• চ্যাম্পিয়নস লিগ
  • " />

     

    ক্লপের 'খ্যাতির বিড়ম্বনা', এমেরি-ওজিল দ্বন্দ্ব এবং 'ভিএআর' বিতর্ক

    ক্লপের 'খ্যাতির বিড়ম্বনা', এমেরি-ওজিল দ্বন্দ্ব এবং 'ভিএআর' বিতর্ক    

    অ্যানফিল্ডে টটেনহাম হটস্পারের বিপক্ষে জয়ের দিন তিনেক পরই একই মাঠে আর্সেনালের সাথে ইয়ুর্গেন ক্লপের দলের রুদ্ধশ্বাস জয়, তুরিনের ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদোর অন্তিম মুহূর্তের গোলে সিরি আ-তে জুভেন্টাসের শীর্ষস্থান ধরে রাখা, রিয়াল মাদ্রিদের জার্সিতে অবশেষে লুকা ইয়োভিচের গোল পাওয়া- গত সপ্তাহের লিগের ম্যাচের পর মিডউইকেও মাঠে নেমে পড়তে হয়েছিল ইউরোপের শীর্ষ দলগুলোর। প্রিমিয়ার লিগ, লিগ কাপ, সিরি আ, লা লিগা- মাঠে গড়িয়েছে সবই। ‘ভিএআর’ বিতর্ক, দুর্দান্ত গোল, অন্তিম মুহূর্তের দম বন্ধ করে দেওয়া নাটক- সবমিলিয়ে ঘটনার রসদের অভাব হয়নি একেবারেই।  

     

    ওজিলের সামর্থ্য, এমেরির গোয়ার্তুমি এবং অসহায় আর্সেনাল

    সমস্যার শুরু গত মৌসুমের ইউরোপা লিগ ফাইনাল থেকেই। চেলসির বিপক্ষে ফাইনালে ৪-১ গোলে পিছিয়ে থাকার সময় মেসুত ওজিলকে উঠিয়ে নেন আর্সেনাল ম্যানেজার উনাই এমেরি। হতাশ ওজিলে মাঠ ছাড়ার সময় এমেরিকেই বলে বসেন, “আপনি কোনও ম্যানেজারই না”। ঐ ম্যাচের পর থেকে অ্যানফিল্ডে লিভারপুলের বিপক্ষে লিগ কাপের আগ পর্যন্ত ওজিলকে বেশিরভাগ সময় স্কোয়াডের বাইরেই রেখেছেন এমেরি। যেসব ম্যাচে স্কোয়াডে রেখেছিলেন; সেসব ম্যাচেও নানান অজুহাতে বসিয়ে রেখেছেন বেঞ্চেই।

     

     

    একের পর এক হতাশাজনক পারফরম্যান্স এবং ফলাফলের পর আর্সেনাল সমর্থকদের রোষানলে পড়া এমেরি অবশেষে ওজিলকে নামিয়ে দিলেন লিভারপুলের বিপক্ষে। প্রায় মাস চারেক একরকম ফুটবল থেকে দূরে থাকা ওজিল নেমেই জানান দিলেন, কেন আর্সেনালের মাঝমাঠের নিউক্লিয়াস বলা হয় তাকে। পুরো ম্যাচে ওজিল ছিলেন দুর্দান্ত। নিচে নেমে রক্ষণে সাহায্য করেছেন, আক্রমণে বাড়িয়েছেন চকিত বুদ্ধিদীপ্ত পাস। তার পাস থেকেই এসেছে আর্সেনালের চতুর্থ গোল। কিন্তু তারপরও ৬৫ মিনিটে ওজিলকে উঠিয়ে নিয়েছেন এমেরি, নামিয়ে দেন দানি সেবায়োসকে। ওজিলকে উঠিয়ে নেওয়ার সময়ই প্রতিপক্ষের মাঠেও আর্সেনাল সমর্থকদের থেকে দুয়ো শুনেছেন এমেরি।

