• আফগানিস্তানের বিপক্ষে একমাত্র টেস্ট
  • " />

     

    আফগানদের কাছ থেকে যে পাঁচ শিক্ষা নিতে পারে বাংলাদেশ

    আফগানদের কাছ থেকে যে পাঁচ শিক্ষা নিতে পারে বাংলাদেশ    

    একটা দল টেস্ট ক্রিকেটে পার করে ফেলেছে ১৯ বছর। আরেক দলের টেস্ট অভিজ্ঞতা মাত্র দুই ম্যাচের। তবে শেখার কোনো শেষ নেই- কথাটার মতো চট্টগ্রাম টেস্টে অমন হারের পর আফগানিস্তানের কাছ থেকে অনেক কিছু শিখতে পারে বাংলাদেশ।

     

    ১) টেস্টের প্রস্তুতি হোক টেস্টের মতোই

    যে দেশ ১১ বছর আগেও ডিভিশন ফাইভ খেলত, ক্রিকেটের অবকাঠামো বলতে কিছু ছিল না, তারা বাংলাদেশে এসে নাকানি চুবানি খাইয়ে গেল স্বাগতিকদের। এই টেস্টের জন্য আবু ধাবিতে বেশ কিছুদিন আগে থেকে আলাদা প্রস্তুতি নিয়েছে আফগানরা।  সেখানে নিবিড় কন্ডিশনিং ক্যাম্প করেছেন, আজ নবী বলেছেন তীব্র গরমের মধ্যে অনুশীলন করতে হয়েছে তাদের। বাংলাদেশের জন্য প্রস্তুতিতে এই নিবিড় অনুশীলন তাদের কাজে দিয়েছে। অন্যদিকে তাদের টি-টোয়েন্টি দল প্রস্তুতি নিয়েছে কাবুলে। টেস্ট শেষে রশিদ, নবী, আর আসগর ছাড়া বাকিরা সবাই ফিরে যাবেন দেশে। টি-টোয়েন্টির জন্যও থাকছে নতুন একটা দল। অথচ বাংলাদেশ টেস্ট ক্রিকেটে এত বছর পার করে ফেলার পরেও আলাদা দল তৈরি করতে পারেনি। এই টেস্টের আগেও টি-টোয়েন্টি দলসহ অনুশীলন হয়েছে একসঙ্গে, দিন দশেক আগে চূড়ান্ত দল ঘোষণার পরেই শুধু অনুশীলন হয়েছে আলাদা করে। লিটন-সৌম্যদের টেস্ট টেম্পারেমেন্ট নিয়ে প্রশ্ন আছে এখনও।

     

    ২) চাপ নয়, সাদা পোশাক উপভোগের

    টেস্ট ক্রিকেট বাংলাদেশের অনেকে ঠিক উপভোগ করেন না, বিশেষ করে পেসাররা; এরকম একটা ধারণা চালু আছে। ঘরোয়া চার দিনের ম্যাচে জাতীয় দলের ক্রিকেটারদের অংশ নেওয়া একরকম বন্ধই হয়ে গেছে, সাকিব আল হাসান কাল যেমন নিজেই মনে করতে পারলেন না, সর্বশেষ কবে চার দিনের ম্যাচ খেলেছিলেন। সাকিব যদিও কাল পালটা যুক্তি দিয়েছেন, এই ঘরোয়া ক্রিকেটে সহজ ও নির্বিষ বোলারদের পেয়ে ডাবল সেঞ্চুরি করে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে কতটা কী করা যাবে, সেটা নিয়ে সংশয় আছে তার। সেটা অবশ্য আলাদা তর্ক হতে পারে, তবে এই ম্যাচে সবার যে শরীরী ভাষা, তাতে টেস্ট ক্রিকেট খেলোয়াড়েরা আদৌ উপভোগ করেন কি না সেই প্রশ্ন উঠবেই। কাল যেমন আফগান উইকেটকিপার আফসার জাজাই কাল সংবাদ সম্মেলনে বলেছিলেন, টি-টোয়েন্টি বা ওয়ানডের সাফল্যের চেয়ে টেস্ট তাদের কাছে অনেক বড়। সেটার জন্য যে আলাদা পরিকল্পনা আছে, সেই তীব্র বাসনা বা প্রতিজ্ঞা আছে সেটা আফগানদের খেলায় বোঝা গেছে অনেকটা। বাংলাদেশের ক্রিকেটারদের মধ্যে কি আদৌ সেটা আছে?

