রোনালদোকে কেন উঠিয়ে নিয়েছিলেন সারি?
ক্যারিয়ারে বদলি হয়ে মাঠ ছাড়া নিয়ে নিজের হতাশা কখনোই চেপে রাখেননি ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদো। স্যার অ্যালেক্স ফার্গুসন, হোসে মরিনহো, কার্লো আনচেলত্তিদের কেউই রোনালদোকে বদলি হিসেবে উঠিয়ে নেননি তেমন। কিন্তু জুভেন্টাস ম্যানেজার মরিজিও সারি যা করলেন, সেটাকে হয়তো দুঃসাহস বললেও ভুল হবে না খুব একটা। টানা দুই ম্যাচে রোনালদোকে উঠিয়ে নিয়েছেন তিনি, এসি মিলানের বিপক্ষে ম্যাচ শেষ হওয়ার আগেই বেরিয়ে যান স্টেডিয়াম থেকে। দুবারই মাঠ ছাড়ার আগে সারির উদ্দেশ্যে বিড়বিড় করে কিছু একটা বলেছিলেন রোনালদো। স্বাভাবিকভাবেই সারির সাথে রোনালদোর সম্পর্কের অবনতির খবরে সরব সংবাদমাধ্যমগুলো।
লোকোমোটিভ মস্কোর বিপক্ষে ড্রয়ের দিকে এগুনো ম্যাচে তাকে উঠিয়ে নিয়েছিলেন সারি। মিলানের বিপক্ষেও একই অবস্থায় আবারও রোনালদোকে বদলি করেন সারি, কিন্তু এবার ম্যাচের আধা ঘণ্টারও বেশি সময় বাকি থাকতে। দুবারই তার জায়গায় নেমেছিলেন পাউলো দিবালা, মিলানের বিপক্ষে তুরিনের বুড়িদের জয়ের নায়ক তিনিই। ম্যাচ শেষে রোনালদোর প্রতিক্রিয়া এবং আগেভাগে মাঠ ছাড়ার ব্যাপারে প্রশ্ন উঠতেই সারি নিশ্চিত করেছেন; ফর্মের কারণে নয়, ইনজুরি নিয়ে খেলতে থাকার কারণেই রোনালদোকে উঠিয়ে নিয়েছেন তিনি, “ক্রিশ্চিয়ানো প্রায় গত মাসখানেক ধরেই হাঁটুর ইনজুরি নিয়ে খেলে যাচ্ছে। আগের ম্যাচেও একই কারণে তাকে উঠিয়ে নিয়েছিলাম।"
"তার শারীরিক অবস্থা যেরকম ছিল, তাতে মিলানের বিপক্ষে বেশিরভাগ ফুটবলারই খেলতে চাইতেন না। কিন্তু সে রোনালদো বলেই খেলেছিল, এখানেই সে সবার চেয়ে আলাদা। এজন্যই ক্রিশ্চিয়ানো বিশ্বসেরাদের একজন। ক্লাবের প্রতি তার কমিটমেন্ট দুর্দান্ত, এই ম্যাচই তার প্রমাণ। হাঁটুতে ব্যথার কারণে সে ঠিক নিজের সর্বোচ্চটা দিতে পারছিল না। অনুশীলনেও একই হাঁটুর লিগামেন্টে ব্যথা পেয়েছিল সে। এরপরও ক্রিশ্চিয়ানো থেমে যায়নি, ট্রেনিংইয়ে সবার মত নিজের সর্বোচ্চটাই দিয়েছে সে। আসলে ইনজুরি নিয়ে অনুশীলন করে গেলে শরীরের অন্যান্য অংশেও ব্যথা হয় মাঝেমধ্যে।"
