হ্যাজার্ড-মদ্রিচে সহজ ম্যাচ কঠিন করে জিতল রিয়াল
রিয়াল মাদ্রিদের জার্সিতে নিজেকে বারবার প্রমাণ করতে ব্যর্থ হচ্ছিলেন এডেন হ্যাজার্ড। এতদিন যাকে ছাড়া রিয়ালের মিডফিল্ড ভাবা ছিল অসম্ভব, সেই লুকা মদ্রিচকেও বেশ কয়েক ম্যাচ কাটাতে হয়েছে বেঞ্চে। রিয়ালের জার্সিতে নিজেদের ফিরে পাওয়ার জন্য যেন সান্তিয়াগো বার্নাব্যুতে গ্রানাদার বিপক্ষে ম্যাচকেই বেছে নিলেন মদ্রিচ, হ্যাজার্ড। বেলজিয়ান ফরোয়ার্ড পেলেন রিয়ালের জার্সিতে নিজের প্রথম গোল, গ্রানাদার জালে লক্ষ্যভেদ করে মদ্রিচও জানান দিলেন; এখনও ফুরিয়ে যাননি তিনি। মদ্রিচ-হ্যাজার্ডদের নিজেদের প্রমাণ করার ম্যাচে গ্রানাদাকে ৪-২ গোলে হারিয়েছে রিয়াল।
স্কোরলাইন দেখে অবশ্য বোঝার অবকাশ নেই, গ্রানাদার বিপক্ষে জয়ের জন্য ঠিক কতটা সংগ্রাম করতে হয়েছে রিয়ালকে। দ্বিতীয়ার্ধের যোগ করা সময়ে প্রতি-আক্রমণে আলভারো ওদ্রিওজোলার মাইনাস থেকে হামেস রদ্রিগেজ গোল না করার আগ পর্যন্ত জয় নিয়েই টানাটানি পড়ে গিয়েছিল রিয়ালের। গোলরক্ষক থিবো কর্তোয়ার অসুস্থতায় ভোগায় রিয়ালের গোলবারের নিচে সুযোগ পেয়েছিলেন আলফন্স আরিওলা। ৬৯ মিনিটে কার্লোস ফার্নান্দেজকে ডিবক্সে ফাউল করে গ্রানাদাকে পেনাল্টি উপহার দেন তিনি।
অনেক প্রশ্নের জবাব দেওয়া গোলের পর মদ্রিচ
১২ গজ থেকে গোল করেন দারউইন মাচিস। গোলের পর থেকে রিয়ালকে চেপে ধরা গ্রানাদা ম্যাচে আরও দারুণভাবে ফেরে ৭৮ মিনিটে। কর্নার থেকে ভিক্টর দিয়াজের হেডে বল পেয়েই হাফভলিতে ব্যবধান ৩-২ করেন ডমিঙ্গেজ দুয়ার্তে। শেষ পর্যন্ত বার্নাব্যু থেকে খালি হাতে ফিরলেও গ্রানাদা জানান দিয়েছে; এই মৌসুমে টেবিলের দুইয়ে থাকা বা বার্সেলোনাকে হারানো ফ্লুক ছিল না কোনওভাবেই। বার্নাব্যুতে অবশ্য ম্যাচের শুরুতে গ্রানাদাকে চেপে ধরেছিল রিয়ালই।
৩ মিনিটেই ম্যাচে নিজেদের প্রথম আক্রমণে গ্যারেথ বেলের আউটসাইড অফ দ্য বুট ক্রসে গ্রানাদা গোলরক্ষক রুই সিলভাকে পরাস্ত করেন করিম বেনজেমা। তবে দ্বিতীয়ার্ধে সহজ ম্যাচ এত কঠিন করে ফেলার জন্য প্রথমার্ধে নিজেদের ফিনিশিংকে দুষতেই পারে রিয়াল। ১০ এবং ২৫ মিনিটে সিলভাকে একা পেয়েও গোল করতে ব্যর্থ হয়েছেন লেফটব্যাক হিসেবে খেলা দানি কারভাহাল। তবে প্রথমার্ধে সেজন্য তেমন ভুগতে হয়নি রিয়ালকে, আরিওলার গোলে একবারও শটই নিতে পারেই গ্রানাদা। সুযোগ পেয়ে ব্যবধান দ্বিগুণ করেছে রিয়াল, অবশেষে বহুল প্রতীক্ষিত প্রথম গোলের দেখা পেয়েছেন হ্যাজার্ড।
দুই বছর বাদে রিয়ালে ফেরার পর প্রথম গোল। জার্সি খুলেই উদযাপন হামেস রদ্রিগেজের
অবশ্য বেলজিয়ানের গোলে ফেদে ভালভার্দের কথা আলাদা করে বলতেই হয়। পুরো ম্যাচ দুর্দান্ত খেলেছেন উরুগুইয়ান মিডফিল্ডার। প্রথমার্ধের যোগ করা সময়ে গ্রানাদার দুই মিডফিল্ডারের পা থেকে বল কেড়ে নিয়ে হ্যাজার্ডকে পাস বাড়ান তিনি। ডমিঙ্গেজ এবং মাচিসের চার্জেও দমে যাননি হ্যাজার্ড, চমৎকার চিপে সিলভাকে পরাস্ত করেন তিনি। ‘এডেন! এডেন!!’ চিৎকারে শেষ হয় প্রথমার্ধ। দারুণ প্রথমার্ধের পরও হয়তো পুরোপুরি স্বস্তিতে থাকতে পারেননি জিনেদিন জিদান। প্রথমার্ধে ইনজুরিতে পড়ে মাঠ ছাড়তে হয় টনি ক্রুসকে, তার জায়গায় নামা মদ্রিচ ছিলেন দুর্দান্ত। ৬১ মিনিটে ব্যবধান ৩-০ করেন তিনিই।
এই গোলেও সরাসরি অবদান রেখেছেন ভালভার্দে। গ্রানাদার দুই ডিফেন্ডারকে কাটিয়ে হ্যাজার্ডকে পাস বাড়ান তিনি। বাঁ-প্রান্ত দিয়ে ভেতরে ঢুকে ডিবক্সের বাইরে থাকা মদ্রিচকে পাস দেন হ্যাজার্ড। বল নিয়ন্ত্রণে এনেই আগুনে শটে গোল করেন মদ্রিচ। ৩-০ গোলের পর হয়তো এত কঠিন জয়ের কথা ঘুণাক্ষরেও ভাবেননি জিদান। কিন্তু শেষ পর্যন্ত লা লিগার একমাত্র অপরাজিত দলের রেকর্ডটা অক্ষুণ্ণ রাখল রিয়াল। ৮ ম্যাচে ১৮ পয়েন্ট নিয়ে শীর্ষেই থাকল জিদানের দল।