কিক অফের আগে : ওমানের বিপক্ষে শূন্য থেকে আবার শুরু বাংলাদেশের
কবে, কখন
ওমান-বাংলাদেশ
বিশ্বকাপ ও এশিয়া কাপ বাছাই, দ্বিতীয় পর্ব
সুলতান কাবুস স্টেডিয়াম, ওমান
রাত ৯.০০
ম্যাচের আগে সংবাদ সম্মেলনে ওমান কোচের একটি কথা পুরো ম্যাচের চিত্র বলে দিয়েছে, "আমাদের বল পজেশন থাকবে, আমরা আক্রমণেও উঠব, এর পর কতোখানি কাজে লাগাতে পারি সেটার ওপর ফল নির্ভর করবে।" ওমান কোচ এরউইন কোমেনের মতো জেমি ডেও জানেন পার্থক্য গড়তে হবে কোথায়। রক্ষণাত্মক কৌশলই তাই বাংলাদেশের ভরসা।
বাছাইপর্বে ওমানের বিপক্ষে ম্যাচটা বাংলাদেশের চতুর্থ, আর তৃতীয় অ্যাওয়ে ম্যাচ। ৩ ম্যাচে ১ পয়েন্ট নিয়ে গ্রুপে সবার নিচে বাংলাদেশ। আর ওমান তিন ম্যাচে ছয় পয়েন্ট নিয়ে কাতারের পর আছে দ্বিতীয় স্থানে। শক্তির দিক দিয়ে এমনিতেই গ্রুপের বাকিদের তুলনায় অনেক পিছিয়ে বাংলাদেশ। এর পরও বাছাই পর্বে কাতার ও ভারতের বিপক্ষে আশাজাগানিয়া পাফরম্যান্সই আত্মবিশ্বাস যোগাচ্ছে বাংলাদেশকে।
জেমি ডেও তাই আরও একটি কঠিন পরীক্ষার আগে ভরসা রাখছেন খেলোয়াড়দের ওপর, "আমরা আমাদের চেয়ে র্যাঙ্কিংয়ে অনেক ওপরে থাকা দলগুলোর বিপক্ষে খেলছি, যাদের সবদিক দিয়ে আমাদের চেয়ে এগিয়ে আছে। তারপরও আমি দায়িত্ব নেওয়ার পর এসব দলের বিপক্ষে ছেলেরা যেভাবে খেলেছে, তাতে আমি সত্যিই গর্বিত। আমাদের দেখানো পথে তারা যেভাবে খেলে যাচ্ছে, তা আসলেই প্রশংসার দাবিদার।”
আরও পড়ুনঃ ওমানের মুখোমুখি হওয়ার আগে বাংলাদেশের সামনে চারটি প্রশ্ন
বঙ্গবন্ধু গোল্ড কাপ পিছিয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা প্রবল। তাই এ বছর এটিই হতে পারে বাংলাদেশের শেষ আন্তর্জাতিক ম্যাচ। রেকর্ড বলছে এ বছর ৮ ম্যাচে ৪টি জয়, ২ হার আর ২ ড্র বাংলাদেশের। এর একটি হার আবার শক্তিশালী কাতারের বিপক্ষে। দল নিয়ে গর্বিত হওয়ার যথেষ্ট কারণও আছে ডের।
ফিফা র্যাঙ্কিংয়ে ওমান বাংলাদেশের চেয়ে পুরো একশ ধাপ এগিয়ে। বছরের শুরুতে এশিয়া কাপেও দ্বিতীয় রাউন্ডে উঠেছিল তারা। এর পর ইরানের কাছে হেরে টুর্নামেন্ট থেকে বিদায় নেওয়ার পর ওমানের নতুন কোচ হয়ে এসেছেন এরউইন কোমেন। তার অধীনে ওমান এখন পর্যন্ত ম্যাচ হেরেছে মাত্র একটি, তাও বাছাইপর্বে কাতারের বিপক্ষে। গ্রুপের বাকি দলগুলোর মতো কখনই বিশ্বকাপ খেলা হয়নি ওমানেরও, তবে ২০০৪ সাল থেকে এশিয়া কাপে নিয়মিত খেলে যাচ্ছে তারা। একে তো শক্তিশালী প্রতিপক্ষ তারওপর অ্যাওয়ে ম্যাচ- বাংলাদেশের জন্য শুধু কঠিন নয় অগ্নি পরীক্ষাও। উন্নতির ছাপটা ধরে রাখতে হলে তো ওমানের বিপক্ষে ভালো কিছুও করতে হবে- সেই চাপটাও কি বাংলাদেশ সঙ্গী হচ্ছে না এবার?
