কিক অফের আগে: সেই ব্রাজিলের বিপক্ষেই ফিরছেন মেসি
কবে, কখন
ব্রাজিল-আর্জেন্টিনা
আন্তর্জাতিক প্রীতি ম্যাচ
কিং সাউদ ইউনিভার্সিটি স্টেডিয়াম; রিয়াদ, সৌদি আরব
১৫ নভেম্বর, রাত ১১টা
ফিলিপ কুতিনিয়ো, কাসেমিরোরা ছুটছেন উল্লাসে, অন্যপাশে মাটির দিকে তাকিয়ে ঠায় দাঁড়িয়ে আছেন আর্জেন্টিনা অধিনায়ক লিওনেল মেসি। আর্জেন্টাইনদের সেমিতে বিদায় করে কোপার শিরোপা পুনরুদ্ধার করেছিল ব্রাজিল। বিতর্কিত সে ম্যাচে হারের পর ক্ষোভ উগড়ে দিয়েছিলেন লিওনেল মেসি, যা বেড়েছে চিলির বিপক্ষে তৃতীয় স্থান নির্ধারণী ম্যাচে। শেষ পর্যন্ত কনমিবল, কোপাকে নিয়ে বেঁফাস মন্তব্যের কারণে আন্তর্জাতিক ফুটবল থেকে তিন মাস নিষিদ্ধ হয়েছিলেন মেসি, যা শেষ হয়েছে কিছুদিন আগেই।
যে ব্রাজিলের প্রতি এত ক্ষোভ, যাদের জেতার জন্য এবারের কোপায় তার মতে সব প্রস্তুতিই সেরে রেখেছিল কনমিবল; সেই ব্রাজিলের বিপক্ষেই ম্যাচ দিয়েই ‘আলবিসেলেস্তে’দের জার্সিতে ফিরছেন লিও। কাগজে কলমে প্রীতি ম্যাচ হলেও তাই উত্তাপটা ঠিকই টের পাচ্ছে ফুটবলবিশ্ব।
একবিংশ শতাব্দীর শুরুর দিকে ফুটবলে যাদের হাতেখড়ি, মেসির পুরো ক্যারিয়ারটাই নিজের চোখে দেখা তাদের। মেসিকে কবে রেফারির বিতর্কিত সিদ্ধান্তে এরকম ক্ষেপে যেতে দেখেছেন, তা হয়তো মনে করতে পারবেন না কেউ। আগে কখনও এভাবে ফুঁসে ওঠার ইতিহাসও নেই মেসির। কোপায় ‘ভিএআর’ থাকলেও ব্রাজিলের বিপক্ষে ঐ ম্যাচে নিশ্চিত দুটি পেনাল্টি পায়নি আর্জেন্টিনা। চিলির বিপক্ষে ঠিক কী কারণে লাল কার্ড দেখতে হয়েছিল মেসিকে, সেটাও পরিস্কার ছিল না ঠিক।
মেসির অভাবটা অবশ্য খুব ভোগায়নি আর্জেন্টিনাকে। সতীর্থ আনহেল ডি মারিয়া বলেছিলেন, কোপা শেষে মেসির কথায় কেঁদেছিলেন আর্জেন্টিনার স্কোয়াড, স্টাফ- সবাই। দলের উদ্দেশ্যে ঐ বক্তব্যে তরুণদের প্রশংসা করেছিলেন মেসি। সেই তারুণ্যের শক্তিতেই জ্বলে উঠেছিল মেসিহীন আর্জেন্টিনা।
জার্মানির বিপক্ষে তাদের মাঠে পিছিয়ে থেকেও শেষ পর্যন্ত ২-২ গোলের ড্র ছিনিয়ে এনেছিল আর্জেন্টিনা। গোল করেছিলেন দুই তরুণ লুকাস আলারিও এবং লুকাস ওকাম্পোস। মেক্সিকোর বিপক্ষে হ্যাটট্রিক করেছেন লাউতারো মার্টিনেজ। আর ইকুয়েডরকে রীতিমত বিধ্বস্ত করেছিল লিওনেল স্কালোনির দল, ৬-১ গোলের বিশাল জয়ে সামর্থ্যের জানান দিয়েছিল তরুণ আর্জেন্টাইনরা।
