তুরস্কে গ্যালাতাসারের বিপক্ষে রিয়ালের তুরুপের তাস ক্রুস
পিএসজির কাছে বড় হারের পর ক্লাব ব্রুজের সাথে ড্রয়ে চ্যাম্পিয়নস লিগের ইতিহাসে কখনও গ্রুপপর্ব থেকে বিদায় না নেওয়ার রেকর্ডটা হুমকির মুখেই পড়েছিল রিয়াল মাদ্রিদের। গ্যালাতাসারের বিপক্ষে তাই জয়ের বিকল্প ছিল না চাকরি হারানোর শঙ্কায় ভুগতে থাকা জিনেদিন জিদানের। বাঁচা-মরার লড়াইয়ে তুরস্কে জিদানের তুরুপের তাস হয়ে আসলেন টনি ক্রুস। ইনজুরি কাটিয়ে ফেরা জার্মান মিডফিল্ডারের গোলে ২০১৯-২০ চ্যাম্পিয়নস লিগে ‘এ’ গ্রুপে অবশেষে জয়ের দেখা পেল রিয়াল, গ্যালাতাসারেকে ১-০ গোলে হারিয়েছে তারা।
মায়োর্কার কাছে গত সপ্তাহে হেরে লা লিগার শীর্ষস্থান হারাতে হয়েছিল বার্সেলোনার কাছে। গ্যালাতাসারের বিপক্ষে ম্যাচের আগে আত্মবিশ্বাসের ঘাটতিতে ভুগছিল রিয়াল, স্বীকার করেছিলেন জিদান নিজেই। মায়োর্কার বিপক্ষে ছিলেন না এডেন হ্যাজার্ড, ক্রুস, ফেদেরিকো ভালভার্দে, রাফায়েল ভারানরা। ‘ডু অর ডাই’ ম্যাচে রিয়ালের একাদশে ফিরেছিলেন সবাই। ম্যাচের প্রথম মিনিটেই লিড নেওয়ার সুযোগ পেয়েছিল রিয়াল, কিন্তু রদ্রিগোর ক্রস থেকে ডিবক্সে বল পেয়েও শট গোলে রাখতে পারেননি হ্যাজার্ড। পুরো মৌসুমেই রক্ষণের কারণে দারুণ ভুগতে হয়েছিল রিয়ালকে। তুরস্কেও স্বরূপে ছিলেন না সার্জিও রামোস-ভারানরা।
ফিরেই রিয়ালকে পথ দেখালেন ক্রুস
ডিফেন্ডাররা আবারও রিয়ালকে হতাশ করলেও ফর্মে ছিলেন থিবো কর্তোয়া, প্রথমার্ধে গ্যালাতাসারের অন্তত তিনটি নিশ্চিত গোল বাঁচিয়েছিলেন বেলজিয়ান গোলরক্ষক। ১০ মিনিটে ইউনুস বেলহান্দার পাস থেকে কর্তোয়াকে একা পেয়ে যান স্ট্রাইকার ফ্লোরিয়ান আন্দোনে, কিন্তু দুর্দান্ত সেভে তাকে ফিরিয়ে দেন রিয়াল গোলরক্ষক। মিনিট তিনেক পর আবারও কর্তোয়াকে পরীক্ষায় ফেলেন আন্দোনে, কুইক ফ্রি-কিক থেকে তার হাফভলি দুর্দান্তভাবে ফিরিয়ে দেন কর্তোয়া। রিয়ালের মত দলের বিপক্ষে গোলের এত সুযোগ হাতছাড়া করার চড়া মাশুলও দিতে হয়েছে ফাতি তেরিমের দলকে। ১৮ মিনিটে দলকে লিড এনে ক্রুস।
গ্যালাতাসারের দুই ডিফেন্ডারকে কাটিয়ে ডিবক্সে ঢুকে পড়া হ্যাজার্ডের মাইনাস করিম বেনজেমা ধরতে না পারলেও ডানপায়ের প্লেসিং শটে তুরস্কের চ্যাম্পিয়নদের গোলরক্ষক ফার্নান্দো মুসলেরাকে পরাস্ত করেন জার্মান মিডফিল্ডার। ইনজুরিতে পড়ার পর মাঝমাঠে তার অভাবটা বেশ ভুগিয়েছিল রিয়ালকে, ফিরেই আবারও নিজের সামর্থ্যের জানান দিলেন ক্রুস।
