স্টার্লিংয়ের 'সেঞ্চুরি'তে এভারটন বাধা টপকাল সিটি
প্রিমিয়ার লিগ
ফলাফল এভারটন ১-৩ ম্যানচেস্টার সিটি
নিজেদের শেষ অ্যাওয়ে ম্যাচে নরউইচ সিটির কাছে হেরে শিরোপাদৌঁড়ে লিভারপুলের চেয়ে পিছিয়ে গিয়েছিল ম্যানচেস্টার সিটি। গুডিসন পার্কে পেপ গার্দিওলার দল লিড নিলেও এভারটনের সমতাসূচক গোলে প্রতিপক্ষের মাঠে আবারও পয়েন্ট হারানোর আশঙ্কায় ছিল সিটিজেনরা। কিন্তু ইংলিশ চ্যাম্পিয়নদের এ যাত্রায় বাঁচিয়ে দিয়েছেন রহিম স্টার্লিং এবং রিয়াদ মাহরেজ। স্টার্লিংয়ের ক্যারিয়ারে গোলের 'সেঞ্চুরি' পূরণ করার ম্যাচে ঘাম ঝড়িয়ে জিততে হয়েছে সিটিকে। এভারটনকে ৩-১ গোলে হারিয়েছে তারা।
স্কোরলাইন দেখে আপাতদৃষ্টিতে সহজ জয় মনে হলেও সিটিকে রীতিমত সমানে সমান টেক্কা দিয়েছে এভারটন। ‘টফিজ’দের ভাগ্য সহায় হলে হয়তো শুধু ড্র নয়, জয় নিয়েও ফিরতে পারত মার্কো সিলভার দল। স্টার্লিং, হেসুস, মাহরেজরা গোল করলেও সিটির জয়ের মূলনায়ক খুব সম্ভবত তাদের গোলরক্ষক এডারসন মোরায়েস। শুধুমাত্র দ্বিতীয়ার্ধেই অন্তত তিনটি নিশ্চিত গোল বাঁচিয়ে দিয়েছেন তিনি। ৫২ মিনিটে গিলফি সিগুর্ডসনের পাসে এডারসনকে একা পেয়ে গিয়েছিলেন রিচার্লিসন। কিন্তু স্বদেশি ফরোয়ার্ডকে খালি হাতেই ফিরিয়েছেন এডারসন। রিচার্লিসনের মত এডারসনকে ‘ওয়ান অন ওয়ান’ অবস্থায় পেয়ে গিয়েছিলেন বদলি ফরোয়ার্ড ডমিনিক কালভার্ট-লেউইনও, কিন্তু তাকেও ফিরতে হয়েছে খালি হাতে।
জয় নিশ্চিত করা গোল উদযাপন করছেন রহিম স্টার্লিং
ওপেন প্লে-এর মত সেটপিসেও দুর্দান্ত ছিলেন এডারসন, ৭৮ মিনিটে ‘পয়েন্ট ব্ল্যাঙ্ক রেঞ্জ’ থেকে এভারটন ডিফেন্ডার ইয়েরি মিনার হেড ফিরিয়ে দেন তিনি। আক্ষরিক অর্থেই ‘এন্ড টু এন্ড’ দ্বিতীয়ার্ধে সুযোগ কাজে লাগিয়েছিল সিটিই। কিন্তু গোলমুখে কাজটা নিজেদের জন্যই কঠিন করে ফেলেছিলেন স্টার্লিংরা। ৬০ এবং ৭৪ মিনিটে গোলের মাত্র ছয় গজ থেকেও বল জালে পাঠাতে পারেননি স্টার্লিং। তবে শেষ পর্যন্ত এভারটনের কফিনে শেষ পেরেক ঠুকে দিয়েছিলেন তিনিই, সেজন্যই হয়তো তার আক্ষেপটা রিচার্লিসন বা কালভার্ট-লেউইনের থেকে কম অনেকাংশেই।
৮৫ মিনিটে বদলি স্ট্রাইকার সার্জিও আগুয়েরোর শট এভারটন গোলরক্ষক জর্ডান পিকফোর্ড ফিরিয়ে দিলেও ফিরতি বল জালে পাঠান স্টার্লিং। স্টার্লিং জয় নিশ্চিত করলেও দ্বিতীয়ার্ধে সিটিকে লিড এনে দিয়েছিলেন মাহরেজ। ৭৪ মিনিটে দুর্দান্ত বাঁকানো ফ্রিকিকে সিটিকে লিড এনে দেন তিনি। পুরো ম্যাচেই দুর্দান্ত খেলা মাহরেজের পাস থেকেই প্রথমার্ধে অন্তত দুই গোল করতে পারত সিটি। কিন্তু দ্বিতীয়ার্ধের আগে প্রথমার্ধেও গোলমুখে সিটি ফরোয়ার্ডরা ছিলেন নিষ্প্রভ।
