• চ্যাম্পিয়নস লিগ
  • " />

     

    মরিনহো এবং হেসুসের দুই রকম হ্যাটট্রিকের রাত

    মরিনহো এবং হেসুসের দুই রকম হ্যাটট্রিকের রাত    

    ফুল-টাইম

    বায়ার্ন মিউনিখ ৩-১ টটেনহাম হটস্পার

    ডিনামো জাগ্রেব ১-৪ ম্যানচেস্টার সিটি


     

    বায়ার্নের মাঠে মরিনহোর অনাকাঙ্ক্ষিত 'হ্যাটট্রিক'

    বুন্দেসলিগায় নিজেদের শেষ দুই ম্যাচ হেরে টেবিলের সাত-এ নেমে গিয়েছে বায়ার্ন মিউনিখ। চ্যাম্পিয়নস লিগে গ্রুপ চ্যাম্পিয়ন হয়েই নকআউট পর্বে যাওয়া নিশ্চিত হলেও টটেনহাম হটস্পারের বিপক্ষে জয়টা আত্মবিশ্বাসের জন্য দরকারই ছিল বাভারিয়ানদের। তিন ম্যাচ পর এসে অবশেষে স্বস্তির জয় পেয়েছে বায়ার্ন, ‘বি’ গ্রুপে হোসে মরিনহোর টটেনহামকে ৩-১ গোলে হারিয়েছে তারা। আলিয়াঞ্জ অ্যারেনায় আবারও খালি হাতে ফিরতে হল হোসে মরিনহোকে, বায়ার্নের মাঠে খেলা শেষ ৩টি ম্যাচই হেরেছেন ‘দ্য স্পেশাল ওয়ান’। 

    অবশ্য স্পার্সের হয়ে নিজের দ্বিতীয় হার নিয়ে হয়তো খুব একটা মাথা ঘামাবেন না মরিনহো। নকআউট পর্ব নিশ্চিত হয়ে যাওয়ায় এবং বায়ার্ন পয়েন্টের দিক দিয়ে ধয়াছোঁয়ার বাইরে থাকায় হ্যারি কেইনকে বিশ্রামে রেখেছিলেন মরিনহো, হিউঙ-মিন সন ছিলেন বেঞ্চে। খর্বশক্তির স্পার্সের বিপক্ষে ম্যাচের শুরু থেকে আক্রমণাত্মক ফুটবল খেলেছে বায়ার্ন। লিড নিতেও সময় নেয়নি তারা। ১৪ মিনিটে ফিলিপ কুতিনিয়োর উদ্দেশ্যে সার্জ গ্যানাব্রির বাড়ানো পাস জিওভানি লো সেলসোর গায়ে লেগে কিংসলে কোমানের দিকে আসলে ঠান্ডা মাথায় দলকে লিড এনে দেন ফ্রেঞ্চ ফরোয়ার্ড।

     

     

    ম্যাচের শুরুতেই গোল খেয়ে বসলেও দারুণভাবে ফিরে আসে স্পার্স। ২০ মিনিটে লো সেলসোর থ্রু পাস থেকে চমক্তার এক হাফভলিতে দলকে সমতায় ফেরান স্পার্সের নতুন সাইনিং রায়ান সেসেনিওন। লিড হারানোর চেয়েও বড় দুঃসংবাদটা কিছুক্ষণ বাদেই পায় বায়ার্ন। টার্ফে পা আটকে হাঁটুর ইনজুরিতে পড়ে মাঠ ছাড়েন কোমান, তার জায়গায় আসেন থমাস মুলার। প্রথমার্ধের যোগ করা সময়ে বাভারিয়ানদের লিড পুনরুদ্ধার করেন মুলার। আলফন্সো ডেভিসের শট বারপোস্টে প্রতিহত হলেও ফিরতি বল জালে পাঠাতে ভুল করেননি ‘ডের রমডয়টার’।

    গোলের কিছুক্ষণ বাদেই কুতিনিয়োর আগুনে শট অবিশ্বাস্যভাবে ফিরিয়ে দেন স্পার্স গোলরক্ষক পাউলো গাৎজানিগা। প্রথমার্ধের মত দ্বিতীয়ার্ধেও স্পার্সকে আক্রমণজোয়ারে ভাসিয়ে দেয় বায়ার্ন। ৬৪ মিনিটে এসে অবশেষে গোল পান কুতিনিয়ো, বাঁ-প্রান্ত দিয়ে কাট করে বাঁকানো শটে গোল করেন তিনি। ম্যাচে ফেরার আশায় সনকে নামিয়ে দেন মরিনহো, কিন্তু ম্যাচে আর ফেরা হয়নি তাদের।

     

