• ফুটবল, অন্যান্য
  • " />

     

    রেফারির ভুল না ভূতুড়ে গোল?

    রেফারির ভুল না ভূতুড়ে গোল?    

    বর্তমান সময়ে ফুটবলে রেফারিদের ভুল সিদ্ধান্ত শুধরে দিতে এবং সিদ্ধান্তের বিষয়ে শতভাগ নিশ্চিত হওয়ার জন্য বেশ অনেকগুলো প্রযুক্তি যুক্ত হয়েছে। গোললাইন প্রযুক্তি, ভিডিও অ্যাসিস্ট্যান্ট রেফারির (ভিএআর) মতো বেশ কিছু প্রযুক্তির মাধ্যমে এখন মাঠে সিদ্ধান্ত গ্রহণ অনেক সহজ হয়ে গিয়েছে রেফারিদের জন্য। তবে এসব প্রযুক্তি আসার আগে দীর্ঘ সময় রেফারিদের অদ্ভুত সব ভুল সিদ্ধান্তে ফুটবল ভক্তদের হৃদয় পুড়েছে অনেকবার। ফুটবল ইতিহাসে গোল নিয়ে রেফারিদের ৫ টি ভূতুড়ে সিদ্ধান্তের কাহিনী তুলে ধরা হয়েছে এই লেখায়।

     

    ইংল্যান্ড - পশ্চিম জার্মানি (১৯৬৬)

    ১৯৬৬ বিশ্বকাপের ফাইনালে স্যার জিওফ হার্স্টের দ্বিতীয় গোলটিকে ঐতিহাসিকভাবে ইংলিশ ফুটবলের সবচেয়ে বিতর্কিত গোলের তকমা দেওয়া যায়। কারণ অতিরিক্ত সময়ে ২-২ গোলে সমতায় থাকা ম্যাচে ওই গোলেই এগিয়ে যায় ইংল্যান্ড। পরে আরও একটি গোল করে হার্স্ট নিজের হ্যাটট্রিকও পূর্ণ করেন। সঙ্গে বিশ্বকাপটাও প্রথমবারের মতো জিতে নেয় ফুটবলের জন্মভুমি ইংল্যান্ড।


    অতিরিক্ত সময়ে অ্যালান বলের ক্রস ধরে ডান পায়ে গোলমুখে শট নিয়েছিলেন হার্স্ট। তবে বলটি ক্রসবারের নিচের অংশে লেগে বাইরে বেরিয়ে আসে। কিন্তু সহকারি রেফারি তফিক বাহরামোভ রেফারি গটফ্রেড ডাইন্সটের উদ্দেশ্যে বল গোলের দাগ পেরিয়েছে বলে ইঙ্গিত দেন। রেফারিও সেইমতো গোল হয়েছে মর্মে বাঁশি বাজান।

    পরে অবশ্য ভিডিও ফুটেজ দেখেও সেই বল আদৌ দাগ পেরিয়েছিল কিনা সে বিষয়ে নিশ্চিত হতে পারেননি সংশ্লিষ্টরা।

     

    ইংল্যান্ড - জার্মানি (২০১০)

    আবারও ইংল্যান্ড-জার্মানি। আবারও বিশ্বকাপের নকআউট পর্ব। ম্যাচে জার্মানির বিপক্ষে ২-১ গোলে পিছিয়ে ছিল ইংল্যান্ড। প্রথমার্ধের একেবারে শেষদিকে ফ্রাঙ্ক ল্যাম্পার্ডের দূর থেকে নেওয়া জোরালো শট ক্রসবারের নিচের দিকে আঘাত করে গোলের দাগের বেশ খানিকটা ভেতরে চলে গিয়েছিল। তবে লাইন্সম্যান এবং রেফারি কেউই ঠিকভাবে সেই মুহূর্তটি খেয়াল করতে পারেননি। আর তাই নিশ্চিত গোল হওয়ার পরও পিছিয়ে থেকেই প্রথমার্ধ শেষ করেছিল ইংল্যান্ড। শেষ পর্যন্ত জার্মানির কাছে হেরে শেষ ষোল থেকেই বিদায় নিয়েছিল থ্রি লায়ন্সরা। এই ঘটনার পরপরই গোললাইন প্রযুক্তি নতুনভাবে আলোচনায় আসে।


    ওয়াটফোর্ড - রিডিং (২০০৮)

    ইংলিশ ফুটবলের দ্বিতীয় বিভাগে ওয়াটফোর্ড বনাম রিডিংয়ের মধ্যকার ম্যাচে আবারও লাইন্সম্যান-রেফারি কম্বিনেশনে আসে আরকটি অদ্ভুত সিদ্ধান্ত। ম্যাচে রিডিংয়ের কর্নার থেকে বল আসে ওয়াটফোর্ডের বক্সের ভেতর। দলটির ডিফেন্ডার জন ইউস্টেসের গায়ে লেগে পোস্টের অনেকটা বাইরে দিয়েই বল বেরিয়ে যাচ্ছিল। এতটাই বাইরে দিয়ে বেরিয়ে যাচ্ছিল বল যে রিডিংয়ের একজন খেলোয়াড়কে পা প্রসারিত করে সে বল বাইলাইন পেরুনো থেকে ঠেকাতে হয়েছিল। 