    ইয়ান রাইট, রবার্ট পিরেসদের মত ক্লাব কিংবদন্তীরা আছেন ওজিলের পক্ষে, আছেন সমর্থকেরাও। হতাশাজনক মৌসুম কাটানোর পর ওজিলকে ইচ্ছা করে বসিয়ে রেখে হয়তো নিজের কবর নিজেই খুঁড়ছেন এমেরি। মৌসুমের অর্ধেক শেষ না হতেই তার বরখাস্তের দাবিতে উত্তাল আর্সেনাল সমর্থকেরা, শোনা যাচ্ছে ‘গানার’দের ম্যানেজার হতে রাজি আছেন হোসে মরিনহোও। ওদিকে ওজিলও জানিয়ে দিয়েছেন; চুক্তি অনুযায়ী ২০২১-এর আগে ক্লাব ছাড়ছেন না তিনি। শেষ পর্যন্ত নিজের কারণেই হয়তো চাকরিটা খোয়াতে হতে পারে এমেরিকে। 

     

    ওরিগি ‘দ্য ফিনিশার’

    অ্যানফিল্ডে লিগ কাপে লিভারপুল-আর্সেনালের শেষ ষোলর ম্যাচের চিত্রনাট্যে অবাক হননি, এমন সমর্থক হয়তো মেলা ভার। ৯৩ মিনিট পর্যন্ত ৫-৪ গোলে এগিয়ে ছিল আর্সেনাল। শেষবার অ্যানফিল্ডে এই আর্সেনালের কাছেই পাঁচ গোল খেয়েছিল লিভারপুল, লিগ কাপ থেকে বিদায়ের আশঙ্কা জেঁকে ধরেছে তাদের। তখনই চিত্রনাট্যে আবির্ভাব হলেন লিভারপুলের নায়ক ডিভক ওরিগি।

    অবশ্য ওরিগি আগে থেকেই ছিলেন চিত্রনাট্যে, গোলও করেছিলেন ম্যাচে। কিন্তু ৯৪ মিনিটে দুর্দান্ত ভলিতে ম্যাচে তার করা দ্বিতীয় গোলে আর্সেনালকে টাইব্রেকারে নিয়ে গেল ক্লপের দল। সেখানেও লক্ষ্যভেদ করলেন ওরিগি। গত মৌসুমে চ্যাম্পিয়নস লিগের সেমির দ্বিতীয় লেগের অন্তিম মুহূর্তে বার্সেলোনাকে বিদায় করা গোল, বা ফাইনালে জয় নিশ্চিত করা গোল- গত দুই মৌসুমে যতবারই খাদের কিনারায় ছিল লিভারপুল; ততবারই তাদের সেখান থেকে টেনে তুলেছেন ওরিগি। এবারও করলেন তাই।

     

     

    দানি সেবায়োস পেনাল্টি মিস করায় শেষ আটে চলে গেল লিভারপুল; আবারও ওরিগি জানান দিলেন; কেন প্রতি দলবদলে ফরোয়ার্ড না কিনে তার ওপরই আস্থা রাখছেন ক্লপ। এতকিছুর পরও ওরিগি নিজেও হয়ত জানেন; সালাহ-ফিরমিনো-মানেকে টপকে লিভারপুলের একাদশে জায়গা করে নেওয়া হয়তো হবে না তার। কিন্তু লিভারপুলের 'কাল্ট হিরো' হিসেবে নিজের নামটা 'অল রেড'দের ইতিহাসে ঠিকই লিখিয়ে ফেলেছেন তিনি।

     

    মানজুকিচ, দ্য ফরগটেন ম্যান

    জুভেন্টাসের ম্যানেজার হয়ে আসার পর থেকেই মারিও মানজুকিচকে যেন ভুলেই গেছেন মরিজিও সারি। ২০১৯-২০ মৌসুমের মাস তিনেক শেষ হয়ে গেলেও এখনও তুরিনের বুড়িদের হয়ে এক ম্যাচও খেলেননি সাবেক ক্রোয়াট স্ট্রাইকার। ইতালিয়ান চ্যাম্পিয়নদের চ্যাম্পিয়নস লিগ স্কোয়াডেও জায়গা হয়নি তার। আক্রমণে ঠিক আগের মত গোলও পাচ্ছে না জুভেন্টাস। ঘরের মাঠেও তাই সহজ ম্যাচ কঠিন করে জিততে হচ্ছে তাদের।

