• বিশ্বকাপ বাছাই
  • " />

     

    যুব ভারতীতে এক বাংলাদেশির হৃদয়-জয়

    যুব ভারতীতে এক বাংলাদেশির হৃদয়-জয়    

    দর্শকঠাসা যুব ভারতীতে বাংলাদেশ-ভারতের বিশ্বকাপ বাছাইয়ের দুর্দান্ত ম্যাচে বাংলাদেশিদের সংখ্যা ছিল একেবারেই কম। চট্টগ্রাম থেকে খেলা দেখতে গিয়েছিলেন নাইমুল রিয়াদ। সেই দারুণ অভিজ্ঞতার কথা তার মুখ থেকেই শোনা যাক...


    ‘আরে, বাংলাদেশ থেকে এসেছেন! একটা সেলফি তোলা যাবে?’

    কলকাতার যুব ভারতী স্টেডিয়ামে এই আবদার কাল শুনতে হয়েছে একটু পর পর। দমদম বিমানবন্দর থেকে যখন সল্ট লেক এসে পৌঁছি, ম্যাচ শুরু হওয়ার তখনও বেশ কিছুটা সময় বাকি। আমরা চট্টগ্রাম থেকে এসেছিলাম তিন জন, বাকি তিন জন এখানে আমাদের সঙ্গে যোগ দিয়েছে। ছয়জনের ছোট্ট গ্রুপ, বাংলাদেশিও পুরো স্টেডিয়ামে খুব বেশি ছিল না। মেরেকেটে পাঁচশ হবে কি না সন্দেহ। এর মধ্যে জার্সি ছিল না অনেকের। আমার গায়ে ছিল একটা, লোকজন চট করেই বুঝে যাচ্ছিল ওপার থেকে এসেছি। ছবি তোলার ওই হিড়িক সেজন্যই। নিজেকে এক আধটু যে সেলিব্রিটি মনে হচ্ছিল না সেটাও বলি কী করে! সাক্ষাৎকারই দিয়েছি অনেকগুলো, সবই স্থানীয় রেডিও আর টিভি চ্যানেল। কটা দিয়েছি, সেটা পরে আর হিসেব করে কুল পাইনি!

    সে যাকগে, সল্টলেকে যখন পৌঁছালাম আমাদের হাতে টিকিট ছিল না। আসার পথে পুরো কলকাতাই মনে হচ্ছিল শুনশান। সল্টলেকের আশেপাশের অনেক দোকান বন্ধ, গোটা শহর যেন বাতি জ্বেলে সতর্ক। দেখি ট্রাকে করে স্লোগান দিতে দিতেও আসছে অনেকে। পরে শুনেছিলাম, অনেকে অফিস থেকে তাড়াতাড়ি বের হয়ে গেছে খেলা দেখার জন্য। একটা ঝুঁকি নিয়ে ফেলেছিলাম আসলে, টিকিট কেটে আসা হয়নি। শেষ পর্যন্ত মাঠের বাইরে থেকে কালোবাজারে চার গুণ দামে কিনতে হলো টিকিট। আমাদের আসন ছিল র‍্যাম্প ২৭, গেট ফাইভ। খেলা শুরু হওয়ার আগে দেখলাম বাংলাদেশ দল ঢুকছে। কেন যেন মন বলছিল, আজ কিছু একটা হতে চলেছে!
     



    তবে মাঠের ভেতরে ঢুকে উত্তেজনাটা আরেক দফা বেড়ে গেল। যুবভারতী এমনিতেই চমৎকার একটা স্টেডিয়াম, দারুণ টার্ফ। চট করে দেখলে মনে হবে কোনো ইউরোপিয়ান স্টেডিয়ামে বোধ হয় এসে পড়েছি। এর মধ্যেই চলতে থাকল ছবি তোলার পালা। এক গ্রুপ এসে ছবি তোলে তো আরেক গ্রুপ আসে একটু পর। কেউ কেউ বাড়ি কোথায়ও জানতে চায়। অনেকেরই দেখা গেল নাড়ি পোতা বাংলাদেশে। কারও ঢাকায়, চট্টগ্রামে। নিজের জন্মভূমি বরিশালেরও পেয়ে গেলাম বেশ কয়েকজনকে। বঙ্গবন্ধুর দেশ থেকে এসেছি বলে হাত বাড়িয়ে দিল অনেকে। তখনও মনে হচ্ছিল না কোনো শত্রুশিবিরে বসে আছি। উলটো শুভেচ্ছা বিনিময়ের ঠেলায় আমি নিজেই কিছুটা অস্থির!

    এর মধ্যে চোখে পড়ল দর্শকেরা মোটামুটি গোটা স্টেডিয়াম ছেয়ে ফেলেছে। একদিকে ইস্ট বেঙ্গল আল্ট্রার টিফো, আরেকদিকে মোহনবাগানের। মনে হচ্ছিল যেন সিগনাল ইডুনা পার্কে বসে আছি! খেলা শুরু হওয়ার পর অবশ্য চিৎকারে কান পাতা দায়। আমরা ছয়জনও সুযোগ পেলে চেঁচাচ্ছিলাম, তবে কটু কথা শুনতে হয়নি খুব একটা। কেউ চোখরাঙানি দেয়নি, অভদ্র ব্যবহার দূরে থাক। যখন সাদ উদ্দিন গোল দিল, আমাদের আনন্দ আর দেখে কে! সল্ট লেক মনে হচ্ছিল শোকে পাথর হয়ে গেছে। তবে আমাদের কেউ তেমন কিছু বলেনি।

    দ্বিতীয়ার্ধের সময় যত গড়াতে লাগল তত উত্তেজনা চরমে। ৮০ মিনিটের দিকে দেখি কেউ কেউ হতাশ হয়ে মাঠ ছাড়তে শুরু করেছে। এরপর ৮৩ মিনিটের দিকে পুলিশ এসে বলল, কোনো অঘটন যাতে না হয় সেজন্য বাংলাদেশিদের সবাইকে একসঙ্গে থাকতে হবে। পরে আমরা বড় যে গ্রুপ আছে, একসঙ্গে খেলা দেখলাম। এরপরেই তো ওদের গোল, মনটা খারাপ হয়ে গেল বেশ। তবে বাইরে বের হতে আবারও অনেকে সেলফি তুলল। সবাই বেশ ভালো ভালো কথা বলছিল। জামাল ভুঁইয়া, ইয়াসীনের প্রশংসা করছিল। মোনেম মুন্নাকেও মনে আছে কারও কারও, মামুনুলের নামও বললেন দুয়েকজন। শেখ জামাল যে আইফএফএ শিল্ডে দুর্দান্ত খেলেছে, সেটাও জানা অনেকের। অনেকেই বলছিল, বাংলাদেশই বেশি ক্লিয়ার চান্স পেয়েছে। বুকটা যেন গর্বে ভরে উঠছিল এসব শুনে। বিদেশের মাটিতে ম্যাচ, আর প্রশংসা শুনছি নিজের ভাষায়, এ একেবারেই অন্যরকম একটা অনুভূতি।

    জামাল ভুঁইয়ারা এই অনুভূতির স্বাদ আমাদের আরও অনেকবার দেবেন, সেই আশায় এখন বুক বাঁধতেই পারি আমরা!