রোনালদোর শেষ মুহুর্তের গোলে শীর্ষে থাকল জুভেন্টাস
ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদো সবশেষ নির্ধারিত সময় ৯০ মিনিট পেরিয়ে যাওয়ার পর গোল করেছিলেন কবে? রিয়াল মাদ্রিদের হয়ে চ্যাম্পিয়নস লিগের কোয়ার্টার ফাইনালে, জুভেন্টাসের বিপক্ষে। আক্ষরিক অর্থেই ম্যাচের শেষ কিক নিয়ে জুভেন্টাসকে বিদায় করে দিয়েছিলেন সেবার রোনালদো। প্রায় দেড় বছর পর আবারও ম্যাচের শেষ কিকে গোল করলেন রোনালদো। এবার জুভেন্টাস জয় পেল সেই গোলে, জেনোয়াকে ২-১ ব্যবধানে হারিয়ে তাই জুভেন্টাসও থাকল সিরি আ-র শীর্ষস্থানে।
৯৬ মিনিটে নিজেই পেনাল্টি আদায় করেছিলেন। এরপর নিচু শটে প্রতিপক্ষ গোলরক্ষককে কোনো সুযোগ না দিয়েই কাজটা ঠিকঠাক করেছেন রোনালদো। জয় না পেলে জুভেন্টাস নেমে যেত দুইয়ে, শীর্ষে থাকত ইন্টার মিলান।
সাবেক ইন্টার মিডফিল্ডার থিয়াগো মোত্তা জেনোয়ার কোচের দায়িত্ব নিয়েছিলেন আগের সপ্তাহে। তার অধীনে প্রথম ম্যাচেই জেনোয়া পেয়েছিল জয়। তাতে রেলিগেশন জোনের ওপরে উঠে এসেছিল জেনোয়া। জুভেন্টাসের বিপক্ষে গতবার লিগে শেষ ম্যাচেও ২-০ গোলের জয়ের স্মৃতি সঙ্গী ছিল তাদের। সব মিলিয়ে জুভেন্টাসকে হতাশ করার মতো সবকিছুই করে যাচ্ছিল তারা মাঠে। শেষে গিয়ে রোনালদোর কাছে হেরে তুরিন থেকে খালি হাতে ফিরতে হয়েছে মোত্তার দলকে।
সিরি আর শেষ ম্যাচে মাথায় আঘাত পাওয়ার এদিন দলে ছিলেন না গঞ্জালো হিগুয়াইন। আর রোনালদো ছিলেন না আগের ম্যাচে। বিরতির পর রোনালদো এদিন আক্রমনে নেমেছিলেন পাউলো দিবালা ও ফ্রেডেরিকো বের্নদেস্কি। প্রথমার্ধে জুভেন্টাসকে ভুগতে হয়েছে গোলের সুযোগ তৈরিতে। সেরা সুযোগটা তৈরি করেছিলেন দিবালা। জেনোয়ার অর্ধে বল কেড়ে নিয়ে দ্রুত গতিতে বক্সের ভেতর ঢুকে গোলে শট করলেও গোল পাননি তিনি। ইওনুত রাদুর দুর্দান্ত এক সেভে আটকে গেছেন তখন দিবালা।
তবে সেই রাদুর আরেক ভুলেই এগিয়ে যায় জুভেন্টাস। লাফিয়ে উঠে কর্নার থেকে নেওয়া শট ধরতে গিয়েছিলেন তিনি, মিস করেছেন, সেই সুযোগে লিওনার্দো বনুচ্চি হেডে গোল করে জুভেন্টাসকে লিড এনে দিয়েছিলেন ৩৬ মিনিটে। কিন্তু বিরতিতে যাওয়ার আগেই আবার সেই লিড হাতছাড়া হয়ে যায় জুভেন্টাসের।
