ইন্টারকে ন্যু ক্যাম্পের শক্তি দেখালেন মেসি-সুয়ারেজ
চ্যাম্পিয়নস লিগ
বার্সেলোনা ২-১ ইন্টার মিলান
৬ বছর, ৩২ ম্যাচ পর ন্যু ক্যাম্পে হারের ভয় জেঁকে বসেছিল বার্সেলোনার। ইন্টার মিলান দাপট দেখাচ্ছিল ন্যু ক্যাম্পে। দ্রুত গোল পেয়ে ম্যাচের বিরাট অংশ এগিয়েও থাকল তারা। কিন্তু ন্যু ক্যাম্পে প্রায় অসাধ্য হয়ে ওঠা কাজটা আর করা হয়ে উঠল না ইন্টারের। দ্বিতীয়ার্ধের দারুণ ফেরায় চ্যাম্পিয়নস লিগের এই মৌসুমে প্রথম জয় পেয়েছে বার্সা।
ন্যু ক্যাম্পে ইন্টার মিলানের বিপক্ষে বার্সেলোনার ম্যাচের আগে স্যামুয়েল ইতো বলেছিলেন, তিনি চান না লিওনেল মেসি খেলুক। ম্যাচের দুই দিন আগ পর্যন্তও অনিশ্চিত ছিলেন মেসি, কিন্তু শেষ পর্যন্ত উতরে গেলেন ফিটনেস পরীক্ষা। মেসির একাদশে ফেরাটাই ছিল চমক। কেন প্রতিপক্ষ চায় না তিনি মাঠে থাকুন, সেটাও আরেকবার জানালেন নতুন করে। মেসি ফিরলেন; ফেরালেন বার্সা সমর্থকের মুখের হাসিও। কিন্তু মেসির ফেরার ম্যাচটি নিজের করে নিলেন বার্সার আরেক ফরোয়ার্ড লুইস সুয়ারেজ। 'এল পিস্তোলেরো'র জোড়া গোলে ইন্টারের বিপক্ষে পিছিয়ে পড়েও 'এফ' গ্রুপে ২-১ গোলে জিতেছে বার্সা।
ফেরার ম্যাচে শুরুর দিকে নিষ্প্রভ থাকলেও ফলাফল নির্ধারণে সরাসরি ভূমিকা রেখেছেন মেসি। ৮৪ মিনিটে সমতায় থাকা ম্যাচে দুর্দান্ত এক দৌঁড়ে ইন্টারের তিন ডিফেন্ডারকে ছিটকে ফেলেন বার্সা অধিনায়ক। ডিবক্সের ভেতর ঢুকে দুই ডিফেন্ডারের ফাঁক গলে পাস বাড়ান সুয়ারেজকে। দুর্দান্ত টাচে ইন্টারের ঐ ডিফেন্ডারকে ফাঁকি দিয়ে বাঁ পায়ের শটে দ্বিতীয়বারের মত 'নেরাজ্জুরি' গোলরক্ষক সামির হান্দানোভিচকে পরাস্ত করেন উরুগুইয়ান স্ট্রাইকার। দ্বিতীয়ার্ধের শুরুর দিকে দুর্দান্ত এক সিজর কিকে বার্সাকে সমতায় ফিরিয়েছিলেন সুয়ারেজ, মেসির বুদ্ধিদীপ্ত পাসে তার গোলেই নিশ্চিত হল বার্সার কামব্যাক এবং জয়।
মাত্র তিন মিনিটেই ন্যু ক্যাম্পকে স্তব্ধ করে দিলেন ইন্টারের 'এলএম১০'
ইন্টারের বিপক্ষে দারুণ জয়ে মেসি-সুয়ারেজের ছাড়াও বার্সার আরও দুজনের নাম আলাদা করে বলতেই হয়। দ্বিতীয়ার্ধের শুরুর দিকে নামার পর থেকেই বার্সাকে খোলনলচে বদলে দেন আর্তুরো ভিদাল। সার্জিও বুস্কেটসের বদলে যে কাজে চিলিয়ান মিডফিল্ডারকে নামিয়েছিলেন ভালভার্দে, সেটা করতে মাত্র তিন মিনিট নিয়েছেন তিনি। ৫৮ মিনিটে ভিদালের মাপা ক্রসেই চমৎকার ভলিতে গোল করেন সুয়ারেজ। আরেকজন হলেন মার্ক আন্দ্রে টের স্টেগান। ম্যাচের শুরুতেই গোল হজম করলেও পুরো ম্যাচেই অসাধারণ সব সেভে ইন্টারের ফরোয়ার্ডের খালি হাতে ফিরিয়েছেন তিনি।
