• ক্রিকেট বিশ্বকাপ ২০১৯
  • " />

     

    নেট সেশন : এবং 'দ্য ফাইনাল প্রব্লেম'

    নেট সেশন : এবং 'দ্য ফাইনাল প্রব্লেম'    


    বিশ্বকাপ, ফাইনাল
    ইংল্যান্ড-নিউজিল্যান্ড

    কবে, কখন
    ১৪ জুলাই, ২০১৯
    বাংলাদেশ সময় ১৫৩০ (বিকাল ৩.৩০)


    তাহলে, ‘দ্য ফাইনাল প্রব্লেম’-এ এসে হাজির হলো বিশ্বকাপ। 

    ৩০ মে শুরু হওয়া বিশ্বকাপ, ৪৭ ম্যাচ হওয়া বিশ্বকাপ নেমে আসছে এই একটি ম্যাচে। লর্ডসের ফাইনালে। ফিরে আসতে পারে পেছনের সব ম্যাচ, ফিরে আসতে পারে সেমিফাইনাল। ফিরে আসতে পারে আগের সব ফাইনাল। আগামী চার বছরের জন্য ক্রিকেটের বিশ্ব-চ্যাম্পিয়ন ঠিক করবে এই ম্যাচ। বিশ্বকাপ দেখবে নতুন চ্যাম্পিয়ন- ইংল্যান্ড অথবা নিউজিল্যান্ড! 

    হয়তো সেমিফাইনাল লাইন-আপ ঠিক হওয়ার পরও এই দুই দল ছিল কম ফেভারিটদের তালিকায়। তবে বিশ্বকাপে এ দুই দলেরই আছে কিছু পাওয়ার। এক দল ছয়বার সেমিফাইনাল খেলে ব্যর্থ হয়েছিল, সেই গেরোটা কেটেছিল গতবার। আরেকদল তিনবার ফাইনাল খেলে ফিরে গিয়ে প্রায় ভুলেই গিয়েছিল ফাইনালের স্বাদ। 

    এ বিশ্বকাপেও দুই দলের কোনোটিরই যাত্রা মসৃণ ছিল না। নিউজিল্যান্ডকে দেখলে মনে হবে, অনেক দূর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ায় বের হয়ে, কখনও রিকশা বা হাঁটাপথে বেশ একটা পথ পাড়ি দিয়ে তারা ধরেছে ফাইনালের ট্রেন। আর ইংল্যান্ড হোঁচট খেয়েছিল শুরুতেই, এরপর উঠে দাঁড়িয়ে এসেছে অনেক চাপ কাঁধে করে, পৌঁছেছে স্টেশনে।  

    তারা হাল ছাড়েনি। টপ অর্ডারে জেসন রয়ের অনুপস্থিতি ইংল্যান্ডকে ভুগিয়েছে। তাদের আক্রমণাত্মক ক্রিকেট ঠিকঠাক সাড়া দেয়নি তাদের পক্ষে। তবে যখন প্রয়োজন, তখন তারা জ্বলে উঠেছে ঠিকই। দেখিয়েছে নতুন স্বপ্ন- ইংল্যান্ড হতে পারে বিশ্বচ্যাম্পিয়ন! নিউজিল্যান্ডের টপ অর্ডার ভুগেছে, এক কেন উইলিয়ামসন বারবার তাদেরকে দেখিয়েছেন পথ। টানা দ্বিতীয় ফাইনালে নিশ্চিতভাবেই চ্যাম্পিয়ন হওয়ার সম্ভাবনা বেড়ে গেছে তাদের! জো রুট আছেন দারুণ ফর্মে, মরগান-স্টোকসরা তাকে দিচ্ছেন দারুণ সমর্থন। অন্যদিকে উইলিয়ামসন আছেন, টেইলর তাকে সমর্থন দিচ্ছেন কিছুটা ছায়া হয়ে থেকেই। এরপর আছেন অলরাউন্ডাররা। জস বাটলার শুরুতে চমক দেখালেও প্রায় চুপচাপ হয়ে গেছেন, তার প্রতিরূপ টম ল্যাথাম অবশ্য নিজেকে খুঁজে পাননি এখনও।

