রোহিত-রাহুলে শ্রীলঙ্কাকে উড়িয়ে শীর্ষে ভারত
৪৪তম ম্যাচ, হেডিংলি
শ্রীলঙ্কা ২৬৪/৭, ৫০ ওভার (ম্যাথিউস ১১৩, থিরিমান্না ৫৩, বুমরাহ ৩/৭৩, জাদেজা ১/৪০)
ভারত ২৬৫/৩, ৪৩.৩ ওভার (রোহিত ১০৩, রাহুল ১১১, রাজিথা ১/৪৭, উদানা ১/৫০)
ভারত ৭ উইকেটে জয়ী
রোহিত শর্মা বিশ্বকাপ-সেঞ্চুরিকে বানিয়ে ফেলেছেন যেন মোবাইল অপারেটরদের টেক্সটের মতো, আসতেই থাকে যা। এবার করলেন টানা তৃতীয়টি, প্রথম ক্রিকেটার হিসেবে এক বিশ্বকাপে তার পাঁচ সেঞ্চুরি হয়ে গেল। রোহিতের ওপেনিংয়ে নতুন সঙ্গী লোকেশ রাহুলও পেলেন সেঞ্চুরি। দিনে সেটি তৃতীয় তিন অঙ্কের ইনিংস। তবে এই দুইয়ে বৃথা গেছে প্রথমটি, যেটি করেছিলেন অ্যাঞ্জেলো ম্যাথিউস। জাসপ্রিত বুমরাহর এবারের বিশ্বকাপের দ্বিতীয় সেরা বোলিং ফিগারের সঙ্গে জাদেজা-পান্ডিয়ার আঁটসাঁট বোলিংয়ে শ্রীলঙ্কাকে ২৬৪ রানে বেঁধে ফেলার পর ৩৯ বল ও ৩ উইকেট বাকি রেখেই সে লক্ষ্য পেরিয়ে গেছে ভারত। উঠে গেছে টেবিলের শীর্ষেও। অন্য ম্যাচে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে দক্ষিণ আফ্রিকা জেতায় গ্রুপের শীর্ষে থেকেই সেমিতে গেলো ভারত।
সেমিফাইনালের চার দল আগেই ঠিক হয়ে গেছে, এ ম্যাচ ছিল লাইন-আপ ঠিক করার একটা ধাপ। সেখানেই নিজেদের কাজটা করে রাখলো ভারত। নিজের কাজটা এদিন দারুণভাবে করেছিলেন ম্যাথিউসও, ৫৫ রানে ৪ উইকেট যাওয়ার পর টুর্নামেন্টে শ্রীলঙ্কার মিডল-অর্ডারের নিয়মিত দুর্দশা ফিরে এসেছিল, সেটাই দারুণভাবে সামাল দিয়েছিলেন বিশ্বকাপে নিজের প্রথম সেঞ্চুরি করে। লাহিরু থিরিমান্নার ফিফটি যোগ হয়েছিল তাতে, দুজনের ১২৪ রানের জুটি বেশ আশাও জুগিয়েছিল তাদের।তবে শ্রীলঙ্কা থেমেছিল ভারতের নাগালের বেশ আগেভাগেই। রোহিত-রাহুলের এ বিশ্বকাপে ওপেনিংয়ের সর্বোচ্চ ১৮৯ রানের জুটির পর এ ম্যাচের ফল নির্ধারণ হয়ে পড়েছিল আনুষ্ঠানিকতা, সেটিই পরে সেরেছেন বিরাট কোহলি। সম্ভবত নিজের শেষ বিশ্বকাপ ম্যাচে বেশ খরুচে ছিলেন লাসিথ মালিঙ্গা, ১০ ওভারে ৮.২ হারে রান গোণার দিনে তার সান্ত্বনা শুধু রাহুলের উইকেটই।
বিশ্বকাপে প্রথম সেঞ্চুরি রাহুলের/আইসিসি
ম্যাচে টিকে থাকতে শ্রীলঙ্কার প্রয়োজন ছিল দ্রুত উইকেট নিয়ে ভারতের মিডল-অর্ডার উন্মুক্ত করা। সেটা আর কই করতে পারলো তারা! রোহিত-রাহুল শুরুর দিকে খুব আক্রমণাত্মক ছিলেন না, তবে তাদের ব্যাটিংয়ের নিয়ম মেনেই তারা উইকেট হারাননি। ধীরে ধীরে গিয়ার বদলেছেন তারা। প্রথম ১০ ওভারে ৫৯ রান তোলা ভারত ১০০ পেরিয়ে গেছে ১৯ ওভারে। পরের ১১ ওভারে তারা তুলেছেন ৮৬ রান, রোহিত পেয়ে গেছেন রেকর্ড পঞ্চম সেঞ্চুরি এ বিশ্বকাপে, মাত্র ৯২ বলে। তবে সেঞ্চুরির পরই আরেকবার ফিরেছেন তিনি, কাসুন রাজিথার স্লোয়ারে চেক শট খেলতে গিয়ে সোজা মিড-অফে ক্যাচ দিয়ে। তার শেষ ৩ ইনিংস তাই পড়ছে এমন-- ১০৩, ১০৪, ১০২। এ যেন উন্নত বিশ্বের বিলাসি সমস্যা, সেঞ্চুরি হচ্ছে, সেটি বড় হচ্ছে না!
