• ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগ
  • " />

     

    নেভিলের সামনে নতুন চ্যালেঞ্জ

    নেভিলের সামনে নতুন চ্যালেঞ্জ    

    ২০১১ তে যে সময় অবসর নিলেন, সে সময় রায়ান গিগসের পর ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের হয়ে সবচেয়ে বেশী ম্যাচ খেলে ফেলেছেন। ওয়ান ক্লাব ম্যান “রেড নেভিল” ততোদিনে ওল্ড ট্র্যাফোর্ডে পার করে দিয়েছেন দীর্ঘ ১৯ বছর। স্যার আলেক্স ফার্গুসনের অধীনে খেলেছেন, জিতেছেন ২০টি ট্রফি। ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের অধিনায়কত্বও করেছেন প্রায় ৬ বছর। ইংল্যান্ড জাতীয় দলের হয়ে রাইটব্যাক হিসেবে সবচেয়ে বেশী ম্যাচ (৮৫) খেলা গ্যারি নেভিলের খেলোয়াড়ি জীবনের অভিজ্ঞতাটা তাই ঈর্ষণীয়ই। 

    খেলা ছাড়ার পর পরই নেভিল যোগ দেন 'স্কাই স্পোর্টস'-এর ফুটবল পন্ডিত হিসেবে। অসাধারণ বিশ্লেষণী দক্ষতা দেখিয়ে অল্প ক’দিনেই জনপ্রিয়তাও পান বেশ। তবে পরবর্তী অন্তত বেশ কিছুদিনের জন্য টিভি পর্দায় নেভিলকে দেখা যাবে অন্য ভুমিকায়! এবার থাকবেন তিনি ডাগ-আউটে। নিজ ফুটবল দর্শন আরো একবার মাঠে প্রয়োগ করার সুযোগ পাচ্ছেন গ্যারি নেভিল। একসময়ের অন্যতম সেরা ফুটবলার আর এখনকার অন্যতম সেরা ফুটবলবোদ্ধার সামনে এখন 'গ্রেট' কোচ হবার হাতছানিও।


    গতকালই ভ্যালেন্সিয়া তাদের নতুন কোচ হিসেবে ঘোষণা করেছে গ্যারি নেভিলের নাম। নুনো এস্পিরিতোর স্থলাভিষিক্ত “ম্যানেজার'' নেভিলের সাথে ভ্যালেন্সিয়ার চুক্তিটা এই মৌসুমের শেষ পর্যন্ত। তাই রুদ গুলিত, অ্যালান শিয়ারারদের মতো কোচিং থেকে আবারো বিশ্লেষক হিসেবে ফেরত আসবেন নাকি ফুটবল কোচিংয়েই মুন্সিয়ানা দেখাবেন তা এখনই নিশ্চিত করে বলা যাচ্ছে না।

    ফুটবল কোচিংটাও অবশ্য নেভিলের কাছে নতুন কিছু নয়। উয়েফার ''এ'' লাইসেন্স নিয়েছেন আগেই। ২০১২ সালে নিজ দেশের জাতীয় দলের সহকারী কোচ নির্বাচিত হন। তারপর থেকে পোল্যান্ড-ইউক্রেনে অনুষ্ঠিত  ইউরো ২০১২, ব্রাজিল বিশ্বকাপ ২০১৪, ফ্রান্স ইউরো ২০১৬ এর বাছাইপর্বে দায়িত্ব পালন করেছেন রয় হজসনের ডেপুটি হিসেবে। তবে এবারই প্রথম কোন দলের প্রধান কোচ হিসেবে অভিষেক হবে তার। চ্যাম্পিয়ন্স লীগে ফ্রেঞ্চ ক্লাব লিঁওর বিপক্ষে ডাগ আউটে দেখা যাবে নেভিলকে।



    স্পেনে অবশ্য কঠিন এক চ্যালেঞ্জই অপেক্ষা করছে নেভিলের জন্য। লীগের প্রথম ১৩ ম্যাচের মাত্র ৫টিতে জিতে লা লীগার পয়েন্ট টেবিলের 'টপ ফোর পজিশন' থেকেও ৫ পয়েন্ট পিছিয়ে ভ্যালেন্সিয়া। অন্যদিকে চ্যাম্পিয়ন্স লীগে দ্বিতীয় পর্বের আশা বাঁচিয়ে রাখতে লিঁওর বিপক্ষে জয় ছাড়াও পথ নেই। প্রথম ম্যাচেই তাই অগ্নিপরীক্ষা দিতে হচ্ছে নেভিলকে।

