• বুন্দেসলিগা
  • " />

     

    কে হবেন বায়ার্নের নতুন কোচ?

    কে হবেন বায়ার্নের নতুন কোচ?    

    গত দশ বছরে নিজেদের সবচেয়ে বড় হার (৫-১, প্রতিপক্ষ আইনট্রাখট ফ্র্যাঙ্কফুর্ট) বুন্দেসলিগা টেবিলের চার-এ নেমে যাওয়া- দলের অধারাবাহিকতার জন্য শেষ পর্যন্ত বায়ার্ন মিউনিখের ম্যানেজারের চাকরিটা হারাতেই হয়েছে নিকো কোভাচকে। অস্থায়ী দায়িত্ব পেয়েছেন তারই সহকারী হান্স-ডিয়েটের ফ্লিক। মাসিমিলিয়ানো আলেগ্রি, হোসে মরিনহো, আর্সেন ওয়েঙ্গার- বাভারিয়ানদের পরবর্তী ম্যানেজার হিসেবে নাম শোনা যাচ্ছে অনেকেরই। কিন্তু বায়ার্নের হটসিটে কার বসার সম্ভাবনা বেশি? কে ফিরিয়ে আনতে পারবেন বায়ার্নের ইউরোপিয়ান জৌলুস?
     

    মাসিমিলিয়ানো আলেগ্রি

    ট্যাকটিক্সের দিক দিয়ে খুব সম্ভবত এখনকার ‘ফ্রি এজেন্ট’ ম্যানেজারদের মধ্যে সবার চেয়ে এগিয়ে থাকবেন সাবেক জুভেন্টাস ম্যানেজার আলেগ্রি। এখনও বিশ্রামে আছেন তিনি, সামনেই ফুটবলে ফেরার ইঙ্গিতও দিয়েছেন।

     

     

    ৩-৪-১-২, ৪-৩-৩, ৩-৪-৩ জুভেন্টাসের হয়ে সব ফর্মেশন নিয়েই গবেষণা করেছেন আলেগ্রি। ফর্মেশন অনুযায়ী দল না সাজিয়ে ফুটবলারদের স্বাচ্ছন্দ্যকেই সবসময় এগিয়ে রেখেছেন তিনি। আলেগ্রির জুভেন্টাস ইতালিতে ছিল অদম্য, দু’বার খেলেছিল চ্যাম্পিয়নস লিগ ফাইনালও। এই মৌসুমে রক্ষণ নিয়ে বেশ ভুগতে হচ্ছে বায়ার্নকে, ১৪ ম্যাচে ২০ গোল হজম করেছে বাভারিয়ানরা।

    আলেগ্রির ফুটবলীয় দর্শন এবং অর্জন মিলিয়ে খুব সম্ভবত বায়ার্নের সেরা সিদ্ধান্ত হতে পারে তাকে ম্যানেজার হিসেবে আনা। জার্মান চ্যাম্পিয়নদের ওয়েঙ্গার এবং লাইপজিগের রালফ রানিয়েককে ফিরিয়ে দেওয়াটাও হয়তো আলেগ্রির বায়ার্নে যোগ দেওয়ার গুঞ্জনের আগুনে উসকে দিয়েছে আরও। তবে সমস্যাও একটা আছে, দলের কোচ হিসেবে বায়ার্ন চায় জার্মানভাষী একজনকে। আলেগ্রির দুর্বলতা আছে এই জায়গায়। গত কিছুদিন ধরে তিনি শিখছেন ইংলিশ। জার্মানটা অজানাই এই ইতালিয়ানের, এই একটা জায়গাতেই পিছিয়ে পড়ছেন তিনি।

    হোসে মরিনহো

    ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের চাকরি থেকে বরখাস্ত হওয়ার পর থেকে বিটি স্পোর্টসের ফুটবল পণ্ডিত হিসেবে সময় কাটাচ্ছেন হোসে মরিনহো। এ বছরের শুরুতেই স্বীকার করেছিলেন; ম্যানেজার হিসেবে ফিরতে চান দ্রুত। ইতালি, স্পেন, ইংল্যান্ডের লিগে কোচিং করিয়েছেন আগেই। জার্মান শিখছেন জানিয়ে হয়তো বায়ার্নের হটসিটে বসারই ইঙ্গিত দিয়েছেন ‘দ্য স্পেশাল ওয়ান’। 

    অবশ্য ইঙ্গিতটা শুধু মরিনহো নন, দিয়েছেন সাবেক বায়ার্ন মিডফিল্ডার বাস্তিয়ান শোয়েন্সটেইগারও। গত মাসে বিল্ডকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে জানিয়েছিলেন, “মরিনহো প্রায়ই আমাকে বুন্দেসলিগার ব্যাপারে জিজ্ঞেস করত। জার্মান ভাষায়ও মাঝেমধ্যে কথা বলত আমার সাথে। জার্মান লিগ নিয়ে তার পর্যবেক্ষণ-বিশ্লেষণ দুর্দান্ত। বায়ার্নের ম্যানেজার হিসেবে সে দারুণ হবে বলে আমার মনে হয়।”

