ওল্ড ট্রাফোর্ড থ্রিলারে বিদায়ী উপহার পেলেন তাহির-ডুমিনি
দক্ষিণ আফ্রিকা ৫০ ওভারে ৩২৫/৬ (ডু প্লেসি ১০০, ফন ডার ডুসেন ৯৫, ডি কক ৫২; লায়ন ২/৫৩, স্টার্ক ২/৫৯)
অস্ট্রেলিয়া ৪৯.৫ ওভারে ৩১৫ (ওয়ার্নার ১২২, ক্যারি ৮৫; রাবাদা ৩/৫৬)
ফলঃ দক্ষিণ আফ্রিকা ১০ রানে জয়ী
কাগজে কলমে ডেড রাবার। অস্ট্রেলিয়ার জন্য অবশ্য পাওয়ার কিছু ছিল, এই ম্যাচ জিতলে গ্রুপ পর্বে সবার ওপরে থেকে পা রাখত সেমিতে। তার চেয়ে বড় কথা, সেমিফাইনালে পেত নিউজিল্যান্ডকে। কিন্তু সেটা আর হলো না। ইমরান তাহির আর জেপি ডুমিনির বিদায়ী ম্যাচটা স্মরণীয় করে রাখল দক্ষিণ আফ্রিকাই, তাও আবার রোমাঞ্চকর একটা জয় দিয়ে। সেমিতে তাই ইংল্যান্ডকেই পাচ্ছে অস্ট্রেলিয়া, আর ভারত পেল নিউজিল্যান্ডকে।
ওল্ড ট্রাফোর্ডে আজ যারা ছিলেন, তাদের মনে একটু খচখচানি থাকতে পারত। ম্যাচের হিসেবে সেরকম গুরুত্ব নেই, এক দলের তো বিদায়ই নিশ্চিত হয়ে গেছে। এমন ম্যাচে ঘুমপাড়ানি ক্রিকেট তো হতেই পারত। কিন্তু শেষ ওভারে নিষ্পত্তি, দুর্দান্ত কিছু ক্যাচ, অবিশ্বাস্য একটা রান আউট আর অসাধারণ কিছু ইনিংস- বিশ্বকাপেরই সেরা একটা ম্যাচ হয়ে গেল। না দেখে থাকলে নিশ্চিতভাবেই মিস করেছেন আপনি।
অথচ একটা সময় মনে হচ্ছিল ম্যাচটা বোধ হয় ম্যাড়ম্যাড়েই হয়ে যেতে পারে। তিনশর বেশি রান তাড়া করে বিশ্বকাপে এখন পর্যন্ত জিতেছে শুধু বাংলাদেশই, ৩২৬ রান তাড়া করে একটা সময় ১১৯ রানে ৪ উইকেট হারিয়ে বসে ছিল অস্ট্রেলিয়া। আসলে সেটা ছিল ৫ উইকেট, হ্যামস্ট্রিংয়ের চোটে যে খুঁড়িয়ে মাঠ ছেড়েছিলেন উসমান খাওয়াজা। অ্যারন ফিঞ্চ আজ বড় কিছু করতে পারেননি, শুরুতেই আউট ইমরান তাহিরের বলে।
খাওয়াজা এরপরেই আহত অবসরে গেছেন। স্টিভ স্মিথের সুযোগ ছিল আজ দারুণ কিছু করার, কিন্তু আজও সেরকম কিছু করতে পারলেন না। মাত্র ৭ রান করে হয়ে গেলেন এলবিডব্লু। মার্কাস স্টয়নিসের বিশ্বকাপ ভালো যাচ্ছে না ঠিক, অন্তত ব্যাট হাতে তো বটেই। ৩৪ বলে ২২ রানের ইনিংসটা আজ পরিস্থিতির দাবি মেটাতে পারল না। অবশ্য একটু দুর্ভাগাই ছিলেন। ডি কক ওরকম ‘নো লুক স্টাম্পিং’ না করলে তো ক্রিজে ঢুকেই পড়েছিলেন। কিন্তু দক্ষিণ আফ্রিকার কিপার করে ফেললেন অবিশ্বাস্য একটা রান আউট।
