কিক অফের আগে: স্ট্যামফোর্ড ব্রিজ যখন চেলসিরই 'প্রতিপক্ষ'
আগের গেমউইকে আয়াক্সে তাদেরই মাঠে হারিয়ে এবার স্ট্যামফোর্ড ব্রিজে তাদের মুখোমুখি হচ্ছে চেলসি। আয়াক্সের চেয়ে হয়তো কিছুটা চাপে থাকবে চেলসিই, এই মৌসুমে হোম ফর্মটা ঠিক সুবিধার নয় তাদের। 'এইচ' গ্রুপে অ্যানফিল্ডে লিভারপুলের প্রতিপক্ষ বেলজিয়ান ক্লাব গেঙ্ক, 'অল রেড'দের হাতে আরও এক বড় হার এড়ানোই হয়তো যাদের লক্ষ্য। ফলাফল প্রত্যাশিত না হলে পরের রাউন্ডে যাওয়া নিয়ে সংশয় থাকতে পারে চেলসি-লিভারপুল দু'দলেরই।
স্ট্যামফোর্ড ব্রিজ যখন চেলসিরই 'প্রতিপক্ষ'
কবে, কখন
চেলসি-আয়াক্স
চ্যাম্পিয়নস লিগ
গ্রুপ 'এইচ'
৬ নভেম্বর, রাত ২টা
চ্যাম্পিয়নস লিগে নিজেদের প্রথম ম্যাচে স্ট্যামফোর্ড ব্রিজেই ভ্যালেন্সিয়ার কাছে হেরে গিয়েছিল চেলসি। তবে লিলের মাঠে জয়ের পর গত মাসে আয়াক্সের মাঠেও দুর্দান্ত জয় পেয়েছে ফ্র্যাঙ্ক ল্যাম্পার্ডের দল। আয়াক্সের সমান ৬ পয়েন্ট হলেও গোল ব্যবধানে পিছিয়ে থেকে ‘এইচ’ গ্রুপে দুইয়ে আছে তারা। ল্যাম্পার্ড বা এরিক টেন হাগ দুজনই জানেন; স্ট্যামফোর্ড ব্রিজে জয় অনেকটাই সুগম করে দেবে শেষ ষোলর পথ।
গত মৌসুমে তারুণ্যনির্ভর আয়াক্স সবাইকে চমকে চলে গিয়েছিল সেমিতে। এবার ভ্যালেন্সিয়াকে হারিয়ে দুর্দান্ত শুরু করেছে তারা, আছে টেবিলের শীর্ষেও। তবে এই মৌসুমে তারুণ্যের বিচারে সবচেয়ে বেশি এগিয়ে থাকা দলটির নাম হয়তো চেলসি। দলবদলে নিষেধাজ্ঞা, ল্যাম্পার্ডের অনভিজ্ঞতা- সব মিলিয়ে চেলসি থেকে এবার প্রত্যাশা হয়তো খুব বেশি ছিল না কারোই।
ভ্যালেন্সিয়ার কাছে চ্যাম্পিয়নস লিগের প্রথম ম্যাচ, লিভারপুলের কাছে ইউয়েফা সুপারকাপ, বা প্রিমিয়ার লিগের প্রথম ম্যাচে ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের কাছে ৪-০ গোলের ভরাডুবি- ল্যাম্পার্ডের সামর্থ্য নিয়েই প্রশ্ন তুলছিলেন অনেকেই। শুরুটা একেবারেই সহজ হয়নি ল্যাম্পার্ডের, কিন্তু মাউন্ট-আব্রাহাম-পুলিসিচদের তারুণ্যে ভর করে রীতিমত ভাগ্য বদলে গেছে ‘ব্লুজ’দের।
প্রিমিয়ার লিগ টেবিলের চার-এ উঠে এসেছে তারা, এইচ গ্রুপের শীর্ষে থাকা আয়াক্সের সমান পয়েন্ট তাদের। মাত্র মাস দুয়েকের ব্যবধানে আশঙ্কার কালোমেঘের বদলে চেলসিকে হাতছানি দিচ্ছে সম্ভাবনাময় ভবিষ্যৎ। এই আয়াক্সকে হারিয়েই মূলত নিজেদের উন্নতিটা চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছে চেলসি।
এই মৌসুমে নিজেদের মাঠে খেলা ৮ ম্যাচে মাত্র একবার হেরেছে আয়াক্স, হারটা এসেছে চেলসির বিপক্ষেই। ঐ ম্যাচ দিয়েই মূলত চেলসির জার্সিতে প্রথমবার আলো ছড়িয়েছিলেন যুক্তরাষ্ট্রের অধিনায়ক ক্রিশ্চিয়ান পুলিসিচ, এরপর থেকেই চেলসি একাদশে হয়েছে নিয়মিত।
