কিক অফের আগে: সেই অ্যাটলেটিকোর বিপক্ষেই ফিরছেন রোনালদো
কবে, কখন
জুভেন্টাস-অ্যাটলেটিকো মাদ্রিদ
ইউয়েফা চ্যাম্পিয়নস লিগ গ্রুপ 'ডি'
জুভেন্টাস স্টেডিয়াম
২৭ নভেম্বর, রাত ২টা
চ্যাম্পিয়নস লিগে দলকে একা খাদের কিনারা থেকে টেনে তোলার দিক দিয়ে ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদোর জুড়ি নেই কোনো। রিয়াল মাদ্রিদকে একা জিতিয়েছেন অনেক। পক্ষান্তরে জুভেন্টাসের হয়ে সেদিক দিয়ে অন্তত রেকর্ডটা ঠিক রোনালদোসুলভ নয়। তবে জুভেন্টাস সমর্থকেরা যে চ্যাম্পিয়নস লিগের ‘সুপারম্যান’ রোনালদোকে একেবারেই দেখেননি, তা কিন্তু নয়। এ বছরের মার্চে এই তুরিনেই অ্যাটলেটিকো মাদ্রিদের বিপক্ষে হ্যাটট্রিক করে তুরিনের বুড়িদের নিয়ে গিয়েছিলেন শেষ আটে। মাস আটেক পর আবারও তুরিনে রোনালদো এবং জুভেন্টাসের প্রতিপক্ষ ডিয়েগো সিমিওনের দল। ‘লস কলচোনেরোস’দের বিপক্ষে তাই অতীতের সুখস্মৃতিটাই অনুপ্রেরণা ইতালিয়ান চ্যাম্পিয়নদের।
অ্যাটলেটিকোর বিপক্ষে স্মৃতিটা সুখের হলেও চ্যাম্পিয়নস লিগে নিজের শেষ ম্যাচটা হয়তো মনে রাখতে চাইবেন না রোনালদো। লোকোমোটিভ মস্কোর মাঠে অন্তিম মুহূর্তে ডগলাস কস্তার গোলে জয় ছিনিয়ে এনেছিল সারির দল। ঐ ম্যাচের শেষদিকে রোনালদোকে উঠিয়ে নিয়েছিলেন সারি, যার পুনরাবৃত্তি ঘটেছিল সিরি আ-তে পরের ম্যাচেও। টানা দুই ম্যাচে বদলি হওয়া রোনালদো দু’বারই ম্যানেজারের উদ্দেশ্যে কিছু একটা বলেই মাঠ ছেড়েছিলেন। এই মৌসুমে মাঠেও তেমন সুবিধা করতে না পারা রোনালদোর লক্ষ্য তাই ক্যারিয়ারের অন্যতম প্রিয় প্রতিপক্ষের বিপক্ষে গোল করে আত্মবিশ্বাস ফিরে পাওয়া।
রোনালদো ফর্মে না থাকলেও এখন পর্যন্ত সিরি আ, বা চ্যাম্পিয়নস লিগ- কোথাওই ভুগতে হয়নি সারির দলকে। সেজন্য হয়তো পাউলো দিবালা, গঞ্জালো হিগুয়াইনদেরই কৃতিত্বটা বেশি সবার চেয়ে। গত সপ্তাহে রোনালদোকে ছাড়াই আটালান্টার মাঠে জুভেন্টাসকে পথ দেখিয়েছিলেন আর্জেন্টাইন জুটি। সিরি আ-তে শীর্ষে থাকা জুভেন্টাস চ্যাম্পিয়নস লিগের শেষ ষোল নিশ্চিত করেছে লোকোমোটিভের বিপক্ষেই। তুরিনে আজ জিতলে গ্রুপ ‘ডি’ থেকে জুভেন্টাসের সঙ্গী হবে অ্যাটলেটিকো। রোনালদোর মত সময়টা ভাল যাচ্ছে না অ্যাটলেটিকোরও।
