অ্যাটলেটিকোর কাছে হেরে অ্যানফিল্ডে তাকিয়ে থাকল লিভারপুল
ফুলটাইম
অ্যাটলেটিকো মাদ্রিদ ১-০ লিভারপুল
গোলের ১২ গজ দূরে আলভারো মোরাতা যখন বল পেলেন, তার সামনে ছিলেন কেবল অ্যালিসন। অ্যাটলেটিকো মাদ্রিদের জয়ের ব্যবধানটা বাড়াতে পারতেন তখন মোরাতা। কিন্তু শট করার বদলে পা পিছলে খেই হারালেন, পড়েও গেলেন। ডিয়েগো সিমিওনে খুব করে চাইবেন এই মুহুর্তটা একেবারে ভুলে যেতে। ওই মুহুর্তটা অ্যাটলেটিকোকে ভোগাবে কী না সেটা বোঝা যাবে আসলে অ্যানফিল্ডের পরের লেগে। তার আগ পর্যন্ত একটা প্রেরণা সঙ্গী হয়েছে অ্যাটলেটিকোর। ওয়ান্ডা মেট্রোপলিটানোতে ইউরোপিয়ান চ্যাম্পিয়ন লিভারপুলকে হারিয়ে দিয়েছে তারা, অ্যাওয়ে গোলও গলায় কাটা হয়ে বিঁধে নেই। তবে, সিমিওনেও নিশ্চয়ই জানেন এক গোলের লিড নিয়ে অ্যানফিল্ডে যাওয়ায় এমন বড় কোনো সুবিধা নয়!
সিমিওনে ম্যাচের শুরু থেকে একেবারে শেষ পর্যন্তও ডাগ আউটে বারবার শান্ত থাকার তাড়া দিয়েছেন। শুরুতেই গোলের পরও লাগাম টেনে ধরতে চেয়েছেন দলের, শেষদিকে ওয়ান্ডার মাতাল দর্শকদেরও শান্ত রাখতে চেয়েছেন। সবকিছুর পর নিজের দুঃসময়ে তার দল আসলে আরেকটি ক্ল্যাসিক ‘চলোসিমো’র প্রদর্শনী করে লিভারপুলকে মৌসুমের তৃতীয় হার উপহার দিয়েছে। এই ম্যাচে পরিস্কার ফেভারিট ছিল লিভারপুল। ছোট হওয়ার ওই 'অসহায়ত্বটাই' হয়ত সিমিওনের অ্যাটলেটিকোকে বহুদিন পর আসলে নিজেদের পরিচয়টা পেতে সাহায্য করেছে।
গোলের সামনে বুভুক্ষের মতো ঘুরেও হতাশ হয়ে ফেরাটা এই মৌসুমে নিয়ম বানিয়ে ফেলেছিল অ্যাটলেটিকো। ইউরোপিয়ান চ্যাম্পিয়নরা যখন ঘরে, তখন গোল পেতে আর সময়ও লাগল না তাদের। অবশ্য তাতে বড় সৌভাগ্যের ছোঁয়াও পেল অ্যাটলেটিকো। কর্নার থেকে ফাবিনহোর পা ছুঁয়ে গোলের একেবারে সামনে বল পেয়ে গিয়েছিলেন সাউল নিগেজ। টোকা দিয়ে গোল করে ম্যাচের চতুর্থ মিনিটেই ওয়ান্ডার ভরা গ্যালারিতে শুরুতেই ছন্দ তুলে দিয়েছিলেন তিনি।
অবশ্য ওয়ান্ডা তেঁতে ছিল আগে থেকেই। লিভারপুলের প্রবল চাপও তাই অ্যাটলেটিকো সামাল দিয়েছে বুক চিতিয়ে। এর পর বাকি সময় দুইদলের খেলা হয়েছে অনুমিতভাবে। অ্যাটলেটিকো নিজেদের রক্ষণ সামলাতে ব্যস্ত ছিল। আর লিভারপুল বল পজেশনে ঢের এগিয়ে থেকে আক্রমণ করে ম্যাচে ফেরার চেষ্টা চালাচ্ছিল। এর পরও কাউন্টার অ্যাটাকে অ্যাটলেটিকোই বেশি ভয়ঙ্কর হলো প্রথমার্ধে। ডিফেন্ডার অ্যান্ড্রু রবার্টসন আর অ্যালিসন দুইবার দুই দফায় দলকে রক্ষা করলেন বিপদের হাত থেকে। ফার্নান্দ লোদির ক্রস দূরের পোস্টে ব্লক করেছিলেন রবার্টসন। আর অ্যালিসন আলভারো মোরাতাকে গোলবঞ্চিত করেছেন দারুণ সেভে। অ্যালিসনের ওই সেভের পরের মুহুর্তেই অন্যপ্রান্তে ইয়ান অবলাক অবশ্য গড়বড় পাকিয়ে ফেলেছিলেন ভুল পাস দিয়ে। তবে রেফারির অফসাইড ফ্ল্যাগে হাঁপ ছেড়ে বেঁচেছেন তিনি।
