কোরিয়া ডার্বিতে 'যুদ্ধের' ডামাডোল
দুই দেশের মাঝে যুদ্ধটা শেষ হয়েছিল ৬৬ বছর আগে। উত্তর কোরিয়া-দক্ষিণ কোরিয়া অবশ্য এখনো ‘স্নায়ুযুদ্ধের’ মাঝেই আছে। সেই প্রভাবটা স্বভাবত পড়েছে ফুটবলেও। আগামীকাল ২০২২ বিশ্বকাপ ফুটবলের বাছাইপর্বে উত্তর কোরিয়ার রাজধানী পিয়ং ইয়াংয়ে মুখোমুখি হবে দুই কোরিয়া। হাই ভোল্টেজ এই ম্যাচকে ঘিরে বড় হয়ে উঠেছে মাঠের বাইরের ইস্যুই। দক্ষিণ কোরিয়া ডিফেন্ডার লি জা-ইক তো বলেই ফেললেন, পিয়ং ইয়াং থেকে প্রাণে বেঁচে ফিরতে পারলেই খুশি তিনি!
ফিফা র্যাংকিংয়ে উত্তর কোরিয়ার চেয়ে অনেক এগিয়ে দক্ষিণ কোরিয়া। দক্ষিণ কোরিয়া আছে ৩৭ নম্বর স্থানে, উত্তর কোরিয়ার অবস্থান ১১৩। শেষবার পিয়ং ইয়াংয়ে দুই কোরিয়া মুখোমুখি হয়েছিল ১৯৯০ সালে, সেটা অবশ্য প্রীতি ম্যাচে। বিশ্বকাপ বাছাইপর্ব ও অন্যান্য টুর্নামেন্ট মিলিয়ে উত্তর ও দক্ষিণ কোরিয়া মুখোমুখি হয়েছে মোট ১৭ বার। দক্ষিণ কোরিয়া এর মাঝে একবারই হেরেছে, সেটা সেই ১৯৯০ সালের প্রীতি ম্যাচেই।
অনুশীলনে ব্যস্ত সনরা
সাম্প্রতিক সময়ে দুই কোরিয়ার মাঝে সম্পর্কটা আরও তিক্ত হয়েছে। এর মাঝেই পিয়ং ইয়াংয়ে খেলতে এসেছেন হিউ মিন সনরা। দক্ষিণ কোরিয়ার অনুরোধের পরেও দুই দেশের সীমান্ত দিয়ে সরাসরি উত্তর কোরিয়াতে ঢুকতে পারেননি তারা। চীন ঘুরেই কিম জন উংয়ের দেশে এসেছেন দক্ষিণ কোরিয়ার ফুটবল দলের সদস্যরা। চীনের বেইজিংয়ে দক্ষিণ কোরিয়ার ফুটবলার ও কোচিং স্টাফদের মোবাইল রেখে দেওয়া হয়েছে। দেশে ফেরার সময় তারা এখান থেকেই নিয়ে যাবেন নিজেদের ফোন।
বাছাইপর্বের ড্রয়ের পর থেকেই দুই কোরিয়ার ম্যাচটি নিয়ে চলছিল আলোচনা। আগামীকালের ম্যাচটি দেখা যাবে না টিভিতেও। ফিফা অবশ্য এই ব্যাপারে উত্তর কোরিয়ার সাথে আলোচনার কথা জানিয়েছিল। তবে শেষ পর্যন্ত সেটা ফলপ্রসূ হয়নি। ম্যাচটি সরাসরি সম্প্রচারের ব্যাপারে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে উত্তর কোরিয়া কর্তৃপক্ষ। দক্ষিণ কোরিয়া থেকে এই ম্যাচ কাভার করতে আসতে পারছেন না কোনো সাংবাদিক। মাঠে থাকবেন না দক্ষিণ কোরিয়ার কোনো সমর্থকও।
উত্তর কোরিয়াতে মাঠে নামার আগে মাত্র একটি অনুশীলন সেশন করতে পেরেছেন সনরা। দক্ষিণ কোরিয়া অধিনায়ক দেশ ছাড়ার আগে বললেন, শুধু ম্যাচেই মনোযোগটা রাখতে চান, ‘আমরা তো পর্যটক না। অন্যদিকে কী হলো সেটা নিয়ে ভাবতে চাই না। শুধু ম্যাচেই মনোযোগটা রাখতে চাই।’ ডিফেন্ডার লি সংও বিমানবন্দরে বলে গেলেন, উত্তর কোরিয়াতে খেলতে ভয়ের কিছু দেখছেন না, ‘আমরা শুধু তিন পয়েন্ট নিয়ে দেশে ফেরার কথা ভাবছি। ভয়ের কিছুই নেই। তুর্কমেনিস্তান, লেবানন, ইরানের মতো দেশে খেলতে গেলে একটু কঠিন পরিস্থিতির মুখোমুখি তো হতেই হবে।’
আরেক ডিফেন্ডার লি জা-ইক অবশ্য এতোটা নির্ভার থাকতে পারছেন না। পিয়ং ইয়াংয়ে খেলতে যাওয়ার আগে তিনি জানিয়েছেন, মাঠের লড়াইয়ের চেয়ে নিরাপত্তাটাই বেশি ভাবাচ্ছে তাঁকে, ‘আমি পিয়ং ইয়াংয়ে যেতে কিছুটা ভয় পাচ্ছি। আশা করি প্রাণ নিয়ে ফিরে আসতে পারব দেশে!’
আগামীকাল দুপুর ২.৩০ মিনিটে বাছাইপর্বের গ্রুপ এইচের ম্যাচে মুখোমুখি হবে দুই কোরিয়া। দুই দলই নিজেদের প্রথম দুই ম্যাচ জিতেছে।