আয়াক্সকে স্তব্ধ করে চেলসির সঙ্গী ভ্যালেন্সিয়া
ফুলটাইম
আয়াক্স ০-১ ভ্যালেন্সিয়া
চ্যাম্পিয়নস লিগের গ্রুপপর্ব পেরুতে শেষ ম্যাচে ঘরের মাঠে আয়াক্সের দরকার ছিল এক পয়েন্ট। আয়াক্স-চেলসি-ভ্যালেন্সিয়ার ত্রিমুখী লড়াইয়ে এগিয়েও ছিল আয়াক্স। তাদের সমীকরণ ছিল সবচেয়ে সহজ। কিন্তু আমস্টারডাম অ্যারেনায় ভ্যালেন্সিয়ার বিপক্ষে কিছুই কাজে আসলো না আয়াক্সের। ভ্যালেন্সিয়ার কাছে হেরে চ্যাম্পিয়নস লিগের গ্রুপপর্ব থেকেই বিদায় নিতে হয়েছে আয়াক্সকে। গ্রুপ 'এইচ' থেকেই দ্বিতীয় রাউন্ড নিশ্চিত করেছে চেলসি ও ভ্যালেন্সিয়া। আয়াক্সকে হারিয়ে গ্রুপ চ্যাম্পিয়ন হয়েছে ভ্যালেন্সিয়া, আর চেলসি ২-১ ব্যবধানে লিলকে হারিয়ে নিশ্চিত করেছে নক আউট পর্ব।
গতবার চ্যাম্পিয়নস লিগের সেমিফাইনালে খেলা আয়াক্স বাদ পড়েছে মাত্র এক পয়েন্টের ব্যবধানে। ভ্যালেন্সিয়া ও চেলসি পেয়েছে ১১ পয়েন্ট, আর আয়াক্স ১০। রিয়াল মাদ্রিদ, জুভেন্টাসের মতো ক্লাবদের বিদায় করে দিয়ে গতবার সেমিফাইনালে উঠেছিল আয়াক্স। এর পর নাটকীয় এক সেমিফাইনালে টটেনহামের কাছে হেরে স্বপ্নের ফাইনালে যাওয়া হয়নি তাদের। সেই দলের মূল খেলোয়াড় ফ্রাঙ্কি ডি ইয়ং, ডি লিট, লার্স শোনদের ছাড়া এবারও মৌসুম শুরু করলেও পুরোনো আয়াক্সের ধারালো ফুটবলের দেখা মিলছিল। গ্রুপপর্ব থেকে আয়াক্সের বিদায় তাই বড় চমক হয়েই এসেছে। গ্রুপে তৃতীয় হয়ে শেষ করায় এখন ইউরোপা লিগের দ্বিতীয় রাউন্ডে খেলবে আয়াক্স।
ঘরের মাঠে ম্যাচের ২৪ মিনিটে রদ্রিগোর গোলে পিছিয়ে পড়েছিল আয়াক্স। এর পর আর সেখান থেকে ফেরা হয়নি তাদের। যোগ করা সময়ে গ্যাব্রিয়েল পাউলিস্তা লাল লার্ড দেখে মাঠ ছাড়লে, বাকি সময় দশ জন নিয়ে খেলেছে ভ্যালেন্সিয়া। ম্যাচের আগে চোটের কারণে দলের গুরুত্বপূর্ণ বেশ কয়েকজন খেলোয়াড়কেও পায়নি তারা। এর কিছুই অবশ্য শেষ পর্যন্ত বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারেনি দ্বিতীয় রাউন্ডে যাওয়ার পথে।
গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচে গত এক বছর দারুণ ছন্দে থাকা আয়াক্সকে খুঁজেই পাওয়া যায়নি। পুরো ম্যাচে মাত্র তিনবার গোলে শট করেছে তারা। আয়াক্সের করা মোট ১৮ শতাংশ ছিল অন টার্গেটে। সে হিসাবে ২০১৭ সালের পর এটাই কোনো আয়াক্সের সবচেয়ে 'হতাশাজনক' পারফরম্যান্স। আয়াক্স অবশ্য নিজেদের দুর্ভাগাও ভাবতে পারে। অন্তত ১০ পয়েন্ট আর ৬+ গোলব্যবধান নিয়ে চ্যাম্পিয়নস লিগের ইতিহাসে মাত্র তৃতীয় দল হিসেবে গ্রুপ পর্ব উতরাতে না পারা দল হয়ে গেছে আয়াক্স।