ডি ককের খেল তখনও বাকি। রাবাদার বলে গ্লেন ম্যাক্সওয়েল চেষ্টা করেছিলেন হুক করার। কিন্তু ডি কক লাফিয়ে এক হাতে নিলেন দারুণ একটা ক্যাচ। ম্যাক্সওয়েলের সমীকরণ মিলল না আজও, ১২ রানে আউট।
তবে ডেভিড ওয়ার্নার ছিলেন। শুরুর সতর্কতা পরে দারুণ খেলে পুষিয়ে দিচ্ছিলেন। আর অন্যপাশে ছিলেন নতুন অ্যাডাম গিলক্রিস্ট অ্যালেক্স ক্যারি। দুজন জুটি বাঁধলেন, তরতর করে রান আসতে শুরু করল অস্ট্রেলিয়ার। ১০৮ রান দুজন যোগ করলেন ঠিক ১৫ ওভারে, হঠাৎ করে অস্ট্রেলিয়ার মরা গাঙে বান ডাকতে শুরু করল।
ওয়ার্নার সেঞ্চুরি পেয়ে গেছেন ততক্ষণে। একেবারে লাফিয়ে নিজের ট্রেডমার্ক উদযাপনও করে ফেলেছেন। এরপর দৃশ্যপটে আবার ফিল্ডিং, এবার মরিসের দুর্দান্ত এক ক্যাচে আউট হয়ে গেলেন। ক্যারি ছিলেন, অস্ট্রেলিয়াকে একাই ক্যারি করার সিদ্ধান্ত নিলেন। কামিন্সকে নিয়ে ৪৫ রানের জুটি গড়লেন, যেখানে কামিন্সের অবদান ৯। অস্ট্রেলিয়ারও রান ও বলের ব্যবধান কমাতে শুরু করল। ৬৯ বলে ৮৫ রান করে আউট হয়ে গেলেন ক্যারি, অস্ট্রেলিয়ার আশাও প্রায় শেষ হয়ে গেল। স্টার্ক-বেহরেনডর্ফ চেষ্টা করেছিলেন, খোঁড়াতে খোঁড়াতে পরে নেমেছেন খাওয়াজাও। কিন্তু ম্যাচটা শেষ ওভারে নিলেও শেষ বলে নিতে পারেননি এদের কেউ।
তার আগে দক্ষিণ আফ্রিকার হয়ে পথ দেখিয়েছেন অধিনায়ক ফাফ ডু প্লেসিই। এই বিশ্বকপটা যত দ্রুত সম্ভব ভুলে যেতে চাইবে প্রোটিয়ারা, সেজন্য ব্যাটিং ব্যর্থতাই বেশি দায়ী। আজ জুটি বাঁধলেন মার্করাম আর ডি কক। দুজনের ৭৯ রানের উদ্বোধনী জুটিই এনে দিল বড় স্কোরের ভিত।মার্করাম ৩৪ আর ডি কক করেছেন ৫২। তবে দক্ষিণ আফ্রিকা আসলে বড় রান পেয়েছে তৃতীয় উইকেট জুটিতেই। ডু প্লেসি ও ফন ডার ডুসেন মিলে যোগ করেছেন ১৫১ রান। ঠিক ৯৩ বলে সেঞ্চুরি পেয়েছেন ডু প্লেসি, তার পরেই আউট হয়ে গেছেন। ফন ডার ডুসেনও সেঞ্চুরির কাছাকাছি চলে গিয়েছিলেন একদম। শেষ বলে ছয় মারলেই হয়ে যেত তা। কিন্তু শেষ বলে আউট হয়ে গেছেন বরং, ৯৭ বলে ৯৫ রানে থেমে গেছে ইনিংস। দক্ষিণ আফ্রিকার অবশ্য বড় স্কোর পেতে সমস্যা হয়নি। শেষ ১০ ওভারে ৪ উইকেট হারিয়েও তুলেছে ৮০ রান। দিন শেষে সেটাই হয়ে গেছে জয়ের জন্য কোনোমতে যথেষ্ট।