কিক অফের আগে : সবকিছুই বিপরীতে, তবুও আত্মবিশ্বাসী বাংলাদেশ
কবে, কখন
আফগানিস্তান-বাংলাদেশ
বিশ্বকাপ ২০২২ এশিয়া কাপ ২০২৩ বাছাই
দ্বিতীয় পর্ব
১০ সেপ্টেম্বর, ২০১৯
দুশানবে, তাজিকিস্তান
বাংলাদেশ বিশ্বকাপ ও এশিয়া কাপ বাছাইয়ের দ্বিতীয় পর্বে খেলবে সেটা খুব বেশি লোক হয়ত কয়েকদিন আগ পর্যন্তও বিশ্বাস করতে পারেননি। লাওসকে হারিয়ে বাছাইয়ের মূল পর্বে জায়গা করে নিয়ে বাংলাদেশ উন্নতির ছাপটাই শুধু রাখেনি, বাঁচিয়েছে দেশর ফুটবকেও। নইলে আবারও নির্বাসনে যেতে হত জাতীয় দলকে।
যে বাংলাদেশ একটা সময় জয়ের স্বাদ ভুলতে বসেছিল তারাই এখন টানা চার ম্যাচ ধরে অপরাজিত। এই আত্মবিশ্বাসটুকু পুঁজি করে গ্রুপ ‘ই’-তে নিজেদের প্রথম ম্যাচে আফগানিস্তানের বিপক্ষে খেলতে নামছে বাংলাদেশ। ফিফা র্যাংকিং বলছে বাংলাদেশের জন্য গ্রুপের সবচেয়ে সহজ প্রতিপক্ষ আফগানিস্তান। কিন্তু সে হিসাব শুধু কাগজ-কলমেই সীমাবদ্ধ। বাংলাদেশের চেয়েও আফগানিস্তান এগিয়ে আছে ৩৩ ধাপ। র্যাংকিংয়ে দেড়শর ভেতর অবস্থান তাদের।
আফগানিস্তানের হোম ভেন্যু তাজিকিস্তানে বাংলাদেশ অবশ্য গিয়ে পৌঁছেছে বহু আগে। দুইটি প্রস্তুতি ম্যাচও খেলেছে সেখানে বাংলাদেশ। তাজিকিস্তানের স্থানীয় দুইটি ক্লাবের সঙ্গে প্রথম ম্যাচে হার, পরের ম্যাচে ড্র- জয়শূন্য থেকেছে বাংলাদেশ। তবে কোচ জেমি ডে বলছেন দলের প্রস্তুতি নিয়ে খুশি তিনি, তবে ম্যাচের আগেরদিন টিম হোটেলে সংবাদ সম্মেলনে দলের জন্য সতর্কবার্তাও দিয়ে রাখছেন বাংলাদেশের ইংলিশ কোচ “খেলোয়াড়েরা ভালো অনুশীলন করেছেন। প্রীতি ম্যাচে দলের পারফরম্যান্স নিয়েও সন্তুষ্ট আমি। এই ম্যাচটা আসলে আমাদের জন্য খুবই কঠিন হতে যাচ্ছে।”
দুশানবে সেন্ট্রাল স্টেডিয়ামে ম্যাচটি হবে আস্ট্রো টার্ফে। দেশ ছাড়ার আগে কমলাপুর স্টেডিয়ামে একদিন অনুশীলন করেছে বাংলাদেশ। আর দশদিন সময়ে তাজিকিস্তানের মাঠেও ঝালিয়ে নিয়েছে তারা নিজেদের। তাই এটা খুব বড় সমস্যা হবে না বলে মনে করছেন ডে, “আমার মনে হয় হোম টিম কিছুটা সুবিধা পাবে। তবে আমরাও অ্যাস্ট্রোতে অনুশীলন করেছি এবং খেলেছি, এই মাঠে মানিয়ে নেওয়ার জন্য সবকিছুই করেছি আমরা।”
আফগানিস্তানের বিপক্ষে বাংলাদেশ খেলেছে মোট মোট পাঁচবার। এর ভেতর শুধু মাত্র প্রথমবারই জিতেছিল বাংলাদেশ, সেটাও ১৯৭৯ সালে। সবশেষে ২০১৫ সালে সাফ চ্যাম্পিয়নশিপে ৪-১ ব্যবধানে হেরেছিল বাংলাদেশ। সে কথা মনে করিয়ে দিতেই আরও একবার সতর্ক বাংলাদেশ কোচ, “আমরা সেই ১৯৭৯ সালে সবশেষ ওদের হারিয়েছি তার মানে দেখুন ম্যাচটা আমাদের জন্য কঠিন। আমরা যদি এই ম্যাচ থেকে ইতিবাচক কিছু পাই তাহলে সেটাই আমাদের জন্য অর্জন হবে।”
আরও পড়ুনঃ আফগানিস্তানের বধের টোটকা পেয়েছেন তো বাংলাদেশ কোচ?