আয়াক্সের ট্রাজেডির রাতে কোনোভাবেই ভ্যালেন্সিয়ার কৃতিত্বকেও খাটো করার উপায় নেই। ফেরানর তোরেসের পাস থেকে রদ্রিগো যখন গোল করেছেন, তখন আয়াক্স ডিফেন্ডাররা তাকিয়ে তাকিয়ে দেখেছেন। রদ্রিগো বক্সের ভেতর ছিলেন পুরোপুরি ফাঁকায়। তাকে পাহারা দেওয়ার জন্য তিনজন ডিফেন্ডারও ছিলেন। কিন্তু একজনও তাল মেলাননি রদ্রিগোর সঙ্গে। স্প্যানিশ ফরোয়ার্ড এক পায়ে বল রিসিভ করে এর পর যথেষ্ট সময় নিয়েই নিখুঁত শটে গোল করেছিলেন। এর পরও ম্যাচে ফেরার যথেষ্ট সময় ছিল আয়াক্সের কাছে। কিন্তু রক্ষণে দারুণ মনযোগী হয়ে আয়াক্সকে একবারের জন্যও ম্যাচের লাগাম ধরতে দেয়নি ভ্যালেন্সিয়া।
বিশেষ করে শেষ ১৫ মিনিটে ভালোমতোই হুশ ফিরেছিল আয়াক্সের। তখন একের পর এক আক্রমণ করে ভ্যালেন্সিয়ার রক্ষণে ভীতি চড়াচ্ছিল ডাচ চ্যাম্পিয়নরা। হাকিম জিয়েচ দারুণ খেলছিলেন। কিন্তু দুসান টাডিচ এদিন নিজেকে হারিয়ে ফেললেন যেন। এরিক টেন হাগকে অভিজ্ঞ ক্লাস ইয়ান হুন্টেলারের শরণাপন্নও হতে হয়েছে একটি গোলের জন্য। কিন্তু কিছুতেই সেই কাঙ্ক্ষিত গোলের দেখা পায়নি আয়াক্স। শেষদিকে পাউলিস্তা মেজাজ হারিয়ে টাডিচকে ধাক্কা মেরে লাল কার্ড দেখার পর ভ্যালেন্সিয়া প্রায় আড়াই মিনিট খেলেছেন একজন কম নিয়ে। তাতেও সুযোগ কাজে লাগাতে পারেনি আয়াক্স।
পরের রাউন্ডে যেতে ভ্যালেন্সিয়ার মতো চেলসিরও দরকার ছিল একটি জয়। ফ্রাঙ্ক লায়ম্পার্ডের দল প্রথমার্ধেই প্রায় নিশ্চিত করে ফেলেছিল জয়টা। ট্যামি আব্রাহাম দারুণ এক ব্যাকহিলে এগিয়ে দিয়েছিলেন চেলসিকে। এরপর ৩৫ মিনিটে কর্নার থেকে হেডে গোল করেন সিজার আজপিলিকুয়েতা। স্ট্যামফোর্ড ব্রিজে চেলসিকেও অবশ্য শেষ দিকে স্নায়ুচাপে ভুগতে হয়েছে। ম্যাচের ৭৮ মিনিটে এক গোল শোধ করে দিয়েছিলেন সাবেক চেলসি স্ট্রাইকার লইক রেমি। তবে বাকি সময় সামাল দিয়ে চেলসি নিশ্চিত করেছে নিজেদের নক আউট পর্ব।
গ্রুপ 'জি'র সমাপ্তিও হয়েছে নাটকীয়। দ্বিতীয় রাউন্ডে উঠতে জেনিটের দরকার ছিল জয়। বেনফিকার মাঠে হেরে নক আউট পর্বের স্বপ্ন তো গেছেই, রাশিয়ানদের জায়গা হয়নি ইউরোপা লিগেও। গ্রুপে চতুর্থ হয়ে শেষ করেছে তারা। তাদের জায়গায় ইউরোপা লিগে যাচ্ছে বেনফিকা। জেনিটের হারের সুযোগ পুরোপুরি কাজে লাগিয়েছে লিঁও।
লাইপজিগকে প্রথমার্ধে দুইটি পেনাল্টি গোল উপহার দিয়ে নিজেদের সর্বনাশ ডেকে এনেছিল ফ্রেঞ্চ ক্লাবটি। আর জেনিট-বেনফিকা ম্যাচ তখন ছিল গোলশুন্য। প্রথমার্ধ পর্যন্তও তাই জেনিটই যাচ্ছিল পরের রাউন্ডে। বিরতির পর পালটে গেছে এই গ্রুপের হিসাব-নিকাশ। জেনিট গোল খেয়েছে, লাল কার্ড দেখে দশ জনের দলে পরিণত হয়ে পেনাল্টি উপহার দিয়েছে বেনফিকাকে, শেষে আরও একটি আত্মঘাতী গোলও করেছে। আর লিঁও সে সময়ে দুই গোলই শোধ দিয়ে নাটকীয় এক ড্র পেয়েছে লাইপজিগের বিপক্ষে। ৮২ মিনিটে মেম্ফিস ডিপাই করেছেন সমতাসূচক গোলটি।