হিগুয়াইন-দিবালার গোলে ইন্টারকে হারিয়ে শীর্ষে উঠল জুভেন্টাস
বছর দেড়েক আগে এই মাঠেই শেষ মুহুর্তের গোলে দলকে ডার্বি ডি ইতালিয়া জিতিয়েছিলেন গঞ্জালো হিগুয়াইন, এরপর শিরোপার পথে হেঁটেছিল জুভেন্টাস। আর তাতে মৌসুমের শেষে গিয়ে সিরি আ স্বপ্ন শেষ হয়ে গিয়েছিল মাউরসিও সারির নাপোলির। এতোদিন পর সান সিরোতে সারিকে সেই জয়টাই ফিরিয়ে দিয়েছেন হিগুয়াইন। ৮০ মিনিটে আর্জেন্টাইন স্ট্রাইকারের গোলে জুভেন্টাস টপকে গেছে ইন্টার মিলানকে, ম্যাচ শেষ হয়েছে ২-১ ব্যবধানে। নিজেদের সাবেক ম্যানেজার আন্তোনিও কন্তেকে লিগে মৌসুমের প্রথম হার উপহার দিয়ে পয়েন্টে টেবিলের শীর্ষে উঠে গেছে জুভেন্টাস।
৭ ম্যাচ শেষে তাই সিরি আ তে অপরাজিত থাকল কেবল চ্যাম্পিয়ন জুভেন্টাস, ইন্টারের চেয়ে তারা এগিয়ে গেল এক পয়েন্টে। 'নিরপেক্ষ' আর্জেন্টাইন সমর্থক হয়ে থাকলে ইন্টার-জুভেন্টাসের ম্যাচটা তাদের জন্য হয়েছে আরও উপভোগ্য। ম্যাচের তিনটি গোলই করেছেন তিন আর্জেন্টাইন। শুরুটা পাউলো দিবালাকে দিয়ে।
জুভেন্টাসের একাদশে এদিন দিবালার থাকাটাই ছিল চমক। সারি ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদো, ফ্রেডেরিকো বের্নাদেস্কির সঙ্গে আক্রমণে নামিয়ে দিয়েছিলেন দিবালাকে। আর্জেন্টাইন ফরোয়ার্ড শুরু থেকেই দলে অনিয়মিত এবার। কিন্তু সুযোগটা কাজে লাগাতে সময় নিলেন না বড় ম্যাচে। মিডফিল্ড থেকে পাঠানো মিরালেম পিয়ানিচের বল নিয়ন্ত্রণে নিয়ে ইন্টারের বক্সের ভেতর ঢুকে পড়েছিলেন দিবালা। সামনে থাকা ইন্টার ডিফেন্ডার বা গোলরক্ষক কেউই বিপদ আঁচ করতে পারেননি। কিছু বুঝে ওঠার আগেই দারুণ এক শটে হান্দানোভিচকে চমকে দিয়ে দিবালা এগিয়ে নেন জুভেন্টাসকে।
ম্যাচের ৪ মিনিটে দিবালার ওই গোলের পর জুভেন্টাস কিছুক্ষণ পরই ব্যবধান প্রায় দ্বিগুণ করে ফেলেছিল। ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদো বক্সের মাথা থেকে গোলার মতো শট করেও গোল পাননি, আটকে গেছেন বারপোস্টে। হাপ ছেড়ে বেঁচেছে ইন্টার।
ইন্টার আরও বড় স্বস্তি পেয়েছে ১৮ মিনিটে। ডানদিক থেকে করা নিকোলা বারেল্লার ক্রস ঠেকাতে গিয়ে ম্যাথিয়াস ডি লিট বল হাতে লাগিয়ে বসলে পেনাল্টি পেয়ে যায় ইন্টার। স্পট কিকে সফল হয়ে লাউতারো মার্টিনেজ সমতায় ফেরান ইন্টারকে।
প্রথমার্ধে বাকি সময়ে দুইদল লড়াই করেছে পাল্লা দিয়ে। এর মধ্যে রোনালদো একবার গোলও করেছিলেন। কিন্তু ভিএআরের সিদ্ধান্তে বাতিল হয়েছে গোল। দিবালার কাছ থেকে পাস রিসিভ করার সময় তখন অফসাইডে ছিলেন রোনালদো। প্রথমার্ধে ভালোভাবে ম্যাচে টিকে থাকলেও ৩৩ মিনিটে বড় এক ধাক্কা খায় কন্তের দল। স্টেফান সেনসিকে ইনজুরি নিয়ে মাঠ ছাড়তে হয়। সেনসি এই মৌসুমে কন্তের অধীনে দারুণ খেলছিলেন।
টানা ৬ ম্যাচ জিতে জুভেন্টাসের মুখোমুখি হয়েছিলেন কন্তে। বড় ম্যাচে তার দলের ভুল-ত্রুটিগুলো বেরিয়ে গেছে। মার্টিনেজ প্রথমার্ধে দারুণ খেলেছেন, ইন্টারের সেরা খেলোয়াড়ও ছিলেন। সেজনি ভালো এক সেভে তাকে আটকে না দিলে হয় প্রথমার্ধে লিডটা নিতে পারত ইন্টারও। কিন্তু দিনশেষে আক্রমণের খেলোয়াড়দের ভেতর সমন্বয়হীনতা ভুগিয়েছে নেরাজ্জুরিদের। বিশেষ করে রোমেলু লুকাকু আরেকটু নিখুঁত হলে আরও দুই একটি সুযোগ হয়ত পেতে পারত স্বাগতিক দল। বক্সের বাইরে লুকাকুর দুর্বলতা পুরো ম্যাচে ফুটে উঠেছে বেশ কয়েকবার।
ইন্টার যেখানে ধুঁকেছে সেখানে জুভেন্টাস প্রমাণ করেছে কেন তারা ইতালির সেরা। রোনালদো-দিবালা যেভাবে খেলছিলেন তাতে বড় কিছুর স্বপ্ন দেখতেই পারে বিয়াঙ্কোনেরিরা। আর ম্যাচ ছিনিয়ে নেওয়া হিগুয়াইনের গোলেও থাকল জুভেন্টাসের সাজানো আক্রমণের ছাপ। বক্সের বাইরে রদ্রিগো বেন্টাঙ্কুর ও রোনালদো ওয়ান টু করে হিগুয়াইনকে পাস বাড়িয়েছিলেন। বক্সের ভেতর হিগুয়াইন এক টাচ, দুই টাচে বল সুবিধামতো জায়গায় নিয়ে নিচু ফিনিশে গোল করে জুভেন্টাসকে এনে দেন কাঙ্ক্ষিত জয়।
এই নিয়ে মাত্র তৃতীয়বারের মতো বদলি হিসেবে নেমে সিরি আতে গোল করলেন হিগুয়াইন। অথচ দুই মাস আগেও জুভেন্টাসে তার ভবিষ্যৎ দেখতে পাওয়া লোক খুঁজে পাওয়া ছিল প্রায় অসম্ভব। হিগুয়াইনের এই গোলের মাহাত্ম্য কতোখানি সেটা অবশ্য সময় গেলে বোঝা যাবে আরও ভালোভাবে। আপাতত জুভেন্টাস তাদের পরিচিত জায়গাটাতেই বসল, হিগুয়াইনের গোলে ভর করে। শীর্ষস্থানে।