• ক্রিকেট বিশ্বকাপ ২০১৯
  • " />

     

    'কালচারাল মিসম্যাচের' কারণেই চলে যেতে হলো রোডসকে?

    'কালচারাল মিসম্যাচের' কারণেই চলে যেতে হলো রোডসকে?    

    বিসিবির প্রধান নির্বাহী বলেছিলেন ব্যাপারটা ‘মিউচুয়াল সেপারেশন’ বা পারস্পরিক সম্মতি। স্টিভ রোডসের সঙ্গে সমঝোতার ভিত্তিতেই তার সঙ্গে সম্পর্কছেদ করেছে বিসিবি, পুরনো কথাটা আজ আবার বললেন বিসিবি সভাপতি নাজমুল হাসান পাপন। তবে ঠিক কী জন্য এক বছরের মধ্যেই রোডসকে চলে যেতে হলো সেই ব্যাখ্যা আজ বেক্সিমকো কার্যালয়ে দিলেন বিসিবি সভাপতি।

    স্টিভ রোডসের ব্যাপারে জাতীয় দলের খেলোয়াড়দের পর্যবেক্ষণ ছিল, তার মানব-ব্যবস্থাপনা বা ম্যান ম্যানেজমেন্ট ভালো হলেও কোচিং স্ট্র্যাটেজির দিক দিয়ে পোক্ত নন ততটা। বিসিবি সভাপতি নাজমুল হাসানের কথায় সেরকমই আভাস পাওয়া গেল, ‘আমি এটা প্রথম দেখি সেই এশিয়া কাপের ফাইনাল থেকে। আমি যখন দুবাইতে। তখন থেকেই কিন্তু জিনিসগুলো দেখছি। অনেক কিছু যেভাবে হচ্ছে জিনিসটা ওভাবে হচ্ছে না  নিউজিল্যান্ড সিরিজে প্লেয়াররা আমার কাছে এসেছে, বিশ্বকাপের সময় এসে বলেছে, যে কোচের সঙ্গে তাদেরও কোনও কথা হয়নি। শুধু টিম মিটিংয়ে খেলার আগের দিন সে এসে উপস্থিত হয়। কোনও স্ট্র্যাটেজি নিয়েও আলাপ হয় না, বা কিছুই না। সে শুধু ওখানে থাকে। আমাকে ক্রিকেটাররা এটা বলেছে। আমি ওদের থেকে শুনেই আপনাদের বলছি। আমার এরকম সরাসরি কোনও ইন্টারেকশান হয়নি।’

     

    রোডসকে অবশ্য একজন ভালো মানুষ বলেও রায় দিয়েছেন বিসিবি সভাপতি। তবে সেই সঙ্গে মনে করিয়ে দিয়েছেন, ‘উনি একজন ভালো মানুষ। এটা নিয়ে কোনো সন্দেহ নেই। একেক জনের একেক রকম কোচিং থাকে, স্টাইল থাকে। একেক জনের একেক রকম চিন্তাধারা থাকে। আমাদেরও একটা চিন্তাধারা আছে। কোনো কোনো কোচ মনে করে এটা একটা খেলা এটা নিয়ে সিরিয়াস হওয়ার কি আছে? আবার কোনো কোচ আমাদের সঙ্গে ছিল, তাঁরা মনে করতো জিততেই হবে। যে করেই হোক জিততে হবে। এমনও আছে হারা জিতা নিয়ে চিন্তা করার কি আছে? জিততেই হবে এটা নিয়ে চিন্তা নেই। এটার মধ্যে একটা পার্থক্য আছে।’

    বিশেষ করে ভারত ও পাকিস্তান ম্যাচের আগে সপ্তাহখানেকের বেশি একটা বিরতি ছিল। ওই সময় কোচের ব্যবস্থাপনা পছন্দ হয়নি বিসিবি সভাপতির, ‘বিশ্বকাপের আগে আমরা অনুশীলন করার জন্য আমরা এরেঞ্জমেন্ট করলাম। সেখানে আমাদের অনুশীলন হলো না। অপশনাল করে দেয়াতে কেউ আসলো না। এটা তো ‘কালচারাল মিসম্যাচ’। ও মনে করেছে প্রত্যেক প্লেয়ার নিজ ইচ্ছাতেই অনুশীলন করবে। কিন্তু এটা তো আমাদের সঙ্গে মিলে না। অপশনাল তাই কেউ আসনি। তাহলে তো লাভ হলো না। আমরা এতো টাকা খরচ করে এরেঞ্জমেন্টটা করেছিলাম। ইন্ডিয়া-পাকিস্তানের বিপক্ষে খেলার আগে পাঁচ পাঁচদিন ছুটি দেয়া... রেস্ট দিতে পারে। দুইটা দুই জিনিস। সবাই চলে গেছে বাইরে। ঘুরছে ফিরছে। মনযোগ তো এখানেই নষ্ট হয়। এই জিনিসগুলো, ওদের কালচারে হয়তো এগুলো ঠিক আছে। সমস্যা নেই। আমরা মনে করি আমাদের কালচারের সাথে এগুলো খাপ খায় না। এগুলো নিয়ে আলোচনা হয়েছে। আমরা দুই পক্ষ মিলে সিদ্ধান্ত নিয়েছি। ’ তার চেয়েও বিস্ময়কর, বিসিবি সভাপতি দাবি করেছেন এসব ব্যাপার তাকে না জানিয়েই করা হয়েছে।

    পাকিস্তানের সঙ্গে ম্যাচে বাংলাদেশের একাদশ নিয়েও অসন্তুষ্টি আছে বিসিবি সভাপতির, ‘পাকিস্তানের সঙ্গে ম্যাচের আগে আমি আগেরদিন সাড়ে  ১১টা পর্যন্ত টিমের খেলোয়াড়দের সাথে ছিলাম। ওখানে একটা প্ল্যান হয়েছে। মুশফিকের হাতে স্লিং লাগানো। মুশফিক স্কোয়াডে ছিল না। মাশরাফি আগের দিন থেকেই নেই। প্র্যাক্টিসও করেনি প্ল্যানিং স্ট্রেটিজিতেও ছিল না। মাশরাফিও ছিল না ওই ম্যাচে। আমরা স্কোয়াড ঠিক করলাম। সব ঠিক হলো কোচ ওয়াজ দেয়ার। এভরিবডি দেয়ার। পরদিন মাঠে দেখি অন্য টিম নামছে। এগুলো তো এর আগে কখনও হয়নি।’

    তবে বিসিবি সভাপতি এ নিয়ে আর কথা বলতে চাননি। নতুন কোচের ব্যাপারে দুইটি ব্যাপার অবশ্য অগ্রাধিকার দিয়েছেন। জাতীয় দলে কোচিং করানোর অভিজ্ঞতা তো লাগবেই, সেটি উপমহাদেশের কোনো দলের সঙ্গে থাকলে আরও বেশি ভালো বলে মনে করছেন। তাহলে কি ইঙ্গিতটা চন্ডিকা হাথুরুসিংহেকে ফিরিয়ে আনার দিকে? সেটি অবশ্য বিসিবি সভাপতি এড়িয়ে গেলেন। তবে রোডসের পর হাথুরুর দ্বিতীয় অধ্যায় শুরু হয়ে গেলে আপাতদৃষ্টিতে অবাক হওয়ার কিছু থাকবে না বলেই মনে হচ্ছে।