'ভাঙা ঘরে' চ্যাম্পিয়ন লিভারপুলকে হারিয়ে উদ্ভাসিত নাপোলি
সান পাওলোর সংস্কারকাজ চলছে এখনও, ড্রেসিংরুমের অবস্থা সুবিধার নয়। ম্যাচের আগে লিভারপুলের কাছে এ নিয়ে ক্ষমাও চেয়েছে নাপোলি। তবে ম্যাচে লিভারপুল ক্ষমা পেলো না নাপোলির কাছে। হেরে গেল ২-০ গোলে।
ম্যাচের মিনিট দশেক বাকি থাকতে পাওয়া নাপোলির পেনাল্টি নিয়ে প্রশ্ন উঠতে পারে, পেনাল্টিটি কি আদৌ ছিল? ভিএআর কি বদলাতে পারত রেফারির সিদ্ধান্তটা? তাতে কিছু যায় আসে না অবশ্য। ড্রিস মারটেনসের বাঁদিকে নেওয়া পেনাল্টি শটটা ঠিক দিকে ঝাঁপিয়ে পড়া লিভারপুল গোলরক্ষক আদ্রিয়ানের হাত ছুঁয়েছিল। তবে তাতেও কিছু যায় আসে না। সান পাওলোর ‘ভাঙা ঘরে’ লিভারপুলের বিপক্ষে দুর্দান্ত এক জয়ের দিকে যে ওই পেনাল্টি থেকে পাওয়া গোলেই এগিয়ে গেল নাপোলি। ইনজুরি টাইমের ২ মিনিটে গিয়ে ফার্নান্দো ইয়োরেন্তের গোল ঠুকলো লিভারপুলের কফিনের চূড়ান্ত পেরেকটা। ১৯৯৪-৯৫ মৌসুমে এসি মিলানের পর চ্যাম্পিয়নস লিগের ডিফেন্ডিং চ্যাম্পিয়ন হিসেবে নিজেদের প্রথম ম্যাচ হেরে ইতালি থেকে পয়েন্ট খুইয়েই ফিরতে হচ্ছে লিভারপুলকে। গত মৌসুমের মতো এবারও অ্যাওয়ে ম্যাচে নাপোলির কাছে হেরে গেল তারা।
গোলশূন্য কিন্তু রোমাঞ্চকর প্রথমার্ধের পর দ্বিতীয়ার্ধের শুরুটা হয়েছিল আরও উত্তেজনা নিয়ে। ফার-পোস্টে নেওয়া মার্টেনসের ভলিটা উঁচু করে রাখা লিভারপুল গোলরক্ষক আদ্রিয়ানের ডানহাতে উড়ে গেল বারের ওপর দিয়ে, শেষের ওই পেনাল্টিটা ছাড়া ম্যাচটা দারুণ গেছে চ্যাম্পিয়নস লিগে অভিষিক্ত এই গোলকিপারের। এর মিনিট সতেরো পর সালাহর ফার-পোস্টে নেওয়া শটটা এবার দারুণভাবে আটকে দিলেন আরেক অভিষিক্ত মেরেট। এর মাঝে থাকলো আক্রমণ আর প্রতি-আক্রমণ, হয়তো গোল না করার হতাশাতেই পরপর দুই হলুদ কার্ড খেয়ে বসল লিভারপুল। বর্তমান চ্যাম্পিয়নরা চেপে ধরার চেষ্টা চালিয়ে গেল নাপোলিকে, ফিরমিনো-মানের সমন্বিত আরেকটি আক্রমণ বাঁচিয়ে দিলেন মেরেট, আবারও।
নির্ধারিত সময়ের মিনিট দশেক বাকি থাকতেই আদতে নির্ধারিত হয়ে গেল ম্যাচের ভাগ্য। ডানদিক থেকে ভেতরের দিকে ঢোকা হোসে মারিয়া কায়েহন পড়ে গেলেন অ্যান্ড্রু রবার্টসনের চ্যালেঞ্জে, অবশ্য সেটা যে খুব শক্ত চ্যালেঞ্জ ছিল তা বলার উপায় নেই। জার্মান রেফারি দিলেন পেনাল্টির সিদ্ধান্ত, ভিআরও সেটিকে খুব বড় ভুল হিসেবে চিহ্নিত করলো না। বাকি কাজটা সারলেন মারটেনস। ‘ভাঙা’ সান পাওলোতে যেন ঢুকলো অবাক জোছনা।