একই ম্যাচে আক্রমণে পুলিসিচদের মত রক্ষণে দুর্দান্ত ছিলেন তোমোরি-আলোন্সোরা; জিয়েচ-তাদিচদের দমিয়ে রেখে ফিরেছিলেন ক্লিনশিট নিয়েই। তবে স্ট্যামফোর্ড ব্রিজে ফর্মটা ঠিক সুবিধার নয় চেলসির, নিজেদের মাঠে এবার খেলা ৭ ম্যাচে মাত্র ২বার জয় পেয়েছে ল্যাম্পার্ডের দল, হেরেছে ৩টি।
চেলসির মত অবশ্য আয়াক্সের মৌসুমের গ্রাফটা এত উঁচু-নিচু নয়। আগের মৌসুমের মতই দুর্দান্ত খেলছে তারা, ডাচ লিগের শীর্ষেও আছে তারা। প্রতিপক্ষের মাঠেও দুর্দান্ত তারা। এই মৌসুমে খেলা ৯ ‘অ্যাওয়ে’ ম্যাচে একবারও হারেনি তারা, গোল করেছে ২৩টি। প্রতিপক্ষের মাঠে নিজেদের দারুণ ফর্ম, সাথে স্ট্যামফোর্ড ব্রিজে চেলসির ধারাবাহিকতার অভাবই স্বপ্ন দেখাচ্ছে আয়াক্সকে।
‘ই’ গ্রুপের মত এক গেমউইকের ব্যবধানে পুরোপুরি বদলে যেতে পারে ‘এইচ’ গ্রুপের সমীকরণ। চেলসি-আয়াক্স ম্যাচে জিতে যাওয়া দলের পয়েন্ট হবে ৯, আর হেরে যাওয়া দল থাকবে ৬-এই। নিজেদের মাঠে ভ্যালেন্সিয়া, লিলেকে হারিয়ে দিলে স্প্যানিশদের পয়েন্ট হবে ৭; তখন চেলসি বা আয়াক্স নেমে যাবে টেবিলের তিন-এ। স্ট্যামফোর্ড ব্রিজে পয়েন্ট হারালে তাই শেষ ষোলতে যাওয়ার পথটা বেশ কঠিন হয়ে পড়বে চেলসি, আয়াক্সের।
অপ্রতিরোধ্য অ্যানফিল্ডে আবারও বড় জয় লিভারপুলের?
কবে, কখন
লিভারপুল-গেঙ্ক
চ্যাম্পিয়নস লিগ
গ্রুপ 'ই'
৬ নভেম্বর, রাত ২টা
২০১৫ সালে ইয়ুর্গেন ক্লপ ম্যানেজার হয়ে আসার পর থেকে অ্যানফিল্ডকে রীতিমত অভেদ্য দেয়ালই বানিয়ে ফেলেছে লিভারপুল। প্রিমিয়ার লিগের মত চ্যাম্পিয়নস লিগেও নিজেদের মাঠে রীতিমত অপ্রতিরোধ্য লিভারপুল। ‘ই’ গ্রুপে টেবিলের দুইয়ে থাকা লিভারপুলের সামনে সুযোগ এসেছে শীর্ষে থাকা নাপোলিকে হটিয়ে দেওয়ার। প্রতিপক্ষ বেলজিয়ান ক্লাব গেঙ্ক, আগের ম্যাচে যাদেরকে ৪-১ গোলে হারিয়েছে ক্লপের দল।
অ্যানফিল্ডে নিজেদের অপরাজিত থাকার রেকর্ডটাই কথা বলে লিভারপুলের পক্ষে। চ্যাম্পিয়নস লিগে নিজেদের শেষ ৬ হোম ম্যাচ জিতেছে তারা, গোল করেছে ২২টি। সব প্রতিযোগিতা মিলিয়ে অ্যানফিল্ডে ২৮ ম্যাচ অপরাজিত আছে লিভারপুল, শেষবার নিজেদের মাঠে হেরেছিল গত বছরের সেপ্টেম্বরে।
‘ই’ গ্রুপের তলানীতে থাকা গেঙ্ক অ্যানফিল্ডে অঘটনের স্বপ্নও তাই হয়তো দেখার সাহস করছে না। অবশ্য লিভারপুলের রেকর্ড ছাড়াও এই মৌসুমে গেঙ্কের নিজেদের রেকর্ড সুবিধার নয়। বেলজিয়ান লিগের ৮ম স্থানে আছে তারা। গেঙ্কের বিপক্ষে লিভারপুলের সহজ জয়ের সম্ভাবনা বেশি হওয়ার রাতে জমে উঠতে পারে ‘ই’ গ্রুপ। অ্যানফিল্ডে জিতলে লিভারপুলের পয়েন্ট হবে ৯।
অন্য খেলায় রেডবুল সালজবুর্গের মুখোমুখি হবে নাপোলি। অস্ট্রিয়ানরা জিতে গেলে তাদের পয়েন্ট হবে ৬; ৭ পয়েন্ট নিয়ে দুইয়ে নেমে যাবে নাপোলি। গেঙ্ক যদি অ্যানফিল্ডে লিভারপুলকে হারিয়ে দেয় এবং রেডবুল, নাপোলির বিপক্ষে জয় পায়; তাহলে ৭ পয়েন্ট নিয়ে শীর্ষেই থাকবে নাপোলি; লিভারপুল এবং সালজবুর্গের পয়েন্ট হবে ৬। নাটকীয় একাধিক সম্ভাবনা নিয়েই গেমউইক ৪ শুরু করবে তিন দল।