• বিপিএল ২০১৯
  • " />

     

    বিপিএলে থাকছে না কোনো ফ্র্যাঞ্চাইজি : কীভাবে, কেন?

    বিপিএলে থাকছে না কোনো ফ্র্যাঞ্চাইজি : কীভাবে, কেন?    

    বদলে যাচ্ছে বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগ, বিপিএলের কাঠামো। আগামী আসর থেকে ফ্র্যাঞ্চাইজিদের হাতে আর থাকছে না ঘরোয়া ক্রিকেটের টি-টোয়েন্টির এই টুর্নামেন্ট। বুধবার মিরপুরে বিসিবি প্রেসিডেন্ট নাজমুল হাসান জানিয়েছেন এসব। মূলত ফ্র্যাঞ্চাইজিগুলোর সঙ্গে মতৈক্যে পৌঁছুতে পারেনি বিসিবি। 

    নতুন কাঠামো নিয়ে উঠেছে বেশ কিছু প্রশ্ন। বিসিবি প্রেসিডেন্টের বলা কথা অনুযায়ী খোঁজা হয়েছে সেসব প্রশ্নেরই উত্তর….


    ফ্র্যাঞ্চাইজিরা বাদ কেন?

    ডিসেম্বরে বিপিএল শুরুর আগে থেকেই ফ্র্যাঞ্চাইজিগুলোর সঙ্গে দফায় দফায় মিটিং করেছিল টুর্নামেন্টের গভর্নিং কাউন্সিল। সেখানে নিজেদের বিভিন্ন দাবি-দাওয়া তুলেছিল ফ্র্যাঞ্চাইজিগুলি। বিসিবি সভাপতি বলছেন, তাদের এসব দাবি মেনে নেওয়া সম্ভব হচ্ছে না, বিপিএলের মূল মডেলের সঙ্গে সেগুলো সাংঘর্ষিক বলে, “আমরা কোনো ভাবেই ‘অ্যাডজাস্ট’ করাতে পারছি না। আবার কিছু কিছু ফ্রাঞ্চাইজি বলেছে যে এক বছরে দুটা বিপিএল না হোক।  খেলবো না যে তা না, এক বছরে দুই বিপিএল তারা চায় না। বেশি লোড পড়ে যায়।  সবকিছু চিন্তা করে (সিদ্ধান্ত নিয়েছি) এবারের বিপিএল আমরা বিসিবি নিজের অর্থায়নে করব।”

    “‘রেভেনিউ শেয়ার’ (লভ্যাংশ ভাগাভাগি) করা সম্ভব নয়। আমাদের ৮০ কোটি টাকা দিক, আমরা ৪০ কোটি দিয়ে দেব।  হয়ে গেল! (আগে) ৮ কোটি টাকা করে নিত। আমরা সাত কোটি ছেড়েই দিয়েছি। মাত্র এক কোটি নিচ্ছি। আবার কী চায়? একটা জিনিস মনে রাখবেন, আমরা কী চাই। আমরা চাই যারা বিপিএলে আসবে তারা বিপিএলে খেলার উন্নয়ন, খেলোয়াড়ের উন্নয়নের জন্য আসবে। ব্যবসা করার জন্য নয়। এখানে সেই সুযোগ নেই।”

    “আমরা এখন যেটা দেখছি, তাতে ওদের দাবি দেওয়া কোনোভাবেই মানা সম্ভব নয়।  এবার চালিয়ে দেখি কী সমস্যা, কেন তারা লোকসানের কথা বলছে। এগুলো তো বুঝতে হবে। আমাদের হিসেবে তো এগুলো হওয়ার কথা না।”।

    “(বিপিএলের ভবিষ্যত) অন্ধকার কেন? আমরা চালাব। বিসিবি চালাতে পারবে না? শোনেন, (ফ্র্যাঞ্চাইজিগুলির) লোকসানই যদি হয় তাহলে ৮০ লাখ টাকার ক্রিকেটারকে ৪ কোটি টাকা দিয়ে কেউ নিত না। এই যে এগুলো করছে বেআইনিভাবে। কতো দাম দিয়ে নিচ্ছে তা আপনারা জানেনও না।  খোঁজ নিয়ে দেখেন। লোকসান হলে তো কেউ এতো টাকা দেয় না।  নিশ্চিত অনেক লাভ করে, আরও লাভ করতে চায়।”

    এবং….

    ফ্র্যাঞ্চাইজিগুলি বিপিএলের আইন মানছে না বলেও জানিয়েছেন বিসিবি প্রেসিডেন্ট, “অনেক দাবি আছে, প্রথমত যেটা আইনে নেই সেটা আমরা করতে পারব না। আপনারা কথাটা বুঝেন, আজ আমরা যদি এটা মেনে নিই, সামনে কী হবে। আমার কাছে (অন্তত) ২০টা ক্রিকেটার এসেছে, ওরা এখন ওদের মতো আরেকটা ফ্রাঞ্চাইজির কাছে যেতে চায়। এটা কী ধরনের কথা। এটা কি হতে পারে ফ্র্যাঞ্চাইজি লিগে? সবাই আলাদা আলাদা চলে যাবে। এটা কোনো টুর্নামেন্ট হলো?  একজন দুজনকে দেখে দেখে বাকিরা সব শুরু করছে। এসব বন্ধ। ড্রাফটে আসবে, ড্রাফট থেকে নেবে। এবার যেটা হবে সেটাই সব সময় চলবে।  ড্রাফটের পর যদি  রিটেনশন থাকে তাহলে রিটেনশনের পর তিনটা পরিবর্তন করতে পারবে ফ্র্যাঞ্চাইজিগুলি। শেষ!”

