আফগানদের হাঁড়ির খবর জানেন বাংলাদেশ কোচ জেমি ডে
বিশ্বকাপ প্রাক বাছাইপর্বে লাওসকে হারাতে না পারলে ফুটবল থেকে প্রায় দুই বছরের জন্য নির্বাসনে যেতে হত বাংলাদেশকে। সেই বাধা পেরিয়েছে বাংলাদেশ, সামনে এখন শক্তিশালী সব প্রতিপক্ষ। প্রথম প্রতিপক্ষ আফগানিস্তান। বিশ্বকাপ ও এশিয়া কাপ বাছাইপর্বের দ্বিতীয় রাউন্ডে আফগান বিপক্ষে ম্যাচ দিয়ে শুরু হবে বাংলাদেশের নতুন যাত্রা। দেশ ছাড়ার আগে বাংলাদেশ কোচ জেমি ডে নতুন পরীক্ষাতেও ভালো কিছু করার স্বপ্ন দেখিয়ে গেলেন শুক্রবার বাফুফে ভবনে।
আফগানিস্তানের বিপক্ষে বাংলাদেশের ম্যাচটি হবে তাজিকিস্তানে। রবিবার, ১ সেপ্টেম্বর দেশ ছাড়বে বাংলাদেশ। তাজিকিস্তানে আফগানদের বিপক্ষে বাংলাদেশের ম্যাচ ১০ সেপ্টেম্বর। দেশ ছাড়ার আগে সংবাদ সম্মলেনে বাংলাদেশ কোচ জেমি ডে বলছেন, আফগানিস্তান সম্পর্কে সবকিছুই জানা আছে তার, বাকিটা নিজের দল আর কৌশলের ওপরই ভরসা করতে হবে তাকে।
এর আগে ২৬ জনের প্রাথমিক দল ঘোষণা করেছিলেন ডে। বাংলাদেশ দল তাজিকিস্তান রওয়ানা হবে ২৩ জনের স্কোয়াড নিয়ে। কোন তিনজন বাদ পড়ছে কোচ সেটা নির্ধারণ করবেন শনিবার। এর আগেরদিন সংবাদ সম্মেলনে অনুশীলন ও দলের ফিটনেস নিয়ে সন্তুষ্টি জানিয়েছেন বাংলাদেশ কোচ।
ফিফা র্যাংকিংয়ে আফগানদের বর্তমান অবস্থান ১৪৯। বাংলাদেশের চেয়ে ৩৩ ধাপ এগিয়ে আছে তারা। কঠিন প্রতিপক্ষ, সেটা জানা আছে বাংলাদেশের কোচেরও। তবে নিজের কৌশলের ওপর ভরসা রাখতে চান তিনি, "যাদের সঙ্গে খেলতে যাচ্ছি তারা আমাদের চেয়ে উচ্চতায় বেশি এবং শারীরিক দিক দিয়েও এগিয়ে। আমরা আগেও কাতার ও থাইল্যান্ড অনুর্ধ্ব-২৩ দলের সঙ্গে খেলেছি, তারা আমাদের চেয়ে ভালো ছিল। যাদের সঙ্গেই খেলা হোক না কেন খেলোয়াড়দের সেরাটা দিতে হবে। আমাদের সেট পিস থেকে ওদের আটকে রাখতে হবে, অহেতুক ফাউল করা যাবে না, অহেতুক ফ্রি কিক দেওয়া যাবে না। এখানে আসলে একজন বনাম একজন, এগারো জন বনাম এগারো জন- সেখানেই ফল নির্ধারণ হবে।"
"আফগানিস্তান সম্পর্ক আমি অনেক কিছুই জানি। ওদের খেলোয়াড়েরা কোন দেশের কোন ক্লাবে খেলে, কারা মাঠে নামবে, কারা বদলি হয়ে মাঠে নামতে পারে, কে ওদের ডেঞ্জারম্যান- সবকিছুই জানতে হবে। এই তথ্যগুলো এখনও আমি খেলোয়াড়দের দেইনি। আগামী সপ্তাহে এগুলো নিয়ে কাজ করব।"
বাংলাদেশ কোচ গত দশদিন অনুশীলন করেছেন আবাহনীর সাতজন খেলোয়াড় ছাড়া। এএফসি কাপে ম্যাচ শেষে উত্তর কোরিয়া থেকে ফিরে জাতীয় দলে যোগ দেওয়ার কথা তাদের। আবাহনী খেলোয়াড়দের ক্লান্তি দূর করতে তাজিকিস্তান পৌঁছে তাদের বিশ্রামে রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন কোচ, "আবাহনী খেলোয়াড়রা তাজিকিস্তানে গিয়ে হয়ত এক, দুইদিন বিশ্রাম পাবে। আমরা দেখব তাদের কী অবস্থা। সবারই আসলে লম্বা মৌসুম গেছে। এরপর হালকা বিশ্রামও পেয়েছে। দলের সবাই বেশ ভালো অবস্থায় ফিরেছে, আমি যেমনটা চেয়েছিলাম তাদের সে অবস্থাতেই পেয়েছি।"