ন্যু ক্যাম্পে টের স্টেগান এবং বার্সাকে মাত্র ৩ মিনিটেই ভড়কে দেন ইন্টার স্ট্রাইকার লাউতারো মার্টিনেজ। কুইক ফ্রিকিকে আর্জেন্টাইন স্ট্রাইকারকে পাস বাড়ান বার্সার সাবেক ফরোয়ার্ড অ্যালেক্সিস সানচেজ। জেরার্ড পিকে চার্জ করলেও বাঁ-পায়ের কোণাকুণি শটে দলকে লিড এনে দেন মার্টিনেজ। ন্যু ক্যাম্পকে স্তব্ধ করে দেন ইন্টারের ‘এলএম১০’। ১৬ মিনিটেই ব্যবধান দ্বিগুণ করতে পারতেন তিনি, নিকোলো বারেলার চমৎকার ডিফেন্সচেরা পাসে টের স্টেগানকে কাটিয়েও নিয়েছিলেন মার্টিনেজ। কিন্তু শেষ পর্যন্ত আর বল নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারেননি তিনি।
"এখনও ফুরিয়ে যাইনি"
মার্টিনেজের মত ২৭ মিনিটে টের স্টেগানকে পরাস্ত করেছিলেন আন্তোনিও কান্দ্রেভা, কিন্তু অফসাইডে বাতিল হয় গোল। পুরো ম্যাচে ডিফেন্সচেরা পাসে পিকে-লংলেদের নাকানিচুবানি খাইয়েছে ইন্টার। ৩৩ মিনিটে আবারও বারেলার পাসে ডিবক্সে বল পেয়ে শট নেন মার্টিনেজ, কিন্তু নেলসন সেমেদোর দারুণ ব্লকে সে যাত্রায় বেঁচে যায় বার্সা। কিন্তু প্রথমার্ধে বার্সাকে সবচেয়ে বড় বাঁচা বাঁচিয়েছেন টের স্টেগানই। ৩৭ মিনিটে কান্দ্রেভার ক্রসে মার্টিনেজের জোরাল হেড ‘পয়েন্ট ব্ল্যাঙ্ক রেঞ্জ’ থেকে এক হাতের দুর্দান্ত সেভে ফিরিয়ে দেন টের স্টেগান।
পুরো ম্যাচ দারুণ খেললেও গোল করার একাধিক সুযোগ হাতছাড়া করেছেন ইন্টারের ফুটবলাররা। হাড্ডাহাড্ডি লড়াইয়ের ম্যাচে অবশ্য বিতর্কও ছিল বেশ। ৫৩ মিনিটে বল দখলের সময় ডিবক্সে স্টেফানো সেনসিকে ফেলে দেন সার্জি রবার্তো, কিন্তু পেনাল্টির বাঁশি দেননি রেফারি। মিনিট দশেক পর বিতর্কিত সিদ্ধান্তের অপর পিঠ দেখে বার্সা।
প্রত্যাবর্তনের উল্লাস!
৬৪ মিনিটে ফ্রেঙ্কি ডি ইয়ংয়ের ক্রস নিয়ন্ত্রণে আনার সময় সুয়ারেজকে ডিবক্সে ফেলে দেন কোয়াদো আসামোয়া, কিন্তু এবারও নিরব থেকেছেন রেফারি। এই সিদ্ধান্তের পর নিজেকে ধরে রাখতে পারেননি কন্তে। ফোর্থ অফিশিয়ালের সাথে বিতর্কে জড়ানোয় সতর্ক করে দেওয়া হয় তাকে, ম্যাচের শেষদিকে আবারও একই কাজ করায় হলুদ কার্ডও দেখতে হয়েছে তাকে।
শেষদিকে রেফারির সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করায় বেঞ্চে বসে হলুদ কার্ড দেখেছেন সানচেজও। বিতর্ক হলেও দুর্দান্ত এক দ্বিতীয়ার্ধের পর জয়টা হয়তো প্রাপ্র্যই ছিল বার্সার। ন্যু ক্যাম্পে চ্যাম্পিয়নস লিগে রীতিমত অদম্য তারা। হোমে টানা অপরাজিত থাকার রেকর্ডটা ৩৩-এ নিয়ে গেল কাতালানরা। ৪ পয়েন্ট নিয়ে বরুশিয়া ডর্টমুন্ডের চেয়ে গোল ব্যবধানে পিছিয়ে থাকায় টেবিলের দুইয়ে থাকল ভালভার্দের দল।