    হ্যাটট্রিক এবং রেকর্ডের রাতে বিতর্কিত সিটিকে বাঁচালেন হেসুস

    ইনজুরির কারণে সার্জিও আগুয়েরোর শূন্যস্থানটা পূরণ করতে একেবারেই ব্যর্থ হয়েছিলেন গ্যাব্রিয়েল হেসুস। নিউক্যাসলের সাথে ড্র বা ম্যানচেস্টার ডার্বিতে হার- হেসুসের পারফরম্যান্স নিয়ে হতাশার কথা জানিয়েছিলেন পেপ গার্দিওলা নিজেও। কিন্তু ডিনামো জাগরেবের বিপক্ষে যেন নিজের সামর্থ্যেরই জানান দিলেন হেসুস। ব্রাজিলিয়ান স্ট্রাইকারের হ্যাটট্রিকে পিছিয়ে পড়েও ডিনামোকে ৪-১ গোলে হারিয়েছে সিটি।

    নকআউট পর্বে যেতে হলে সিটিকে হারাতেই হত ডিনামোকে। ম্যাচের শুরুতেই ক্রোয়াটদের সে স্বপ্নই দেখান স্প্যানিশ স্ট্রাইকার দানি ওলমো। ডেমিয়েন কাদজিওরের পাসে দুর্দান্ত ভলিতে দলকে লিড এনে দেন তিনি। গ্রুপচ্যাম্পিয়ন হয়ে পরের রাউন্ড নিশ্চিত হওয়ায় আজকের ম্যাচ সিটির জন্য ছিল নিছক আনুষ্ঠানিকতার। কিন্তু আত্মবিশ্বাস ফেরানোর কথা চিন্তা করলে ডিনামোর মাঠে জিততেই হত পেপ গার্দিওলার দলকে। ম্যাচের শুরুর দিকে আক্রমণে তেমন সুবিধাই করতে পারেনি সিটি। তবে প্রথমার্ধেই সমতায় ফিরেছিল তারা। তবে সমতায় ফেরা নিয়ে আছে জোর বিতর্ক। ৩৪ মিনিটে বল দখলের লড়াইয়ে ফিল ফোডেন এবং হেসুসের ট্যাকেলে ব্যথা পেয়ে মাটিতে পড়েছিলেন ডিনামোর দুই ফুটবলার। কিন্তু  ডিনামোর ফুটবলার এবং সমর্থকেরা খেলা থামানোর ইশারা দিলেও খেলা থামায়নি সিটি। ঐ আক্রমণ থেকেই রিয়াদ মাহরেজের ক্রসে হেড করে দলকে সমতায় ফেরান হেসুস।

     

     

    মেজাজ হারিয়ে ফেলেন সমর্থকেরা, মাঠে ছুঁড়ে মারতে থাকেন বোতল সহ আরও অনেক কিছু। ডিনামো অধিনায়ক আরিয়ান আদেমিকে হলুদ কার্ড দেখতে হয় সিটি ফুটবলারদের সাথে হাতাহাতি করায়। তবে প্রথমার্ধে বিতর্কিত সিদ্ধান্তের ক্ষেত্রে নিজেদের ভুক্তভোগীও ভাবতে পারে সিটি। প্রথমার্ধের যোগ করা সময়ে রদ্রিকে কনুই মেরেও লাল কার্ড থেকে বেঁচে যান আমের গোজাক। বিতর্কে ঠাসা প্রথমার্ধের পর দ্বিতীয়ার্ধে যতবারই বল পেয়েছেন, দুয়ো শুনতে হয়েছে হেসুসকে। তবে দ্বিতীয়ার্ধে দু’বার ডিনামো সমর্থকদের নিস্তব্ধ করে দিয়েছিলেন তিনি। ৫০ মিনিটে ফোডেনের ক্রস থেকে দলকে লিড এনে দেন হেসুস। কিছুক্ষণ বাদেই আবারও গোল, এবার বেনজামিন মেন্ডির ক্রসে পা ছুঁয়ে হ্যাটট্রিক পূরণ করেন ব্রাজিলিয়ান স্ট্রাইকার।

    হ্যাটট্রিক করার ম্যাচে রেকর্ডও গড়েছেন হেসুস, চ্যাম্পিয়নস লিগের ইতিহাসে কনিষ্ঠতম ব্রাজিলিয়ান হিসেবে নেইমারের ১০ বা তার বেশি গোল করার রেকর্ড এখন তারই। ৩-১ ব্যবধানে পিছিয়ে পড়ার পর আর ম্যাচে ফেরা হয়নি ডিনামোর। ৮৪ মিনিটে উলটো ক্রোয়াটদের কফিনে শেষ পেরেক ঠুকে দেন ফোডেন, সিলভার মাইনাস থেকে গোল করেন তিনি। নকআউটের স্বপ্ন দেখেও তাই বিদায় নিতে হয় ডিনামোকে, এই গ্রুপ থেকে পরের রাউন্ডে সিটির সঙ্গী আটালান্টা।