ডি লিটের প্রথম গোলে তুরিন ডার্বি জুভেন্টাসের
প্রতিপক্ষকে দুমড়ে-মুচড়ে না দিয়েও ম্যাচ জেতা অভ্যাসে পরিণত করেছে জুভেন্টাস। তুরিন ডার্বিতেও পুরনো ধারা সচল রেখেছে মাউরিসিও সারির দল। ম্যাথিয়াস ডি লিট জুভেন্টাসের জার্সিতে পেয়েছেন প্রথম গোল। ওই গোলেই ভাগ্য নির্ধারণ হয়েছে ম্যাচের। ১-০ গোলে জিতে সিরি আ-র শীর্ষ স্থান এবারও হাতছাড়া করেনি জুভেন্টাস। এর আগে রোমেলু লুকাকুর জোড়া গোলে বোলোনিয়াকে ২-১ ব্যবধানে হারানোর পর কিছু সময়ের জন্য শীর্ষে ছিল ইন্টার মিলান। ১১ ম্যাচ শেষে ইন্টারের চেয়ে এক পয়েন্ট এগিয়ে আছে জুভেন্টাস।
ডি লিটের জন্য ম্যাচটা অবশ্য অন্যরকমও হতে পারত। তুরিনে এসে নতুন ক্লাবের সঙ্গে মানিয়ে নিতে এখনও হিমশিম খাচ্ছেন ডি লিট। জুভেন্টাস ডিফেন্ডারের অধারাবাহিক পারফরম্যান্স এই মৌসুমে দলকে ভুগিয়েছেও বেশ কয়েকবার। ১০ মিনিটে জুভেন্টাসের বক্সের ভেতর নেওয়া তোরিনোর লম্বা থ্রো-ইন জটালার ভেতর থাকা ডি লিটের হাতে লেগেছিল। পেনাল্টি পেতে পারত তোরিনো। কিন্তু রেফারি ও ভিএআর বিতর্ক উস্কে দিয়ে পেনাল্টির সিদ্ধান্ত এড়িয়ে গেছে তখন।
জুভেন্টাসের আক্রমণ বনাম তোরিনের প্রতিরোধ- এই ছন্দেই খেলা চলেছে বেশিরভাগ সময়। অবশ্য অল্প সময় পায়ে বল পেলেও প্রতি আক্রমণে ধারালো তোরিনোও বারবার সমস্যার কারণ হয়ে দাঁড়াচ্ছিল জুভেন্টাস রক্ষণের জন্য। বিশেষ করে স্ট্রাইকার আন্দ্রে বোলাত্তির ওপর শুরু থেকেই আলাদা নজর রাখতে হচ্ছিল বনুচ্চিদের। এর পরও সতীর্থ মিয়েতাকে দারুণ এক পাস দিয়ে গোল করার চেষ্টা করেছিলেন বোলাত্তি। তবে মিয়েতা ভালো জায়গায় থেকে সুযোগ হাতছাড়া করেছেন। নিজেই বলে শট না নেওয়ায় বোলাত্তিরও আফসোসও বাড়িয়েছেন।
ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদোর সঙ্গে শেষ ম্যাচের সঙ্গীরাই নেমেছিলেন আক্রমণে। পাউলো দিবালা ও ফার্নান্দো বের্নাদেস্কি। এদের মধ্যে বের্নাদেস্কি ছিলেন সবচেয়ে উজ্জ্বল। তবে প্রথমার্ধে গোলের সবচেয়ে কাছাকাছি গিয়েছিলেন ডি লিটই। কর্নারের পর বক্সের ভেতর থেকে ডি লিটের চেষ্টা তখন দারুণ দক্ষতায় ফিরিয়ে দিয়ে দলকে ম্যাচে টিকিয়ে রেখেছিলেন তোরিনো গোলরক্ষক সালভাতোরে সিরিগু।
তিনদিনের ব্যবধানে দ্বিতীয় ম্যাচ খেলতে নামা রোনালদো এদিন প্রভাব রাখতে পারেননি তেমন। গোলে বেশ কয়েকবার শট করেছিলেন, তবে বারবার তুরিনের অলিম্পিক স্টেডিয়ামের নরম টার্ফ হতাশ করেছে তাকে।
