যে ৭ ফুটবলারের জন্য আশীর্বাদ হয়ে এসেছে করোনা
করোনা মহামারীর কারণে প্রায় আড়াই মাস পুরোপুরি বন্ধ ছিল ইউরোপিয়ান ফুটবল। এতে ক্লাবগুলোকে ব্যাপক আর্থিক লোকসান গুনতে হয়েছে, অবস্থা পুরোপুরি স্বাভাবিক না হওয়ায় খেলা শুরুর পরেও লোকসানের ধারা অব্যাহত থাকবে। তবে করোনার এই বিরতির ফলে ইউরোপিয়ান ফুটবলের বেশ কয়েকজন গুরুত্বপূর্ণ ফুটবলার যারা চোট সমস্যায় এই মৌসুমের সমীকরণের বাইরে চলে গিয়েছিলেন, তারা আবারও ফিরে আসছেন পাদপ্রদীপের আলোয়। আগের নির্ধারিত সময় লিগ শেষ হলে হয়ত এই মৌসুমে আর মাঠে দেখা যেত না তাদের, তবে করোনার বিরতির ফলে বদলে গেছে তাদের মাঠে ফেরার সমীকরণ।
হ্যারি কেইন
নতুন বছরের প্রথম দিনেই চলতি মৌসুম থেকে প্রায় ছিটকে পড়েছিলেন টটেনহাম এবং ইংল্যান্ড স্ট্রাইকার হ্যারি কেইন। সাউদাম্পটনের বিপক্ষে ম্যাচে সেদিন হ্যামস্ট্রিং ছিড়ে যায়। সেই চোটের কারণ পরবর্তীতে তাকে ছুরি-কাঁচির নিচেও যেতে হয়েছে। আর সবমিলিয়ে টটেনহামের হয়ে চলতি মৌসুমে তো আর মাঠে নামার কথা ছিলই না, সঙ্গে এই বছরের ইউরোতেও ইংল্যান্ড অধিনায়ক খেলতে পারবেন কিনা তা নিয়ে অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছিল। তবে শেষ পর্যন্ত করোনাভাইরাসের কারণে দীর্ঘ সময় খেলা বন্ধ থাকায় চোট থেকে সময়মত সেরে উঠে এই মৌসুমে আবারও মাঠে নামার জন্য নিজেকে তৈরি করতে পেরেছেন তিনি।
সন হিউন-মিন
অ্যাস্টন ভিলার বিপক্ষে ফেব্রুয়ারিতে খেলার সময় ডান হাতের কবজি ভেঙে গিয়েছিল প্রায় সন হিউন-মিনের। কেইনের মতো তারও হাতে অস্ত্রোপচারের প্রয়োজন হয়েছিল। আর সবমিলিয়ে এই মৌসুমে আর তাকে মাঠে দেখা যাবে না বলেই ধরে নিয়েছিলেন টটেনহাম ম্যানেজার হোসে মরিনহো। তবে কেইনের মতো সনও করোনাভাইরাসের কারণ এই মৌসুমে আবারও মাঠে নামার জন্য ফিট হয়ে ওঠার মতো যথেষ্ট সময় পেয়েছেন। এমনকি ফিট হয়ে ওঠার পর নিজের দেশ দক্ষিণ কোরিয়ায় ৪ সপ্তাহের মিলিটারি সার্ভিসেও অংশ নিয়েছেন তিনি।
পল পগবা
এই মৌসুমে ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের হয়ে হাতে-গোনা কয়েকটি ম্যাচ খেলেছেন পগবা। গত ৩১ আগস্ট প্রথম গোড়ালির চোটের কারণে ৩ সপ্তাহের জন্য মাঠের বাইরে চলে গিয়েছিলেন তিনি। সেখান থেকে ফিরে সেপ্টেম্বরে দুটি ম্যাচ খেলেছিলেন তিনি, তবে গোড়ালির সেই সমস্যা তার পিছু ছাড়েনি। গোড়ালির সমস্যা নিয়ে এরপর পুনর্বাসন কার্যক্রম শুরু করেন তিনি। এর মাঝে তার ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড ছাড়ার গুঞ্জনও জোরালো হয়েছিল বেশ কয়েকবার। তবে লকডাউনের আগে অবশ্য দলে ফেরার জন্য প্রায় তৈরি হয়ে গিয়েছিলেন পগবা। লকডাউনের ফলে অবশ্যই নিজেকে শাণিত করার জন্য আরও খানিকটা সময় পেয়েছেন তিনি।