    দুই দলের দুই অধিনায়কই তাদের কাছে অন্যতম প্রেরণার নাম। কেন উইলিয়ামসন যখন এক সন্ন্যাসী, আশেপাশের সবকিছু ভুলে মগ্ন হতে পারেন ক্রিকেট জ্ঞানে। মরগান তখন একগুঁয়ে, কিন্তু নিজের কাজটা ঠিকঠাক করে যান। পরিকল্পনায় বিশ্বাস করেন, হয়ে ওঠেন কুল। যার হাতেই কাল ট্রফি উঠুক, নিশ্চিতভাবেই অখুশি হবেন না অনেকেই। 

    ইংল্যান্ডের জন্য এই ট্রফিটা গুরুত্বপূর্ণ, ক্রিকেটকে গ্রীষ্মকালীন এক খেলা থেকে ওপরের সারির এক খেলায় পরিণত করতে। নিউজিল্যান্ডে হয়তো বিপ্লব হয়ে যাবে না, তবে বৈশ্বিক মঞ্চের শিরোপা একটা ধাক্কা তো দিতেই পারে সেই শান্ত দেশটায়।

    লর্ডসে যিনিই জ্বলে উঠুন, তিনি ঢুকে যাবেন ইতিহাসে। যারাই জিতুক, তারা ঢুকে পড়বেন ইতিহাসে। আজ থেকে অনেকদিন পরও গল্প হবে হয়তো কোনও ইনিংস নিয়ে। হয়তো কোনও স্পেল নিয়ে। হয়তো কোনও ফিল্ডিং নিয়ে। এমনকি আম্পায়ারের কোনও সিদ্ধান্ত নিয়েও। 

    বিশ্বকাপ ফাইনাল বলে কথা। 

     

    রঙ্গমঞ্চ
    লর্ডস, লন্ডন 

    হোম অফ ক্রিকেট। ক্রিকেটের মক্কা। বিশ্বকাপ ফাইনালের জন্য এর চেয়ে উপযুক্ত ভেন্যু আর কীইবা হতে পারে! সেই টেরোকাটার ড্রেসিংরুম, লং-রুম, স্পেশশিপের আদলে মিডিয়া সেন্টার, মাঠের ঢাল, নতুন ওয়ার্নার স্ট্যান্ড, ওপাশে নার্সারি এন্ড, এপাশে প্যাভিলিয়ন এন্ড- লর্ডসের পুরোটাই ক্রিকেটের সঙ্গে মিশে আছে। লর্ডসের পুরোটাই ক্রিকেটের ইতিহাস, ক্রিকেটের ঐতিহ্য। 

    নতুন উইকেটে খেলা হবে, থাকতে পারে ঘাসের ছোঁয়া। আবহাওয়ার পূর্বাভাসও ক্রিকেটের পক্ষে, থাকতে পারে উজ্জ্বল রোদ। ফাইনালের টিকেট ভারতীয়রা আগেই সংগ্রহ করে রেখেছিলেন প্রায় অর্ধেক, সেসব ইংলিশ বা নিউজিল্যান্ড সমর্থকদের কাছে গেল কিনা, ফাইনালের আবহে একটা ছোট প্রশ্ন থাকতে পারে সেটি নিয়েই। 


    যাদের ওপর চোখ

    জো রুট  
    ইংল্যান্ডের ব্যাটিং অর্ডারের অন্যতম দৃঢ় স্তম্ভ। ইংল্যান্ডের টেস্ট অধিনায়ক। ইংল্যান্ড ক্রিকেটের রাজপুত্র। বাংলাদেশ ও অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে দুটি ইনিংস বাদ দিলে বাকিগুলিতে করেছেন কিছু না কিছু। ইংল্যান্ড দারুণ শুরুর জন্য ওপেনারদের দিকে তাকিয়ে থাকবে, তবে তারা কোনোভাবে ব্যর্থ হলেও হাল ধরার জন্য তিনি থাকবেন। নিজেদের ক্রিকেট ক্যারিয়ারের হয়তো সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দিন ইংল্যান্ড স্কোয়াডের ক্রিকেটারদের, রুট সে দিনে করতে পারবেন মনে রাখার মতো কিছু? 

