৩ মিনিটের ঝড়ে ঘটনাবহুল ম্যাচে রিয়ালকে জিততে দিল না পিএসজি
ফুলটাইম
রিয়াল মাদ্রিদ ২-২ পিএসজি
করিম বেনজেমার দ্বিতীয় গোলে ৭৯ মিনিটে ২-০ ব্যবধানে এগিয়ে গিয়েছিল রিয়াল মাদ্রিদ। ততোক্ষণ পর্যন্ত রিয়ালের সঙ্গে ব্যবধানটা কেবল দুই গোলের ছিল সেটাই নিজেদের সৌভাগ্য ভাবতে পারত পিএসজি। সান্তিয়াগো বার্নাব্যুতে পিএসজিকে প্যারিসে প্রথম লেগে হারের জবাবটা ভালোভাবেই দিয়ে যাচ্ছিল রিয়াল। আর পিএসজি ছিল কোনঠাসা। এর পর তিন মিনিটের এক ঝড়ে সব পালটে দিয়েছে পিএসজি। থিবো কোর্তোয়ার এক ভুলে ৮১ মিনিটে কিলিয়ান এমবাপ্পে গোল করে বসেন। এর দুই মিনিট পর সাবেক রিয়াল মাদ্রিদ খেলোয়াড় পাবলো সারাভিয়া আরও একবার গোল করে সেই ম্যাচের স্কোরলাইনই বানিয়ে ফেলেন ২-২।
ঘটনাবহুল ম্যাচটা অবশ্য শেষে আবারও পিএসজির কাছ থেকে ছিনিয়ে নিতে পারত রিয়াল। বদলি হয়ে দুয়ো শুনতে শুনতে মাঠে নেমেছিলেন গ্যারেথ বেল। সবকিছুর জবাব একবারে দিয়ে দেওয়ার খুব কাছাকাছি গিয়েও ফিরতে হয়েছে তাকে। যোগ করা সময়ে বক্সের বাইরে থেকে নেওয়া তার ফ্রি-কিক গিয়ে লেগেছে বারপোস্টে।
বার্নাব্যুতে পিএসজি অন্তত একটি উন্নতির ছাপ রেখে গেছে। চ্যাম্পিয়নস লিগে চাপে পড়লেই ভেঙে যাওয়া তো নিয়মই বানিয়ে ফেলেছে তারা। দ্বিতীয় পর্ব আগেই নিশ্চিত হয়ে গিয়েছিল দুইদলের। এই ম্যাচের পর নির্ধারণ হয়ে গেছে, ১৩ পয়েন্ট পাওয়া পিএসজি গ্রুপ চ্যাম্পিয়ন আর ৮ পয়েন্ট পাওয়া রিয়াল মাদ্রিদ হচ্ছে রানার আপ। গ্রুপের আর একটি করে ম্যাচ বাকি দুইদলেরই।
প্রথম লেগে প্যারিসে নাজেহাল হয়ে এসেছিল রিয়াল। এর পর দ্বিতীয় লেগের আগেই জিনেদিন জিদান জানিয়ে রেখেছিলেন তার দল বদলে গেছে। পরের লেগে পিএসজির বিপক্ষে জয় দিয়ে পরিবর্তনটা প্রমাণ করতে চেয়েছিলেন জিদান। জয় না পেলেও সেটা প্রমাণ হয়ে গেছে। বার্নাব্যুতে কিলিয়ান এমবাপ্পে এক গোল শোধ করার আগ পর্যন্ত রিয়াল একরকম জেঁকে বসেছিল পিএসজির ওপর। কেইলর নাভাস দ্বিতীয়ার্ধে পয়েন্ট ব্ল্যাঙ্ক রেঞ্জ থেকে দুইবার বেনজেমা ও ইস্কোকে ঠেকিয়ে না দিলে আরও আগেই শক্ত অবস্থানে চলে যেত রিয়াল। রিয়ালের ওই দুইটি আক্রমণও ছিল মার্সেলোর ক্রস থেকে। ৭৯ মিনিটে মার্সেলোর তৃতীয় ক্রসটা আর বৃথা যেতে দেননি বেনজেমা। গোলের সামনে থেকে লাফিয়ে উঠে হেডে গোল করে পিএসজিকে আরও দূরে ঠেলে দিয়েছিলেন তিনি।
দারুণ ছন্দে থেকেও এর পরই তালগোল পাকিয়ে ফেলে রিয়াল। পুরো ম্যাচে রক্ষণের দিক দিয়ে তেমন একটা ভুল করেনি তারা। থিবো কোর্তোয়া তখনও মাঠে ছিলেন ভিএআরের কল্যাণে। তিনিই করলেন ভুলটা। ডান দিক থেকে আসা ক্রস ধরতে ভুল করলেন, রাফায়েল ভারানের সঙ্গেও সমন্বয় হলো না ঠিকঠাক। এমবাপ্পে ৮১ মিনিটে ফাঁকা বারে বলটা পুরেছেন শুধু। আর দুই মিনিট পর বদলি নামা নেইমার বড় অবদান রেখেছেন পিএসজির ফেরায়। আরেক বদলি সারাভিয়াই অবশ্য করেছেন আসল কাজটা। বক্সের ঠিক ভেতর থেকে বাম পায়ের দুর্দান্ত শটে বাম দিক থেকে আসা ক্রস গোলে পরিণত করে পিএসজির প্রত্যাবর্তন সম্পন্ন করেছেন তিনি।
