• অনূর্ধ্ব ১৯ বিশ্বকাপ ২০১৬
  • " />

     

    ২২ গজের সেলুলয়েড: এবং 'চেস্টরোল ড্যান্স'!

    ২২ গজের সেলুলয়েড: এবং 'চেস্টরোল ড্যান্স'!    

    ছবির পরে ছবি চলে নাকি তৈরী হয় সিনেমা। ক্রিকেট ম্যাচও তো তাই। টুকরো টুকরো অসংখ্য ছবি জন্ম নেয় যেখানে। ২২ গজ আর সবুজ ওই উদ্যানের ছবিগুলোকে যদি ধরা যেত সেলুলয়েডে! 


     

    এ শুধু বোল্ডের দিন!

    শুরুটা হয়েছিল জয়রাজ শেখকে দিয়ে। স্প্রিংগারের অফস্ট্যাম্পের বাইরের বলটা গ্লাইড করতে চেয়েছিলেন থার্ডম্যান, থার্ডম্যানের বদলে বল গেলো স্ট্যাম্পের দিকে। বাংলাদেশ ইনিংসে এরপর বোল্ড হয়েছেন আরও চারজন। বোল্ডের মিছিলটা শেষ হয়েছে কিমো পলকে দিয়ে। ওয়েস্ট ইন্ডিজ ইনিংসে পল ছাড়াও বোল্ড হয়েছেন আরও দুইজন। ম্যাচে উইকেট পড়েছে ১৭টি, এর মধ্যে বোল্ডই ৮টি! কখনও শুধু বেলস পড়লো, কখনও উপড়ে গেল স্ট্যাম্প, কখনও খেলো 'গোত্তা'! তবে ‘অক্ষত’ থাকলো লেগস্ট্যাম্প, ‘ঝড়’ গেছে কেবল অফ ও মিডল স্ট্যাম্পের ওপর দিয়েই!

     

    বিলম্ব বোলিং, দ্রুত উইকেট!

    টুর্নামেন্টে আগের চার ম্যাচে উইকেট ছিল ২টি। কিমো পল আজ পরপর দুই বলেই নিলেন দুই উইকেট! তাও আবার ৪৬তম ওভারে এসে প্রথম বল হাতে নিয়ে! ওয়েস্ট ইন্ডিজ অধিনায়ক শিমোর হিটমায়ের পলের আগে সাতজন বোলারকে ব্যবহার করেছিলেন, ‘পরিকল্পনা’র বাস্তবায়ন যেন তখনও বাকী ছিল। আনলেন পলকে, অষ্টম বোলার হিসেবে। এসেই ক্যাচ দিতে বাধ্য করলেন মিরাজকে, পরের বলেই বোল্ড সাইফুদ্দীন। পরের ওভারে আবার বোল্ড করলেন, এবার শিকার সাঈদ সরকার। ৪৬ আর ৪৮তম ওভার মিলিয়ে দিলেন ১১ রান, উইকেট তিনটি। অধিনায়ক শেষ ওভারেও আনলেন তাঁকেই, এবার অবশ্য দিলেন নয় রান। তাতে কী, ২০ রানে তিন উইকেট, বিশ্বকাপের সেমিফাইনালে, খারাপ কী!

    পল হয়তো এ ম্যাচের গল্প করতে গেলে বলবেন, কত দেরীতে বোলিংয়ে এসে কত দ্রুত উইকেট নিয়েছিলেন তিনি!