"ক্রিশ্চিয়ানো ম্যাচের আগের দিন কাফ মাসল এবং উরুর মাংসপেশিতে কিছুটা ব্যথা অনুভব করছিল, কিন্তু তারপরও সবার সাথে অনুশীলন শেষ করেছিল সে। কিন্তু মিলানের বিপক্ষে ম্যাচের দিন সামান্য বেশ কয়েকবার ব্যথার কারণে তাকে থেমে যেতেও হয়েছিল। এই ইনজুরিগুলো তাকে বেশ প্রভাবিত করছে, নিজের সেরাটা দিতে পারছে না সে। এভাবে আসলে খেলা চালিয়ে গেলে বড় ইনজুরির আশঙ্কা বেড়ে যায় অনেকখানি। তাকে নিয়ে কোনো ধরণের ঝুঁকি নিতে চাইনি। সেজন্যই পাউলোকে নামিয়ে দিয়েছিলাম।”
সারি ইনজুরির কথা বললেও মাঠ ছাড়ার সময় সারির সাথে করমর্দনও করেননি রোনালদো, ম্যানেজারের উদ্দেশ্যে কিছু একটা বলে ডাগআউটে না বসে টানেল দিয়ে সোজা চলে গেছেন ড্রেসিংরুমে। ম্যানেজারের সিদ্ধান্তে কিছু ক্ষুদ্ধই মনে হয়েছে পর্তুগিজ ফরোয়ার্ডকে। সারিকে এ ব্যাপারে প্রশ্ন করতে আবারও রোনালদোর অভিজাত মানসিকতারই প্রশংসা করেছেন ইতালিয়ান ম্যানেজার, “বদলি হিসেবে কাউকে উঠিয়ে নিলে ঐ ফুটবলারের অসন্তুষ্ট বা রাগান্বিত হওয়াটা খুবই স্বাভাবিক। তার জন্য তো আরও বেশি কারণ ইনজুরির ঝুঁকি নিয়েও সে খেলে যাচ্ছে আমাদের হয়ে। সব ফুটবলাররাই নিজেদের সেরাটা নিংড়ে দিতে চান।"
"এরকম অবস্থায় কাউকে উঠিয়ে নিলে তার হতাশ হওয়াটা দোষের কিছু নয় আমার মতে। উলটো বদলি করে কাউকে উঠিয়ে নিলে সে যদি হতাশা বা ক্ষোভ না প্রকাশ করে, তাহলেই বরং আমি অবাক হতাম।” লোকোমোটিভের সাথে বদলি হওয়ার পর ডাগআউটে থাকলেও মিলানের সাথে ম্যাচ শেষ হওয়ার আগেই স্টেডিয়াম ছেড়ে বাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা হয়েছিলেন রোনালদো। এ ব্যাপারে প্রশ্ন উঠতেই সারি বললেন; রোনালদোর আগেভাগে মাঠ ছাড়ার ব্যাপারটি জানতেন না তিনি, “আসলে আমি ম্যাচের পরপরই ড্রেসিংরুমে যাইনি, তাই এ ব্যাপার নিয়ে সেভাবে কিছু জানি না।"
তবে সারি মনে করেন; রোনালদো আগেভাগে স্টেডিয়াম ছেড়ে রওনা হয়ে থাকলে দলের সবার সাথে এ ব্যাপারটি নিয়ে কথা বলা উচিত তার, "কিন্তু ক্রিশ্চিয়ানো যদি আসলেই ম্যাচ শেষ হওয়ার আগে স্টেডিয়াম ছেড়ে গিয়ে থাকে, তাহলে সেটা একান্তই দলের অভ্যন্তরীণ ব্যাপার। সেটা তার সতীর্থদের সাথেই কথা বলে খোলাসা করে নেওয়া উচিত। এগুলো নিয়ে আসলে বেশি মাতামাতি বা গুঞ্জন ছড়ানোর কিছু নেই। কারণ ক্রিশ্চিয়ানোকে নিয়ে কারো কোনো ধরণের অভিযোগ নেই। সে একজন দুর্দান্ত ফুটবলার, তাকে দলে পাওয়ায় আমরা নিজেদের সৌভাগ্যবান মনে করি।”