ফাঁকা মাঠে ইন্টারকে খালি হাতে ফেরত পাঠালো জুভেন্টাস
ফুলটাইম
জুভেন্টাস ২-০ ইন্টার মিলান
পাউলো দিবালা মনে রাখার মতো এক গোল করেছেন। এমনিতে ডার্বি ডি ইতালিয়াতে গোল সারাজীবন মনে রাখার মতো কিছুই। ৬৭ মিনিটে তখন জুভেন্টাস ইন্টার মিলানের বিপক্ষে ২-০ তে এগিয়ে গেছে। দিবালা গোল উদযাপন করেছেন ডাগ আউটে, সব সতীর্থদের সঙ্গে নিয়ে। শুনশান নীরব মাঠে জুভেন্টাস খেলোয়াড়দের প্রত্যেকটা চিৎকার তখন টিভিতে স্পষ্ট শোনা গেছে স্পষ্ট। আপনি ইতালিয়ান বা স্প্যানিশ ভাষা জেনে থাকলে দিবালা-রোনালদোদের গোলের পর কী নিয়ে কথোপকথন হয় সেটা জেনে যেতে পারতেন।
এই উদযাপন সম্ভবত সিরি আ-র শিরোপা পথে বড় ধাপ এগিয়ে যাওয়ার। ফাঁকা মাঠে গোল উদযাপন করার আর এর চেয়ে ভালো পদ্ধতিও হয়ত হয় না। ইন্টার মিলানকে হারিয়ে সিরি আর পয়েন্ট টেবিলের শীর্ষে উঠেছে জুভেন্টাস। দুইয়ে থাকা লাৎসিওর (৬২) চেয়ে এক পয়েন্টে এগিয়ে বিয়াঙ্কোনেরিরা (৬৩)। আর এক ম্যাচ কম খেলে ইন্টার মিলান জুভেন্টাসের চেয়ে পিছিয়ে গেছে ১১ পয়েন্টে। শিরোপা জিততে হলে তাই লিগের শেষ অর্ধে নাটকীয় কিছু ঘটতে হবে ইন্টারের জন্য।
আন্তোনিও কন্তের দল শিরোপার সমীকরণ আপাতত তাই ছিটকেই গেছে। প্রথমার্ধে অ্যারন রামসের গোলে এগিয়ে গিয়েছিল জুভেন্টাস। আর দিবালা বদলি হিসেবে মাঠে নামার ৮ মিনিটের মাথায় ব্যবধান দ্বিগুণ করেছেন। জয়ের সঙ্গে বড় এক তৃপ্তিও যোগ হয়েছে মাউরিসিও সারির দলের। এই মৌসুমে এখন পর্যন্ত সারির জুভেন্টাস নিজ সমর্থকদের মন ভরাতে পারেনি। অধারাবাহিক ও এলোমেলো ফুটবলের পরও অবশ্য বেশিরভাগ সময় ফলটা নিজেদের পক্ষেই পেয়েছে জুভেন্টাস। তবে ইন্টারের বিপক্ষে জুভেন্টাস খেলল দারুণ ফুটবল। তাদের সামনে নেরাজ্জুরিদের বরং মনে হলো সাদামাটা দল।
করোনা ভাইরাস সংক্রমিত হওয়ার ভয়ে দেড় কোটি মানুষকে কোরেন্টাইনে রেখেছে ইতালি। কেবল ম্যাচের দিনই ১৩৩ জন প্রাণ হারিয়েছেন করোনাতে। ডার্বি ডি ইতালিয়ার মতো ম্যাচে তাই দর্শক নেই। ফাঁকা গ্যালারিতে হচ্ছে সিরি আ। এই ম্যাচ অবশ্য হওয়ার কথা ছিল গত সপ্তাহে। এর পর করোনা আতঙ্কে পিছিয়ে মে মাসের ১৩ তারিখে নতুন এই ম্যাচের নতুন সূচী দেওয়া হয়েছিল। হিসাবে সিরি আ-র শেষ হত সেটি। শিরোপার লড়াইয়ে থাকা দুই দলকে শেষ ম্যাচ পর্য ন্তআর ঝুলিয়ে রাখতে চায়নি সিরি আ কর্তৃপক্ষ। তাই ফিক্সচারে পরিবর্তন এনে পরের সপ্তাহেই হয়েছে জুভেন্টাস-ইন্টার ম্যাচ।
অবশ্য এদিনও ম্যাচের আগে একবার শঙ্কা জেগেছিল খেলা আরেক দফায় পিছিয়ে যাওয়ার। ম্যাচ শেষে কন্তে মনে মনে ভাবতে পারেন, ম্যাচটা বোধ হয় পিছিয়ে গেলেই ভালো হত তার জন্য! তুরিনে প্রতিপক্ষ সমর্থক আপনাকে যন্ত্রণা দেবে না, এর চেয়ে সৌভাগ্য আর কী হতে পারে? অ্যাওয়ে ম্যাচেও তাই ইন্টারের পক্ষে ছিল 'বিরাট' সুবিধা। কিন্তু ফাঁকা মাঠেও সে সুযোগ কাজে লাগাতে পারেনি জুভেন্টাস।