     

     

    সিরি আ টেবিলের শীর্ষে থাকলেও ১০ ম্যাচ শেষে মাত্র ১৮ গোল করেছেন রোনালদোরা। সিরি আ-এর শীর্ষ ছয়ে সারির দলের চেয়ে কম গোল নেই কারোই। ২-এ থাকা ইন্টার মিলান গোল করেছে ২২টি, সমানসংখ্যক গোল করেছে সারির সাবেক দল নাপোলি। একাদশে রোনালদো থাকায় পাসিং ফুটবলের মত গোলের জন্য দুই প্রান্ত থেকে ডিবক্সে ক্রসেও নির্ভর করছে জুভেন্টাস। কিন্তু রোনালদো না থাকলে ক্রস কাজে লাগাতে পারছেন না গঞ্জালো হিগুয়াইন, দিবালারা।

    হেড করার সামর্থ্যের বিচারে ইউরোপের ফুটবলারদের তালিকায় শুরুর দিকেই থাকবে মানজুকিচের নাম। কিন্তু এতকিছুর পরও তাকে একরকম ব্রাত্যই করে রেখেছেন সারি। স্বাভাবিকভাবেই জানুয়ারিতে ক্লাব ছাড়ার গুঞ্জন শোনা যাচ্ছে তার। সম্ভাব্য গন্তব্য হিসেবে সবচেয়ে বেশি শোনা যাচ্ছে ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের নাম। শীতকালীন দলবদলে তাই মানজুকিচের ক্লাব ছাড়ার সম্ভাবনাই হয়তো বেশি। 

     

    স্কোয়াড ডেপথ এবং কন্তের ‘ক্রন্দন’

    লিগ, কাপ, চ্যাম্পিয়নস লিগ- মৌসুমের শীর্ষ তিন শিরোপার জন্য লড়াই করতে হলে স্কোয়াড ডেপথ থাকাটা যেকোনো দলের জন্য আবশ্যক। কিন্তু তারপরও ইউরোপের শীর্ষ দলগুলোর ম্যানেজারদের মধ্যে স্কোয়াড ডেপথ নিয়ে অভিযোগ করতে দেখা যায় প্রায়ই। ব্যাপারটিকে বলতে গেলে শিল্পের পর্যায়ে নিয়ে গেছেন ম্যানচেস্টার সিটি ম্যানেজার পেপ গার্দিওলা। রিয়াল মাদ্রিদ, বার্সেলোনাকে টপকে ক্লাব ফুটবলের সবচেয়ে দামি স্কোয়াডের (১.২৮ বিলিয়ন ইউরো) ম্যানেজার হয়েও গার্দিওলা বলেন, অ্যাস্টন ভিলা অধিনায়ক জ্যাক গ্রিলিশকে কেনার টাকা নেই তার দলের।

     

     

    গার্দিওলার মত না হলেও কম যাননি ইন্টার মিলান ম্যানেজার আন্তোনিও কন্তে। প্রায় ৬০০ মিলিয়ন ইউরো বাজারদর সমৃদ্ধ স্কোয়াড নিয়েও কন্তে মনে করেন, আরও নতুন ফুটবলার দরকার তার দলের। অবশ্য কন্তের ব্যাপারটি নতুন নয় একদমই। জুভেন্টাস, চেলসিতেও একই কাজ করে এসেছেন তিনি। মালিকপক্ষ বা ক্লাবের হর্তাকর্তাদের ওপর কন্তের এই চাপ সৃষ্টি কাজে দেয়নি আগে; আন্দ্রেয়া আনেল্লি (জুভেন্টাস প্রেসিডেন্ট) বা রোমান আব্রামোভিচকে (চেলসি মালিক) রাজি করাতে তেমন সফল হননি তিনি।