জর্ডান হেন্ডারসনকে তুলে শাকিরিকে নামিয়ে শেষ চেষ্টা করলেন ইয়ুর্গেন ক্লপ, উলটো আরেকটি গোল খেয়ে বসল লিভারপুল। ৬৮ মিনিটে বদলি হিসেবে নামা ইয়োরেন্তে বলটা পেয়ে গেলেন লিভারপুলের রক্ষণের ভুলে। সে ভুলের নেতৃত্ব দিলেন ভার্জিল ভ্যান ডাইক! মার্টেনসের হাত থেকে বাঁচতে নিজেদের অঞ্চলেই মাটিপকে পাসটা বাড়ালেন ইউয়েফার বর্ষসেরা ফুটবলার, তবে মাঝখান থেকে ছোঁ মেরে সেটি নিয়ে নিলেন ইয়োরেন্তে। আদ্রিয়ানকে বোকা বানানোর কাজটাতেও ভুল করলেন না এরপর। পুরো ম্যাচে লিভারপুলের দারুণ খেলাকে বুড়ো আঙুল দেখানোর সব উপকরণ স্কোরশিট পেয়ে গেল তাতেই।
ভ্যান ডাইকের ভুলের দিনে এদিন দুর্ভেদ্য হয়ে উঠেছিলেন আরেক ডিফেন্ডার- কালিদু কুলিবালি। প্রথমার্ধের হাইলাইটসের অন্যতম বড় অংশ ছিলেন তিনিই। প্রথমার্ধে গোল হয়নি, তবে গোলের ঠিক কম যেসব রোমাঞ্চ, সেসবের কমতি ছিল না। মোটামুটি সমানে-সমান ছিল দুই দল।
শুরুতে নাপোলির একটা গোল বাতিল হয়েছে অফসাইডে, অবশ্য ফাবিয়ান রুইজের ১৫ গজ থেকে করা পরপর দুই শট আদ্রিয়ান আটকে না দিলে সে অফসাইড পর্যন্ত যেতেই হতো না নাপোলিকে। সে অর্থে কম চ্যালেঞ্জ ছিল নাপোলির অভিষিক্ত গোলকিপার মেরেটের ওপর, তার আগেই বেশিরভাগ কাজ সেরেছেন কুলিবালি, সালাহদের বেশ কয়েকটি আক্রমণ সফল হয়নি তার কারণেই। ৪৩ মিনিটে লিভারপুলের সেরা সুযোগটা পেয়েছেন ফিরমিনো, কর্নারের পর মিলনারের ক্রস একেবারে ডিফেন্স-লাইনের সামনে ফাঁকায় পেয়েছিলেন তিনি, তবে তার হেড গেছে বাইরে দিয়েই।
মাঝে সালাহ ডিবক্সের বাইরে থেকে সুযোগ নিতে চেয়েছিলেন, কাজে আসেনি সেটি। কুলিবালিকে একবার পরাজিত করেছিলেন সালাহ, অবশ্য তার চ্যালেঞ্জে সালাহ পড়ে গেলে পেনাল্টির সম্ভাবনা জাগতেও পারতো। সে দফা সালাহ ফিনিশ করতে পারেননি, নাপোলি বা লিভারপুলের অন্য আক্রমণগুলোও শেষ পর্যন্ত রূপ নেয়নি গোলে।
শেষ পর্যন্তও ম্যাচে বলের অধিকার দুই দলেরই ছিল সমান-সমান। তবে সান পাওলোতে ম্যাচের শেষে গিয়ে দেখা দেওয়া ওই পেনাল্টিই গড়ে দিল ব্যবধান, বদলে দিল সব চিত্র। ফিরিয়ে আনলো ইতিহাস। যে ইতিহাসে উদ্ভাসিত হলো নাপোলি, আর শুরুর গেরোতে আরেকবার আটকে গেল লিভারপুল।
একাদশ
নাপোলি : মেরেট, অ্যালান, মানোলাস, কুলিবালি, মারিও রুই, ক্যালেহন, রুইজ, লোজানো, মারটেনস, ডি লরেনজো, ইনসাইন
লিভারপুল : আদ্রিয়ান, আলেকজান্ডার-আরনল্ড, মাটিপ, ভ্যান ডাইক, রবার্টসন, ফাবিনহো, মিলনার, হেনডারসন, রবার্তো ফিরমিনো, মানে, সালাহ