    বিতর্ক এরপরের ঘটনা নিয়ে। নবীন রেফারি স্টুয়ার্ট অ্যাটওয়েলকে ডেকে সহকারি রেফারি নাইজেল ব্যানিস্টার পরামর্শ সারলেন। ব্যানিস্টারের কাছে মনে হয়েছে ওয়াটফোর্ড ডিফেন্ডার ইউস্টেসের গায়ে লেগে বল গোলেপোস্টে প্রবেশ করেছিল। আসলে সেই মুহূর্তে ‘দৃষ্টিভ্রম’ হয়েছিল লাইন্সম্যানের, তবে রেফারি অ্যাটওয়েল সহকারির কথা শুনে গোল হয়েছে বলে সিদ্ধান্ত দেন। এরপর বিষয়টি নিয়ে মাঠে স্বাভাবিকভাবেই প্রচণ্ড হট্টগোল তৈরি হয়। মেজাজ হারিয়ে তাৎক্ষণিকভাবে ডাগআউট থেকে বহিষ্কার হয়েছিলেন আইডি বথরয়েড।

     

    হফেনহাইম - বায়ার লেভারকুজেন (২০১৩)

    বুন্দেসলিগায় হফেনহাইম আর বায়ার লেভারকুজেনের ম্যাচে স্টেফান কিয়েজলিংয়ের গোলটি তো আরও অদ্ভুত ছিল। কর্নার থেকে আসা বল গোলমুখে রেখে নিখুঁতভাবে হেড করছিলেন কিয়েজলিং। খালি চোখে দেখলে যে কারো কাছে সেটিকে নিশ্চিত গোলই মনে হবে। কিন্তু তা হয়নি, বলটি সাইড নেটে আঘাত করে। সাইড নেটের ফাঁক গলে বল প্রবেশ করল গোলে, তবে রেফারি সেটি খেয়াল করেননি। বল জালের ভেতরে দেখেই গোলের বাঁশি বাজিয়ে দেন তিনি। কিয়েজলিংও সতীর্থদের সঙ্গে গোল উদযাপন করেন।


    তবে এরপরই স্টেডিয়ামের ভিডিও স্ক্রিনে গোলের রিপ্লেতে দেখা যায় বলতি আসলে সাইড নেট দিয়ে জালে প্রবেশ করেছে। সেটি দেখেই কিয়েজলিং নিঃস্বার্থভাবে গোলটি বাতিল কর দেওয়ার জন্য রেফারিকে অনুরোধ করেন। তবে রেফারি নিজের সিদ্ধান্তে স্থির থাকেন। শেষ পর্যন্ত ২-১ গোলে ম্যাচটি জিতে নিয়েছিল লেভারকুজেন।

     

    ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড - টটেনহাম (২০০৪)

    ওল্ড ট্রাফোর্ডে ‘লিলিহোয়াইট’দের জয়ের গল্প এমনিতেই হাতে গোনা। তবে ২০০৪ সালে একবার জয়ের খুব কাছে এসেও রেফারি দুর্ভাগ্যে জয় বঞ্চিত হতে হয়েছিল তাদের। ম্যাচ যখন ড্রয়ের দিকে এগুচ্ছিল। তখন ম্যান ইউনাইটেড গোলরক্ষক রয় ক্যারলকে অনেকটা সামনে এগিয়ে আসতে দেখে প্রায় মধ্যমাঠ থেকে দারুণ এক শট নিয়েছিলেন টটেনহাম মিডফিল্ডার পেদ্রো মেন্ডেস। পিছনের দিকে দৌড়ে সেই শট প্রায় ঠেকিয়েও দিয়েছিলেন ক্যারল, কিন্তু শেষরক্ষা হয়নি, তার হাত গোলে বল গোলপোস্টের অনেকটা ভেতরে চলে গিয়েছিল।


    তবে রেফারি অনেক দূরে থাকায় বল জালে প্রবেশের মুহূর্তটি দেখতে পাননি, যতক্ষণে রেফারি ইউনাইটেড বক্সের সামনে এসেছেন ততক্ষণে বল জাল থেকে কুড়িয়ে নিয়ে এসেছিলেন ইউনাইটেড গোলরক্ষক ক্যারল। আর তারপর ক্যারলের ‘পোকার ফেস’ দেখে ধোঁকা খান রেফারি। নিশ্চিত গোল বঞ্চিত হয় টটেনহাম, স্পার্সদের জন্য ওল্ড ট্রাফোর্ডে রচিত হয় আরেকটি আক্ষেপের গল্প।