দ্বিতীয়ার্ধেও জুভেন্টাসের হতাশার গল্প চলছিল। অবধারিত সিদ্ধান্তটা সারি নিয়ে নেন ৬০ মিনিটে। দিবালার বদলি হয়ে মাঠে নামেন গঞ্জালো হিগুয়াইন। এরপর জুভেন্টাসের আক্রমণের চেহারাও ফেরান তিনি। মাঠে নামার দশ মিনিটের ভেতর দুর্দান্ত একটি ভলি করেছিলেন হিগুয়াইন, কিন্তু তিনিও সেই সিরিগুর আরও দুর্দান্ত এক সেভের কাছে হার মানেন। নইলে তখনই মৌসুমের সেরা দাবি করার মতো একটি গোল পেয়ে যেতেন আর্জেন্টাইন স্ট্রাইকার।
সিরিগুর ওই সেভ থেকে পাওয়া কর্নারই এর পর ত্রাতা হয়ে এসেছে জুভেন্টাসের জন্য। মিরালেম পিয়ানিচ কর্নার নিয়েছিলেন দূরের পোস্টেরও অনেক পেছনে। সেখানে হিগুয়াইন ছিলেন ফাঁকায়। তিনি এরপর আলতো টাচে গোলের সামনে বল পাঠান ডি লিটকে। এবার প্রথমার্ধের মতো প্রায় একই জায়গায় বল পেয়ে ডান পায়েই শট করে সফল হন ডি লিট।
পুরো ম্যাচে রক্ষণে দারুণ মনোযোগী তোরিনোর জন্য গোল হজম করাটা হতাশারই ছিল। তবে পরের মিনিটেই ক্রিশ্চিয়ান আনসালদি জবাবটা দিয়ে দিচ্ছিলেন। দারুণভাবে কাটিয়ে জুভেন্টাসের বক্সের ভেতর ঢুকে শট করেছিলেন তিনি। কিন্তু ভোজায়িক সেজনি তখন কাছের পোস্টে ভালো সেভ করে আটকে দেন তোরিনের স্বপ্ন। এরপরও তোরিনো ম্যাচে সমতয়ায় ফেরার সুযোগ পেয়েছিল, কিন্তু গোলের আর সেভাবে শট করার সুযোগ হয়নি তাদের। একই কাজ করেছে জুভেন্টাসও। হিগুয়াইন নিজেই গোটা দুই সহজ গোলের সুযোগ নষ্ট না করলে শেষদিকে জয়টা আরেকটু সহজে পেতে পারত সিরি আ চ্যাম্পিয়নরা।
রেফারির সিদ্ধান্ত বিতর্ক ছড়িয়েছে ইন্টারের ম্যাচেও। বোলোনিয়াতে একেবারে শেষদিকে লাউতারো মার্টিনেজ পেনাল্টি আদায় করে নিয়েছিলেন ইন্টারের হয়ে। বোলোনিয়ার অরসোলিনির মার্টিনেজকে করা চ্যালেঞ্জটি আসলেই পেনাল্টি দেওয়ার মতো ছিল কী না সেটা নিয়েই সংশয় আছে। রেফারির পর ভিআরও পেনাল্টির পক্ষেই রায় দিয়েছিল বোলোনিয়ার মাঠে। তখন লুকাকু স্পটকিক থেকে গোল করে জয় নিশ্চিত করেছেন ইন্টারের।
এর আগে ইন্টার আটকে ছিল বোলোনিয়া গোলরক্ষকের দারুণ কিছু সেভের কাছে। মার্টিনেজ ও লুকাকু- দুইজনেরই নিশ্চিত গোল প্রথমার্ধে ফিরিয়ে দিয়েছিলে স্করূপস্কি। দ্বিতিয়ার্ধে এর পর ইন্টারকে চমকে দিয়ে রবার্তো সোরিয়ানো বক্সের বাইরে থেকে দারুণ একটি গোল করেন। কিন্তু ৭৫ মিনিটে সেই গোল শোধ করে দেন লুকাকু। মার্টিনেজের অবদান আছে এই গোলেও। তার জোরালো শট স্করপস্কি ঠেকানোর পরই ফাঁকা বারের সামনে বল পেয়ে গিয়েছিলেন লুকাকু। জোড়া গোল করে সিরি আ-তে এই মৌসুমে এখন পর্যন্ত দ্বিতীয় সর্বোচ্চ গোলদাতা বেলজিয়ান এই স্ট্রাইকার। এরই মধ্যে করে ফেলেছেন ৯ গোল।
সিরি আর ১১ ম্যাচ শেষে তাই শীর্ষ স্থান নিয়ে রোমাঞ্চ বাড়ছেই। এখন পর্যন্ত অপরাজিত জুভেন্টাস। আর ইন্টার হেরেছে মাত্র একটি ম্যাচ। ইন্টারের বিপক্ষে জুভেন্টাসের ওই জয় আপাতত পার্থক্য গড়ে দিয়েছে পয়েন্ট টেবিলে।