কথা রেখেছেন জামাল, কথা রেখেছে তার দলও
ম্যাচ শুরু হয়েছে মিনিট দশেকও হয়নি। জামাল ভূঁইয়া কাতারের বক্সের বাইরে থেকে শট নিয়েছিলেন, সেই শট গেছে অনেক বাইরে দিয়ে। এর কিছুক্ষণ পরই কর্নার নিতে যাচ্ছিলেন। বয়সের হিসেবে ম্যাচের তখন শৈশব। কর্নার ফ্ল্যাগের দিক ছুটতে ছুটতে জামাল গ্যালারি ভরা দর্শকদের উজ্জীবিত করলেন দুই হাত উঁচিয়ে। একই কাজ করে গেছেন প্রায় পুরোটা সময় জুড়ে। কখনও সতীর্থদের আত্মবিশ্বাসী করেছে সেটা, কখনও মাঠের দর্শকদের। আর মাঠের ফুটবলে এক কথায় ছিলেন দুর্দান্ত।
ম্যাচের নায়ক হয়ে যেতে পারতেন। হতে পারেননি। কিন্তু ম্যাচে খুব সম্ভবত সবচেয়ে উজ্জ্বল ছিলেন বাংলাদেশ অধিনায়ক। এ বছর জাতীয় দলের হয়ে সেভাবে আলো কাড়তে পারছিলেন না জামাল। বড় ম্যাচেই কাড়লেন, জানান দিলেন বড় ম্যাচে বাংলাদেশের 'বড়' খেলোয়াড় বড় ঝলক দেখাতে পারেন। ডিফেন্স, মিডফিল্ড, অ্যাটাক কোথায় ছিলেন না তিনি!
৭৪ মিনিটে জামালের গোল হাতাছাড়া হয়েছে কাতার ডিফেন্ডারের গোললাইন ক্লিয়ারে। ম্যাচের আগেরদিন সংবাদ সম্মেলনে জানিয়ে রেখেছিলেন বল পেলে মেরে দেবেন সোজাসুজি গোলের দিকে। কথা রেখে একেবারেই শুরু থেকেই সে প্রচেষ্টায় পুরো মনোযোগ দিয়ে রেখেছিলেন জামাল। ম্যাচ শেষে জানালেন তাই আক্ষেপের কথা, " অবশ্যই আমি হতাশ। গোল পাইনি দেখে দুর্ভাগা লাগছে নিজেকে।"
চার বছর আগে বিশ্বকাপ ও এশিয়া কাপ বাছাইয়ে বাংলাদেশ মুখোমুখি হয়েছিল অস্ট্রেলিয়ার। সেবার এশিয়ার চ্যাম্পিয়নও ছিল তারা। সেই অস্ট্রেলিয়ার সামনে দাঁড়াতেই পারেনি বাংলাদেশ। দুই লেগে সবমিলিয়ে মিডফিল্ডে প্রতিপক্ষের অর্ধ পর্যন্ত পৌঁছাতেই হিমশিম খেতে হয়েছিল। প্রথম লেগে পাঁচ আর পরের লেগে ঘরের মাঠে চার- মোট নয় গোল হজম করেছিল বাংলাদেশ। তখনকার দলে ছিলেন জামালও।
চার বছর পর সেই দলের অধিনায়ক এখন তিনি। ম্যাচের আগেরদিন জানিয়ে রেখেছিলেন এখন অবস্থা বদলেছে, "আগে বড় দলগুলো আমাদের বিপক্ষে এক গোল দিলে এরপর আরও কয়েকটি দিয়ে দিত। এখন আর সে অবস্থা নেই। আমরা এখন আগের চেয়ে অনেক গোছালো ফুটবল খেলি।"
জামালের কথার ছাপ পুরোপুরি ফুটে উঠেছে কাতারের বিপক্ষে ম্যাচে। ২৮ মিনিটে কাতার এগিয়ে গেলেও এরপর তারা সুযোগ পেয়েছে হাতে গোণা অল্প কিছু। দ্বিতীয়ার্ধে বরং বাংলাদেশই আক্রমণে ছিল বেশি উজ্জ্বল। এমন আশাজাগানিয়া ফুটবলের দেখা হুট করে কোথা থেকে উৎপত্তি হলো? ম্যাচ শেষে জামাল আগের দিনের বলা কথার সূত্র ধরেই বললেন একটা দল হিসেবে খেলা শিখছেন তারা, "এখন দলে যারা আছে- আমরা সবাই ১৫ মাস ধরে একসঙ্গে খেলছি। আমরা একে অন্যকে ভালোভাবে জানি। আগে এমনটা ছিল না। আগে বারবার দল পরিবর্তন হত। এখন আমরা একটা দল হিসেবে অ্যাটাক করি, আবার একটা দল হিসেবেই ডিফেন্ড করি।"
বাংলাদেশ ম্যাচে যতগুলো সুযোগ পেয়েছিল তার একটি কাজে লাগাতে পারলেও হয়ত গল্পটা ভিন্ন হতে পারত। কাতারের শেষের গোলটি তো আসলে অধৈর্য্য বাংলাদেশের আক্রমণে ওঠার তাগিফে মনোযোগের ভুলে হজম করা।
"ভারত পারলে কেন আমরা পারব না?"- ম্যাচের আগে কাতারকে আটকানোর ব্যাপারে বলেছিলেন জামাল। এই একটা কথাই রাখা হয়নি তার। ভারত কাতারকে আটকে দিয়েছিলেন রক্ষণাত্মক ফুটবল দিয়ে। আর বাংলাদেশ রক্ষণের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে আক্রমণেও উঠেছে কাতারের বিপক্ষে। স্কোরলাইন সে গল্প বলবে না, গ্রুপের পয়েন্ট টেবিলেও এর কোনো প্রভাব থাকবে না। শূন্য বাংলাদেশ শুন্যই থেকে যাবে। কিন্তু এই শূন্যতেও বাংলাদেশ পেয়ে গেছে নতুন আশার আলো। আর তাতে বড় অবদান জামালের।