    ইতালিয়ান সাংবাদিক রবার্তো গ্যালিয়ানি একবার বলেছিলেন, ক্লাবের হয়ে শিরোপা জিততে না পারলে অজুহাত দেখানোর জন্যই প্রতিবার এমনটি করে থাকেন কন্তে। সেজন্য এক কন্তেকে ‘কাপুরুষ’ও বলেছিলেন গ্যালিয়ানি। সিরি আ-তে স্কোয়াডের শক্তির বিচারে হয়তো শীর্ষ তিনেই থাকবে কন্তের দল। তাই জুভেন্টাস, চেলসির মত ইন্টারেও কন্তের ‘রিভার্স সাইকোলজি’র টোটকা এবারও কাজে দেবে না হয়তো।

     

    গর্জিয়াস গাৎজানিগা

    ব্রাইটনের বিপক্ষে ম্যাচে কনুই ভেঙে যাওয়ায় এ বছর আর মাঠে ফেরা হচ্ছে না টটেনহাম হটস্পার গোলরক্ষক এবং অধিনায়ক হুগো লরিসের। ফ্রেঞ্চ গোলরক্ষককে হারিয়ে মিচেল ভর্মকেও ফিরিয়ে এনেছে স্পার্স। কিন্তু আপাতত মাউরিসিও পচেত্তিনোর দলের গোলবার সামলাচ্ছেন এতদিন লরিসের ‘আন্ডারস্টাডি’ হিসেবে থাকা আর্জেন্টাইন পাউলো গাৎজানিগা। গত সপ্তাহে অ্যানফিল্ডে লিভারপুলের কাছে হারলেও তিনি প্রমাণ করেছেন; কেন লরিসকে হারালেও গোলরক্ষক পজিশন নিয়ে কেন নির্ভার থাকতে পারে স্পার্স।

     

     

    অ্যানফিল্ডে রীতিমত অতিমানবীয় পারফরম্যান্স দেখিয়েছেন গাৎজানিগা। শুধুমাত্র প্রথমার্ধেই চারটি নিশ্চিত গোল ফিরিয়ে দিয়েছিলেন লিভারপুলের, এর মধ্যে ‘পয়েন্ট ব্ল্যাংক রেঞ্জ’ থেকে ভার্জিল ভ্যান ডাইকের হেড ফিরিয়ে দেওয়ার সেভটা ছিল রীতিমত অবিশ্বাস্য। গাৎজানিগার জন্যই বড় ব্যবধানে হার এড়িয়েছে স্পার্স, তার কারণেই একটা সময় অ্যানফিল্ডে লিভারপুলের ৪৪ ম্যাচ অপরাজিত থাকার রেকর্ড ভেঙে দেওয়ার স্বপ্ন দেখার সাহসও করেছিল পচেত্তিনোর দল। স্পার্সের জার্সিতে আগের দু’বছর খেলেছিলেন মাত্র চার ম্যাচ, কিন্তু এর মধ্যে ২০১৭-১৮ ম্যাচে ওয়াটফোর্ডের বিপক্ষে লিগ কাপে পেনাল্টি ফিরিয়ে দিয়েছিলেন দুটি।

    আর এবার লরিসের অনুপস্থিতিতে নিজেকে নতুন করে চেনাচ্ছেন। তবে গাৎজানিগাও হয়তো জানেন; পারফরম্যান্স যতই দুর্দান্ত হোক, লরিস আসলে আবারও বেঞ্চেই ফিরে যেতে হবে তাকে। কিন্তু এখনকার ধারাবাহিকতা হয়তো খুলে দিতে পারে জাতীয় দলের দরজা। গত বছর অভিষেক হওয়ার পর আর আর্জেন্টিনার হয়ে খেলা হয়নি তার। গোলরক্ষক সমস্যা ভোগাচ্ছে ‘আলবিসেলেস্তে’দেরও। স্পার্সের হয়ে ধারাবাহিকতা দেখিয়ে আর্জেন্টিনা কোচ লিওনেল স্কালোনির নজর কাড়াটাই হয়তো তাই গাৎজানিগার একমাত্র লক্ষ্য এখন।