আফগানিস্তান নিজেদের প্রথম ম্যাচে কাতারের বিপক্ষে হেরেছিল ৬-১ গোলে। তবে বাংলাদেশের বিপক্ষে ম্যাচটি পুরোপুরি আলাদা হবে বলে মনে করছেন আফগানিস্তান কোচ আনুস দস্তগির, “কাতারের সঙ্গে ম্যাচের চেয়ে এটা পুরোপুরি ভিন্ন হবে। বাংলাদেশ অবশ্য দল হিসেবে ভালো, নতুন কোচ এসেছে তাদের। খেলোয়াড়রাও ঘরোয়া লিগে ভালো করেছে। আমরা পাঁচবার ওদের সঙ্গে খেলে মাত্র একবার জিতেছি। তবে এখন কেউ বলতে পারবে না কে জিততে যাচ্ছে। শারীরিক ও ট্যাকটিক্যাল দিক দিয়ে আমরা ওদের চেয়ে এগিয়ে আছি।"
বাংলাদেশ কোচ জেমি ডেও কাতারের বিপক্ষে আফগানিস্তান ম্যাচ নিয়ে কথা বলেছেন একই সুরে। আগের ম্যাচে আফগানিস্তানের বড় ব্যবধানের হার এই ম্যাচে তাদের খেলায় কোনো প্রভাব ফেলবে না বলেই মত তার।
শারীরিক ও মানের দিক দিয়ে যে আফগানিস্তান এগিয়ে আছে সেটা বাংলাদেশ কোচেরও জানা। তার রক্ষণাত্মক কৌশলেও পরিবর্তন আসার সম্ভাবনা তাই নেই বললেই চলে। তবে বাংলাদেশ অধিনায়ক জামাল ভূঁইয়া ড্র বা হার এড়ানোর বদলে পুরো তিন পয়েন্টের আশাই করছেন, "আফগানিস্তান খুবই শক্তিশালী দল। আমরা নয়দিন আগে এখানে এসেছি, প্রস্তুতি সেরেছি। আমরা সবাই বেশ আগ্রহ নিয়ে অপেক্ষা করছি নিজেদের সেরাটা উজাড় করে দিয়ে পূর্ণ পয়েন্ট নিয়ে ফিরতে।"
বাংলাদেশ ছাড়ার আগে জেমি ডে বলে গিয়েছিলেন আফগানিস্তান দলটার সম্পর্কে ভালোই জানা আছে তার। তাজিকিস্তানের সংবাদ সম্মলনেও সেই বিষয়ে জোর দিয়েছেন আবার, "আফগানিস্তানের শেষ ৩, ৪টি ম্যাচ আমি দেখেছি। কাতারের সঙ্গে আসলে ম্যাচের ওই ফল অনুমিতই। এটা তেমন প্রভাব ফেলবে না। আফগানিস্তানের অনেক খেলোয়াড় ইউরোপে খেলে। যেটার মান আসলে আলাদা। বাংলাদেশের ফুটবলারদের চেয়ে এখানে তারা এগিয়ে।"
তাহলে চার বছর আগের বাংলাদেশ আর এখনকার বাংলাদেশের পার্থক্য কোথায়। আফগানিস্তানের কাছে উড়ে যাওয়া বাংলাদেশ কেনই বা স্বপ্ন দেখছে এতোকিছুর পরও? জেমি ডের কাছে জবাব আছে সেটারও, "আমরা গত ১৪ মাসে কঠোর পরিশ্রম করেছি। দলের খাদ্যাভাস পরিবর্তন থেকে নিয়ম সবকিছু নিয়েই কাজ করেছি। এই দল আর চার বছর আগের বাংলাদেশ পুরোপুরি আলাদা। গত অনেকদিন ধরেই আমরা একসঙ্গে আছি, কার কাছ থেকে কী প্রত্যাশা খেলোয়াড়েরাও সেটা জানে। এটা একটা তরুণ দল যেটা উন্নতি করছে। আফগানিস্তানকে হারিয়ে সেই ধারাটাই চালু রাখতে পারলে সেটা দারুণ হবে।" আপাতত বাংলাদেশ আর জেমি ডের ভরসা তাই গত প্রায় দেড় বছরের পরিশ্রম আর সাম্প্রতিক সময়ের সাফল্য।