আফগানিস্তানের বিপক্ষে সাম্প্রতিক সময়ে জিততে পারেনি বাংলাদেশ। তবে ইতিহাসকে আপাতত প্রতিবন্ধকতা মানছেন না ডে, "আমরা গত ১৪ মাসে দেখিয়েছি যে কোনো দলের বিপক্ষে আমরা ভালো খেলতে পারি। আফগানিস্তান র্যাংকিং এগিয়ে আছে, ওরা ভালো দল- আমাদের জন্য ম্যাচটা কঠিন হবে, বেশ কঠিন হবে। তবে ফুটবলে যদি আমরা ভালো করতে চাই এরকম দলের বিপক্ষে জিততে হবে। আমার মনে হয় না গত ১২/১৪ মাসে আমাদের চেয়ে বেশি খেটেছে ওরা।"
আফগানদের বিপক্ষে কোন কৌশলে খেলবেন সেটা এখনও ঠিক করেননি কোচ। ডের অধীনে বাংলাদেশ খেলছে কাউন্টার অ্যাটাকিং ফুটবল। আপাতত সেই কৌশলে পরিবর্তন আশার সম্ভাবনা নেই, সেরকম ইঙ্গিত দিয়েছেন কোচ। "আমরা যাদের সঙ্গে খেলেছি তারা সবাই আমাদের চেয়ে বেশ ভালো দল। কাউন্টার অ্যাটাকিং ফুটবল আমাদের সঙ্গে বেশ মানানসই। প্রতিপক্ষ হয় ৭০ শতাংশ বল পজেশন পাবে, কিন্তু আমাদের নিজেদের শেপ ঠিক রাখতে হবে।"
জেমি ডের অধীনে বাংলাদেশ দল উন্নতি করলেও গোল করা নিয়ে পুরনো সমস্যাটা থেকেই যাচ্ছে। প্রিমিয়ার লিগে এবার নাবিব নেওয়াজ জীবন ও মতিন মিয়া দুইজনই ছিলেন সর্বোচ্চ গোলদাতাদের দশজনের তালিকায়। তবে আলাদা করে ফরোয়ার্ডদের ম্যাচে বড় দায়িত্ব নেওয়ার থেকে দলগত প্রচেষ্টার ওপর জোর দিচ্ছেন কোচ, "মতিন, জীবন ওরা তো ইচ্ছা করে গোল মিস করে না। আমার মনে হয় না ফরোয়ার্ডদের শুধু আলাদা দায়িত্ব নিলে চলবে। পুরো দলেরই বেশি করে গোল করার সুযোগ তৈরি করতে হবে।"
সংবাদ সম্মেলনে জেমি ডের সঙ্গে ছিলেন মিডফিল্ডার রবিউল হাসানও। তিনিও তাজিকিস্তানে ভালো কিছু করে দেখানোর প্রত্যাশা জানিয়ে গেছেন, "অনেক ভালো অনুশীলন করেছি আমরা। আমরা তাজিকিস্তানে ঘুরতে বা আনন্দ করতে যাচ্ছি না। যেভাবে করেছি তাতে তাজিকিস্তানে ভালো কিছু করতে চাই। দেশের ফুটবলে হারানো গৌরব ফিরিয়ে আনতে চাই। দলের সবাইকে নিয়ে আত্মবিশ্বাস আছে, আশা করি আল্লাহ্ ভালো কিছু রেখেছে আমাদের জন্য। তাজিকিস্তানে গিয়ে ইনশাল্লাহ ভালো কিছু পাব।"
১০ তারিখ ম্যাচের আগে তাজিকিস্তানে ৩ ও ৫ সেপ্টেম্বর স্থানীয় দুইটি দলের বিপক্ষে প্রস্তুতি ম্যাচ খেলবে বাংলাদেশ। ওই দুইটি ম্যাচে বাংলাদেশের প্রতিপক্ষ স্থানীয় প্রথম বিভাগের দল এফসি কুক্তোশ ও সিএসকেএ পামির। ম্যাচ খেলার ক্ষেত্রেও বাংলাদেশের প্রস্তুতিতে ঘাটতি নেই বলে মনে করছেন কোচ, "দেখুন ইরানের সঙ্গে খেলে ৬-০ গোলে হেরে গেলে লাভ কী হত? আর ২৮, ২৯ তারিখে হয়ত ম্যাচ খেলা যেত, কিন্তু স্কোয়াডের ১৭-১৮ জন খেলোয়াড় নিয়ে তো আর এমন ম্যাচ খেলা যায় না। আপনার হাতে পুরো স্কোয়াড থাকতে হবে।"
বিশ্বকাপ ও এশিয়াকাপের বাছাইয়ে গ্রুপ 'ই' তে পড়েছে বাংলাদেশ। আফগানিস্তান ছাড়াও এই গ্রুপে বাংলাদেশের প্রতিপক্ষ কাতার, ওমান ও ভারত।