প্যাভিলিয়ন চ্যাম্পিয়নস লিগ ২০১৯-২০২০ গ্রুপপর্বের সেরা একাদশে যারা
গ্রুপপর্বের পারফরম্যান্সের ভিত্তিতে সেরা একাদশ
মার্ক-আন্দ্রে টের স্টেগান
বরুশিয়া ডর্টমুন্ড, ইন্টার মিলানের সাথে এবারের ‘গ্রুপ অফ ডেথ’-এ ছিল বার্সেলোনা। গ্রুপপর্বে লিওনেল মেসি ছিলেন বার্সেলোনার সেরা ফুটবলার। কিন্তু আড়ালে থেকে নিজের কাজটা দুর্দান্ত ধারাবাহিকতার সাথে করে গেছেন গোলরক্ষক মার্ক আন্দ্রে টের স্টেগান। ক্লিনশিট রেখেছেন মোটে দুটি, কিন্তু সব ম্যাচেই চমৎকার সব সেভে বার্সাকে ম্যাচে রেখেছিলেন তিনি। গ্রুপপর্বের প্রথম ম্যাচে ডর্টমুন্ডের বিপক্ষে সিগনাল ইদুনা পার্কের ম্যাচে রীতিমত অবিশ্বাস্য ছিলেন স্টেগান, আক্রমণে নিষ্প্রভ বার্সা তার জন্যই ফিরতে পেরেছিল ড্র নিয়ে। স্লাভিয়া প্রাগের মাঠেও ২-১ গোলের জয়ে খুব সম্ভবত সবচেয়ে বেশি অবদান তারই। চ্যাম্পিয়নস লিগ ছাড়াও লা লিগাতেও সমান ধারাবাহিকতা দেখাচ্ছেন জার্মান গোলরক্ষক।
আশরাফ হাকিমি
একজন ডিফেন্ডার হয়েও এবারের গ্রুপপর্বে ৪ গোল করেছেন রিয়াল মাদ্রিদ থেকে ডর্টমুন্ডে ধারে আসা ফুলব্যাক। ইন্টার মিলানের বিপক্ষে তার জন্যই পিছিয়ে পড়েও জয় ছিনিয়ে আনতে পেরেছিল জার্মানরা। স্লাভিয়া প্রাগের বিপক্ষেও জোড়া গোল করেছিলেন তিনি। শুধু আক্রমণ নয়, রক্ষণেও দারুণ খেলেছেন হাকিমি। সিগনাল ইদুনাতে দারুণ খেলেছিলেন বার্সার বিপক্ষে, আটকে রেখেছিলেন মেসিকে।
কালিদু কুলিবালি
নাপোলির রক্ষণের মূল ভরসা কুলিবালি এবারও ছিলেন দুর্দান্ত। প্রথম ম্যাচে দুর্দান্ত ট্যাকলিং, মার্কিংয়ে আটকে দিয়েছিলেন লিভারপুলের আক্রমণ ত্রিফলা সালাহ-ফিরমিনো-মানেকে। টের স্টেগানের মতই ক্লিনশিটের কেতাবী পরিসংখ্যানে তাকে বিচার করা ভুল। প্রতি ম্যাচে রক্ষণে তিনি ছিলেন দুর্দান্ত।
থিয়াগো সিলভা
গ্রুপপর্বে ৬ ম্যাচে ৫টি ক্লিনশিট রেখেছে প্যারিস সেইন্ট জার্মেই। প্যারিসে রিয়াল মাদ্রিদের বিপক্ষে বড় জয়ে পাদপ্রদীপের পুরো আলো আনহেল ডি মারিয়ার ওপর থাকলেও পার্শ্বচরিত্রে পিএসজি অধিনায়ক ছিলেন দুর্দান্ত। বেল-বেনজেমা-হ্যাজার্ডদের এতটুকু জায়গা দেননি তিনি।
টনি ক্রুস
এই মৌসুমে খুব সম্ভবত রিয়ালের সবচেয়ে ধারাবাহিক ফুটবলার টনি ক্রুস। আগে মাঝমাঠের দখল নিজের করে নেওয়া, দুর্দান্ত সব লম্বা পাস, অব্যর্থ লম্বা শট- এসবই ছিল ক্রুসের সবচেয়ে বড় শক্তি। কখনোই সে অর্থে গোলস্কোরিং মিডফিল্ডার ছিলেন না ক্রুস। কিন্তু এই মৌসুমে গোলের দেখাও পাচ্ছেন তিনি। এখন পর্যন্ত ৭ গোল করেছেন তিনি। গোল, অ্যাসস্ট ছাড়াও মাঝমাঠে বল দখল, ডিফেন্ডারদের সাহায্য করা- সবই করছেন দারুণভাবে।
ফ্রেঙ্কি ডি ইয়ং