মেসিকে ছাড়া খেলা ৪ ম্যাচে ১২ গোল করেছে তারা, হজম করেছে মাত্র ৩টি। ডি মারিয়া, আগুয়েরোদের বদলে লাউতারো-পারেদেস-ডি পলদের ওপর আস্থার রাখার প্রতিদানটা ভালমতই পেয়েছেন স্কালোনি। আর্জেন্টিনার যেদিকে মেসিকে ছাড়াই উড়ছে, সেদিকে কোপা জেতা ব্রাজিল যেন জিততেই ভুলে গেছে। পেরুকে হারিয়ে এক যুগ পর কোপা পুনরুদ্ধারের পর ৪ ম্যাচ খেলেছে তিতের দল, জেতেনি একবারও (৩ ড্র, ১ হার)।
নাইজেরিয়া, সেনেগালদের কাছেও আটকে যেতে হচ্ছে কুতিনিয়ো-ফিরমিনোদের। ২০০৪ সালের পর এবারই প্রথম টানা ৪ ম্যাচে জয়হীন থাকল ব্রাজিল। মজার ব্যাপার হল, সেবার ‘সেলেসাও’রা জয়ের ধারায় ফিরেছিল আর্জেন্টিনাকে হারিয়েই। সৌদি আরবের কিং সাউদ স্টেডিয়ামে আবারও ইতিহাস পুনরাবৃত্তির সুযোগ থাকছে ব্রাজিলের সামনে।
মেসির ফেরার দিনে আক্রমণে নিজেদের প্রাণভোমরা নেইমারকে পাচ্ছে না ব্রাজিল। নাইজেরিয়ার বিপক্ষে গত মাসের প্রীতি ম্যাচে ইনজুরিতে পড়ে ছিটকে যাওয়া নেইমার ফিরতে পারেননি এখনও। একই কারণে নেই গোলরক্ষক এডারসন মোরায়েস এবং ফরোয়ার্ড ডেভিড নেরেস। আর্জেন্টাইনদের বিপক্ষে অভিষেক হয়ে যেতে পারে রিয়াল মাদ্রিদের বিস্ময়বালক রদ্রিগো গোজের।
‘লস ব্লাঙ্কোস’দের হয়ে মৌসুমের শুরুটা দুর্দান্ত হয়েছে তার, পুরস্কারস্বরূপ প্রথমবারের মত ডাক পেয়েছেন ব্রাজিল স্কোয়াডে। রদ্রিগোর সুদিনে কপাল পুড়েছে রিয়ালে তার স্বদেশি ভিনিসিয়াস জুনিয়রের। ফর্মহীনতায় ভোগা ভিনিসিয়াস রিয়াল, ব্রাজিল- সুযোগ পাচ্ছেন না কোনো দলেই। তবে দুর্দান্ত ফর্মে থাকলেও বিস্ময়করভাবে পিএসজির আর্জেন্টাইন জুটি ডি মারিয়া-ইকার্দিকে ডাকেননি স্কালোনি। আবারও তাই তারুণ্যেই ভরসা রাখছেন আর্জেন্টাইন কোচ।
সম্ভাব্য একাদশ
ব্রাজিল (৪-৩-৩): অ্যালিসন; দানিলো, সিলভা, মার্কিনিয়োস, অ্যালেক্স সান্দ্রো; আর্থার, কাসেমিরো, কুতিনিয়ো; উইলিয়ান, হেসুস, ফিরমিনো
আর্জেন্টিনা (৪-৩-৩): আন্দ্রাদা; ফয়েথ, পেৎজেলা, কানেম্যান, টালিয়াফিকো; পারেদেস, ডি পল, লো সেলসো; মেসি, আগুয়েরো, দিবালা।
সংখ্যায় সংখ্যায়
- রাশিয়া বিশ্বকাপের পর খেলা ২০ ম্যাচে মাত্র ১বার হেরেছে ব্রাজিল
- নিজেদের শেষ পাঁচ ম্যাচে অপরাজিত আর্জেন্টিনা