নর্দাম্পটনে বাঘের গর্জন
কোন একটা ক্রিকেট ম্যাচের অন্তিম লগ্ন সন্নিকটে। প্রতিপক্ষের আর মাত্র একটি উইকেট তুলে নিতে পারলেই জিতে যাবে ‘ফিল্ডিং টিম’। ঠিক এরকম একটা সময়ে একটা রান-আউটের সিদ্ধান্ত নেওয়ার ভার সমর্পণ করা হল তৃতীয় আম্পায়ারের কাছে । কিন্তু এ কী! ভিনদেশের সেই স্টেডিয়ামে আলোচ্য দলটির জয়ের আনন্দে উত্তেজিত দর্শককূল সোজা মাঠে নেমে পড়লেন, তাও কিনা ম্যাচটির আনুষ্ঠানিক সমাপ্তির আগেই!
প্রত্যাশার তুলনায় অনেক বেশি কিছু পেয়ে যাবার আনন্দোত্তেজনাটা বোধ হয় এমনই। ১৯৯৯ সালের ৩১শে মে নর্দাম্পটনের কাউন্টি গ্রাউন্ডে সেদিন ম্যাচ শুরুর আগে জয়ের কাছাকাছি কোন চিন্তাও ছিল না বাংলাদেশের খেলোয়াড়দের মধ্যে। এর আগের চার ম্যাচের তিনটিতে হেরে ইতিমধ্যেই ছিটকে গিয়েছিলেন বিশ্বকাপ আসর থেকে। একমাত্র জয়টা এসেছিল ক্রিকেটাঙ্গিনায় একেবারেই নবীন দল স্কটল্যান্ডের সাথে। অন্যদিকে প্রবল পরাক্রমে টানা চার ম্যাচ জিতে পাকিস্তানের কাছে এ ম্যাচটা ছিল নিছক আনুষ্ঠানিকতা। এমনকি পাকিস্তানীদের কারো কারো কথায় মনে হচ্ছিল তাঁদের অনুশীলন প্রক্রিয়ার একটা অংশ এই ম্যাচ।
যুক্তরাজ্যে বাংলাদেশী অভিবাসীর সংখ্যাটা অনেক আগে থেকেই বেশ বড়। আনুষ্ঠানিকতার ম্যাচ জেনেও স্বদেশকে সমর্থন জানাতে কাউন্টি গ্রাউন্ডে সেদিন হাজির হয়েছিলেন তাঁদের বড় একটা অংশ। দর্শক ভরপুর স্টেডিয়ামে প্রথমে ব্যাট করতে নেমে চমৎকার সূচনা এনে দেন দুই উদ্বোধনী ব্যাটসম্যান মেহরাব হোসেন অপি ও শাহরিয়ার হোসেন বিদ্যুৎ। এরপর আকরাম খান ও লোয়ার মিডল অর্ডারে খালেদ মাহমুদ সুজনের দৃঢ়তার সাথে পাকিস্তানী বোলারদের ওয়াইড বদান্যতা(২৮) যুক্ত হলে ৫০ ওভারে ৯ উইকেটে ২২৩ রান জমা করতে সক্ষম হয় বাংলাদেশ।
এটা হয়তো খুব বড় চ্যালেঞ্জ ছিল না পাকিস্তানের জন্য, তবে বাংলাদেশী বোলারদের অন্তত কিছুটা লড়াই করার মত পুঁজি তো বটেই। তো সেই পুঁজি সাথে করেই শুরু হল বোলিং। জয়ের ব্যাপারে চিন্তা করতে শুরু করে ‘টিম টাইগার্স’, যখন ৪২ রানেই প্রথম ৫ জন পাকিস্তানী ব্যাটসম্যান ফিরলেন প্যাভিলিয়নে। এর মধ্যে ৩ উইকেট নিয়ে ধ্বংসযজ্ঞে নেতৃত্ব দেন সুজন। এ পর্যায়ে আজহার মাহমুদকে সঙ্গী করে অধিনায়ক ওয়াসিম আকরাম গড়ে তুললেন প্রতিরোধ। ৫৫ রানের জুটিটা টেস্ট খেলুড়ে কোন দলকে প্রথমবারের মত হারানোর স্বপ্নে জল ঢেলে দেবার ভয়ও দেখাতে শুরু করে একসময়।
৯৭ ও ১০২ রানে এ দুজনের বিদায়ের পর বিজয়ের মুহূর্তের ক্ষণগণনা শুরু হয়ে যায়, আর বাকিটা তো ইতিহাস।
“আমার ঐ পারফরমেন্সের পরও যদি দল হেরে যেত, আমি হয়তো খুশি হতাম না মোটেই। কিন্তু জয়টাই সেই দিনটিকে একজন ক্রিকেটার হিসেবে আমার জীবনের শ্রেষ্ঠ দিনে পরিণত করেছে।” উইজডেনের কাছে দেয়া সাক্ষাতকারে ম্যাচটা নিয়ে এভাবেই নিজের অনুভূতি ব্যক্ত করেন খালেদ মাহমুদ। সেদিনের অলরাউন্ড পারফরম্যান্স তাঁকে এনে দিয়েছিল ম্যাচসেরার পুরষ্কার।