দুই বার্লিন মুখোমুখি আবার, এবার দৃশ্যপট ভিন্ন
পশ্চিম আর পূর্ব জার্মানি এক হয়েছে ১৯৯০ সালে। কিন্তু বার্লিনের দুই ক্লাবকে বুন্দেসলিগায় এক মাঠে নামতে অপেক্ষা করতে হয়েছে এরপর আরও প্রায় ৩০ বছর। গেল মৌসুমে ইউনিয়ন বার্লিন প্রথমবারের মতো বুন্দেসলিগায় প্রমোশন পাওয়ার পর থেকেই ওই ম্যাচ ঘিরে ছিল বাড়তি উন্মাদনা। পূর্ব জার্মানির হার্থা বার্লিন আর পশ্চিম জার্মানির ইউনিয়ন বার্লিনের প্রথম ম্যাচটা অবশ্য শেষ হয়েছিল অনভিপ্রেত ঘটনা দিয়ে। ইউনিয়ন নিজেদের মাঠে ১-০ গোলে জিতলেও মাঠের দর্শকরা প্রায় ভুন্ডুল করে দিতে বসেছিলেন ম্যাচটি। ফ্লেয়ার ছুড়ে ম্যাচটাকে 'যুদ্ধে' পরিণত করেছিলেন তারা।
আল্টেন ফরেস্তেরির ওই ম্যাচের পর ৬ মাস পেরিয়ে গেছে। পৃথিবীর সবকিছুর মতো বদলে গেছে ফুটবলের চেহারাও। ফিরতি লেগে বাংলাদেশ সময় শনিবার রাতে বার্লিনের অলিম্পিক স্টেডিয়ামে আরেকবার মুখোমুখি দুইদল। স্বাভাবিক অবস্থায় ৭৪ হাজার সমর্থকে ঠাসা থাকার কথা ছিল গ্যালারি। করোনাভাইয়ারাসের কারণে ডার্বি ম্যাচটা এখন হবে ফাঁকা মাঠে। কিন্তু হার্থা বার্লিনের জন্য এরপরও ম্যাচটা প্রতিশোধের। আর ইউনিয়নের কাছে হারের রাতটা তাদের কাছে "ইতিহাসের কালো অধ্যায়"।
"নভেম্বরের ম্যাচটার কথা মনে আছে আমাদের সবার। কালো দিন ছিল সেটি। এখন আমরা আবার সুযোগ পেয়েছি ওসব পেছনে ফেলার।" - হার্থার জেনারেল ম্যানেজার মিখাইল প্রিটজের কথায় প্রতিশোধ স্পৃহা।
ওই ম্যাচে ৮৭ মিনিটে পেনাল্টি থেকে করা গোলে হার্থাকে হারিয়েছিল ইউনিয়ন। তবে দল জিতলেও ম্যাচ শেষে মাঠে ঢুকে পড়েছিলেন ইউনিয়ন আল্ট্রাসরা। মুখোশ পড়া সমর্থকরা তেড়ে গিয়েছিলেন হার্থা খেলোয়াড়দের দিকেও। তবে ইউনিয়ন গোলরক্ষক গিকিভিশ কয়েকজন সতীর্থকে নিয়ে পরে আল্ট্রা সমর্থকদের সামাল দেওয়ার চেষ্টা করেছিলেন। অমন পরিস্থিতির পর হার্থা সমর্থকেরাও হয়ত ঘরের মাঠে ইউনিয়নের বিপক্ষে ম্যাচের দিন গুণছিলেন তখন থেকেই।
হার্থার কোচ ব্রুনো লাবাদিয়ার অবশ্য বর্তমান পরিস্থিতিতে ডার্বির ঝাঁঝ কতোখানি পাওয়া যাবে তা নিয়ে কিছুটা সংশয়ে, "এখনকার পরিস্থিতি পুরো ভিন্ন। তাই এটা আসলে অন্যরকম এক ডার্বি।"
পূর্ব বার্লিন থেকে প্রথমবারের মতো বুন্দেসলিগায় ওঠা ক্লাব ইউনিয়ন। দুই জার্মানি এক হওয়ার আগ পর্যন্ত পশ্চিম জার্মানির লিগে অংশ নিত ক্লাবটি। পশ্চিম জার্মানির সর্বোচ্চ স্তরের লিগেও ১৯৮৯ সালেও খেলেছিল ইউনিয়ন। তবে জার্মানি এক হওয়ার পর বদলে যেতে শুরু করে দেশটির ফুটবল মানচিত্রও। এতো বছর পরও বুন্দেসলিগায় অংশ নেওয়া ক্লাবগুলোর বেশিরভাগ পশ্চিমাঞ্চলের। অনুমিতভাবে লিগে দাপটও ওই অঞ্চলের ক্লাবগুলোরই বেশি। জার্মানির সর্বোচ্চ স্তরে জায়গা করে নিতে না পারার পেছএন মূলত সাবেক পূর্ব জার্মানির অর্থনৈতিক কাঠামোকেই দায়ী করা হয়। ইউনিয়ন বার্লিনের বুন্দেসলিগায় প্রমোশন পাওয়াটা তাই বড় ঘটনাই ছিল বার্লিনের পূর্বাঞ্চলের সমর্থকদের জন্য।
গেল সপ্তাহে বুন্দেসলিগা শুরুর পর হার্থা জয় পেয়েছে হফেনহেইমের বিপক্ষে। আর ইউনিয়ন হেরেছিল বায়ার্ন মিউনিখের কাছে। ইউনিয়নের লক্ষ্য মৌসুম শেষে লিগে টিকে থাকা। বার্লিনে গিয়ে প্রতিপক্ষ সমর্থকদের দুয়ো শুনতে হবে তাদের। তাতে অবশ্য কিছুটা লাভই হতে পারে তাদের। আবার প্রথম ম্যাচে কোয়ারেন্টিন নিয়ম ভঙ্গ করা দলের কোচ উরস ফিশার থাকতে পারেননি ইউনিয়নের ডাগআউটে। হার্থার বিপক্ষে আবার ফিরছেন তিনি।
"আমি জানি এবারের ডার্বির পরিস্থিতি ভিন্ন। তবে ম্যাচটা তো ডার্বি। এর সঙ্গে অনেক আবেগ আর ইতিহাস জড়িয়ে আছে। আমার মনে হয় না খেলোয়াড়দের উজ্জীবিত করতে আলাদা কিছু করতে হবে আমার।"- দর্শক না থাকলেও খেলোয়াড়রা তেঁতে থাকবেন বলেই মনে করেন ইউনিয়ন কোচ।
ডার্বি আগে আমার লক্ষ্য আসলে আলাদা কিছু নয়। আমরা মূল লক্ষ্যেই স্থির থাকতে চাই। সেটা হলো লিগে টিকে থাকা। হার্থার বিপক্ষে জয় পেলে সেই লক্ষ্যে অনেকদূর এগুবো আমরা।"
দর্শকশূন্য মাঠ হলেও আগে পয়েন্ট টেবিলে দুইদলের অবস্থান ম্যাচের মাহাত্ম্য বাড়িয়ে দিচ্ছে আরেকটু। ১২ তম অবস্থাতে আছে ইউনিয়ন বার্লিন। আর তাদের চেয়ে এক পয়েন্টে এগিয়ে হার্থা। বার্লিনের শ্রেষ্ঠত্বের লড়াই তাই আকর্ষণ হারাচ্ছে না এতো কিছুর পরও।