লেভানডফস্কির রেকর্ডের রাতে আবারও ডর্টমুন্ডকে উড়িয়ে দিল বায়ার্ন
বুন্দেসলিগা
ফুলটাইম
বায়ার্ন মিউনিখ ৪-০ বরুশিয়া ডর্টমুন্ড
২০১৩-১৪ মৌসুমের পর থেকে আলিয়াঞ্জ অ্যারেনাতে আর জয়ের দেখা পাওয়া হয়নি বরুশিয়া ডর্টমুন্ডের। কিন্তু মাঠের বাইরে সমস্যায় জর্জরিত বায়ার্ন মিউনিখের বিপক্ষে এবার ফেভারিট ছিল ডর্টমুন্ডই। কিন্তু মৌসুমের প্রথম ডের ক্লাসিকোতে ডর্টমুন্ডকে ভোগালেন তাদেরই সাবেক স্ট্রাইকার রবার্ট লেভানডফস্কি, ভেঙে দিলেন বুন্দেসলিগার যেকোনো মৌসুমে ১১ ম্যাচ শেষে জার্ড মুলারের সর্বোচ্চ গোলের রেকর্ডও (১৫)। পোলিশ স্ট্রাইকারের টানা গোল করে যাওয়ার রেকর্ড ধরে রাখার ম্যাচে ডর্টমুন্ডকে ৪-০ গোলে উড়িয়ে দিয়েছে বাভারিয়ানরা।
আলিয়াঞ্জ অ্যারেনাতে টানা পঞ্চম মৌসুমের মত চার বা তার চেয়ে বেশি গোল হজম করেছে ডর্টমুন্ড। লুসিয়ান ফাভ্রের দলের অনাকাঙ্ক্ষিত রেকর্ডের রাতে বায়ার্ন সমর্থকদের আস্থা অর্জন করে নিয়েছেন বায়ার্নের অস্থায়ী ম্যানেজার হ্যান্স-ডিয়েটার ফ্লিক। নিকো কোভাচ বরখাস্ত হওয়ায় হুট করেই দায়িত্বটা পেয়ে গিয়েছিলেন তিনি, প্রথম বড় ম্যাচে ট্যাকটিক্যাল মাস্টারক্লাসই দেখালেন ফ্লিক। ৪-২-৩-১ থেকে সরে ৪-১-৪-১ ফর্মেশনে দল সাজালেন, আক্রমণের ধারটা আরও বাড়ল বায়ার্নের। আর তাতেই কুপোকাত ফাভ্রের দল।
ম্যাচ শুরু বাঁশি থেকে বায়ার্নের আক্রমণাত্মক খেলা নজর কেড়েছিল সবার। দেখে বোঝার উপায়ই ছিল না, গত সপ্তাহেই গত দশকে সবচেয়ে ৫-১ ব্যবধানে আইনট্রাখট ফ্রাঙ্কফুর্টের বিপক্ষে উড়ে গিয়েছিল তারা। লিড নিতেও সময় নেয়নি ফ্লিকের দল। ১৭ মিনিটে রাইটব্যাক বেনজামিন পাভার্ডের ক্রসে ডর্টমুন্ডের দুই সেন্টারব্যাক ম্যাটস হামেলস এবং ম্যানুয়েল আকাঞ্জিকে ফাঁকি দিয়ে হেডে দলকে লিড এনে দেন লেভানডফস্কি। মৌসুমের প্রতি ম্যাচে গোলের রেকর্ডটাও অক্ষুণ্ণ থাকল তার।
গোল করা যেন তার কাছে ডালভাত!