এই মৌসুমে মিডফিল্ডারদের পারফরম্যান্স নিয়ে ব্যাপক সমালোচনা সইতে হয়েছে বার্সেলোনাকে। সার্জিও বুস্কেটস, আর্থার মেলো, ইভান রাকিটিচদের কেউই নেই ফর্মে। কিন্তু মেসি, স্টেগানের পর খুব সম্ভবত এই মৌসুমে বার্সার সেরা ফুটবলার ডি ইয়ং। ন্যু ক্যাম্পে ইন্টার, ডর্টমুন্ডের বিপক্ষে দুর্দান্ত খেলেছেন তিনি। গোল, অ্যাসিস্ট পাননি; কিন্তু বার্সার খেলা গড়ার ক্ষেত্রে ডি ইয়ং রীতিমত অবিচ্ছেদ্য।
সাদিও মানে
ব্যালন ডি’অরের রেসে চতুর্থ হয়েছিলেন সাদিও মানে। এবারের চ্যাম্পিয়ন লিগে সেনেগালের ফরোয়ার্ড আবারও জানান দিলেন, কেন বিশ্বসেরাদের কাতারে এখন উচ্চারিত হয় তার নাম। আক্রমণের তার দুই সতীর্থ রবার্তো ফিরমিনো এবং মোহামেদ সালাহ আগের মত নিজেদের মেলে ধরতে পারছেন না। এবার লিভারপুলের আক্রমণের নিউক্লিয়াস তাই মানেই। চ্যাম্পিয়নস লিগেও সেটাই আবারও প্রমাণ করেছেন তিনি। ২ গোল, ২ অ্যাসিস্ট করেছেন গ্রুপপর্বে। কিন্তু লিভারপুলের খেলায় তার প্রভাব দুর্দান্ত।
কিলিয়ান এম্বাপ্পে
ক্লাব ব্রুজের বিপক্ষে বদলি হিসেবে নেমে হ্যাটট্রিক করেছিলেন। সান্তিয়াগো বার্নাব্যুতেও রিয়ালের বিপক্ষে জাল খুঁজে পেয়েছিলেন কিলিয়ান এম্বাপ্পে। ইনজুরির কারণে নেইমারের অনুপস্থিতির সময় পিএসজির আক্রমণের হাল ধরেছিলেন। নকআউট পর্বে প্রতিবার খালি হাতে ফেরা পিএসজির এবার চ্যাম্পিয়নস লিগে ভাল কিছু করতে চাইলে আবারও তাকিয়ে থাকবে এম্বাপ্পের দিকেই।
রবার্ট লেভানডফস্কি
অল্পের জন্য ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদোর (১১) এক মৌসুমের গ্রুপপর্বে সর্বোচ্চ গোলের রেকর্ড স্পর্শ করতে পারেননি রবার্ট লেভানডফস্কি (১০)। একমাত্র দল হিসেবে এবার গ্রুপপর্বে বায়ার্নের শতভাগ জয়ের রেকর্ডের অন্যতম কারিগর তিনিই।
আর্লিং-ব্রাউট হালান্ড
চ্যাম্পিয়নস লিগ অভিষেকে গেঙ্কের বিপক্ষে হ্যাটট্রিক করে নজর কেড়েছিলেন হালান্ড। একটা সময় গ্রুপপর্বের সর্বোচ্চ গোলদাতা ছিলেন তিনিই। সালজবুর্গের হয়ে অবশ্য গ্রুপপর্বের বাধা পেরুতে পারেননি। কিন্তু ৮ গোল করে এখনই বার্সেলোনা, রিয়াল, ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের মত দলগুলো তাকে ভেড়াতে উঠেপড়ে লেগেছে। খুব সম্ভবত আগামী মৌসুমে ইউরোপের বড় কোনো ক্লাবের হয়েই মাঠ মাতাবেন হালান্ড।
লিওনেল মেসি
প্রতি মৌসুমেই নিজেকে ছাড়িয়ে যাচ্ছেন। এবারের গ্রুপপর্বে ইনজুরির কারণে ম্যাচ মিস করেছেন, গোল করেছেন মোটে ২টি। ইন্টারের বিপক্ষে ন্যু ক্যাম্পের ম্যাচে গোল পাননি, তারপরও পুরো ম্যাচে ছড়ি ঘুরিয়েছেন তিনিই। তার অনুপস্থিতিতে বার্সাকে চেনা দায়। এই মৌসুমে একেবারেই গড়পড়তা এবং ধারাবাহিকতার অভাবে ধুঁকতে থাকা বার্সাকে প্রায় একাই টেনে নিয়ে যাচ্ছেন।