    কোচিং ক্যারিয়ার শুরু করার জন্য অবশ্য ভ্যালেন্সিয়াকে বাছাই করা আপাতদৃষ্টিতে সঠিক বলেই মনে হচ্ছে নেভিলের জন্য। গ্যারি নেভিলের আরেক ভাই পল নেভিল এই মৌসুমের শুরু থেকেই ভ্যালেন্সিয়ার সহকারী কোচের দায়িত্ব পালন করছেন। ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের একাডেমীর বিখ্যাত ''ক্লাস অফ নাইন্টি টু''-র এই দুই সহোদর দীর্ঘ দিন খেলেছেন একই ক্লাবেও। দুই নেভিল ভাই আর ''নাইন্টি টু ব্যাচ''-এরই আরো তিন ফুটবলার নিকি বাট, পল স্কোলস, রায়ান গিগসের ৫০% শেয়ারে কেনা স্যালফোর্ড এফসি ক্লাবের বাকী অর্ধেক মালিকানা কিনেছেন আবার ভ্যালেন্সিয়ার মালিক পিটার লিম। গ্যারি নেভিলের ফুটবল দর্শনে তিনি পূর্ণ আস্থা রাখবেন- সেটা তাই ধরে নেয়াই যায়। একই সাথে ইংল্যান্ড ও ভ্যালেন্সিয়ায় দায়িত্ব চালিয়ে নেওয়ার সিদ্ধান্তে দুই শেয়ারহোল্ডারের বোঝাপড়াটাও অনুমান করে নেয়া যায়। নিজের ফুটবল কোচিং শুরু করার জন্য এর চেয়ে ভালো সুযোগ হয়তো কমই পেতেন নেভিল।


    তবে বাগড়া বাধিয়ে বসতে পারে ভাষা সমস্যা। ক’দিন আগেই রিয়াল সোসিয়েদাদ বরখাস্ত করেছে আরেক ব্রিটিশ ম্যানেজার ডেভিড ময়েসকে। একবছর পরও স্প্যানিশে ময়েসের অদক্ষতা নাকি প্রভাবক হিসেবে কাজ করেছে তাতে। তবে এক্ষেত্রে নেভিল অবশ্য ছয় মাস আগে স্পেনে আসা ভাইয়ের কাছ থেকে সাহায্য পাবেন বলে সমাধানের রাস্তাটাও খোলা থাকছে।


    এ মৌসুমে রক্ষণাত্মক ফুটবল খেলা ভ্যালেন্সিয়া কিছুটা বিরক্তি ধরিয়ে দিয়েছে মেস্তালার সমর্থকদের মনে। নেভিলের জন্য প্রথম চ্যালেঞ্জ এখন এটাই। সাবেক ক্লাব ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের বর্তমান রক্ষণাত্মক ফুটবলের সমাধান এতোদিন দিয়েছেন মাইক্রোফোনের সামনে। এখন এবার মাঠে নেমে কিছু করেই দেখাতে হচ্ছে নেভিলকে! 

    ভ্যালেন্সিয়ার অন্তর্বতীকালীন কোচ থাকার সময়ও ইংল্যান্ড জাতীয় দলের হয়ে কাজ চালিয়ে যাবেন নেভিল। নেভিলের স্পেনে কাজ করার এই অভিজ্ঞতা ইংল্যান্ড দলকে ২০১৬ ইউরোতে আরো সাহায্য করবে বলে মনে করছেন রয় হজসন। নেভিলের হুট করে কোচিংয়ে যাওয়াটা তাই নিছকই শখের বসে নয়, বরং সুস্পষ্ট পরিকল্পনা থেকেই নেয়া হয়েছে। হয়তো ভবিষ্যৎ ইংল্যান্ড ম্যানেজার হিসেবে রয় হজসনের স্থানটিই পূরণ করবেন তিনি! অন্যদিকে ভ্যান গালের বর্তমান অবস্থার প্রেক্ষিতে অবশ্য কেউ কেউ গ্যারি নেভিলকে রেড ডেভিলদের পরবর্তী ম্যানেজার হিসেবেও দেখতে চাইছেন। তবে, সহকারী হিসেবে এতোদিন কাজ করায় গিগসই প্রথম পছন্দ হওয়ার কথা ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের জন্য। সেক্ষেত্রে অবশ্য এই “জুটি”কে এক সাথে কাজ করতেও দেখা যেতে পারে ভবিষ্যতে কোন একসময়।

    লরা ব্লাঁ, রয় কিন, ব্রায়ান রবসন, স্টিভ ব্রুসরা সবাই খেলেছেন স্যার আলেক্স ফার্গুসনের অধীনে। এদের সবাই পরবর্তীতে ম্যানেজারও হয়েছেন। তবে কেউই এখন পর্যন্ত সেভাবে স্যার অ্যালেক্সের যোগ্য উত্তরসূরী হতে পারেননি। গ্যারি নেভিল পারবেন কিনা সেটা এখনই অনুমান করা বেশ মুশকিল। তবে যদি পারেন তবে তিনিই হবেন, “গ্রেট প্লেয়ার, গ্রেট পন্ডিত, গ্রেট ম্যানেজার”।