    ফ্র্যাঞ্চাইজিরা না চাইলেও কেন বিপিএল? 

    মূলত বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী পালনেই এবারের বিপিএল চালিয়ে নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিসিবি, “আমরা কোনো ফ্রাঞ্চাইজিতে যাচ্ছি না। এবং সব এর পিছনে সবথেকে বড় কারণ, বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী আছে আগামী বছর।  আমরা ক্রিকেট দিয়ে এই উৎসব শুরু করতে যাচ্ছি। আমরা চাচ্ছি এবারের বিপিএল বঙ্গবন্ধুর নামে উৎসর্গ করে, বঙ্গবন্ধু নামে করব।”

    ফ্র্যাঞ্চাইজি না থাকলে দলগুলি থাকবে কার অধীনে? 

    ক্রিকেটারদের থাকা-খাওয়া থেকে শুরু করে সবকিছু বহন করবে বিসিবি, “এবার কোনো ফ্র্যাঞ্চাইজি না থাকলেও প্রত্যেকটা যা দল ছিল সেটা ঠিক থাকবে। শুধু ম্যানেজমেন্ট বিপিএল করবে, ক্রিকেটারদের টাকা-পয়সা, থাকা-খাওয়া, গাড়ি সব বিসিবি থেকে ব্যবস্থা করা হবে। দলগুলোর মালিকানা সব বিসিবির থাকবে।”

    “এতে আমি মনে করি ওরা সবাই খুশি হবেন। যারা করতে চাচ্ছিলেন না তারা তো অবশ্যই খুশি হবেন।  যাারা আর্থিক ক্ষতির কথা বলছিলেন তারা তো আরও বেশি খুশি হবেন। পুরো টাকাটাই বেঁচে যাবে। আমরাই এবার সব করবো।”

    দলগুলি চলবে কীভাবে? 

    বিসিবি নিজের ব্যবস্থাপনায় সবকিছু করতে চাইলেও স্পন্সরদের কথা বলেছেন বিসিবি প্রেসিডেন্ট, “আমরা দলীয় স্পন্সর নিতে পারি। কেউ যদি এগিয়ে আসতে চায় তাহলে আসতে পারে। তবে দলগুলোর মালিকানা সব বিসিবির থাকবে। বিগব্যাশের কথা চিন্তা করতে পারেন আপনারা। একই ফরম্যাট।

    “ক্রিকেটারদের পেমেন্ট সব কিছু বিসিবি করবে। এখনও এটা প্রাথমিক আলাপে আছে। কাল-পরশুর মধ্যে সব ঠিক হয়ে যাবে। (কোচিং স্টাফ, ম্যানেজমেন্ট) সব আমরা দেবো।  তবে যদি দলের স্পন্সর নেই তাহলে তারা কিছু কিছু করতে পারবে। যদি তারা সরাসরি সাইন করে বিদেশি কিছু খেলোয়াড় আনতে চায়, তারা আনতে পারবে।  নিতে চাইলে নিতে পারবে। কেউ যদি আরও দামি কোচ আনতে চায় আনতে পারবে। এই সুযোগ তাদের দেওয়া হবে।  যারা স্পন্সর তাদের সুবিধা তো দেওয়া হবে।”

    কে কোন দলে খেলবেন? 

    ক্রিকেটাররা কে কোন দলে খেলবেন, সেটা বাছাইয়ের জন্য ড্রাফট হবে বিপিএলের নিয়মেই, “যা নিয়ম আছে সেই অনুযায়ী চলবে।  ড্রাফটে অকশন করে যার যার মতো করে দল তৈরি করবে। বিদ্যমান যা আছে তাই হবে। এবারের মতোই তো আয়োজন হচ্ছে তাই সব ঠিক থাকবে।” 
     
    দলের নামগুলো ঠিক থাকবে?

    বিসিবি চাইছে, যেসব শহরের নামে দলগুলি আছে, সেসব শহরের নামগুলি থাকুক। তবে এটা স্পন্সরের ওপর নির্ভর করবে, “আমরা চেষ্টা করবো ঠিক রাখতে। কিছু না হলেও-  ঢাকা ,চট্টগ্রাম, খুলনা এভাবে থাকবে।”

    ভবিষ্যতেও কি চালাবে বিসিবিই? 

    এ কাঠামোতে এবারের আসরের কথা চালানোর কথা বলেছেন তিনি। ভবিষ্যতে ফ্র্যাঞ্চাইজি আসতে চাইলেও নিয়ম মেনে আসতে হবে বলে জানিয়েছেন তিনি, “বিসিবি এটা চালাবে কিনা তা নিশ্চিত নয়। যদি প্রয়োজন হয় করবে। আমরা একটা ‘বুক’ তৈরি করে দেব আউটলেটের। যাদের আসতে মন চায় আসবে। যাদের মন না চায় আসবে না। কিন্তু এসে কোনো নিয়ম কানুন ভঙ্গ করতে পারবে না।”