চাপ যতখানিই থাক, ডে বলছেন জয়ের জন্যই মাঠে নামতে চান তিনি। বাংলাদেশের কোচের কন্ঠে জয়ের কথাটা আদতে উচ্চাভিলাষ, তবে ওমানকে কোনোভাবে আটকে দিতে পারলে সেটা হয়ে যাবে বাংলাদেশের ইতিহাসেরই অন্যতম সেরা অর্জন। "অবশ্যই আমরা জয়ের লক্ষ্য নিয়েই মাঠে নামব। তবে ওমানের মাঠ থেকে না হেরে ফেরাটাও আমাদের জন্য ইতিবাচক হবে। আমাদের লক্ষ্য হবে অন্তত ড্র করা।"
"আমরা কালকের ম্যাচসহ চার ম্যাচ খেলব, যার মধ্যে তিনটিই অ্যাওয়েতে। প্রতিপক্ষের মাঠে এতগুলো ম্যাচ খেলা আমাদের জন্য ভীষণ চ্যালেঞ্জিং ছিল। কালকের ম্যাচটি আরও এক অ্যাওয়ে ম্যাচ, তাই অন্তত এক পয়েন্ট নিয়ে ফিরতে পারলে প্রথম রাউন্ডের ম্যাচগুলোর বিচারে আমাদের জন্য দারুণ হবে।”
বাংলাদেশ অধিনায়ক জামাল ভূঁইয়াও চমকে দিতে চাইছেন ওমানকে। আগের দুই ম্যাচে প্রতিপক্ষের চেয়ে বেশি সুযোগ তৈরি করেও মাত্র একটি গোল করতে পেরেছে বাংলাদেশ। রক্ষণের কী করতে হবে সেটা এতোদিনে জেনে গেছেন জামালরা। সেসব মাঠে কার্যকর করতে পারলে সেটাই এগিয়ে নেবে বাংলাদেশকে। তবে জামাল জোর দিচ্ছেন ভুল শুধরে নেওয়ার দিকে, " ওদের হারাতে হলে আমাদের গোলের সুযোগ তৈরি করে সেগুলো কাজেও লাগাতে হবে। আমরা যদি পাঁচটি সুযোগ তৈরি করে একটি গোলও না করতে পারি তাহলে কাজের কাজ আসলে হবে না। তবে সুযোগ কাজে লাগাতে পারলে আমার মনে হয়ে ওমানকে হারানো সম্ভব।"
ফুটবলে অসম্ভব কিছুই নয়। তবে মাঠে সেটা কার্যকর করার আগ পর্যন্ত 'সম্ভব' শব্দটিও নেই ফুটবলের ডিকশানারিতে। আপাতত তাই ওমানের বিপক্ষে বাংলাদেশকে আবার শুরু করতে হচ্ছে শূন্য থেকে। আবারও সেই দীর্ঘ মনোযোগের পরীক্ষা, আবারও নিজেদের সেরাটা নিংড়ে দিতে পারা না পারার দোলাচল।
বাংলাদেশের ওমান যাত্রার শুরুটাই ছিল গোলমেলে। বিমানের যান্ত্রিক গোলোযোগের কারণে উড্ডয়নের এক ঘন্টার মাথায় আবার ওমানগামী বাংলাদেশকে দলকে ফিরতে হয়েছিল ঢাকায়। দুর্ঘটনার হাত থেকে বেঁচে ফেরা বাংলাদেশ দল পরে ওমান পৌঁছে মানিয়ে নিয়েছে দারুণভাবে। একমাত্র প্রস্তুতি ম্যাচে জয়ের আত্মবিশ্বাসও সঙ্গী লাল-সবুজদের। কিন্তু মাস্কটের মাঠে নামার পর এসব ভালো-মন্দ কিছুই আর মাথায় থাকবে না জামালদের। মাঠের ৯০ মিনিটই আপাতত তাদের জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ।
দলের খবর
প্রস্তুতি ম্যাচে রাকিব হোসেনকে সুযোগ দিয়েছিলেন ডে। তবে ওমানের বিপক্ষে তেমনটা হওয়ার সুযোগ কম। দলে চোট সমস্যা নেই। তবে টুটুল হোসেন বাদশা ফিরতে পারেন একাদশে, রিয়াদুল হাসান রাফিকে সেক্ষেত্রে বসতে হবে বেঞ্চে। রাইটব্যাক পজিশনেও বিশ্বনাথ ঘোষ নামতে পারেন রায়হান হাসানের জায়গায়।
সম্ভাব্য একাদশ
ওমান
ফাইয়াজ রুশেদি, মোহাম্মদ মাসলামি, আল বুসাইদি, আমরান সাইদ, বাদুল আজিজ, আহমেদ মুবারাক, মুবারাক কানো, হারিব সাদি, মোহাম্মাদ ঘারফি, আল মান্ধার, মোহাম্মদ সালেহ, আব্দুল আজিজ মুকাবালি
বাংলাদেশ
আশরাফুল ইসলাম রানা, বিশ্বনাথ ঘোষ, ইয়াসিন খান, টুটুল হোসেন বাদশা, রহমত মিয়া, জামাল ভূঁইয়া, সোহেল রানা, সাদ উদ্দিন, বিপলু আহমেদ, মোহাম্মদ ইব্রাহিম, নাবিব নেওয়াজ জীবন
বাছাইপর্বে ফল (ওমান)
- ভারত ১-২ ওমান
- আফগানিস্তান ০-৩ ওমান
- কাতার ২-১ ওমান
বাছাইপর্বে ফল (বাংলাদেশ)
- আফগানিস্তান ১-০ বাংলাদেশ
- বাংলাদেশ ০-২ কাতার
- ভারত ১-১ বাংলাদেশ