাকি ৪ বলে ১৪ রান তুলে ওয়েস্ট ইন্ডিজের ৩০০-পেরুনো স্কোর নিশ্চিত করেছেন ব্রাথওয়েট। শেষ ১০ ওভারের উড়ানে ওয়েস্ট ইন্ডিজ তুলেছে ১১১ রান।