যাদের ওপর চোখ
জামাল ভূঁইয়া
টেকনিক্যাল দিক দিয়ে বাংলাদেশের সবচেয়ে নিখুঁত ফুটবলার। আফগানিস্তানের বিপক্ষে রক্ষণটাই হয়ত বাংলাদেশের জন্য ফল নির্ধারক হয়ে উঠবে। শেষ তিন ম্যাচে কোনো গোল হজম না করা ডিফেন্সিভ জুটিতে তাই পরিবর্তন আসার সম্ভাবনা কম। রক্ষণের ওপর ভরসা রাখতেই পারেন জেমি ডে। তবে পুরো সময় রক্ষণ করেও যে ম্যাচ বাঁচানো যাবে না সেটা ভালো করেই জানা আছে তার। মিডফিল্ডে তাই জামাল ভুঁইয়ার ভূমিকা বড় প্রভাব ফেলতে পারে ম্যাচে। লাওসের বিপক্ষে শেষ ম্যাচটা ভালো যায়নি বাংলাদেশ অধিনায়কের। আফগানিস্তানকে হারাতে নিজেদের সেরাটা দেওয়ার কথা বারবার করে বলেছেন কোচ, তাতে জামালকে নেতৃত্ব দিতে হবে সবার আগে।
জাবের শারজা
বাংলাদেশের জন্য সবচেয়ে ভয়ঙ্কর জাবের। দলের মূল স্ট্রাইকারও তিনি। ফিনল্যান্ডের শীর্ষস্তরের ক্লাব এইচআইফকে নাম লিখিয়েছেন তিনি এবার। জাবের ডিবক্সের ভেতর যতখানি ভয়ঙ্কর, ফ্রি কিক নেওয়ার ক্ষেত্রেও ততোখানি। উচ্চতায় অবশ্য খুব লম্বা নন তিনি, তবে শারীরিক শক্তির দিক দিয়ে এগিয়ে অনেকখানি। তীক্ষ্ণ ফিনিশে যে কোনো সময়ে চমকে দেওয়ার ক্ষমতা আছে তার প্রতিপক্ষকে। কাতারের বিপক্ষে আফগানরা ৫-৪-১ ফর্মেশনে খেলায় খুব একটা সুবিধা করতে পারেননি সে ম্যাচে। এবার অবশ্য অন্য ছক কষার কথা আফগানিস্তান কোচের। জাবের তাই হয়ে যেতে পারেন আফগানিস্তানের ম্যাচ জয়ের নায়ক।
বিশ্বকাপ ও এশিয়া কাপ বাছাইয়ে বাংলাদেশের ফিক্সচার দেখুন এখানে
হেড টু হেড
১৯৭৯ সালে প্রথম দেখায় বাংলাদেশ জিতেছিল। তবে সেটা এখন ইতিহাস ছাড়া আর কিছুই নয়। এরপর দুইদলের দ্বিতীয় দেখা ২০০৮ এ সাফ চ্যাম্পিয়নশিপে। ২-২ গোলে ড্র হয়েছিল সে ম্যাচ। পরের বার প্রীতি ম্যাচে ২০১৫ সালে দুইদল ড্র করে ১-১ গোলে। ওই বছরের শেষদিকে সাফ চ্যাম্পিয়নশিপেই গ্রুপপর্বের ম্যাচে আফগানদের কাছে উড়ে গিয়েছিল বাংলাদেশ।
দলের খবর
কোনো দলেই ইনজুরি সমস্যা নেই। স্কোয়াডের সবাই ফিট আছেন। সেরা একাদশ বাছাইয়ের ক্ষেত্রে কোনো প্রতিবন্ধকতা নেই তাই দুই কোচের।