     

    ৩) ১৯ বছর কেটে গেল, কেউ পেসার দেয়নি

    আফগানিস্তান জানত, এই উইকেটে পেসাররা খুব বেশি সাহায্য পাবে না। কিন্তু তারপরও একজন পেসারকে খেলিয়েছে। খুব বেশি বল করার সুযোগ না পেলেও ইয়ামিন আহমাদজাই খারাপ করেননি, প্রথম ইনিংসে সাদমান ইসলামকে আউট করে প্রথম ধাক্কাটা তিনিই দিয়েছিলেন। বাংলাদেশ স্কোয়াডে তিন জন পেসার নিয়েও কাউকে খেলায়নি। সাকিব আল হাসান বরং কাল বললেন, বাংলাদেশে টেস্টে পেসারদের যে ইকোনমি, তাদের খেলানো মানে একদিনেই অনেকটা ম্যাচ হেরে যাওয়া। আগেও বলেছেন, জায়গামতো সুযোগ কাজে লাগাতে হবে পেসারদের। কিন্তু টেস্ট ক্রিকেটে ১৯ বছর পার করে দেওয়ার পরও যদি পেসারদের প্রস্তুত করা না যায় তাহলে সে দেশের টেস্ট ভবিষ্যত নিয়েও প্রশ্ন উঠবে। অখ্যাত আহমাদজাই যেমন বোলিং করেছেন, বাংলাদেশের কোনো পেসার ততটাও করতে পারতেন কি না সেটা নিয়েও আছে সংশয়।

     

    ৪) ঘরের মাঠে কেন অতিথি?

    এই টেস্টের সবচেয়ে বড় বিতর্ক সম্ভবত উইকেট। সাকিব আল হাসান দ্বিতীয় দিনে এসে বলে গিয়েছিলেন, যেরকম উইকেট চেয়েছিলেন সেরকম তারা পাননি। কীরকম চেয়েছিলেন, সেটা তখন জানা না গেলেও এই কদিনের ঘটনাপ্রবাহ এবং দলীয় সূত্রে জানা গেছে, সাকিব প্রথম দিন থেকে টার্ন করবে এমন উইকেট চেয়েছিলেন। কিন্তু চট্টগ্রামের উইকেট আদতে ফ্ল্যাটই ছিল। কিন্তু সেটাও জানানো হয়নি সাকিবদের, সেটা নিয়ে নিজের অসন্তোষ গোপন করেননি বাংলাদেশ অধিনায়ক। কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে, দেশের মাটিতে উইকেট নিয়ে এত বেশি সমন্বয়হীনতা কেন? সাকিবের দাবি যদি ঠিক হয় তাহলে কিউরেটররা টিম ম্যানেজমেন্টের চাওয়া পূরণ করতে পারেননি কেন? আর সাকিব যদি অমন টার্নিং ট্র্যাকই চেয়েছিলেন, তাহলে মিরপুরই তো ভালো বিকল্প ছিল। অথচ আফগানিস্তান নিজেদের দেশে উইকেট পছন্দমতো উইকেট বানানো দূরে থাক, টেস্টই খেলতে পারে না। কিন্তু বিকল্প হোম ভেন্যু দেরাদুনে ঠিকই আয়ারল্যান্ডকে হারিয়ে জিতেছে নিজেদের প্রথম টেস্ট। বাংলাদেশকে সামনে এ নিয়েও ভাবতে হবে নিশ্চয়ই। 

     

     

     

     

    ৫) এবং টেস্ট মনস্কতা

    এই টেস্ট প্রতি বলে বলে বাংলাদেশের চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছে, সাদা পোশাকের মানসিকতায় তারা কতটা পিছিয়ে আফগানদের চেয়ে। বিশেষ করে ব্যাটসম্যানদের শট সিলেকশন থেকে শুরু করে উইকেট না দিয়ে আসার মানসিকতায় দুই দলের মধ্যে ছিল বিস্তর তফাত। এক নবীন ইব্রাহীম জাদরান যেভাবে ব্যাট করেছেন সেটা বাংলাদেশের বাকিদের জন্য ভিডিও ম্যানুয়ালে তুলে রাখার মতো। বাংলাদেশের বোলাররাও টানা ভালো জায়গায় বল করে যেতে পারেননি, মাঝে মধ্যে শরীরী ভাষায় ছিল ঢিলেমির ছোঁয়া। সেখানে আফগান বোলাররা এক মুহূর্তের জন্য বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানদের স্বস্তিতে থাকতে দেননি। টেস্ট ক্রিকেটের জন্য যে আলাদা মানসিকতার দরকার হয় সেটা বলছে এই ম্যাচের ফলই।