সাকিবকে 'স্যরি' বলে বোলিং ও ফিল্ডিংয়ের দায় দেখছেন মাশরাফি
হুট করে মনে হবে, দুটি সম্পূর্ণ ভিন্ন টাইম-জোন। ভিন্ন ফ্রেম। ভিন্ন মাত্রা। একদিকে সাকিব আল হাসান, অন্যদিকে বাংলাদেশ দল। ব্যাটিংয়ে দল দারুণ ইতিবাচক থাকলেও তার ওপরে বাংলাদেশ ভর করেছে, বোলিংয়েও প্রায়ই চেয়ে থেকেছে ব্রেকথ্রুর জন্য। সাকিব এ বিশ্বকাপে ছিলেন অনেক বেশি উজ্জ্বল। ৬০৬ রান করেছেন, নিয়েছেন ১১ উইকেট। যে তিনটি ম্যাচ বাংলাদেশ জিতেছে, সে তিনটিতেই তিনি ছিলেন ম্যাচসেরা। তবে সাকিবের এমন দারুণ পারফরম্যান্সের পরও অন্তত সাতে থেকে বিশ্বকাপ শেষ করছে বাংলাদেশ। সাকিবের পারফরম্যান্সের কারণে দল অন্য ‘জোন’-এ থাকতে পারতো জানিয়ে তাকে ‘স্যরি’ বলছেন অধিনায়ক মাশরাফি বিন মুর্তজা।
ম্যাচশেষে পুরষ্কার বিতরণীতে তিনি বলেছেন, “আমি সাকিবকে স্যরি বলতে চাই। আমরা এগিয়ে এলে টুর্নামেন্ট অন্যরকম হতে পারত। সে ব্যাটিং করেছে, বোলিং করেছে, ফিল্ডিং করেছে-- সে ছিল দারুণ।”
ব্যাটিংয়ে তারা বড় স্কোরের সামর্থ্য জানান দিয়েছেন বললেও মাশরাফি বলছেন, সব মিলিয়ে বোলিং ও ফিল্ডিংয়ের কারণেই পিছিয়ে পড়েছেন তারা। এ কারণে নিজে দায় নিচ্ছেন, শুরুর ১০-২০ ওভারে উইকেট না নেওয়াটার ব্যাপারও বলছেন।
“ছোট ছোট ব্যাপার বড় পার্থক্য গড়ে দেয়। সাকিব পুরোপুরি দারুণ ছিল। তিনে ব্যাট করে যা করতে পারে করেছে। আমার আসলে তার জন্য দুঃখ হচ্ছে। সে যেভাবে খেলেছে, দল একটা ভিন্ন জায়গায় থাকতে পারত। আমার মনে হয় তার পারফরম্যান্সটি বিশ্বকাপ ইতিহাসেরই অন্যতম সেরা। তবুও আমরা সেমিফাইনালে যেতে পারিনি”, ম্যাচশেষের সংবাদ সম্মেলনে বলেছেন মাশরাফি।
এ কারণে বড় একটা দায় আছে বোলিংয়ের, “বোলিং আপ-টু-দি-মার্ক ছিল না। আমার থেকে শুরু করে বাকিদের। বিশেষ করে প্রথম ১০ বা ২০ ওভারে আমাদের উইকেটের প্রয়োজন ছিল।” সঙ্গে মাশরাফি বলছেন ফিল্ডিংয়ের কথাও, “কিছু ম্যাচে ফিল্ডিং আমাদের দারুণভাবে ভুগিয়েছে। বিশেষ করে গ্রাউন্ড ফিল্ডিং। ফিল্ডাররা সহায়তা করলে বোলারদের উপকার হয়। ক্যাচ ড্রপ হয়েছে। এটা হয়। তবে এমন হতেই থাকলে প্রশ্ন অবশ্যই উঠবে।”
নিজেদের দুর্বলতা আছে, এটা আগে থেকেই জানতেন বলে মাশরাফি বলেছেন, ব্যাটিংয়ে ভাল হলেও অন্য ব্যাপারগুলিতে ভাল করার সুযোগ হারিয়েছেন তারা, “আমরা আমাদের দুর্বলতা জানতাম। তবে আমরা প্রমাণ করতে পারিনি যে এসব দুর্বলতার জায়গাগুলিতে উন্নতি করা যায়। আমার মনে হয় সবাই সেরাটা দিয়েছে। তবে আমরা উন্নতি করতে পারতাম।”
সব মিলিয়ে টুর্নামেন্টে আরেকটু ভাল হতে পারত বলেও ধারণা তার। সেক্ষেত্রে পাকিস্তানের সঙ্গে হারটা নিজেদের কাঁধেই আরও দোষ চাপাচ্ছে, “আমরা যেভাবে খেলেছি, আমরা আরেকটু ভাল করতে পারতাম। এই ম্যাচটা ভাল করলে আমরা বলতে পারতাম, ভাগ্য আমাদের পক্ষে ছিল না। তবে কিছু ব্যাপার ভাল ছিল, কিছু ব্যাপার আমাদের পক্ষে ছিল না।”
“যদি সামনে তাকাতে বলেন, তবে যেটা নিয়ে চিন্তা করতে হবে বলে আমার মনে হয় এ টুর্নামেন্টে বোলিং অনেক বড় একটা ইস্যু ছিল। এশিয়ায় আমরা অনেক ভাল বোলিং আক্রমণ, তবে এমন জায়গায় নয়। ফিল্ডিং আমার পুরো ক্যারিয়ারজুড়েই একটা দুশ্চিন্তা ছিল। জুটি বড় হলেই আমরা ভেঙে পড়ি। আমাদের এখানে উন্নতি করতে হবে।”
ইংল্যান্ড, অস্ট্রেলিয়া, ভারতের মতো দলগুলির সঙ্গে বাংলাদেশের পার্থক্য এখানেই বলে মত তার, “এবার যেটা দেখেছি, ব্যাটিংয়ে আমরা বড় স্কোরের সামর্থ্য রাখি (তাদের মতো)। তবে বোলিংয়ে বিশাল একটা ব্যবধান আছে। আর ফিল্ডিংয়ে তো আরও বড় ব্যবধান আছে।”