মাহরেজের ফ্রিকিকে লিড নেওয়ার পর উদযাপনে ব্যস্ত সিটি
২ মিনিটে মাহরেজের ক্রসে গোলের সামনে থেকেও হেড বাইরে মারেন ইলকে গুন্ডোয়ান। ১১ মিনিটে আবারও মাহরেজের জাদু; এভারটনের দুই ডিফেন্ডারকে কাটিয়ে ডিবক্সে ক্রস করেন তিনি। কিন্তু এবারও হতাশ করেন গুন্ডোয়ান, পিকফোর্ডকে একা পেয়েও বল নিয়ন্ত্রণেই আনতে পারেননি তিনি। তবে ২৪ মিনিটে আর ভাগ্য সহায় হয়নি এভারটনের। কেভিন ডি ব্রুইনে মাপা ক্রসে হেড করে দলকে লিড এনে দেন হেসুস, প্রতিদান দেন গার্দিওলার আস্থার। তবে মিনিট দশেক পরই লিড নেওয়ার উল্লাস সমতায় ফেরার হতাশায় পরিণত হয় সিটির।
দ্বিতীয়ার্ধে সহজ সুযোগ হাতছাড়া করা কালভার্ট-লেউইনই সমতায় ফেরান দলকে। ৩৪ মিনিটে রাইটব্যাক শেমাস কোলম্যানের ক্রসে হেড করে গোল করেন তিনি। গুডিসনের দুর্দান্ত লড়াইয়ে শেষ পর্যন্ত জয় হয়েছে নাছোড়বান্দা সিটিরই, কিন্তু গার্দিওলার দলের রক্ষণের সমস্যাটা যেন চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছে এভারটন। কষ্টার্জিত জয়ে ৭ ম্যাচে ১৬ পয়েন্ট নিয়ে টেবিলের দুইয়ে থাকল সিটি, শীর্ষে থাকা লিভারপুলের (২১) সাথে ব্যবধানটা থাকল ৫ পয়েন্টের।
পেনাল্টিতে গোল করে চেলসিকে লিড এনে দেওয়ার পর উদযাপনে ব্যস্ত জর্জিনহো
সিটি, লিভারপুলের মতই ঘাম ঝড়িয়ে জিততে হয়েছে টটেনহামকে। সাউদাম্পটনকে ২-১ গোলে হারিয়েছে তারা। নিজেদের মাঠে মরিসিও পচেত্তিনোর দল টানগুয়ে এন’দোম্বেলের গোলে লিড নিলেও ‘সেইন্টস’দের সমতায় ফেরান ড্যানি ইঙ্কস। প্রায় ঘণ্টাখানেক দশজন নিয়ে খেলতে হয়েছে স্পার্সকে, দুবার হলুদ কার্ড দেখে মাঠ ছাড়তে হয়েছে রাইটব্যাক সার্জ অরিয়েরকে। তবে স্পার্সের জয় নিশ্চিত করেন হ্যারি কেইন। ৭ ম্যাচে ১১ পয়েন্ট নিয়ে টেবিলের চার-এ উঠে আসল পচেত্তিনোর দল।
স্ট্যামফোর্ড ব্রিজে ব্রাইটনের বিপক্ষে জয় পেতে অবশ্য এত কাঠখড় পোড়াতে হয়নি চেলসিকে। ‘সিগাল’দের ২-০ গোলে হারিয়ে নিজেদের মাঠে প্রথম জয়ের দেখা পেলেন ‘ব্লুজ’ ম্যানেজার ফ্র্যাঙ্ক ল্যাম্পার্ড। জর্জিনহোর পেনাল্টিতে লিড নেওয়া চেলসির জয় নিশ্চিত করেন উইলিয়ান। টটেনহামের সমান ১১ পয়েন্ট নিয়ে গোল ব্যবধানে পিছিয়ে থাকায় টেবিলের ছয়-এ উঠে এসেছে ‘ব্লুজ’রা।