ম্যাচের বাকি সময়েও অবশ্য খেলার রঙ বদলাতে পারত আরও একবার। রদ্রিগো, ভারান দুইটি ভালো সুযোগ পেয়েছিলেন। এমবাপ্পেও অন্যপ্রান্তে একটি সুযোগ পেয়েছিলেন, কিন্তু ক্রস না করে নিজেই গোলের চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়ে ফিরেছেন। আর শেষে তো বেল গোলটি পেয়ে গেলে জয় আর হাতছাড়া হত না রিয়ালের।
রিয়াল পিএসজির ওপর এতোখানি চড়াও হবে সেটা অবশ্য শুরুর পনেরো মিনিটে অনুমান করা কঠিনই ছিল। এর পর ধীরে ধীরে পুরনো রূপে ফিরতে থাকে জিদানের দল। চ্যাম্পিয়নস লিগে আগের চার ম্যাচে গোল খায়নি পিএসজি। বার্নাব্যুতে সেই রেকর্ড টিকল আর ১৭ মিনিট। সাজানো এক আক্রমণ থেকে তখন প্রথম গোলটি করেছিলেন বেনজেমা। মিডফিল্ডে আক্রমণের শুরু এডেন হ্যাজার্ডের পায়ে, মাঝমাঠে থেকে তিনি পাস দিয়েছিলেন ডান প্রান্তে থাকা কারভাহাল-ভালভার্দে জুটিকে। ওই দুইজনের দারুণ সমন্বয়ের পর ইস্কোর বক্সের ভেতর থেকে নেওয়া শট বারপোস্টে লেগে ফেরত আসলে বল পিএসজির গোলে ঢুকিয়ে দেন বেনজেমা।
ইস্কোর একাদশে থাকা একটু চমক হয়ে এসেছিল। তুখলও চমক রেখেছিলেন একাদশে। নেইমারকে ছাড়াই নেমেছিলেন রিয়ালের বিপক্ষে খেলতে। এমবাপ্পে-ডি মারিয়া-ইকার্দির আক্রমণভাগকে বেশিরভাগ সময়ই অকার্যকর করে রেখেছিলেন রামোস-ভারানরা। তবে ইকার্দি নিজের কাজটা ঠিকই করে রেখেছিলেন ৪১ মিনিটে।
ডি মারিয়ার পাস ধরতে রিয়ালের বক্সের ভেতর ঢুকে পড়েছিলেন ইকার্দি, কোর্তোয়াও সামনের দিকে এগিয়ে এসে বল ক্লিয়ার করতে গিয়েছিলেন। কোর্তোয়া বল পাননি, ট্যাকেল করেছিলেন ইকার্দিকে। রেফারি সঙ্গে সঙ্গে পেনাল্টির বাঁশি বাজিয়ে কোর্তোয়াকে লাল কার্ড দেখিয়েছিলেন। পেনাল্টি নিয়ে সংশয় না থাকলেও, কোর্তোয়ার কার্ডটা লাল হওয়ার যৌক্তিকতা নিয়ে বিতর্ক ছিল তখন। পরে ভিএআরের সাহায্য নিয়ে রেফারি অবশ্য পেনাল্টির সঙ্গে লাল কার্ডও বাতিল করেছেন। আক্রমণের বিল্ড আপে ইদ্রিসা গায়ার মার্সেলোকে ফাউল করেছিলেন- সেই দায়ে উলটো রিয়ালকেই তখন ফ্রি-কিক দিয়েছেন রেফারি। গায়ার ‘পুশ’ ফাউল হিসেবে গণ্য করার জন্য কতোখানি শক্ত ছিল সেটা নিয়ে অবশ্য বিতর্ক থেকেই যাচ্ছে।
দ্বিতীয়ার্ধের শুরুতেই গায়ার জায়গায় বদলি হয়ে মাঠে নেমেছিলেন নেইমার। এমবাপ্পেকে দারুণ একটি থ্রু পাস দেওয়া ছাড়া অবশ্য সীমিতই ছিল তার অবদান। বেশিরভাগ সময় রিয়ালের আক্রমণ সামলাতে দলের ব্যস্ততা দেখেছেন অন্যপ্রান্ত থেকে। পরে এমবাপ্পের গোলে কপাল খোলার পর, দ্বিতীয় গোলে অবদান রেখে ফর্মে ফেরার ইঙ্গিত দিয়েছেন তিনি।
স্কোরলাইনটা মনমতো হওয়ার কথা নয় জিদানের। মৌসুমে খুব সম্ভবত নিজেদের সেরা ম্যাচটাই খেলেছে তারা। বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছিলেন নিজেদের সাবেক গোলরক্ষক নাভাস। স্কোরলাইনে তাই জবাব দেওয়া হয়নি জিদানের দলের। তবে জিদান যা প্রমাণ করতে চেয়েছিলেন সেটা তার দল করতে পারলো ঠিকঠাক। তবে একটু দুশ্চিন্তাও যোগ হয়েছে জিদানের। হ্যাজার্ড ৬৮ মিনিটে মাঠ ছেড়েছেন ইনজুরি নিয়ে। এমন সময় নিশ্চয়ই হ্যাজার্ডকে হারাতে চাইবেন না জিদান।