কোহলি নেমেছেন, আরেকবার তার ভূমিকা ছিল সঙ্গীকে সহায়তার। ১০৯ বলে সেঞ্চুরি পূরণ করে ফেলেছেন রাহুল, বিশ্বকাপে যা তার প্রথম সেঞ্চুরি। শিখর ধাওয়ান থাকতে চারে খেলেছিলেন, তার চোটের পর আবার ওপেনিংয়ে ফিরে এসেছেন রাহুল। এটিই যে তার উপযুক্ত জায়গা, প্রমাণ দিলেন আরেকবার। মালিঙ্গার স্লোয়ারে বোকা বনেছেন তিনি, শ্রীলঙ্কার কিংবদন্তিকে দিয়েছেন বিশ্বকাপ ক্যারিয়ারের শেষবেলায় আনন্দের উপলক্ষ্য। ইসুরু উদানার বলে এরপর এলবিডব্লিউ হয়েছেন ঋষভ পান্ট, যেটি শ্রীলঙ্কা পেয়েছে রিভিউ নিয়ে। তবে ভারত জয় সম্পন্ন করতে সময় নেয়নি এরপর আর বেশি।
হেডিংলিতে টসে জিতে ব্যাটিং নিয়ে বুমরাহর তোপে পড়েছিল শ্রীলঙ্কা। অবশ্য বুমরাহর নতুন বলের সঙ্গী ভুবনেশ্বর যেন বোলিং করছিলেন অন্য কোনও পিচে। প্রথম ৮ ওভারে বুমরাহর বোলিং ফিগার ছিল ৪-১-১৪-২, ভুবনেশ্বরেরটি পড়ছিল ৪-০-৩৫-০! দিমুথ করুনারত্নে ও কুসাল পেরেরা-- দুজনই হয়েছেন বুমরাহর বলে কট-বিহাইন্ড।
ম্যাথিউসের স্বস্তির সেঞ্চুরি/আইসিসি
রবীন্দ্র জাদেজা ও হারদিক পান্ডিয়ার পরপর দুই ওভারে দুই আঘাত শ্রীলঙ্কার দুর্দশা বাড়িয়েছে আরও। কুসাল মেন্ডিস হয়েছেন স্টাম্পড জাদেজার বলে, আর আভিশকা ফার্নান্ডো পান্ডিয়ার স্লোয়ার-বাউন্সারে ক্যাচ দিয়েছেন ধোনিকে। শ্রীলঙ্কাকে টেনে তোলার দায়িত্বটা নিয়েছিলেন ম্যাথিউস-থিরিমান্না। ৬৩ রানে ম্যাথিউসের ক্যাচ ছেড়ে নিজের দিনটা আরও কঠিন করে তুলেছিলেন ভুবনেশ্বর, বোলিংয়েও শেষ ওভারে থিসারা পেরেরার উইকেটের পর তার বোলিং ফিগার ছিল এমন, ১০-০-৭৩-১। সেমিফাইনালে জাদেজাকে খেলালে হয়তো বাদ পড়তে হবে তাকেই, সেক্ষেত্রে ফিরবেন শামি। শেষ ২ ওভার খরুচে থাকলেও বিশ্বকাপে প্রথমবারের মতো খেলতে নেমে জাদেজা দিয়েছেন মাত্র ৪০ রান, ভুবনেশ্বর ক্যাচ মিস না করলে একটির জায়গায় পেতে পারতেন দুটি উইকেটও।
সেমিফাইনালের হিসেব বাদ দিলে প্রথম ইনিংস ছিল ম্যাথিউসের উল্লাসের। থিরিমান্না ফিফটির পর কুলদিপকে ক্যাচ দিয়ে ফিরেছেন। তবে নিজের ক্যারিয়ার ও ভারতের বিপক্ষে তৃতীয় সেঞ্চুরি পেয়ে গেছেন ম্যাথিউস, ১১৫ বলে পূর্ণ করেছেন সেটি। শেষ পর্যন্ত ১২৮ বলে ১১৩ রান করে ক্যাচ দিয়েছেন বুমরাহর বলে। শেষ ১০ ওভারে অবশ্য সে অর্থে উড়ান দিতে পারেনি শ্রীলঙ্কা, তুলেছে মাত্র ৬৪ রান।
রোহিত ও রাহুল পরে শ্রীলঙ্কার স্কোরকেই তো বানিয়ে ফেললেন ছেলেখেলা।