     

    ফিক্সচার ফ্যাসাদ, লিভারপুল এবং রবীন্দ্রনাথের 'খ্যাতির বিড়ম্বনা'

    সাহিত্যপ্রেমী হয়ে থাকলে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘খ্যাতির বিড়ম্বনা’ নাটকের নাম শুনে থাকার কথা আপনার। লিভারপুল ম্যানেজার ক্লপের ঐ নাটক দেখা না পড়ার সম্ভাবনা ক্ষীণ বললেও হয়তো বেশি বলা হয়ে যাবে, কিন্তু লিভারপুলের হয়ে এই মৌসুমে খ্যাতির বিড়ম্বনাই ভোগাচ্ছে ক্লপকে।

    লিগ কাপের শেষ আটে কোয়ালিফাই করে কিছুটা সমস্যায়ই পড়েছে লিভারপুল। ডিসেম্বরের ১৬ এবং ১৭ তারিখ লিগ কাপের কোয়ার্টার ফাইনাল মাঠে গড়ানোর কথা। কিন্তু ১৮ ডিসেম্বর ক্লাব বিশ্বকাপের সেমিফাইনাল খেলার জন্য তার আগেই কাতারের উদ্দ্যেশ্যে রওনা হবে লিভারপুল। সমস্যার শুরু এখানেই। আক্ষরিক অর্থেই লিগ কাপের কোয়ার্টারে খেলা অসম্ভব লিভারপুলের জন্য। অবশ্য ইংলিশ এফএ জানিয়েছে; লিভারপুলের সাথে নতুন তারিখ নিয়ে কথা বলছে তারা। কিন্তু সমস্যা অন্য জায়গায়।

     

     

    ডিসেম্বরে প্রিমিয়ার লিগ, চ্যাম্পিয়নস লিগ এবং ক্লাব বিশ্বকাপ মিলিয়ে এমনিই অন্তত ৮টি ম্যাচ খেলার কথা ছিল লিভারপুলের। প্রতি তিন দিন অন্তর মাঠে নামতে হবে ক্লপের দলকে, ডিসেম্বরে আক্ষরিক অর্থেই তাই লিগ কাপে খেলা অসম্ভব লিভারপুলের জন্য। জানুয়ারির ১১ থেকে ১৯ তারিখের মাঝে ছাড়া লিগ কাপের কোয়ার্টারের ম্যাচ খেলার সুযোগ নেই তাদের।

    কিন্তু সমস্যা হল, লিগ কাপের সেমিফাইনাল শুরু হবে ৬ জানুয়ারি থেকে, তাই ম্যাচটি পিছিয়ে জানুয়ারিতে খেলাও সম্ভব নয় তাদের।  এমন অবস্থায় ফিক্সচার বানানো কর্তৃপক্ষদের একহাত নিয়েছেন ক্লপ। পূর্ব পরিকল্পনায় তাদের গাফেলতির কারণে লিভারপুলকে সমস্যার সম্মুখীন হতে হচ্ছে বলে জানিয়েছেন তিনি। লিগ কাপ থেকে নাম প্রত্যাহারের হুমকিও দিয়েছেন তিনি। খ্যাতির বিড়ম্বনাটা তাই হাড়ে হাড়েই টের পাচ্ছেন লিভারপুল ম্যানেজার। 

     

    ‘ভিএআর’ তুমি কার?