     

    মিরাজের তিনে তিন

    শেষ চার ম্যাচের তিনটিতে ব্যাট করেছেন, ফিফটি করেছেন তিনটিতেই। স্কটল্যান্ডের সঙ্গে দলের রানটা বাড়িয়ে নিয়েছিলেন, নেপালের সঙ্গে তো জাকির হোসেনের সঙ্গে তাঁর গুরুত্বপূর্ণ জুটিই জিতিয়েছিল বাংলাদেশকে। এই ম্যাচেও ৮৮ রানে ৪ উইকেট পড়ে যাওয়ার পর নেমেছিলেন ব্যাটিংয়ে, মেহেদী হাসান মিরাজ চেষ্টা করলেন দলকে সেখান থেকে তোলার। ৭৪ বলে করলেন ৬০, যখন দ্রুত রান তুলতে হবে, তখনই মারতে গিয়ে আউট হলেন। মিরাজের ফিফটিটা আজ অবশ্য যথেষ্ট হলো না বাংলাদেশের জন্য! 

     

    আক্কেল সেলামী

    গিডরন পোপের রান তখন ১৩ বলে ২৩। রানার বলে ডাউন দ্য গ্রাউন্ডে এসে মারতে গেলেন, বল উঠলো ওপরে। শর্ট ফাইন লেগে শাওন সময় পেলেন অনেক, বল হাতেও পড়লো। কিন্তু রাখতে পারলেন না! ‘লোপ্পা ক্যাচ’টা ফসকে গেল! পোপ শেষ পর্যন্ত করেছেন ৩৮ রান, শাওনের মিসে বাংলাদেশকে দন্ড গুনতে হলো ১৫ রান।

    ৪১ বলে ১৫ রান করে থিতু হওয়ার চেষ্টাই করছিলেন তখনও শামার স্প্রিংগার। সুযোগ দিয়েছিলেন সাইফুদ্দীনকে। তাঁর বলেই। নিতে পারেননি ক্যাচ। স্প্রিংগার যখন থামলেন, তখন তাঁর রান ৬২। আর ফাইনালে ওয়েস্ট ইন্ডিজ! ৪৭ রানের দন্ডই শুধু নয়, বাংলাদেশকে গুনতে হলো সেমিফাইনালটা! হয়তোবা বিশ্বকাপটাই! 

     

    'ক্যাচ মি ইফ ইউ ক্যান'

    মিরাজ ছুটলেন। ছুটলেন তো ছুটলেনই! দিগ্বিদিক দৌড় যাকে বলে! সতীর্থরা ছুটছেন পেছনে, তবে ধরতে পারছেন কই! মিরাজকে তাঁরা ধরতে পারলেন, যতক্ষণে তিনি নিজে থামলেন! গিডরন পোপকে আউট করার পর বাংলাদেশ অধিনায়কের উচ্ছ্বাসের মাত্রা ছিল এতটাই!

    কিমো পলকে আউট করার পর শাওনও ছুটলেন, ওদিকে অবশ্য মিরাজও ছুটেছিলেন। শাওনের পেছনে দৌড়ালো প্রায় পুরো দল, তবে মিরাজের মতো ‘ক্ষিপ্র’ ছিলেন না শাওন, ‘ধরা’ দিলেন সহজেই!

     

    এবং ‘চেস্টরোল ড্যান্স’  

    কেউ দিগ্বিদিক ছোটেন, কেউ উড়ন্ত চুমু ছাড়েন, কেউ কোমর দোলান। কেউবা থাকেন নির্লিপ্ত! ক্রিকেটারদের উদযাপন বিচিত্র! কী ব্যাটিংয়ে, কী বোলিংয়ে! সে বিচিত্র উদযাপনের তালিকাতেই আরেকটা যোগ করলেন শারাম স্প্রিংগার। ‘চেস্টরোল ড্যান্স’। দু'টি উইকেট নিয়েছেন, দু'বারই নেচেছেন এমন করে। কোমরটা স্থির রেখে শুধু ওপরের অংশটা দোলান, ‘চেস্টরোল’ বোধহয় এ কারণেই নাম! তবে সবচেয়ে উচ্ছ্বসিত ‘চেস্টরোল’ দেখা গেল জয়সূচক বাউন্ডারির পর। স্প্রিংগার তখন তো নাচবেনই! তিনি যে সেমিফাইনালের ম্যাচসেরা!