• " />

     

    ১৬ ঘণ্টা উইকেটে!

    ১৬ ঘণ্টা উইকেটে!    

    এই ৫৭ বছরে প্রায় ১৭৫০টি টেস্ট হয়েছে, ১৯৫৮ সালের ওই ব্রিজটাউন টেস্টের পর। ওই টেস্টে ৩৩৭ রান করেছিলেন হানিফ মোহাম্মদ, দেশের বাইরে এখনও এটি কোনো ব্যাটসম্যানের সর্বোচ্চ রান। এরপর আরও ২২টি ট্রিপল সেঞ্চুরি হয়েছে, তবে নিজেদের দ্বিতীয় ইনিংসে এটিই একমাত্র হয়ে আছে। শুধু নিজেদের দ্বিতীয় ইনিংস নয়, এটি করা হয়েছিল ফলো-অনে পড়ে! তাও আবার ৪৭৩ রান পিছিয়ে থেকে ইনিংস শুরু করে! তবে ওই ইনিংস আসলে ক্রিকেট রূপকথার অংশ হয়ে গেছে ৯৭০ মিনিট উইকেটে টিকে থাকার অবিশ্বাস্য কীর্তির জন্য।

     

    ১৯৫৮ সালের জানুয়ারি। ব্রিজটাউন, বার্বাডোজ। পাকিস্তান ও ওয়েস্ট ইন্ডিজের প্রথম টেস্ট। ক্যারিবীয়রা করলো ৫৭৯, পাকিস্তান প্রথম ইনিংসে গুটিয়ে গেল ১০৬ রানেই! তৃতীয় দিনের বিকেলে হানিফ মোহাম্মদ ইনিংস ওপেন করতে এলেন আবার। টেস্ট তখন ছয়দিনের।

     

    টেস্ট বাঁচাতে পাকিস্তানকে ব্যাট করতে হবে প্রায় তিনদিন। উইকেট ভাঙ্গছে তখন, একটা শক্তিশালী বোলিং আক্রমণ আর দুইজন স্থানীয় আম্পায়ার সামনে।। হানিফের তখন হেলমেট নেই, নেই আর্মগার্ড, প্যাডজোড়াও শীর্ণ! থাই-প্যাড হিসেবে ব্যবহার করছিলেন হোটেল থেকে আনা মোড়ানো এক তোয়ালে!

     

    হানিফ শুধু ওই বিকেলটা নয়, ব্যাট করলেন পরদিনের পুরোটাই। রান তখন ১৬১। ওই দিনশেষেই অধিনায়ক এ এইচ কারদারের একটা নোট পেলেন হানিফ, ‘তুমি পারবে!’ এর বেশী কিছু নয়, তবে হানিফের প্রেরণার জন্য তো এই যথেষ্ট! অধিনায়কের কথাতেই কিনা, হানিফ ব্যাট করলেন পরেরদিনও! পঞ্চমদিন শেষে হানিফের রান হলো ২৭০। বাকী এক দিন, পাকিস্তানের লিড ৫৩ রানের মতো! মানে টেস্ট তখনও ওয়েস্ট ইন্ডিজের হাতেই, যদি না হানিফ ব্যাট করেন! কারদার আরেকটা নোট রেখে গেলেন, ‘কাল চা-বিরতি পর্যন্ত যদি ব্যাট করতে পারো তুমি, ম্যাচটা বেঁচে যেতে পারে!’

     

    হানিফ করলেন। যতক্ষণ না পাকিস্তান নিরাপদ একটা অবস্থানে পৌঁছায়। যখন আউট হন, তখন রান ৩৩৭। ব্যাটিং করেছেন প্রায় ৯৭০ মিনিট। মানে প্রায় ১৬ ঘন্টা, প্রায় ১১টা ফুটবল ম্যাচের সমান সময়!

     

    পত্রিকার পাতায় হানিফ-বন্দনা

     

    অনেকেই বলেন, সেই ইনিংসে নাকি হানিফের প্যাডে কোনো বলই লাগেনি! এতটাই নিঁখুত ছিলেন সেদিন তিনি! হানিফ অবশ্য এ কথায় খুব একটা আপত্তি করেন না, হেসে বলেন, ‘প্রায়!’ তবে একবার নাকি এলডাব্লিউ হয়েছিলেন, বেঁচে গিয়েছিলেন ভাগ্যের জোরে। শুধু ভাগ্য না, ক্যারিবীয় দর্শকরাও পাশে ছিল হানিফের! প্রথম দুইদিন তারা খুব করে হানিফের আউটটা দেখতে চাইছিলেন, তবে তৃতীয় দিন থেকে রীতিমতো উৎসাহ দেয়া শুরু করেন। এরিক অ্যাটকিনসন বা রয় গিলক্রিস্টের পরের বলটা বাউন্সার হবে কিনা, তাও নাকি বলে দিচ্ছিলেন একজন, যিনি আবার বসে ছিলেন এক গাছের মগডালে! অ্যাটকিনসন-গিলক্রিস্টের পেস আর সুইং নয় শুধু, হানিফ সে ইনিংসে সামলেছিলেন কলি স্মিথ আর আলফ ভ্যালেনটাইনের স্পিনও!

     

    ‘লিটল মাস্টার’ এর মহাকাব্যিক এ ইনিংসটি শেষ হয়েছিল আজকের এই দিনে। কিভাবে খেললেন এমন ইনিংস?

     

    এ প্রশ্নের জবাবে হানিফ শুধু বলেন, ‘এটা করতেই হতো। আমি তাই করেছি!’