    ইউরোপিয়ান ফুটবলে প্রতি সপ্তাহে ভিডিও অ্যাসিস্ট্যান্ট রেফারি (ভিএআর) নিয়ে বিতর্ক হওয়া যেন রুটিনেই পরিণত হয়েছে রীতিমত। এতদিন সিরি আ, লা লিগাতে বিতর্ক বেশি হলেও এবার তার আঁচ লেগেছে প্রিমিয়ার লিগেও। একই সপ্তাহে অন্তত চারটি সিদ্ধান্ত নিয়ে ‘ভিএআর’-এ সিদ্ধান্তে আছে যথেষ্ট ধোঁয়াশা।

    ‘ভিএআর’ বিতর্কের শুরুটা ইংলিশ চ্যাম্পিয়নদের নিয়েই। ইতিহাদে অ্যাস্টন ভিলা বিপক্ষে প্রথমার্ধে গোল করতে পারেনি সিটি, উল্টো পিছিয়েও পড়তে পারত তারা। ম্যাচের ৩২ মিনিটে ভিলার প্রতি-আক্রমণের সময় মিডফিল্ডার ডগলাস লুইজকে ডিবক্সে ফেলে দেন ফার্নান্দিনহো। পেনাল্টির বাঁশি দেননি রেফারি, সিদ্ধান্ত বদলায়নি ভিডিও রেফারিও। রিপ্লেতে দেখা গিয়েছে, লুইজকে ইচ্ছাকৃতভাবেই ফেলে দিয়েছিলেন ফার্নান্দিনহো। তবে মূল বিতর্কটা হয় দ্বিতীয়ার্ধে।

     

     

    বাঁ-প্রান্ত থেকে কেভিন ডি ব্রুইনের ক্রস ডেভিড সিলভার পায়ে লেগে জড়ায় ভিলার জালে। ডি ব্রুইনের ক্রসের সময় ভিলা গোলরক্ষক টম হিটনের সামনে অফসাইডে দাঁড়িয়ে ছিলে রহিম স্টার্লিং। বলের কক্ষপথ থেকে সরে গেলেও  খেলায় প্রভাব ফেলছিলেন তিনি, স্টার্লিংয়ের জন্যই বল শেষ পর্যন্ত দেখতে পারেননি হিটন। ফিফার নিয়মানুযায়ী অফসাইডের বাঁশি দেওয়ার কথা থাকলেও সেটি করেননি রেফারি, আবারও রেফারির সিদ্ধান্তেই অটল থেকেছে ‘ভিএআর’। বিতর্ক কম ছিল না আর্সেনাল-ক্রিস্টাল প্যালেস ম্যাচেও।

    ম্যাচের শেষদিকে ২-২ সমতা থাকার সময় গোল করেন আর্সেনাল ডিফেন্ডার সক্রেটিস পাপাসথাতুপোলাস। কিন্তু গোলের বিল্ডআপে প্যালেস অধিনায়ক লুকা মিলিভোয়েভিচকে ফাউলের অভিযোগে গোল বাতিল করেন ভিডিও রেফারি। কিন্তু সক্রেটিসের চ্যালেঞ্জ বৈধ ছিল বলেই জানিয়েছেন আন্দ্রে ম্যারিনার, কেভিন ফ্রেন্ডের মত প্রিমিয়ার লিগের অন্যান্য রেফারিরা। আর্সেনালের মত ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের ম্যাচেও ভিডিও রেফারি নিয়ে ছিল বিতর্ক।

    দুটি পেনাল্টি মিস করেও নরউইচ সিটিকে ৩-১ গোলে হারিয়েছিল ইউনাইটেড। ম্যাচ শেষে 'রেড ডেভিল' ম্যানেজার ওলে গানার সোলশার নিজেই স্বীকার করেছেন; প্রথম পেনাল্টি পাওয়া উচিত হয়নি ইউনাইটেডের, কারণ নরউইচ ডিফেন্ডার গডফ্রির হাত তার শরীরের সাথেই লাগানো ছিল। ফুটবলে বিতর্কের অবসান ঘটানোর জন্য আবিষ্কৃত ‘ভিএআর’ নিজের কাজটা করছে কিছু ক্ষেত্রে, আবার কয়েক ক্ষেত্রে সেই বিতর্কই আরও উসকে দিচ্ছে ফুটবলের নতুনতম প্রযুক্তি।