     

     

    মরিনহোকে ম্যানেজার করে আনার আগে ভালো-মন্দ দুটোই ভাবতে হবে বায়ার্নকে। অ্যাটাকিং ফুটবলের যে রীতি বায়ার্ন ধারণ করে সেটার সঙ্গে মরিনহো দর্শন কিছুটা সাংঘর্ষিকও। আর মরিনহোর সাম্প্রতিক ফর্মও তো খুব বেশি আশা জাগানিয়া নয়।

    নব্বইয়ের দশকে অটমার হিটফেল্ডের পর থেকে বাভারিয়ানদের হটসিটে কোনো ম্যানেজারই তিন বছরের বেশি সময় কাটাননি। তবে মরিনহোকে ম্যানেজার হিসেবে আনলে বায়ার্নের সমস্যা অন্য জায়গায়। রিয়াল মাদ্রিদ, চেলসিতে নিজের ফুটবলারদের সাথেই দ্বন্দ্ব জড়িয়েছিলেন মরিনহো। রিয়ালের চাকরিও ছাড়তে হয়েছিল একই কারণে। তাই মরিনহোকে আনার আগেও হয়তো দু;বার ভাববে জার্মান চ্যাম্পিয়নরা। তবে মরিনহো পেপ গার্দিওলার ছেড়ে যাওয়া ক্লাবে যোগ দিলে সেটার হবে দেখার মতো কিছুই।

    এরিক টেন হাগ

    গত মৌসুমে আয়াক্সের ইউরোপিয়ান রূপকথার মূল কারিগর ছিলেন তিনি। মাথিয়াস ডি লিট, ফ্রেঙ্কি ডি ইয়ংরা ক্লাব ছাড়লেও এরিক টেন হাগের ডাচ চ্যাম্পিয়নরা এই মৌসুমেও আছে দারুণ ফর্মে। আয়াক্সের হয়ে দুর্দান্ত পারফরম্যান্সে ডি লিটদের মত বড় ক্লাবগুলোর নজর কেড়েছেন টেন হাগও। গুঞ্জন আছে গত মৌসুম শেষেই তাকে দলে নিতে চেয়েছিল বার্সেলোনা, কিন্তু শেষ পর্যন্ত আমস্টারডামেই থেকে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন তিনি। 

     

     

    বায়ার্নের সাথে টেন হাগের সম্পর্ক অবশ্য পুরনো। ২০১৩ সালে বায়ার্নের যুবদলের ম্যানেজার ছিলেন তিনি, তখন বাভারিয়ানদের মূলদের দায়িত্বে ছিলেন পেপ গার্দিওলা। খুব কাছে থেকেই তাই গার্দিওলার কোচিং দেখেছেন তিনি। নিজের আইডল হিসেবে তিনজনকে মানেন টেন হাগ (ইয়োহান ক্রুইফ, গার্দিওলা, লুই ফন হাল)।

    গার্দিওলার ট্যাকটিক্স এবং ক্রুইফের টোটাল ফুটবল থেকেই তার নিজের দর্শন অনুপ্রাণিত, স্বীকার করেছেন টেন হাগ নিজেই। বায়ার্নের যুবদলগুলোকে কাছে থেকে দেখা, হর্তাকর্তাদের সাথে দারুণ সম্পর্ক, এবং সবশেষে নিজের ট্যাকটিক্স- টেন হাগকে দলে নেওয়াটা হয়তো সবদিক দিয়েই ইতিবাচক বায়ার্নের জন্য। কিন্তু আয়াক্স হয়তো কোনোভাবেই টেন হাগকে ছাড়তে চাইবে না, বিশেষ করে মৌসুমের মাঝপথে। টেন হাগও পরিস্কার বলে দিয়েছেন, এই মৌসুমে আয়াক্সেই থাকছেন তিনি।

    আর্সেন ওয়েঙ্গার

    আর্সেনালের দায়িত্ব ছাড়ার পর থেকে ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড, রিয়াল মাদ্রিদ, বার্সেলোনার মত দলগুলোর ম্যানেজার হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার গুঞ্জন উঠেছিল ওয়েঙ্গারের। গত বছর দুয়েক ফুটবল পন্ডিত হিসেবে বিভিন্ন চ্যানেলে সময় কাটানো সাবেক আর্সেনাল ম্যানেজার বেশ কয়েকবারই বলেছেন, শীঘ্রই ফুটবলে ফিরতে চান তিনি। বায়ার্নও কোভাচের বদলি হিসেবে চাইছে তাকে, জানিয়েছে বিল্ড। দুইয়ে দুইয়ে তাই চার মিলিয়ে ফেলছেন সমর্থক এবং সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম। অবশ্য ওয়েঙ্গার সে খবর উড়িয়ে দিয়েছেন।