তবে পিছিয়ে পড়লেও হাল ছাড়েনি গ্যালাতাসারে, প্রথমার্ধে গোলের সুযোগ তৈরি, পজেশন ধরে রাখার দিক দিয়ে এগিয়ে ছিল তেরিমের দলই। ২৮ মিনিটে রায়ান বাবেলের থ্রু পাসে ডিবক্সে বল পেয়ে গিয়েছিলেন আন্দোনে, কিন্তু এবার শট গোলে রাখতে পারেননি তিনি।
বল দখলের লড়াইয়ে হ্যাজার্ড
রিয়ালের নড়বড়ে রক্ষণের বিপক্ষে আরও গোলের সুযোগ পেয়েছিল রিয়াল, কিন্তু কর্তোয়া ছিলেন রীতিমত দুর্দান্ত। ৩৮ মিনিটে বাবেলের ক্রস থেকে বেলহান্দার ভলিও দক্ষহাতে ফিরিয়ে দিয়েছেন তিনি। কর্তোয়া দুর্দান্ত ফর্মে থাকলেও গ্যালাতাসারে ফরোয়ার্ডদের ফিনিশিং ছিল দূর্বল। ইনজুরি পড়া স্ট্রাইকার রাদামেল ফালকাওয়ের অভাবটা বেশ ভুগিয়েছে তাদের।
প্রথমার্ধের মত দ্বিতীয়ার্ধেও রিয়ালকে সমান সমান টেক্কা দিয়েছে গ্যালাতাসারে। তবে দ্বিতীয়ার্ধে পজেশন ধরে খেলা গ্যালাতাসারের বিপক্ষে প্রতি-আক্রমণে খেলা রিয়ালই গোলের সুযোগ পেয়েছে বেশি। ৫৩ মিনিটে ক্রুসের মাইনাস থেকে বেনজেমার শট ফিরিয়ে দিয়েছেন মুসলেরা, মিনিট পাঁচেক পর উরুগুইয়ান গোলরক্ষকের কারণে গোল পাননি হ্যাজার্ডও।
তবে ৬৫ মিনিটে মুসলেরাকে ঠিকই পরাস্ত করেছিলেন হ্যাজার্ড, তবে এবার বাধ সাধে ভাগ্য। মুসলেরাকে কাটিয়ে ফাঁকা গোলে হ্যাজার্ডের জোরাল শট প্রতিহত হয় ক্রসবারে। দ্বিতীয়ার্ধে সময় যত গড়িয়েছে, গ্যালাতাসারের আক্রমণভাগের ধার কমেছে তত বেশি। প্রতি-আক্রমণে খেলা রিয়াল গোলের সুযোগ তৈরি করছিল ঠিকই, কিন্তু মুসলেরাকে আর ফাঁকি দেওয়া হয়নি। ৭৭ মিনিটে আবারও মুসলেরাকে একা পেয়ে গিয়েছিলেন বেনজেমা, কিন্তু ফ্রেঞ্চ স্ট্রাইকারের নিরীহ শট ফেরাতে সমস্যা হয়নি তার।
দ্বিতীয়ার্ধে গোলমুখে তেমন সুযোগ তৈরি করতে না পারলেও গ্যালাতাসারের হাল ছাড়ার অনুপ্রেরণা যুগিয়েছে রিয়ালের চেয়ে মাত্র এক গোলে পিছিয়ে থাকাটাই। কিন্তু শেষ পর্যন্ত আর গোলশোধ করা হয়নি তাদের। আরও এক অগোছালো পারফরম্যান্সের পরও স্বস্তির জয়ে আপাতত কিছুটা নির্ভার থাকতে পারছে রিয়াল, চাকরি হারানোর শঙ্কা নিয়েও হয়তো আপাতত ভাবতে হচ্ছে না জিদানকে।