হালান্ডের হুঙ্কার, পিএসজির পুরোনো হাহাকার
ফুলটাইম
বরুশিয়া ডর্টমুন্ড ২-১ পিএসজি
এই ম্যাচে দুই অর্ধে খেলার ছন্দে অমিল ছিল চোখে পড়ার মতো। প্রথমার্ধে দুই দলেরই খোলস ছেড়ে বের হতে অনীহা। কিন্তু দ্বিতীয়ার্ধের মিনিট বিশেক পেরুতেই ম্যাচের খোলনলচে বদলে গেল। ম্যাচের আগে যাকে নিয়ে মাথাব্যথা ছিল পিএসজির, সেই এর্লিং ব্রুট হালান্ডের হাতেই পতন হল তাদের। প্রথমার্ধে খুব একটা জ্বলে না উঠলেও দ্বিতীয়ার্ধে ৬৯ থেকে ৭৭, এই ৮ মিনিটের মধ্যে দুই গোল করে চোখে আঙুল দিয়ে বুঝিয়ে দিয়েছেন কেন তাকে নিয়ে এতো হৈ চৈ।
অথচ চ্যাম্পিয়নস লিগের দ্বিতীয় পর্বের ড্র যখন হয়েছিল, তখন এই ম্যাচে থাকারই কথা ছিল না হালান্ডের। ১৯ বছর বয়সী নরওয়েজিয়ান স্ট্রাইকার তখনও ছিলেন রেডবুল সালজবুর্গের খেলোয়াড়। চ্যাম্পিয়নস লিগের গ্রুপ পর্বে ৫ ম্যাচে ৮ গোলও করেছিলেন, কিন্তু তার দল থেমে গিয়েছিল গ্রুপপর্বেই। জানুয়ারিতে দল বদলে এর পর তিনি যোগ দিলেন ডর্টমুন্ডে। অস্ট্রিয়ায় এই মৌসুমে ১৬ ম্যাচে ২০ গোল করে এসেছিলেন। বুন্দেসলিগা, পোকাল- দুই প্রতিযোগিতাতেই অভিষেকে গোল করেছিলেন, এবার ডর্টমুন্ডের হয়ে চ্যাম্পিয়নস লিগেও একই কাজ করলেন। গোল করা যেন তার কাছে মুড়ি মুড়কির মতো ব্যাপার। পিএসজির বিপক্ষে জোড়া গোলের আগে ডর্টমুন্ডের হয়ে ৬ ম্যাচে করেছেন ৯ গোল। আর এবার চ্যাম্পিয়নস লিগে এখন পর্যন্ত রবার্ট লেভানডফস্কির সঙ্গে সর্বোচ্চ গোলদাতাও তিনি (৭ ম্যাচ, ১০ গোল)!
পিএসজির জন্যই বোধ হয় এমন নাটকীয় গল্প জমা থাকে প্রতিবার। যে গল্পের শেষে গিয়ে হাহাকার জোটে পিএসজির। অবশ্য আগের পিএসজি চাইলে এখান থেকেও ঘুরে দাঁড়াতে পারে। ঘরের মাঠে ফিরতি লেগে তাদের সঙ্গী হচ্ছে একটি অ্যাওয়ে গোল। সেই গোলটিও এসেছে নেইমারের পা থেকে।
সিগন্যাল ইদুনা পার্কে প্রথমার্ধ গোলশূন্য থাকলেও দ্বিতীয়ার্ধের শুরু থেকে আক্রমণের ধার বাড়ায় দুই দল। তবে ম্যাচে প্রথম সাফল্য পায় ডর্টমুন্ড। আশরাফ হাকিমির দারুণ ক্রস ধরে বক্সের ভেতর হালান্ডের দিকে ছোট পাস বাড়ান জেডন সানচো, আর দারুণ পারদর্শিতার সঙ্গে সেই পাস ধরে একদম ক্লোজ রেঞ্জ থেকে প্রথম গোলটি করেন হালান্ড।
তবে এই গোলের মিনিট ছয়েক পরেই বক্সের ডান পাশ থেকে কিলিয়ান এমবাপ্পের ক্রসে গোলের সামনে থেকে পা ছুঁইয়ে পিএসজিকে সমতায় ফেরান নেইমার। এর পর ম্যাচের রঙ বদলেছে আরেক দফা। উদযাপনের রেশ কাটার আগেই পিএসজিকে আবার ভড়কে দেন সেই হালান্ডই। ৭৭ মিনিটে ডর্টমুন্ডের হয়ে চ্যাম্পিয়নস লিগে প্রথম ম্যাচ খেলতে নামা জিওভান্নি রেইনার পাস ধরে বক্সের বাইরে থেকেই বাম পায়ে শট নিলেন। সেটা বুলেটের মতো গিয়ে জড়াল নাভাসের নেটে।