দুই দলের খেলোয়াড়, কর্মকর্তা সংবাদ মাধ্যমের লোক মিলিয়ে ৪০০-৫০০ মানুষ ছিলেন অ্যালিয়াঞ্জ অ্যারিনায়। দুই দলই তাই শুরু থেকে পায়ে বল রেখে ছন্দ ধরে রেখে খেলার চেষ্টা করছিল। তাড়াহুড়ো নেই, ধীর-স্থির ফুটবলে সাজানো আক্রমণের চেষ্টা। প্রথমার্ধটাও এগুচ্ছিল গোলশূন্যভাবে। লাউতারো মার্টিনেজের বক্সের বাইরে থেকে করা একটি শট ছাড়া বলার মতো তেমন কোনো আক্রমণ ছিল না তখনও।
৪০ মিনিটে ইন্টারকে চমকে দিয়ে সেখান থেকে এগিয়ে গেছে জুভেন্টাস। অ্যারন রামসের একাদশে থাকা ছিল একরকম চমক। তবে ব্লেইস মাতুইদির বাইলাইনের কাছ থেকে করা কাটব্যাকের শেষ প্রান্তে রামসের থাকাটা চমক ছিল না। মাতুইদির ক্রস ক্লিয়ার হয়েছিল বটে, কিন্তু সিক্স ইয়ার্ড বক্সের কোণায় ছিলেন রামসে। ডান পায়ের জোরালো শটে সেখান থেকেই গোল করেন তিনি। বক্স টু বক্স ভূমিকায় সেকেন্ড বলে নিজের ধারটা প্রথমবারের মতো সিরি আতে দেখালেন তিনি। তাতে জুভেন্টাস এগিয়ে গেল তখন।
সারি এক গোলের লিড নিয়ে সন্তুষ্ট ছিলেন না। গঞ্জালো হিগুয়াইয়ান আর ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদোকে নিয়ে আক্রমণ সাজিয়েছিলেন তিনি। কিন্তু ফলপ্রসূ হচ্ছিল না সে জুটি। ৫৯ মিনিটে দিবালা মাঠে নামলে ধার বাড়ে জুভেন্টাসের। আর তার গোলটা তো দারুণ এক দলগত প্রচেষ্টার ফল। নিজের অর্ধ থেকে আদ্রিয়েন রাবিও লং বল পাঠিয়েছিলেন মিডফিল্ডে। দিবালা ডান প্রান্ত থেকে দারুণ এক টাচে বল রিসিভ করে ভেতরে ঢুকেছেন, এর পর রোনালদোকে পাস দিয়ে ৩০ গজ পাড়ি দিয়ে অতিক্রম করে বক্সের ভেতর ঢুকে পড়েছেন। ফিরতি পাসে এক ঝটকায় ইন্টারের দুই ডিফেন্ডারকে ছিটকে দিয়ে, অদ্ভুতভাবে শরীর আর বলের নিয়ন্ত্রণ রেখে আউটসাইড অফ দ্য বুটের টোকায় গোল করেছেন। জুভেন্টাসের জয় তখনই মোটামুটি নিশ্চিত হয়ে গেছে।
কন্তের কোনো কারসাজিই কাজে দেয়নি সারির বিপক্ষে। লুকাকু-মার্টিনেজ জুটি একেবারেই সুবিধা করতে পারেনি। দিবালার মতো একই সময় মাঠে নেমেছিলেন ক্রিশ্চিয়ান এরিকসেন। তবে তার প্রথম ডার্বি ডি ইতালিয়ার অভিজ্ঞতা হয়েছে তিক্ত। অ্যালেক্সিস সানচেজও বদলি হিসেবে নেমে দলের ভাগ্য ফেরাতে ব্যর্থ। ইন্টার তাই ভোজায়িক সেজনি তেমন কোনো ঝামেলায়ও ফেলতে পারেনি।
জুভেন্টাসের রাতটা আরেকটু আনন্দময় হত রোনালদো গোল পেলে। টানা ১১ ম্যাচ পর থামলেন তিনি। যোগ করা সময়ে অবশ্য দুইবার প্রায় নতুন রেকর্ডটা গড়েই ফেলেছিলেন। দুইবারই অল্পের জন্য লক্ষ্য মিস করে গেছে তার গোলমুখী শট। নইলে সিরি আর টানা ১২ ম্যাচে গোল পাওয়া একমাত্র ফুটবলার হয়ে যেতে পারতেন তিনি।