টের স্টেগান বীরত্বে ডর্টমুন্ড থেকে পয়েন্ট নিয়ে ফিরল বার্সা
বরুশিয়া ডর্টমুন্ড ০-০ বার্সেলোনা
সিগ্ন্যাল ইদুনা পার্ক, ইয়েলো ওয়াল- বরুশিয়া ডর্টমুন্ডের গর্ব আর প্রতিপক্ষের জন্য সেটা ভীতিকর। সেই মাঠে আরও বড় দেয়াল তুলে দাঁড়ালেন মার্ক আন্দ্রে টের স্টেগান। ডর্টমুন্ডের একের পর এক প্রচেষ্টা ব্যর্থ করে দিলেন জার্মান গোলরক্ষক একাই। আসলে ডর্টমুন্ড নয়, মার্কো রয়েসের। পেনাল্টি সেভ করেছেন, ম্যাচে অন্তত আরও তিনবার জার্মান সতীর্থকে করেছেন গোলবঞ্চিত- 'শত্রু' বরুশিয়া মনশেনগ্লাডবাখের সাবেক গোলরক্ষকের দানবীয় পারফরম্যান্স দেখে শেষে হতাশ হওয়া ছাড়া আর কোনো উপায়ও ছিল ডর্টমুন্ড সমর্থকদের। আর বার্সেলোনা সেটা পুঁজি করে জার্মানি থেকে ফিরছে এক পয়েন্ট সঙ্গে করে নিয়ে।
চ্যাম্পিয়নস লিগে গ্রুপ 'এফ' এ নিজেদের প্রথম ম্যাচে গোলশূন্য ড্র করেছে দুইদল। রাতের প্রথম খেলায় ইন্টার মিলান ও স্লাভিয়া প্রাগ ১-১ গোলে ড্র করার পর প্রথম গেম উইক শেষে গ্রুপের সব দলেরই এখন পয়েন্ট এক করে।
রয়েস পেনাল্টি মিস করার পর মাঠে নেমেছিলেন লিওনেল মেসিও। মৌসুমে প্রথমবারের মতো মাঠে নেমে তিনিও অবশ্য আহামরি কিছু করতে পারেননি। যদিও ম্যাচের একেবারে শেষ মুহুর্তে একটি সুযোগ পেয়েছিলেন। সেটা থেকে গোল করে বসলে ডর্টমুন্ডের জন্য অবিচারই হত। ডেলাইনি ভালো এক ব্লক করে শেষ পর্যন্ত মেসিকে আর শাসাতে দেননি।
শুরুতে সিগ্ন্যাল ইদুনা পার্কের হুংকার আরেকটু হলে গড়বড় পাকিয়ে দিচ্ছিল বার্সার রক্ষণে। অ্যান্টোয়ান গ্রিযমান প্রথমার্ধে আক্রমণে তেমন একটা বলের দেখা পাননি। রক্ষণেই বরং প্রভাব রেখেছেন বেশি। শুরুতে তিনিই একবার বল বিলিয়ে দিয়েছিলেন পাকো আলকেসেরকে। সাবেক বার্সা স্ট্রাইকারও হয়ত সেটা প্রত্যাশা করেননি, তাই তাড়াহুড়োয় সুযোগ নষ্ট করেছেন।
প্রথমার্ধে সেরা সুযোগটি তৈরি করেছিল ডর্টমুন্ডই। রয়েস ডিবক্সের ভেতর ঢুকে কোনাকুনি শট করেছিলেন, কিন্তু মার্ক আন্দ্রে টের স্টেগান এগিয়ে এসে ঠেকিয়ে দিয়েছেন জার্মান সতীর্থকে। তখনও আঁচ করা যায়নি এই দুইজনের লড়াইটাই ভাগ্য গড়ে দেবে ম্যাচের। প্রথমার্ধে রয়েস, আলকাসেরর সমন্বয় থেকে জেডেন সানচোও একটি সুযোগ পেয়েছিলেন ভালো জায়গা থেকে। কিন্তু স্টেগান পর্যন্তও পৌঁছানো হয়নি তার। মেরেছেন উড়িয়ে।
পুরো ম্যাচেই সুযোগ তৈরিতে ধুঁকেছে বার্সা। প্রথমার্ধে গোলে কোনো শট নেওয়া হয়নি তাদের। ২০১৮ সালের ফ্রেব্রুয়ারিতে চেলসির বিপক্ষে ম্যাচের পর এমনটা হলো এবারই প্রথম। জর্দি আলবাকেও এর ভেতর মাঠ ছাড়তে হয়েছে বদলি হয়ে। নতুন নামা সার্জি রবার্তো তখন চলে গেছেন রাইটব্যাকে, আর নেলসন সেমেদো লেফটব্যাক। তবে অন্য আরেকটি সুইচ প্রথমার্ধের শেষ থেকে কিছুটা আশার আলো দেখিয়েছিল বার্সাকে। আনসুমানে ফাতিহ শুরু করেছিলেন ডানদিকে, প্রথমার্ধের শেষ অর্ধে তিনি চলে যান বামদিকে। তাতে আরেকটু বেশি পাচ্ছিলেন বলের দেখা।
