কাভানি-সুয়ারেজের গোলের জবাব দিলেন মেসি-আগুয়েরো
ফুলটাইম
আর্জেন্টিনা ২-২ উরুগুয়ে
এডিনসন কাভানি আর লুইস সুয়ারেজ মিলে দুইবার উরুগুয়েকে এগিয়ে নিয়েছিলেন। দুইবারই ফেরত এসেছে আর্জেন্টিনা। একবার লিওনেল মেসির ফ্রি-কিক থেকে মাথা ছুঁয়ে দলকে সমতায় ফিরিয়েছিলেন সার্জিও আগুয়েরো। এরপর ম্যাচের যোগ করা সময় পেনাল্টি থেকে গোল করে মেসি নিশ্চিত করেছেন কাভানি-সুয়ারেজের সঙ্গে পাল্লায় হারছে না তার দল। ইসরাইলের তেল আভিভে তাই দুইদলের প্রীতি ম্যাচ শেষ পর্যন্ত ড্র হয়েছে ২-২ এ।
কোপা আমেরিকার সেমিফাইনালে ব্রাজিলের কাছে হারের পর তাই টানা ছয় ম্যাচ অপরাজিত থাকল লিওনেল স্কালোনির দল। অবশ্য হারটা আর্জেন্টিনাকে চোখ রাঙাচ্ছিল। যোগ করা সময়ের দুই মিনিটে বাম দিক থেকে পাওয়া ক্রস লাউতারো মার্টিনেজ নাগালে আনতে পারেননি। কিন্তু তাতে কপাল খুলে যায় আর্জেন্টিনার। মার্টিনেজের পেছনে থাকা উরুগুয়ে ডিফেন্ডার মার্টিন ক্যার্সারেসের হাতে বল লাগার পর রেফারি সঙ্গে সঙ্গেই বাজান পেনাল্টির বাঁশি। পরে গোলরক্ষক মার্টিন কাম্পানাকে ভুল দিকে পাঠিয়ে নিচু শটে গোল করে মেসি দ্বিতীয়বারের মতো সমতায় ফেরান আর্জেন্টিনাকে।
প্রীতি ম্যাচ হলেও দুই দলই নিজেদের সেরা একাদশটাই নামিয়েছিল। উরুগুয়ে-আর্জেন্টিনার ফুটবলে অতীত শত্রুতা ম্যাচটাকে আর ‘প্রীতির’ মোড়কেও আটকে রাখেনি। তাই চার গোলের দুর্দান্ত এক ম্যাচ দেখেছে তেল আভিভ।
ব্রাজিলের বিপক্ষে প্রীতি ম্যাচের একাদশ থেকে তিনটি পরিবর্তন এনেছিলেন আর্জেন্টিনা কোচ। রেনজো সারাভিয়া নেমেছিলেন হুয়ান ফয়েথের জায়গায়। লো সেলসোর জায়গায় পাউলো দিবালা, আর মার্টিনেজের বদলে আগুয়েরো। যদিও প্রথমার্ধে খুব বেশি সুযোগ তৈরি করতে পারেনি কোনো দলই। তবে এডিনসন কাভানি বিরতির সময় দলকে এগিয়ে রাখার কাজটা ঠিকঠাক করে রেখেছিলেন ৩৪ মিনিটে।
রিয়াল মাদ্রিদ মিডফিল্ডার ফেদেরিকো ভালভার্দে মিডফিল্ড থেকে লম্বা পাস পাঠিয়েছিলেন আর্জেন্টিনার আক্রমণভাগে। পরে বক্সের সামনে বল পেয়ে লুকাস তোরেয়েরা ভেতরে থাকা সুয়ারেজের কাছে পাস করেছিলেন। সুয়ারেজ বুদ্ধিদীপ্ত এক লে অফে খুঁজে নেন কাভানিকে, শুয়ে পড়ে এক পা ছুঁয়ে গোল করে দলকে এগিয়ে নেন কাভানি।
অবশ্য প্রথমার্ধ শেষের আগেই সেই গোল শোধ করার ভালো সুযোগও পেয়েছিল আর্জেন্টিনা। মেসির সঙ্গে নেমে ভালোই খেলছিলেন দিবালা। কিন্তু মার্কোস আকুনিয়ার ক্রস গোলের সামনে থেকেও প্রথম দফায় পা ছোঁয়াতে ব্যর্থ হন, দ্বিতীয় চেষ্টায় অবশ্য বল জালে জড়িয়েছিলেন, কিন্তু এর আগেই একবার বলে হাত লেগেছিল দিবালার, তাই সেই গোল আর পাওয়া হয়নি তার।
উরুগুয়ে নিজেদের স্বভাবসুলভ কাউন্টার অ্যাটাকিং ফুটবলটাই খেলছিল। স্কালোনির অধীনে গত ছয় মাসে বদলে যাওয়া আর্জেন্টিনা বল পজেশন ধরে রেখে আক্রমণ সাজাতে ধুঁকেছে। জার্মানি, ব্রাজিলের বিপক্ষে আশাজাগানিয়া ফুটবল খেললেও তাই কাউন্টার অ্যাটাক নির্ভর দলের বিপক্ষে তাই সুযোগ তৈরিতে ঝামেলায় পড়তে হয়েছে আর্জেন্টিনাকে। এ ম্যাচেও বড় একটা সময় নিশ্চিত গোলের সুযোগ তৈরি পারছিল না লা আলবিসেলেস্তেরা। ৬৩ মিনিটে আর্জেন্টিনা সমতয়ায় ফেরে সেট পিসে ভর করে, মেসি-আগুয়েরো জুটিতে।
