কিক অফের আগে : মেসি যখন ম্যারাডোনার শহরে
কবে, কখন
নাপোলি-বার্সেলোনা
চ্যাম্পিয়নস লিগ, দ্বিতীয় রাউন্ড, প্রথম লেগ
২৬ ফেব্রুয়ারি, রাত ২.০০
সান পাওলোর গ্যালারিতে এখনও প্রতি ম্যাচে আপনার চোখে পড়বে ডিয়েগো ম্যারাডোনার টিফো। ম্যারাডোনা নাপোলি ছেড়েছেন ২০ বছর আগে। কিন্তু ওই ক্লাবে এখনও ঈশ্বর তিনি। শুধু ক্লাব নয়। নাপোলি শহরটাই এখনও মনেপ্রাণে ভালোবাসে তাকে। এখনও নাপোলির রাস্তা-ঘাটে নতুন করে আঁকা হয় ম্যারাডোনার ম্যুরাল।
নাপোলিতে নাম-ডাক ওয়ালা ক্লাব বলতে একটাই। নাপোলিতানোদের কাছে ফুটবল যদি ধর্ম হয় তাহলে ম্যারাডোনা হবেন তার উপাসনালয়। নাপোলিকে একটা পরিচয় এনে দিয়েছিলেন ম্যারাডোনা। স্কুডেট্টো, ইউয়েফা কাপ- এসব শিরোপা এসেছে তার হাত ধরে। সে শহরে প্রথমবারের মতো খেলতে যাচ্ছেন লিওনেল মেসি। নাপোলিতে তাকে নিয়েও আগ্রহ আছে। সেটাও ম্যারাডোনার স্বদেশী বলে। নাপোলির অফিসিয়াল ফেসবুক পেজ থেকে ম্যাচের দুইদিন আগে ম্যারাডোনা আর মেসির ইউরোপিয়ান প্রতিযোগিতার একটি ভিডিও পোস্ট করা হয়েছে। প্রতিপক্ষকে নিয়ে এমন ভিডিও নইলে কে বানায়!
ম্যাচের আগে নাপোলি অধিনায়ক লরেঞ্জো ইনসিনিয়ের কাছে তাই অবধারিত সে প্রশ্ন। মেসি কি ম্যারাডোনার চেয়েও ভালো? জবাবে ইনসিনিয়ে যা বলেছেন, এরপর আপনি চাইলেও আর কিছু বলতে পারবেন না, “লিও বিশ্বসেরা। তবে আমরা ম্যারাডোনার সঙ্গে মেসির তুলনা করি না। ম্যারাডোনা আমাদের কাছে পবিত্র। মেসি এখনকার সেরা।”
৪ ম্যাচের গোলখরা কাটিয়ে লা লিগায় এক ম্যাচেই ৪ গোল দিয়ে নাপোলির বিপক্ষে খেলতে যাচ্ছেন মেসি। ছন্দে থাকুন আর ছন্দহীন থাকুন- যে কোনো মেসিই প্রতিপক্ষের জন্য দুঃস্বপের নাম। যদিও নাপোলি কোচ নিরো গাত্তুসো আলাদা করে মেসিকে আটকানোর কোনো ছক কষছেন না। পুরো দলের জন্যই তার পরিকল্পনা। গাত্তুসো বলছেন বার্সার জন্য ট্রাম্প কার্ড প্রস্তুত আছে তার কাছে। সেটাই কার্যকর করতে চান ঘরের মাঠে।
গাত্তুসো নাপোলির দায়িত্ব নিয়েছিলেন ডিসেম্বরে, কার্লো আনচেলোত্তি বরখাস্ত হওয়ার পর। শুরুটা একেবারেই সুবিধার ছিল না নাপোলির নতুন কোচের। প্রথম ৬ ম্যাচের চারটিতেই হেরেছিলেন। তবে গত দুই মাসে তার নাপোলিও ছন্দ খুঁজে পাচ্ছে ধীরে ধীরে। শেষ ৭ ম্যাচের ৬টিতেই জিতেছে তারা। যদিও বার্সার বিপক্ষে ম্যাচে দলের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ডিফেন্ডার কালিদু কৌলিবালিকে দলে পাচ্ছেন না গাত্তুসো। ইনজুরিতে ছিটকে গেছেন তিনি।
ইতালিতে আবার এখন করোনা আতঙ্ক। বার্সার নাপোলি ভ্রমণের ঠিক আগেরদিন সিরি আ-র ৪টি ম্যাচ স্থগিত হয়েছে সেখানে। বার্সা খেলোয়াড়রাও ইতালিতে ঢুকেছেন করোনা টেস্টের পর। এবার নাপোলির মাঠে পরীক্ষা নেওয়ার পালা।