     

     

    ওয়েঙ্গারের সামর্থ্য নিয়ে প্রশ্ন নেই কারোই। বুন্দেসলিগায়ও হয়তো বায়ার্নের শ্রেষ্ঠত্ব ধরে রাখতে পারবেন তিনি। তার পছন্দের ৪-২-৩-১ বা ৪-৩-৩ ফর্মেশনেই কোভাচের অধীনে খেলেছে বায়ার্ন। ডবল পিভোট মিডফিল্ডের সাথে দুই উইঙ্গারের মাঝে একজন প্লেমেকার নিয়ে দল সাজাতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেন ওয়েঙ্গার। সেক্ষেত্রে তোলিসো, কিমিচের সামনে ফিলিপ কুতিনিয়ো এবং দুই প্রান্তে কিংসলে কোমান এবং সার্জ গ্যানাব্রিকে খেলানোর সুযোগ আছে।

    আর্সেনালে যুবদল থেকে মূল স্কোয়াডে জায়গা দিয়েছিলেন জ্যাক উইলশেয়ার, হেক্টর বেলেরিনদের। ওয়েঙ্গার ম্যানেজার হয়ে আসলে আর্সেনালের মত বায়ার্নের যুবদল থেকেও মূল দলে সুযোগ পাবেন অনেকেই।  কিন্তু ইউরোপিয়ান প্রতিযোগিতায় ওয়েঙ্গারের রেকর্ড রীতিমত হতাশাজনক। সেক্ষেত্রে হয়তো ওয়েঙ্গারকে ম্যানেজার হিসেবে নেওয়ার আগে ভেবে দেখতে চাইবে বায়ার্ন। 

    রালফ রানিয়েক

    গত কয়েক মৌসুমে বুন্দেসলিগায় বায়ার্ন মিউনিখ, বরুশিয়া ডর্টমুন্ডদের সমানে সমান টেক্কা দিচ্ছে রাজেনবলস্পোর্ট লাইপজিগ। ২০১২ সাল থেকে তাদের উত্থানের অন্যতম পথিকৃৎ রালফ রানিয়েক। লাইজিগের হয়ে স্পোর্টিং ডিরেক্টরের দায়িত্বে থাকা রনিয়েক ২০১৫-১৬ এবং ২০১৮-১৯ মৌসুমে ছিলেন ক্লাবটির ম্যানেজারও। দূরদর্শিতার জন্য ইউরোপে রানিয়েকের প্রশংসা করেছেন ওয়েঙ্গার, স্যার অ্যালেক্স ফার্গুসনের মত কিংবদন্তীরাও। 

    স্পোর্টিং ডিরেক্টর হওয়ায় ট্যাকটিক্সের সাথে স্কাউটিংয়ের দিক দিয়েও সমান পারদর্শী রানিয়েক। রেডবুল সালজবুর্গের হয়ে সাদিও মানেকে দলে এনেছিলেন তিনিই। এমিল ফর্সবার্গকেও লাইপজিগে এনেছেন তিনি। রানিয়েকের অধীনেই লুকাস ক্লস্টারম্যান এবং মার্সেল হলস্টেনবার্গ জায়গা করে নিয়েছেন লাইজিগের একাদশে; সুযোগ পেয়েছেন জার্মানির জাতীয় দলেও। 

     

     

    ইয়ুপ হেইঙ্কেস বায়ার্নের দায়িত্ব ছাড়ার পর থেকেই দূরদর্শিতা এবং দর্শন নিয়ে বেশ ভুগতে হয়েছে বাভারিয়ানদের। রানিয়েককে দলে নিলে হয়তো দীর্ঘকালীন পরিকল্পনা নিয়ে খুব একটা ভাবতে হবে না বায়ার্নকে। কোচিং ক্যারিয়ারেও দুর্দান্ত অ্যাটাকিং এবং প্রেসিং ফুটবল খেলিয়েছিলেন লাইপজিগকে। কিন্তু সমস্যা অন্য জায়গায়। বিল্ড জানিয়েছে, আপাতত রানিয়েককে দলে নেওয়ার পরিকল্পনা নেই বায়ার্নের।

    তবে এখনই রানিয়েককে বায়ার্নের পরবর্তী ম্যানেজারের তালিকা থেকে ছেঁটে ফেলা হয়তো যাচ্ছে না। অস্থায়ী ম্যানেজার ফ্লিক ভাল করলে হয়তো এই মৌসুমে নতুন ম্যানেজার আনবে না বায়ার্ন। সেক্ষেত্রে আগামী গ্রীষ্মে হয়তো রানিয়েককে দলে আনার সর্বাত্মক চেষ্টাই করবে তারা।