অ্যালেক্স সান্দ্রো রক্ষণে ভুল পাস দিয়ে বিপদ ডেকে এনেছিলেন। বক্সের বাইরে ক্রিশ্চিয়ান কুয়ামে তখন বল পেয়ে গিয়েছিলেন। এরপর ডান পায়ে শট করতে গিয়ে অদ্ভুতভাবে সেটা আবার বাম পায়ে বাধা পেলেও গোল পেয়ে যান তিনি। কুয়ামের শটের ধন্ধে পড়ে জিয়ানলুইজি বুফনও বোকা বনে যান। এই নিয়ে টানা চতুর্থবারের মতো সিরি আতে ঘরের মাঠে জুভেন্টাসের গোলবারের দায়িত্বে ছিলেন বুফন। সিরি আতে জুভেন্টাসের হয়ে সর্বোচ্চ ম্যাচ খেলার আলেসান্দ্রো দেল পিয়েরোর রেকর্ডও এই ম্যাচ দিয়ে ছুঁয়ে ফেলেছেন তিনি।
রেকর্ডের রাতে ক্লিনশিট রাখতে না পেরে কিছুটা হতাশ হতেই পারেন বুফন। কারণ এরপর আর জেনোয়া সেভাবে আক্রমণে উঠতে পারেনি। দ্বিতীয়ার্ধে ৬ মিনিট পেরুনোর পর দিবালাকে মিডফিল্ডে আটকে ধরে রেখে দ্বিতীয় হলুদ কার্ড দেখেন ফ্রাঞ্চেস্কো কাসাতা। এরপর দশ জেনোয়া দশ জনের দলে পরিণত হওয়ার পর জুভেন্টাসের জয় নিয়ে সংশয়ও কমে আসে।
কিন্তু তখন বাধা হয়ে দাঁড়ান জেনোয়া গোলরক্ষক। বের্নাদেস্কির বক্সের বাইরে থেকে নেওয়া দারুণ এক শট আটকে দেন তিনি। এর পর রোনালদোও হতাশ করেন জুভেন্টাসকে। দিবালার নিখুঁত এক ক্রসে ঠিকঠাক মাথা ছোঁয়াতে পারলেই গোল পেয়ে যেতেন। গোলের একেবারে সামনে থেকেও সেই কাজটা করতে পারেননি রোনালদো। বদলি হয়ে ইনজুরি থেকে ফেরা ডগলাস কস্তা, আদ্রিয়েন রাবিওদের নামিয়ে গোলের চেষ্টা করেছিলেন মাউরিসিও সারি। কিন্তু ফল বদলানোর মতো কিছুই করতে পারেননি তারাও।
নির্ধারিত সময়ের ৩ মিনিটে বাকি থাকতে রাবিওর জন্য একজন বেশি নিয়ে খেলার সুবিধাটাও হারায় জুভেন্টাস। শেষ আধঘন্টার জন্য মাঠে নেমে ১০ মিনিটের ব্যবধানে দুইবার হলুদ কার্ড দেখেন ফ্রেঞ্চ মিডফিল্ডার। ফলে জুভেন্টাসও ম্যাচ শেষ করেছে ১০ জন নিয়েই।
দলের বদলিরা না পারলেও জেনোয়ার বদলি স্ট্রাইকার সাহায্য করেছেন জুভেন্টাসকে। ৯৬ মিনিটে বক্সের ভেতর রোনালদো ছিলেন গোল থেকে বেশ দূরে, ডানদিকে। তখন পেছন থেকে রোনালদোর হাত টেনে ধরতে যান অ্যান্টোনিও সানাব্রিয়া। পেনাল্টির বাঁশি বাজাতে রেফারিকে ভাবতে হয়নি দুইবার। এরপর বাকি কাজ সেরেছেন রোনালদো। ফোর্থ কিট পরের ঘরের মাঠের শুরুটাও তাই পয়া হয়েছে জুভেন্টাসের।
টানা দুই ম্যাচ ড্রয়ের হাত থেকে তাই একেবারে শেষে গিয়ে রেহাই পেয়েছে জুভেন্টাস। ইন্টারের চেয়ে এক পয়েন্ট এগিয়ে থেকে ১০ ম্যাচ শেষে তাদের পয়েন্ট ২৬।