উরুগুয়ের বক্সের বাম দিকে ফ্রি-কিক পেয়ে গিয়েছিল আর্জেন্টিনা, মেসি বাম পায়ে বাঁকানো কিক মেরেছিলেন আগুয়েরোকে উদ্দেশ্য করে। ম্যান সিটি স্ট্রাইকার লাফিয়ে উঠে সিক্স ইয়ার্ড বক্সের মাথা থেকে গ্ল্যান্সিং হেডারে বল জালে জড়িয়ে ম্যাচে ফেরান আর্জেন্টিনাকে।
অবশ্য আর্জেন্টিনার স্বস্তি বেশিক্ষণ স্থায়ী হয়নি। আরেকটি ফ্রি-কিক থেকে আবার পিছিয়ে পড়েন মেসিরা। সুয়ারেজেই আর্জেন্টিনার বক্সের ঠিক বাইরে ফ্রি-কিক আদায় করে নিয়েছিলেন। এর পর সরাসরি ফ্রি-কিক থেকেই গোল করে দ্বিতীয়বারের মতো দলকে এগিয়ে নিয়েছিলেন সুয়ারেজ। ওই গোলে অবশ্য আর্জেন্টিনার গোলরক্ষক এস্তেবান আন্দ্রাদার দায়ও অনেকখানি। সুয়ারেজের ফ্রি-কিক টপ কর্নারে ছিল না, এক হাতে বল আটকাতে গিয়ে গতির কাছে হার মেনে আরেক গোল খেয়ে বসেন আন্দ্রাদা।
আগুয়েরোর গোলের পরই ব্রাজিলের বিপক্ষে দারুণ খেলার সেই ম্যাচের ছাপ ছিল আর্জেন্টিনার ফুটবলে। মেসির একটি শট অল্পের জন্য লক্ষ্য মিস করে যায় মিনিট দুয়েক পরই। তবে সুয়ারেজের ৬৯ মিনিটের গোলে আবার পিছিয়ে পড়তে হয় আর্জেন্টিনাকে। এর পর ম্যাচে ফেরার সবরকম চেষ্টাই করে গেছে আর্জেন্টিনা। দিবালা-মেসির দারুণ এক সমন্বয়ের পর আগুয়েরো শট মেরেছেন বাইরে দিয়ে। দিবালাও প্রায় ২৫ গজ দূর থেকে অল্পের জন্য গোল পাননি। ওই শটের পরই লাউতারো মার্টিনেজের বদলি হয়ে ৭৬ মিনিটে মাঠ ছাড়েন দিবালা।
মার্টিনেজ বাকি সময়ে তেমন কিছু করতে পারেননি। ৯০ মিনিটে আগুয়েরোর হেড কাম্পানা আবার ঠেকিয়ে দিলে হারটাই অনুমিত মনে হচ্ছিল আর্জেন্টিনার জন্য। তবে এর দুই মিনিট পরই মার্টিনেজের অবদান থাকল আর্জেন্টিনার ফেরায়। তাতে নেতৃত্ব দিলেন মেসি। আগের ম্যাচে পেনাল্টি মিস করলেও পরে বল জড়িয়েছিলেন জালে। এবার কাম্পানা আগে থেকেই নিজের বামদিকে ঝাঁপ দিয়ে ফেলেছিলেন। মেসির গড়িয়ে মারা শট তাই কোনো বাধা পায়নি গোল পর্যন্ত পৌঁছাতে। নিষেধাজ্ঞা কাটিয়ে টানা দুই ম্যাচেই গোল করলেন মেসি, জাতীয় দলের হয়ে বছরের শেষটা তাই একেবারে মন্দ হলো না আর্জেন্টিনার জন্য। আর উরুগুয়ে একটি বছর পার করে দিল কোনো ম্যাচ না হেরেই।
আর্জেন্টিনা একাদশ
এস্তেবান আন্দ্রাদে; রেনজো সারাভিয়া, জার্মান পেৎজেলা, নিকোলাস অটামেন্ডি, নিকোলাস টালিয়াফিকো; মার্কোস আকুনিয়া, রড্রিগো ডি পল, লিয়ান্দ্রো পারেদেস; লিওনেল মেসি, সার্জিও আগুয়েরো, পাউলো দিবালা
উরুগুয়ে একাদশ
মার্টিন কাম্পানা, মাতিয়াস ভিনা, ডিয়েগো গডিন, কোয়াতেস, মার্টিন কার্সেরেস, মাতিয়াস ভেসিনো, লুকাস তোরেয়ারা, ফেদেরিকো ভালভার্দে, লুইস সুয়ারেজ, এডিনসন কাভানি, ব্রায়ান লোজানো