জীবনের জোড়া গোলে ভুটানকে বড় ব্যবধানে হারাল বাংলাদেশ
প্রীতি ম্যাচ
বাংলাদেশ ৪-১ ভুটান
প্রীতি ম্যাচে বাংলাদেশ কোচ জেমি ডের লক্ষ্য ছিল আত্মবিশ্বাস বাড়িয়ে নেওয়া। আড়ালে ছিল ফিফা র্যাঙ্কিংয়ে উন্নতির ইচ্ছাটাও। তবে বিশ্বকাপ ও এশিয়া কাপ বাছাইয়ে প্রস্তুতি সারতে ভুটানের বিপক্ষে এমন ম্যাচে বাংলাদেশ পেল আরও কিছু। ওপেন প্লেতে গোল পাওয়া ভুলেই গিয়েছিল বাংলাদেশ, ভুটানের বিপক্ষে চার গোলের তিনটিই এলো এভাবে। স্ট্রাইকারদের গোলখরা নিয়েও আফসোস ছিল, সেটাও মিটল। নাবিব নেওয়াজ জীবন করেছেন জোড়া গোল। যদিও ক্লিনশিট রাখার ইচ্ছাটা পূরণ হয়নি বাংলাদেশ কোচের।
সারাদিন জুড়ে চলা বৃষ্টি সন্ধ্যা নাগাদ কমে এসেছিল কিছুটা। আগের কয়েকদিন বৃষ্টিতে মাঠ আগে থেকেই ছিল নাজুক। তবে বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়ামে কাদা মাঠে শুরুটা অনুমিতভাবেই ভালো করেছিল বাংলাদেশ। আফগানিস্তান ম্যাচের মতো ৪-২-৩-১ ফর্মেশনে শুরু করেছিল জেমি ডের দল। নাবিব নেওয়াজ জীবন খেলেছেন স্ট্রাইকারের ঠিক পেছনে। কাদা মাঠে শুরুতে ভুটানও ভুল করল একটি, যদিও সে সুযোগটা কাজে লাগানো হয়নি বাংলাদেশের। তবে খুব বেশিক্ষণ আক্ষেপেও পুড়তে হয়নি। ১২ মিনিটে সাদের নেওয়া শর্ট কর্নার থেকে জামাল ভূঁইয়া ক্রস ফেলেন ভুটানের ডিবক্সে। সিক্স ইয়ার্ড বক্সের মাথায় থাকা জীবন হেড করলেই গোল হত, হেডই করলেন, গোলও পেলেন।
এরপর কিছুটা দুইদলই কিছুটা এলোমেলো খেললেও ৩৯ মিনিটে দারুণ একটি আক্রমণ সাজিয়ে ব্যবধান বাড়িয়ে নেয় বাংলাদেশ। ডানদিক থেকে মোহাম্মদ ইব্রাহিম শুরু থেকেই ফাঁকা জায়গা খুঁজে পাচ্ছিলেন। তবে বল পাচ্ছিলেন কম। যখন পেলেন তখন ডান প্রান্তে গিয়ে করলেন নিখুঁত এক ক্রস। এবার জীবনকে দারুণ কিছুই করতে হত। সাইড ভলিতে প্রথম সুযোগেই তিনি বল ঢুকিয়ে দিলেন জালে। বহুদিন পর ওপেন প্লে থেকেও বাংলাদেশ পেয়ে গেল গোলের দেখা।
প্রথমার্ধ শেষের আগেই বাংলাদেশের সামনে ব্যবধান বাড়িয়ে নেওয়ার আরও সুযোগ ছিল। তবে সেসব কাজে না লাগানোর মাশুল গুণে ৫১ মিনিটে ভুটান ম্যাচে ফিরল সেট পিস পুঁজি করে। শেরিং দর্জি ফ্রি-কিক ফেলেছিলেন বাংলাদেশের বক্সের ভেতর। সেটা প্রথমে ফ্লিক করে তিনেলি দর্জি বাড়ান দর্জির দিকে। দর্জি গোলরক্ষক আশরাফুল ইসলামের ওপর দিয়ে বল জালে জড়িয়ে ভুটানকে ম্যাচে ফিরিয়ে নিয়ে আসেন ম্যাচে।
তবে গোল হজমের পর বাংলাদেশ জেঁকে বসে ভুটানের ওপর। কিন্তু ভুটান গোলরক্ষক এনগোয়াং জাম্পেল এরপর দ্যুতি ছড়িয়েছেন। বিরতির পরপরই ইব্রাহিমের বদলি হয়ে মাঠে নামা রবিউল হাসানকে ৬২ মিনিটে দুর্দান্ত এক সেভে গোলবঞ্চিত করেছেন।
৭০ মিনিটে বিপলু আহমেদ নিখুঁত হতে পারলে হয়ত কিছুই করতে পারতেন না ভুটান গোলরক্ষক। তবে ভালো জায়গা থেকে তিনি শট মেরেছেন বারপোস্টেরও বেশ বাইরে দিয়ে। বাংলাদেশের আফসোস আরও বাড়তে পারত মিনিট তিনেক পরই। শেরিং দর্জি গোল থেকে ৮ গজ দূর থেকেও লক্ষ্যে মারতে না পারায় বেঁচে যায় বাংলাদেশ।
এরপর অবশ্য উলটো ভুটানকে আফসোসে ভুগিয়েছে বাংলাদেশ। সোহেল রানা ঢুকে পড়েছিলেন ভুটানের ডিবক্সের ভেতর। জটলার ভেতর সোহেলকে আটকে দিয়ে বল ক্লিয়ার করলেও সেটা আটকে গেছে বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়ামের কাদা মাঠে। বিপলু এমন সুযোগ আর হাতছাড়া করেননি। নিচু শটে তৃতীয় গোল করে ম্যাচের ১৬ মিনিট বাকি থাকতে দলের জয় একরকম নিশ্চিত করে ফেলেন তিনি।
বিপলু এরপর চতুর্থ গোলেও অবদান রেখেছেন। তার পাস থেকেই ডিবক্সের ভেতর ছুটে গিয়েছিলেন রবিউল। পিছলে পড়তে পড়তে এরপর বাম পায়ের নিচু শটে গোল পেয়ে যান তিনিও।
বাংলাদেশ চাইলে এক হালি গোলকে এক ডজনে রুপান্তর করতে পারত। জামাল ভূঁইয়া, বিপলুরা শেষদিকে হেলায় হারিয়েছেন গোলের সুযোগ। তাই বহুদিন পর চার গোল করার তৃপ্তি নিয়েই সন্তুষ্ট থাকতে হয়েছে বাংলাদেশকে।
৩ অক্টোবর ভুটানের বিপক্ষে দ্বিতীয় প্রীতি ম্যাচ খেলতে নামবে বাংলাদেশ। এরপর বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়ামে শুরু আসল পরীক্ষা। ১০ তারিখ বিশ্বকাপ ও এশিয়া কাপ বাছাইয়ে প্রতিপক্ষ কাতার। ও পাঁচদিন পর ভারতে খেলতে যাবে বাংলাদেশ।
বাংলাদেশ একাদশ
আশরাফুল ইসলাম, বিশ্বনাথ ঘোষ, ইয়াসিন খান, রিয়াদুল হাসান, রহমত মিয়া, জামাল ভূঁইয়া, সোহেল রানা, বিপলু আহমেদ, মোহাম্মদ ইব্রাহিম, নাবিব নেওয়াজ, সাদ উদ্দিন