অ্যাটলেটিকোর ৪-৪-২ ফর্মেশনে মিডফিল্ড লাইনও ছিল ডিফেন্সের মতোই ন্যারো। কিয়েরান ট্রিপিয়ের ইনজুরির কারণে ছিলেন না, ছিলেন হেক্টর হেরেরা, হোসে মারিয়া হিমেনেজও। তবে রক্ষণে সাভিচ-ফিলিপেরাও ভুল করলেন না। আর অ্যাটলেটিকোড় ছাড় না দেওয়া মিডফিল্ড লাইনে লিভারপুলের হেন্ডারসন-ওয়াইনাল্ডাম-ফাবিনহোরাও ভুগলেন বারবার। রবার্টসন-আর্নল্ডের দুই প্রান্ত দিয়ে করা ক্রসগুলোও কেমন যেন এলোমেলো। লিভারপুলকে আসলে সুযোগ বের করতে কষ্টই করতে হলো। পুরো ম্যাচে সালাহ-মানে-ফিরমিনোর বিখ্যাত সমন্বয়ের দেখা মিলল একবার। অবশ্য তাতেও গোল হয়ে যেতে পারত, সালাহর গোলমুখী শট তখন ঠেকিয়ে দেন ডিফেন্ডার ফিলিপে।
বিরতির পর আর ছক বদলাতে সময় নেননি ইউর্গেন ক্লপ। সাদিও মানেকে উঠিয়ে ডিভক অরিগিকে নামিয়ে দেন তিনি। অরিগি রূপকথার মতো অবশ্য এবার আর বদলে দিতে পারেননি ম্যাচের ভাগ্য। তবে মোহামেদ সালাহ নিশ্চয়ই আরেকটু ভালো করতে পারতেন ৫৩ মিনিটে। ফাঁকা থেকে হেড করেছিলেন বক্সের ভেতর থেকে, সেটা গেছে অনেক বাইরে দিয়ে। সম্ভবত লিভারপুলের সেরা সুযোগটাই তখন পেয়েছিলেন সালাহ।
৭২ মিনিটের পর সালাহকেও উঠিয়ে নিয়েছিলেন ক্লপ। পরের মিনিটে অরিগির ক্রস থেকে জর্ডান হেন্ডেরসনের ভলি অল্পের জন্য চলে যায় বাইরে দিয়ে। দ্বিতীয়ার্ধের বেশিরভাগ সময় অ্যাটলেটিকোকে প্রবল চাপে রাখা লিভারপুল বিস্ময়করভাবে এর পর একরকম হারিয়ে গেল। লিভারপুল তাই ম্যাচ শেষ করেছে গোলে কোনো শট না করেই। শেষদিকে ঘরের মাঠের সমর্থকদের সঙ্গী করে অ্যাটলেটিকোর জন্যও কাজটা আরেকটু সহজ হয়ে গিয়েছিল।
সিমিওনে অবশ্য তাও আরেকটি গোলের চেষ্টা চালিয়ে গিয়েছিলেন। তবে তাদেরও দ্বিতীয়ার্ধে সেরা সুযোগ ওই একটাই। ৬৮ মিনিটে মোরাতা সে সুযোগটি পেয়েছিলেন। ডিয়েগো কস্তাকেও নামিয়ে একটা চেষ্টা করেছিলেন সিমিওনে। সেটাও আর কাজে আসেনি।
তবে ওয়ান্ডায় লিভারপুলের ফেরাটা যাতে সুখকর না হয় সেটা অন্তত নিশ্চিত করেছেন সিমিওনে। এবার ডাগ আউটে উন্মাতাল হয়েছেন কমই। গতবারও চ্যাম্পিয়নস লিগের একই পর্যায়ে ঘরের মাঠে প্রথম লেগে ২-০ গোলে জিতেছিল তার দল। এর পর তুরিনে গিয়ে ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদোর এক হ্যাটট্রিকে কুপোকাত হয়ে ফিরতে হয়েছিল অ্যাটলেটিকোকে। ম্যাচ শেষের বাঁশির বাজার পর সিমিওনের শান্ত রূপ বলে দিয়েছে সে স্মৃতি এখনও তরতাজা। আর এবার তো গোলও একটি কম, আর যেতে হবে অ্যানফিল্ডে। গল্প তো পুরোটাই বাকি!
অ্যাটলেটিকো মাদ্রিদ একাদশ
অবলাক, ভ্রাসালকো, সাভিচ, ফেলিপে, লোদি, কোকে, থমাস, সল, লেমার, মোরাতা, কোরেয়া
লিভারপুল একাদশ
অ্যালিসন, আর্নল্ড, গোমেজ, ভ্যান ডাইক, রবার্টসন, হেন্ডেরসন, ফাবিনহো, ওয়াইনাল্ডালাম, সালাহ, ফিরমিনো, মানে