কিকে সেতিয়েন বার্সার কোচ হয়ে আসার পর ৯ ম্যাচের ৭টিতে জিতেছেন। প্রথমবারের মতো চ্যাম্পিয়নস লিগের অভিজ্ঞতা হতে যাচ্ছে তার। তবে এক দিক দিয়ে তার ওপর চাপ কিছুটা কমিয়েই দিয়েছেন মেসি। গত সপ্তাহে এক সাক্ষাৎকারে খোলাখুলি বলে দিয়েছেন বার্সার এই দল চ্যাম্পিয়নস লিগের জন্য ফেভারিট নয়।
গত কয়েক মৌসুমে চ্যাম্পিয়নস লিগে ব্যর্থ যাত্রার পর এবারও তাই ভাগ্য ফেরার সম্ভাবনা দেখছেন না খোদ বার্সা সমর্থকেরাই। তবে ভরসা ওই একজনই, মেসি। অবশ্য গত দুই মৌসুমে অন্তত একটি ব্যাপার বার্সা সমর্থকদের জেনে যাওয়ার কথা, একজন মেসি ঈশ্বর হোন বা নাই হোন- একার পক্ষে এই শিরোপা জেতা সম্ভব নয় বার্সার। বার্সার এবারের নক আউট পর্বের যাত্রা তাই শুরু হচ্ছে একরকম খালি হাতে।
দলের খবর
জুনিয়র ফিরপো প্রথমবারের মতো নামবেন বার্সার একাদশে। জর্দি আলবা নেই ইনজুরির কারণে। একই কারণে শেষ মুহুর্তে বাদ পড়েছেন সার্জি রবার্তোও। নতুন স্ট্রাইকার মার্টিন ব্রাথওয়েট চ্যাম্পিয়নস লিগে খেলতে পারবেন না। তাই লিওনেল মেসি ও আন্টোয়ান গ্রিযমানদের সঙ্গে সেতিয়েনের ভরসা শুধু আনসু ফাতি। তবে একাদশে তার থাকাটা নিশ্চিত নয়। মিডফিল্ডে আর্তুরো ভিদাল থাকতে পারেন। ফাতি না থাকলে সেক্ষেত্রে বক্স টু বক্স রোলে কার্যকরী হতে পারেন ভিদাল। ফ্রাঙ্কি ডি ইয়ংকে আবারও সেতিয়েন একাদশে ফেরাবেন কি না সেটিও একটি প্রশ্ন।
বার্সেলোনাকে আলাদা করে ভাবতে হবে লরেঞ্জো ইনসিনিয়ে ও ড্রিস মার্টেনসকে নিয়ে। পরের জন ক্লাবের সর্বোচ্চ গোলদাতাদের রেকর্ডে ম্যারাডোনাকে টপকে গেছেন। সামনে আছেন কেবল ক্লাবের সাবেক অধিনায়ক মারেক হামসিক।
ফার্নান্দো ইয়োরেন্তে, আর্কাদিউজ মিলিক- এই দুইজনের ফিটনেস নিয়ে সংশয় আছেন। শুরুতে না থাকলে এদের যে কেউ বদলি হিসেবে নেমে বার্সার রক্ষণের জন্য দুশ্চিন্তার কারণ হতে পারেন।
বার্সেলোনার পুরনো শত্রুর সঙ্গে দেখা হয়ে যাচ্ছে আরেকবার। কস্তাস মানোলাস গোল করে দুই বছর আগে বার্সেলোনাকে বিদায় করে দিয়েছিলেন কোয়ার্টার ফাইনাল থেকে। সেই মানোলাস রোমা ছেড়ে এবার যোগ দিয়েছিলেন নাপোলিতে। বার্সার বিপক্ষে তেঁতে থাকার কথা তার।
সম্ভাব্য একাদশ
নাপোলি
অস্পিনা, লোরেঞ্জো, মানোলাস, মাক্সিমোভিচ, রুই, রুইজ, ডেমে, এলমাস, পলিতানো, মার্টেনস, ইনসিনিয়ে
বার্সেলোনা
টের স্টেগান, সেমেদো, পিকে, লেংলে, ফিরপো, ডি ইয়িং, বুস্কেটস, আর্থার, মেসি, গ্রিযমান
হেড টু হেড
ইতিহাসে প্রথমবারের মতো কোনো অফিসিয়াল ম্যাচে মুখোমুখি হচ্ছে দুইদল। ব্যাপারটা একটু অবাক করাই!
প্রেডিকশন
নাপোলি ১-১ বার্সেলোনা