রোনালদোবিহীন জুভেন্টাসকে রুখে দিল লেচ্চে
সিরি আর মৌসুমে নিজেদের মাঠে জয় তো দূরে থাক, ড্রয়েরও মুখ দেখেনি লেচ্চে। টেবিলের তলানীতে ধুঁকতে থাকা দলটির বিপক্ষে ম্যাচে ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদোকে বিশ্রাম দিয়েছিলেন জুভেন্টাস ম্যানেজার মরিজিও সারি। কিন্তু শেষ পর্যন্ত আক্রমণে দলের মূল ভরসাকে বসিয়ে রাখার সিদ্ধান্তে হিতে বিপরীত হল তুরিনের বুড়িদের। গত সপ্তাহে এসি মিলানের সান সিরো থেকে পয়েন্ট ছিনিয়ে এনেছিল লেচ্চে। এবার রোনালদোবিহীন জুভেন্টাসকে ১-১ গোলে রুখে দিয়ে নিজেদের মাঠে এই মৌসুমে প্রথম পয়েন্ট পেল তারা। পচা শামুকে পা কাটায় ইন্টার মিলানের সাথে জুভেন্টাসের পয়েন্টের ব্যবধানটা কমে দাঁড়াল ১-এ, রাতে পার্মাকে হারিয়ে দিলে আবারও শীর্ষে উঠে যাবে আন্তোনিও কন্তের দল।
গত সপ্তাহে নিজেদের মাঠে লোকোমোটিভ মস্কোর বিপক্ষে পিছিয়ে পড়লেও জুভেন্টাসকে জোড়া গোলে উদ্ধার করেছিলেন পাউলো দিবালা। রোনালদোর জায়গায় আক্রমণে গঞ্জালো হিগুয়াইন এবং ফেদেরিকো বের্নার্দেশির সাথে দিবালার ওপরই আস্থা রেখেছিলেন সারি। লেচ্চের মাঠে পুরোটা ম্যাচই জুভেন্টাসের সেরা ফুটবলার ছিলেন তিনিই। তবে দিবালার মত উজ্জ্বল ছিলেন না মাঝমাঠ বা ফরোয়ার্ডদের কেউই। দলের মাঝে বোঝাপড়ার অভাবটা ছিল স্পষ্ট। স্বভাবসুলভ পাসিং ফুটবলে লেচ্চের জমাট রক্ষণ ভেদ করতে না পেরে দুই প্রান্ত থেকে ব্রাজিলিয়ান ফুলব্যাক জুটি দানিলো এবং অ্যালেক্স সান্দ্রোর ক্রসে নির্ভর করেছে সারির দল, কিন্তু ডিবক্সে রোনালদোর অভাবটা বেশ ভুগিয়েছে তাদের।
একাদশে সুযোগ পেয়ে আবারও সারিকে সামর্থ্যের জানান দিলেন দিবালা
লেচ্চেও অবশ্য ছেড়ে কথা বলেনি। পুরো প্রতি-আক্রমণে খেলা স্বাগতিকরাও সুযোগ পেয়েছিল বেশ কয়েকবার, কিন্তু জুভেন্টাস গোলরক্ষক ওয়েচেক শেজনি ছিলেন দারুণ ফর্মে। প্রথমার্ধে অবশ্য তেমন গোলের সুযোগ তৈরি করতে পারেনি সারির দল, তবে নিজেদের পারফরম্যান্সের চেয়েও হয়তো প্রথমার্ধে রেফারি এবং 'ভিএআর'-এর বিতর্কিত সিদ্ধান্তের ভুক্তভোগী মনে করতে পারে তারা। প্রথমার্ধের দু'বার ডিবক্সে নিশ্চিতভাবে ফাউলের শিকার হয়েছিলেন হিগুয়াইন এবং এমরে চান; কিন্তু ভিডিও রেফারির শরণাপন্ন হলেও পেনাল্টি আবেদন নাকচের সিদ্ধান্ত বদলাননি রেফারি।
তবে এতক্ষণ 'ভিএআর' নামক মুদ্রার ওপিঠ দেখা জুভেন্টাস ৫৬ মিনিটে অবশেষে দেখেছে মুদ্রার এপিঠ। লেচ্চে ডিফেন্ডার পেত্রোচ্চিনি জুভেন্টাসের মিরালেম পিয়ানিচকে ডিবক্সে ফেলে দিলেও প্রথমে পেনাল্টির বাঁশি দেননি রেফারি। কিন্তু 'ভিএআর'-এর উপদেশে মাঠের বাইরে এসে মনিটরে রিপ্লে দেখে সিদ্ধান্ত বলদান রেফারি। ১২ গজ থেকে দলকে এগিয়ে নেন দিবালা। তবে লিড নেওয়ার উল্লাস খুব একটা দীর্ঘস্থায়ী হয়নি তাদের; মিনিট ছয়েক পরই পেনাল্টিতেই সমতায় ফেরে লেচ্চে।
বাঁ-প্রান্ত থেকে কালদেরোনির ক্রস মাথিয়াস ডি লিটের হাতে লাগলে পেনাল্টির বাঁশি দেন রেফারি, 'ভিএআর'-ও জানায় একই সিদ্ধান্ত। দিবালার মতই পেনাল্টি থেকে গোল করেন মানকোসু। লিড হারিয়েও ম্যাচের বাকি সময় আক্রমণে খুব বেশি সুবিধা করতে পারেনি সারির দল। সমতায় ফেরা লেচ্চের সমস্যা ঘনীভূত হয় যখন ইনজুরিতে পড়ে মাঠ ছাড়েন অধিনায়ক মানকোসু। কিন্তু ততক্ষণে তিনজন বদলি নামিয়ে ফেলায় শেষ মিনিট দশেক দশজন নিয়েই খেলতে হয়েছে লেচ্চেকে।
কিন্তু দশজনের বিপক্ষেও খুব একটা সুবিধা করতে পারেনি সারির দল। দ্বিতীয়ার্ধে জুভেন্টাসের জন্য মড়ার ওপর খাঁড়ার ঘা হয়ে আসে পিয়ানিচের ইনজুরি। পিয়ানিচকে ছাড়া মাত্র একবার লেচ্চে গোলরক্ষক গ্যাব্রিয়েলকে বিপদে ফেলতে পেরেছিল জুভেন্টাস, কিন্তু তাকে কাটিয়েও শট গোলে রাখতে পারেননি বের্নার্দেশি। শেষ পর্যন্ত টানা সাত ম্যাচ জয়ের রেকর্ড হাতছাড়া করেই লেচ্চের মাঠ থেকে ফিরতে হয়েছে দিবালা-হিগুয়াইনদের।