লা লিগায় তিন-এ থাকলেও আলাভেস, জিরোনা, গ্রানাদার মত দলকে হারাতে পারছে না সিমিওনের দল। গত গ্রীষ্মে ট্রান্সফার রেকর্ড গড়ে হোয়াও ফেলিক্সকে আনলেও আক্রমণে ধুঁকছে অ্যাটলেটিকো। নিজেদের শেষ ৯ ম্যাচে মাত্র ২টিতে প্রতিপক্ষের জালে একবারের বেশি বল পাঠাতে পেরেছে সিমিওনের দল। গোলমুখে ফরোয়ার্ডদের মধ্যে ফর্মে আছেন কেবল আলভারো মোরাতা, যিনি ফিরছেন সাবেক ক্লাবে। জুভেন্টাসের বিপক্ষে তাই তুরিনে দুই বছর কাটানো মোরাতার দিকেই তাকিয়ে থাকবে অ্যাটলেটিকো।
তুরিনে সেই রোনালদোময় রাতের আগে ‘সিআর৭’-কে খোঁচা মেরে কথা বলা সিমিওনে এবার অবশ্য কথার লড়াইয়ে আগাতে চাননি। চ্যাম্পিয়নস লিগে মাত্র ২ ম্যাচ বাকি থাকতে গ্রুপের অন্য দুই দল বেয়ার লেভারকুসেন এবং লোকোমোটিভের চেয়ে ৪ পয়েন্টে এগিয়ে থাকলেও নিজেদের সাম্প্রতিক ফর্ম, বিশেষ করে প্রতিপক্ষের মাঠে এবং তুরিনে অদম্য জুভেন্টাসের কারণেই হয়তো স্বস্তিতে থাকতে পারছে না অ্যাটলেটিকো। মোরাতারা হেরে গেলে গ্রুপের অন্য ম্যাচে যেই জিতুক, তাদের সাথে অ্যাটলেটিকোর পয়েন্ট ব্যবধান দাঁড়াবে মাত্র ১-এ। সেক্ষেত্রে হয়তো গ্রুপপর্বের বাধা পেরুনোই কঠিন হয়ে পড়বে অ্যাটলেটিকোর জন্য।
তুরিনে ফেভারিট হলেও দল বাছাই নিয়ে বেশ মাথা ঘামাতে হবে সারিকে। লোকোমোটিভের বিপক্ষে জুভেন্টাসের নায়ক কস্তা ছিটকে গেছেন উরুর মাংসপেশির ইনজুরিতে। আটালান্টার বিপক্ষে কাঁধের ইনজুরিতে পড়ায় মাথিয়াস ডি লিটের থাকার সম্ভাবনাও ক্ষীণ। লিগামেন্ট সমস্যার কারণে অধিনায়ক জর্জিও কিয়েলিনি নেই অনেক আগে থেকেই। তুরিনে তাই লিওনার্দো বনুচ্চির সাথে রক্ষণে নামবেন ড্যানিয়েল রুগানি। আটালান্টার বিপক্ষে গত সপ্তাহে স্কোয়াডে না থাকা রোনালদো ফিরছেন এই ম্যাচ দিয়েই।
রক্ষণে অবশ্য সমস্যা আছে সিমিওনেরও। ইনজুরির কারণে স্টেফান সাভিচ এবং হোসে হিমেনেজদের কাউকেই পাচ্ছেন না তিনি। ঘাড়ে অস্ত্রোপচারের কারণে নেই ডিয়েগো কস্তাও। গত সপ্তাহেই ইনজুরি কাটিয়ে ফিরেছেন অ্যাটলেটিকোর নতুন ‘পোস্টার বয়’ ফেলিক্স, কিন্তু জুভেন্টাসের বিপক্ষে শুরু থেকেই খেলার সম্ভাবনা ক্ষীণ তার।
সম্ভাব্য একাদশ
জুভেন্টাস (৪-৩-৩): শেজনি; দানিলো, রুগানি, বনুচ্চি, সান্দ্রো; খেদিরা, মাতুইদি, পিয়ানিচ; বের্নার্দেস্কি, হিগুয়াইন, রোনালদো
অ্যাটলেটিকো মাদ্রিদ (৪-৪-২): ওবলাক; ট্রিপিয়ের, ফেলিপে, হারমোসো, লোদি; কোকে, সল, থমাস, লেমার; কোরেয়া, মোরাতা
সংখ্যায় সংখ্যায়
- নিজেদের শেষ ৫ দেখার এগিয়ে আছে অ্যাটলেটিকো (২ জয়, ২ ড্র, ১ হার)
- চ্যাম্পিয়নস লিগে নিজেদের মাঠে শেষ ২৩ ম্যাচে মাত্র ১বার হেরেছে জুভেন্টাস
- প্রতিপক্ষের মাঠে চ্যাম্পিয়নিস লিগে নিজেদের শেষ ১১ ম্যাচে মাত্র ২বার জয় পেয়েছে অ্যাটলেটিকো (৫ ড্র, ৪ হার)।