    রস টেইলর 
    মার্টিন ক্রো নেই। তার শিষ্য আছেন। টেইলর ঠিক ব্যর্থ হয়েছেন, সেটা বলা যাবে না। সেমিফাইনালে বরং খেলেছেন দারুণ গুরুত্বপূর্ণ এক ইনিংস। তবে টেইলর-সুলভ সেই ধরনের কিছু দেখা যায়নি এখনও। হয়তো নিজের শেষ বিশ্বকাপ। নিউজিল্যান্ডের ক্রিকেটের অনেকদিনের এক ভরসার দিকে কাল কি তাকিয়ে থাকবে না তারা? 

    সম্ভাব্য একাদশ

    সেমিফাইনাল ব্যাটিংয়ের সময় চোট পেয়েছিলেন জনি বেইরস্টো, তবে সেটি গুরুতর কিছুতে রূপ নেয়নি। মইন আলির ফেরার সম্ভাবনাও প্রায় নেই বললেই চলে, নিউজিল্যান্ডের মিডল অর্ডারের গুরুত্ব বুঝে লিয়াম প্লাঙ্কেটও হওয়ার কথা প্রথম পছন্দ। সঙ্গে উইকেটে ঘাসের ছোঁয়াও সে সম্ভাবনাকে বাড়িয়ে দিচ্ছে আরও। সেমিফাইনাল থেকে তাই পরিবর্তন আসার কথা নয় ইংল্যান্ড একাদশে। 

    ইংল্যান্ড- জেসন রয়, জনি বেইরস্টো, জো রুট, অইন মরগান (অধিনায়ক), বেন স্টোকস, জস বাটলার (উইকেটকিপার), ক্রিস ওকস, লিয়াম প্লাঙ্কেট, আদিল রশিদ, জফরা আর্চার, মার্ক উড 

    নিউজিল্যান্ডও থাকতে পারে অপরিবর্তিত। ওপেনার হেনরি নিকোলস অবশ্য ফিটনেস টেস্ট দিয়েছেন, হ্যামস্ট্রিংয়ে চোট পাওয়ার পর। তবে তার খেলার সম্ভাবনা বেশি। আর আগের ম্যাচেই সেরা হয়েছেন ম্যাট হেনরি, বাইরে বসেই তাই থাকতে হতে পারে টিম সাউদিকে। বাড়তি স্পিনার খেলানোর সম্ভাবনাও নেই। মার্টিন গাপটিল ফর্ম খুঁজছেন, তবে তাকে ছাড়া নামার কথা নয় নিউজিল্যান্ডের। 

    নিউজিল্যান্ড- মার্টন গাপটিল, হেনরি নিকোলস, কেন উইলিয়ামসন (অধিনায়ক), রস টেইলর, টম ল্যাথাম (উইকেটকিপার), জিমি নিশাম, কলিন ডি গ্র্যান্ডোম, মিচেল স্যান্টনার, ম্যাট হেনরি, ট্রেন্ট বোল্ট, লকি ফার্গুসন 


    সংখ্যার খেলা 

    • ৪- ওয়ানডেতে মার্টিন গাপটিলকে ১১৫টি বল করেছেন ক্রিস ওকস, আউট করেছেন ৪ বার
    • ৩- ট্রেন্ট বোল্ট ৩ বার আউট করেছেন জো রুটকে, ৯৪ বল করে 
    • ২- শেষ দুই বিশ্বকাপ ফাইনালেই জিতেছে পরে ব্যাটিং করা দল। শেষ দুইবারই জিতেছে স্বাগতিক দল। ২০১১ সালে ভারত, ২০১৫ সালে অস্ট্রেলিয়া 


    তারা বলেন