প্রথমার্ধে ডর্টমুন্ড গোলরক্ষককে রোমান বুর্কিকে খুব বেশি কিছু করতে না হলেও দ্বিতীয়ার্ধের শুরুতেই সুয়ারেজের কাছের পোস্টে নেওয়া শট সেভ করতে হয়। চার বছর ধরে চ্যাম্পিয়নস লিগের অ্যাওয়ে ম্যাচ গোল না পাওয়ার খরা শেষে আরও কিছুদিনের জন্য বেড়েছে সুয়ারেজের। এরপর অবশ্য আবার অবসর কাটাতে থাকেন বুর্কি। আসল খেলা চলে অন্যপ্রান্তে। সেই লড়াইটা ক্রমেই হয়ে ওঠে রয়েস বনাম টের স্টেগানের।
রক্ষণে প্রান্ত বদল করা সেমেদোই ভুলটা করেছিলেন ৫৭ মিনিটে। সানচো বাইলাইনের দিকে গিয়ে টার্ন নিয়েছিলেন, সেমেদো সরাসরি পাড়া দেন সানচোর পায়ে। তাতে পেনাল্টিও পেয়ে যায় ডর্টমুন্ড। রয়েস স্পট কিকটা নিয়েছিলেন ভালোই। স্টেগান নিজের বামদিকে ঝাঁপিয়ে পড়ে প্রথমে সেটা ঠেকিয়েছেন, বিপদ সেখানেই শেষ হয়নি। এরপর ফিরতি বলও দুইজন ডর্টমুন্ড খেলোয়াড় ধাওয়া করেছিলেন। এর আগেই আবার উঠে দাঁড়িয়ে ঠান্ডা মাথায় বল লুফে নেন স্টেগান। এই নিয়ে চ্যাম্পিয়নস লিগে ছয় পেনাল্টির মুখোমুখি হয়ে চারবারই সফল ২৭ বছর বয়সী।
রয়েস আর ডর্টমুন্ড অবশ্য নিজেদের কপাল মন্দ ভাবতে পারে। ডর্টমুন্ড অধিনায়ক পেনাল্টি নেওয়ার সময় নিজের গোল লাইন থেকে অনেকটাই বেরিয়ে এসেছিলেন টের স্টেগান। নিয়ম অনুযায়ী নতুন করে পেনাল্টি নেওয়ার কথা রয়েসের, হলুদ কার্ড দেখার কথা স্টেগানের। কিন্তু রেফারির চোখ এড়িয়ে গেছে সেটা।
দ্বিতীয়ার্ধের শুরু থেকেই সাইডলাইনে অনুশীলন করছিলেন মেসি। রয়েসের পেনাল্টি মিসের পর ফাতিহর রাত ফুরোয় মেসির বদলি হয়ে মাঠ ছেড়ে। এ ম্যাচে ফাতিহ খুব একটা সুবিধা করতে না পারলেও রেকর্ড একটা হয়েছে এবারও। বার্সার ইতিহাসের তরুণতম ফুটবলার হিসেবে খেলেছেন চ্যাম্পিয়নস লিগ। আগের রেকর্ডটি ছিল বোয়ান কিরকিচের। মেসির সঙ্গে ইভান রাকিটিচও একই সময়ে নেমেছিলেন, সার্জিও বুস্কেটসের জায়গায়। মেসি-গ্রিযমান-সুয়ারেজ তিনজন মিলেও বাকি সময়ে ডর্টমুন্ডের গোলবার পর্যন্ত পৌঁছাতে পারেননি। সুয়ারেজের ওই শটটাই হয়ে থেকেছে বার্সার একমাত্র গোলে নেওয়া শট।
কিন্তু থেমে থাকেননি রয়েস, আলকেসেররা। ৭০ মিনিটে গোলের সামনে থেকে ফ্লিক করেছিলেন আলকেসের। সেটা গেছে অনেক ওপর দিয়ে। মিনিট চারেক পর সেই পথ অনুসরণ করেছেন রয়েসও। গোল থেকে আট গজ দূর থেকে বল পাঠিয়ে দিয়েছেন সমর্থকদের কাছে গ্যালারিতে। তবে রয়েস গোলের আরও কাছে গিয়েছিলেন ৭৮ মিনিটে। কিন্তু রাতটা স্টেগানের। রয়েসের নয়। তাই পরপর দুইবার চেষ্টাতেও স্টেগানকে হারাতে পারেননি না রয়েস।
অবশ্য এর মিনিটে খানেক আগে অসহায় মুহুর্ত পার করেছিলেন স্টেগান নিজেও। বদলি হুলিয়ান ব্রান্দত ২০ গজ দূর থেকে দুর্দান্ত এক শট নিয়েছিলেন, স্টেগানও হার মেনেছিলেন। হার মানেনি শুধু বারপোস্ট। শেষে গিয়ে তাই আর গোলটাও পাওয়া হয়নি ডর্টমুন্ডের। সুযোগ নষ্ট? তা তো বটেই।