মার্কাস রাশফোর্ড
টানা খেলার ধকল সামলাতে না পেরে জানুয়ারিতে পিঠের চোটে পড়েন ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড ফরোয়ার্ড রাশফোর্ড। পিঠের পেশিতে ডাবল ফ্র্যাকচার নিয়ে ৪ মাসের জন্য মাঠের বাইরে চলে যান তিনি। স্বাভাবিকভাবেই এই মৌসুমে আর তাকে মাঠে দেখার কোনও সম্ভাবনাই ছিল না। তবে করোনাভাইরাসের কারণে অন্যদের মতো তিনিও ফিট হয়ে ওঠার মতো পর্যাপ্ত সময় পেয়েছেন। ১৯ জুন টটেনহামের বিপক্ষে ম্যাচের জন্য পগবার মতো রাশফোর্ডও পুরোপুরি তৈরি বলে জানিয়েছেন ইউনাইটেড ম্যানেজার ওলে গানার সোলশার।
লুইস সুয়ারেজ
হাঁটুর চোটের কারণে ৫ মাসের জন্য মাঠের বাইরে ছিটকে গিয়েছিলেন লুইস সুয়ারেজ। এই মৌসুমে আর মাঠে নামার কোনও সম্ভাবনাই ছিল না তার। তবে করোনার কারণে অন্য অনেকের মতো সুয়ারজের মাঠে ফেরার হিসাব-নিকাশও বদলে গিয়েছে। চোট থেকে সেরে উঠে এখন মাঠে নামার জন্য পুরোপুরি প্রস্তুত এই উরুগুইয়ান ফরোয়ার্ড। এই মৌসুমে দারুণ ফর্মে রয়েছেন সুয়ারেজ লিগে ১৭ ম্যাচ খেলে এখন পর্যন্ত ১১ গোল করেছেন তিনি, বানিয়েও দিয়েছেন ৭ টি গোল। এমন দুর্দান্ত ফর্মে থাকা সুয়ারেজকে এই মৌসুমে আবারও ফিরে পেয়ে বেশ খুশি বার্সা কোচ কিকে সেতিয়েন।
মার্কো আসেনসিও
গত বছর প্রাক-মৌসুম টুর্নামেন্ট ইন্টারন্যাশনাল চ্যাম্পিয়নস কাপে খেলার সময় হাঁটুর লিগামেন্ট ছিঁড়ে গিয়েছিল আসেনসিওর। এই মৌসুমের পুরোটাই তাকে মিস করতে হবে বলে ধারণা করা হচ্ছিল। তবে করোনাভাইরাসের বিরতির কারণে ভয়ঙ্কর সেই চোট থেকে সুস্থ হয়ে এই মৌসুমে আবারও মাঠে ফেরার জন্য নিজেকে তৈরি করে ফেলেছেন আসেনসিও।
এডেন হ্যাজার্ড
রিয়াল মাদ্রিদে নিজের প্রথম মৌসুম চোটের সঙ্গেই লড়াই করে কাটাতে হচ্ছে বেলজিয়ান ফরোয়ার্ড হ্যাজার্ডকে। ফেব্রুয়ারিতে পায়ে চোট পেয়ে যখন খুড়িয়ে খুড়িয়ে মাঠে ছেড়েছিলেন, তখন ধারণা করা হয়েছিল ফিবুলার ফ্র্যাকচারে তিন মাস তাকে বাইরে থাকতে হবে। যার মানে এই মৌসুমে মাঠে নামার সম্ভাবনা কম ছিল তার। তবে চোট থেকে সেরে ওঠে হ্যাজার্ড এখন আবারও মাঠে নামতে তৈরি।