প্রথমার্ধে বল দখলের লড়াইয়ে ডর্টমুন্ডের চেয়ে কিছুটা এগিয়ে থাকলেও গোলের সুযোগ তৈরির দিক দিয়ে স্বাগতিকদের চেয়ে অনেক পিছিয়ে ছিল পিএসজি। নেইমার-এমবাপ্পে-ডি মারিয়াদের সমন্বয়টা সেভাবে জমে উঠছিল না। প্রথমার্ধে ডর্টমুন্ডের সাতটি শটের বিপরীতে গোলে মোটে দুটি শট ছিল পিএসজির।
প্রথমার্ধের মাঝপথে এমরে চানের থ্রু বল পেয়ে জেডন সানচো সেটিকে লক্ষ্য রাখতে পারলেও বাঁ দিকে ঝাপিয়ে পড়ে দুর্দান্ত সেভ করেন পিএসজির গোলরক্ষক কেইলর নাভাস। এই শটের আগে-পরে সানচো এবং হালান্ডের হাত ধরে গোলের বেশকিছু সুযোগ পেয়েছিল ডর্টমুন্ড। কিন্তু সুযোগ কাজে লাগাতে না পারায় গোলশুন্য অবস্থাতেই বিরতিতে গিয়েছিল তারা। তবে দ্বিতীয়ার্ধে জ্বলে ওঠার ফলে গোলমুখে সেই ব্যর্থতা খুব একটা পোড়ায়নি তাদের।
ম্যাচের প্রথম বড় সুযোগটি অবশ্য পিএসজি পেয়েছিল নেইমারের মাধ্যমে। ম্যাচের দশম মিনিটে বক্সের বাইরে ফাউলের শিকার হন তিনি। সেখান থেকে পাওয়া ফ্রি-কিকে নেইমারের ডান পায়ের জোরাল শট অল্পের জন্য বাইরে দিয়ে যায়। এমবাপ্পে, নেইমার এবং ডি মারিয়াকে দিয়ে গড়া পিএসজির আক্রমণভাগ প্রথমার্ধে আর কোনও সুযোগ তৈরি করতে পারেনি।
দ্বিতীয়ার্ধের শুরুর মিনিট বিশেক মাঝমাঠেই আটকে ছিল খেলা। তবে ৬৬ মিনিটে আক্রমনভাগের সমন্বিত প্রচেষ্টায় দারুণ একটি আক্রমণ করে পিএসজি। মধ্যমাঠ থেকে ডি মারিয়ার থ্রু পাস খুঁজে নেয় এমবাপ্পেকে, সেখান থেকে নেইমারের সঙ্গে ওয়ান-টু খেলে গোলমুখে শট নেন তিনি। কিন্তু ডর্টমুন্ড গোলরক্ষক বুরকি দারুণ দক্ষতায় ঠেকিয়ে দেন।
এর মিনিট দুয়েক পরেই শুরু হয় ‘হালান্ড শো’। আর এই তরুণের দুই গোলের বরাতে ঘরের মাঠের জয় নিয়ে এগিয়ে থেকেই দ্বিতীয় লেগে মাঠে নামবে ডর্টমুন্ড। নিজের প্রথম মৌসুমে ১০ গোল করে ইতিহাসেও ঢুকে গেছেন তিনি। হালান্ড ছাড়া চ্যাম্পিয়নস লিগ/ইউরোপিয়ান লিগে প্রথম মৌসুমে ১০ গোল করা খেলোয়াড় আছেন আর মাত্র চারজন।
থমাস তুখলের সাবেক ক্লাবে ফেরাটাও তাই মনে রাখার মতো হলো না। পিছিয়ে পড়ার পরও মাউরো ইকার্দিকে তিনি মাঠে কেন নামানেল না, সেটাও এক বিস্ময়। ডর্টমুন্ডের কাছে হেরে নিজের জায়গাটাও আসলে নড়বড়ে হয়ে গেল তুখলের। আগামী ১২ মার্চ শেষ ষোলর দ্বিতীয় লেগে ডর্টমুন্ডকে আতিথ্য দেবে পিএসজি। কোয়ার্টার ফাইনালে উঠতে হলে ডর্টমুন্ডকে হারাতেই হবে প্যারিসিয়ানদের। আর তুখলের জন্য সম্ভবত সেটা চাকরি বাঁচানোর লড়াই।
একাদশ
বরুশিয়া ডর্টমুন্ড
বুরকি, পিসেক, জাগাদু, হুমেলস, হাকিমি, চান, ভিটসেল, গেরেরো, সানচো, হালান্ড, হ্যাজার্ড
পিএসজি
নাভাস, মিউনিয়ের, কিমপেমবে, মারকুইনোস, সিলভা, কুরযাওা, গায়া, ভেরাত্তি, নেইমার, ডি মারিয়া, এমবাপে