গোলের পর আত্মবিশ্বাসী বায়ার্নের সামনে পাত্তাই পায়নি ডর্টমুন্ড। গোলরক্ষক রোমান বুর্কি না থাকলে প্রথমার্ধেই আরও বড় ব্যবধানে এগিয়ে যেতে পারত বায়ার্ন। অবশ্য বুর্কিকে প্রথমার্ধের শেষদিকে ফাঁকি দিয়েছিলেন সার্জ গ্যানাব্রি, কিন্তু অফসাইডে বাতিল হয় গোল। বায়ার্নের আক্রমণ সামলাতে এতটাই হিমশিম খেতে হচ্ছিল ডর্টমুন্ডকে যে প্রথমার্ধেই বাধ্য হয়ে দলের অন্যতম ফরোয়ার্ড জেডন সানচোকে উঠিয়ে আরেক লেফটব্যাক রাফায়েল গুরেরোকে নামিয়ে দিয়েছেন ফাভ্রে।
প্রথমার্ধে ভাগ্যের জোরে গোল না পেলেও দ্বিতীয়ার্ধের শুরুতে আর ফেরানো যায়নি গ্যানাব্রিকে। ৪৬ মিনিটে থমাস মুলারের পাস থেকে লেভানডফস্কির ব্যাকহিলে বাঁ-পায়ের প্লেসিং শটে ব্যবধান দ্বিগুণ করেন সাবেক আর্সেনাল ফরোয়ার্ড। প্রথমার্ধে মত আবারও অফসাইডে গোল বাতিল হলেও ‘ভিএআর’-এর সাহায্যে গোলের বাঁশি দেন রেফারি। দ্বিতীয়ার্ধে ম্যাচ বাঁচানোর আশায় মার্কো রয়েস এবং পাকো আলকাসেরকে নামিয়ে দেন ফাভ্রে। কিন্তু ম্যাচের বাকিটা সময় তাদের রীতিমত পকেটবন্দি করে রেখেছিলেন আলাবা-মার্টিনেজরা। রয়েস আবার নেমেই মাথা গরম করে দেখেছেন হলুদ কার্ড।
উড়ছেন গ্যানাব্রি, উড়ছে বায়ার্ন!
রয়েসদের নামিয়ে অবশ্য লাভ হয়নি একদমই, পুরো ম্যাচে ম্যানুয়েল নয়্যারের গোলে একবারও শটই নিতে পারেনি ডর্টমুন্ড। শেষদিকে আবারও জ্বলে ওঠেন লেভানডফস্কি, ভেঙে দেন বুন্দেসলিগার যেকোনো মৌসুমে ১১ ম্যাচ শেষে জার্ড মুলারের সর্বোচ্চ গোলের রেকর্ডও (১৫)। মুলারের পাস থেকে এবার ঠান্ডা মাথায় ফিনিশে বুর্কিকে পরাস্ত করেন লেভানডফস্কি, ১১ ম্যাচ শেষে তার গোলসংখ্যা দাঁড়াল ১৬।
তখনও শেষ হয়নি ডর্টমুন্ডের জালে বায়ার্নের গোলউৎসব। অবশ্য নিজেদের কফিনে শেষ পেরেকটা ঠূকে দিয়েছেন হামেলসই। ম্যাচের মিনিট দশেক বাকি থাকতে ইভান পেরিসিচের ক্রস ক্লিয়ার করতে যেয়ে নিজেদের জালে ঠেলে দেন হামেলস। গোলের পর ধারাভাষ্যকার মজা করেই বলছিলেন, এই মৌসুমেই বায়ার্ন ছেড়ে ডর্টমুন্ডে আসা হামেলস হয়তো আলিয়াঞ্জ অ্যারেনাতে কোন জালে গোল করবেন- সেটা নিয়েই চিন্তায় ভুগছিলেন।
শেষ পর্যন্ত অবশ্য মাঠের বাইরের বা ভেতরের সব দুশ্চিন্তাকে বড় জয় দিয়েই উড়িয়ে দিয়েছে বায়ার্ন। ম্যাচের আগে অপয়া আলিয়াঞ্জের অভিশাপ কাটানোর সব স্বপ্ন ভেঙে চুরমার হয়ে গেছে ডর্টমুন্ডের। আবারও সবচেয়ে বড় প্রতিদ্বন্দ্বীদের মাঠে রীতিমত অসহায় আত্মসমর্পণই করতে হয়েছে রয়েসের। ডর্টমুন্ডের বিপক্ষে নিজেদের মাঠে আরও এক বড় জয়ে টেবিলের তিন-এ উঠে এসেছে বায়ার্ন (২১)। পাঁচ-এ নেমে গেছে ডর্টমুন্ড। বায়ার্ন-ডর্টমুন্ডের চেয়ে এক ম্যাচ কম খেলেও ২২ পয়েন্ট নিয়ে শীর্ষে আছে বরুশিয়া মোনশেনগ্লাডবাখ।